বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের তিন ব্যক্তির এক সিন্ডিকেটের অনিয়ম দুর্নীতি প্রতিরোধে ছয় মাস আগে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও এখন পর্যন্ত তারা তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়নি। বিভিন্ন তাঁতি সমিতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে ৩ সদস্যর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গত ৬ মাসেও তদন্তর কোন অগ্রগতি না হওয়ায় দেশের তাঁতি সমাজের মধ্য চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের নতুন মন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ১৬ জানুয়ারি মন্ত্রী বরাবর একটি অভিযোগ করেন নরসিংদী জেলার শিবপুর পুটিয়া ইউনিয়ন ৩নং ওয়ার্ড প্রাথমিক তাঁতি সমিতির সম্পাদক মো. ফজলুল হক। অভিযোগপত্রে তিনি বলেন, চার বছর পূর্বে নির্বাচিত কমিটি জাতীয় তাঁতি সমিতির সভাপতির মেয়াদ শেষে মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন নির্বাচন ব্যতিত সিন্ডিটিকিটের সহযোগিতায় এড হক কমিটি প্রথমবার সভাপতি নিয়োগ নেয়। কিন্তু কোন নির্বাচনের প্রয়োজন মনে করে নাই। দ্বিতীয়বার দুই বছর পর এই অনির্বাচিত কমিটি সহ পূর্বের ন্যায় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অবৈধভাবে পুনরায় মেয়াদ বৃদ্ধি করে। এই দুই বছরেও কোন নির্বাচন করে নাই। গত ২০ডিসেম্বর সভাপতির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু তৃতীয় বারের মতো আবারো মেয়াদ বৃদ্ধি করে নেওয়ার পাঁয়তারা চলছে। যা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং নিয়ম বহির্ভূত। বারবার অবৈধভাবে সভাপতির পদ আকড়ে ধরে থেকে মনোয়ার হোসেন বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে। সুতা, রং ও রাসায়নিক দ্রব্য আমদানির ক্ষেত্রে মনোয়ার হোসেন হলেন সিন্ডিকেটের মূল হোতা। বাংলাদেশ তাঁতি সমিতির বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাঁত বোর্ডের সিন্ডিকেটের দুর্নীতির বিষয় নিয়ে একাধিক রিপোর্ট হয়েছে। সিন্ডিকেটের দুর্নীতির কারণে ২৫ লাখ দেশি তাঁতের মধ্যে পনের লাখ তাঁত এখন বন্ধ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ সরাসরি লংঘন করে তাঁত বোর্ডের এই সুবিধাভোগীরা গত চার বছরে শত শত কোটি টাকা লুটপাট করেছে। এই লুটপাটের রহস্য উন্মোচন করতে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। উক্ত কমিটি গঠনের ৬ মাস অতিবাহিত হলেও তারা এখন পর্যন্ত তদন্ত রিপোর্ট দিতে পারেনি। তদন্ত এত বিলম্বিত হচ্ছে কেন, লুটপাট কারীদের রক্ষা করা, নাকি প্রকৃত তদন্ত ধামাচাপা দেওয়া। তদন্ত কমিটির এমন মতলব নিয়ে তাতীরা নানা প্রশ্ন তুলছেন। তাঁতিদের কাছ থেকে আরও জানা গেছে, দশ বছর ধরে একই পদে থাকা তাঁত বোর্ডের জিএম কামনাশীষ দাস এর নেতৃত্বে এই সিন্ডিকেট পরিচালিত হচ্ছে। কামনা শীষ দাশ জেনারেল ম্যানেজারের পদে দশ বছর ধরে অবস্থান করার পাশাপাশি বোর্ডের অধীন অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান উপসচিব আলমগীর হোসেন অডিট বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, তাঁত বোর্ডের বিষয়টি জটিল টেকনিক্যাল বিষয়। এর সাথে অনেক কিছুই জড়িত। বিষয়টি আমাদের ভেবে দেখতে হচ্ছে। এর সাথে ব্যবসা, অর্থনীতি ও আইনসহ অনেক কিছু জড়িত। প্রকৃত ঘাপলা কোথায় এটা বুঝতে সময় লাগছে। তদন্তের প্রতিবেদন কত দিনে জমা দেওয়া যাবে তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের সিন্ডিকেট, দুর্নীতি এবং একই পদে জিএম এর দশ বছর অবস্থান করার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড এর সদস্য দেবাশীষ নাগ বলেন, টেলিফোনে এসব প্রশ্নের উত্তর দেয়া যাবে না। অফিসিয়াল বিষয়ে জানতে হলে অফিসে আসতে হবে এবং সামনাসামনি আলোচনার মাধ্যমে বিষয়গুলো জানানো যাবে।