মতানৈক্যসহ ঐক্য গড়তে ব্যর্থ হলে কুফরির সমুদ্রে তলিয়ে যাবে দেশ -নেছারাবাদী হুজুর
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৫:২০ পিএম | আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৫:২১ পিএম
হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর (রহ.) এর একমাত্র ছাহেবজাদা, গদ্দিনশীন পীর, আমীরুল মুছলিহীন হযরত মাওলানা মুহম্মদ খলীলুর রহমান নেছারাবাদী বলেছেন ‘মতানৈক্যসহ ঐক্য গড়তে ব্যর্থ হলে কুফরির সমুদ্রে তলিয়ে যাবে দেশ’। শনিবার বাদ ফজর ঝালকাঠি নেছারাবাদের দুই দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী বার্ষিক ঈছালে ছওয়াব ওয়াজ মাহফিলের আখেরী মুনাজাতের আগে সমাপনী ভাষণে তিনি এই সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন। নেছারাবাদী হুজুর বলেন, ‘দেশে আলেম-ওলামার অভাব নেই; আছে অসংখ্য মসজিদ-মাদরাসা, খানকা-দরবার। রয়েছে প্রত্যেক পীর-শায়েখের লক্ষ-লক্ষ অনুসারী। এতদসত্ত্বেও কুফরির সমুদ্র মাঝে জেগে ওঠা তৌহীদের এই দ্বীপ এখন ইসলাম ও মুসলিম-বিদ্বেষী নানান ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের শিকার। জায়নবাদী ষড়যন্ত্র, অখ- ভারতীয় চক্রান্ত, মিশনারী লোলুপতা ও এনজিও কেন্দ্রিক নারী ব্যবসাসহ ইহুদী খ্রিস্টান পরিচালিত আহ্লে কুরআন, হিযবুত তাওহীদ ইত্যাদি ইসলামী নামধারী অসংখ্য বাতিল সংগঠনের অপতৎপরতা নাস্তিক্যবাদিতার দ্বারা পরিব্যাপ্ত হয়ে ১৮ কোটি মানুষকে এখন জিম্মি করে ফেলেছে। ফলে ঈমান আকীদা নস্যাতসহ ভূখ- হারানোর দ্বারপ্রান্তে এখন দেশের ৯৫শতাংশ ধর্মপ্রাণ মানুষ।’আমিরুল মুছলিহীন বলেন, ‘একজন মুজাদ্দেদের কাজ হলোÑসম্ভাব্য সমস্যার সমাধান পূর্বক নিজের যুগকে অতিক্রম করে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য দ্বীনের হেফাযত ও হেমায়েত করা। মুসলমানদের জন্য কী বিপর্যয় অপেক্ষা করছে এবং এর থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া সম্ভবÑসে ব্যাপারে মুজাদ্দেদে মিল্লাত হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর রহ. বহু পূর্বেই আমাদের সতর্ক ও পথনির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু মরহুম মাওলানা মুহিউদ্দীন খান রহ.-এর ভাষায়Ñ‘কায়েদ ছাহেব হুজুর রহ. গভীর দিব্যদৃষ্টিসম্পন্ন আল্লাহর ওলী ছিলেন। তাই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, বাংলােশের আলেম সমাজ ও দ্বীনদার মুসলমানের জন্য কী ধরনের বিপর্যয় অপেক্ষা করছে। এ জন্যই তিনি ‘ইত্তেহা মায়াল ইখতেলাফ’ (মতানৈক্যসহ ঐক্য)Ñএর ডাক দিয়েছিলেন। দুঃখের বিষয় হল, তাঁর ডাকে কেউ কেউ তো ভ্রƒক্ষেপই করেননি; আর যারাও বা সাড়া দিয়েছিলেন তারা মাত্র মুরব্বির সম্মান দেখিয়ে মৌখিকভাবে একাত্মতা ঘোষণা করলেও মূলতঃ তাঁর যে আকুতি ছিল সেটাকে কার্যকরভাবে গ্রহণ করার মত অন্তরের প্রশস্ততা তাদের ছিল না। তিনি যে মূল্যবান দর্শন রেখে গেলেন তা নিয়ে আলেম সমাজের এতটুকু মাথাব্যথাও দেখছি না। আমাদের অনুভূতিহীনতার এই যে রোগ, এটাই আমাদেরকে অতিদ্রুত ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে।’ সুতরাং এই বিশাল জনসমুদ্র থেকে আমরা আবারো ঘোষণা করছিÑ নেছারাবাদ কারো পক্ষ কিংবা প্রতিপক্ষ নয় বরং ওলামায়ে কেরাম, পীর মাশায়েখÑযারাই দ্বীনের জন্য মেহনত করছেনÑতাদের প্রত্যেকের খাদেম। মুছলিহীন এই খাদেম হিসেবেই প্রত্যেকের কাজের স্বীকৃতি, সম্মান ও মুল্যায়ন করেই একটি সম্মিলিত বেগবানধারা সৃষ্টি করতে চায়। সামগ্রিক ঐক্য কিংবা সামগ্রিক বিচ্ছিন্নতা কখনোই সুফল বয়ে আনবে না, পীর মাশায়েখ, ওলামায়ে কেরাম এই ধ্রুবসত্য বুঝতে এবং মতানৈক্যসহ ঐক্য গড়তে ব্যথ হলে কুফরির সমুদ্রেই তলিয়ে যাবে দেশ, পার পাবেন না কেউই।’ দল-মত-ছেলছেলা নির্বিশেষে দেশের পীর-মাশায়েখ, ওলামায়ে কেরাম, রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা এবং ৬৪ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আগত সমাজের প্রতিনিধি-পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গসহ সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হওয়া ০২ দিনব্যপী অনুষ্ঠিত এ মাহফিলের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিলÑআওলিয়ায়ে কেরামের অনুসৃত পথে জাতীয় ও ধর্মীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতিপূর্ণ ইসলামী সমাজ নির্মাণে আগত মেহমানদের গড়ে তোলা। ফলে মাহফিলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নামায-কালাম, যেকের-আযকার, তসবীহ-তাহলীল, মাসলা-মাসায়েল ইত্যাদির হাতে-কলমে প্রশিক্ষণসহ ওয়ায-নসীহত সবকিছুতেই ছিল আগত মানুষের জন্য শিক্ষণীয় এক ব্যতিক্রমী আবহ।মুনাজাতের পূর্ব-মুহূর্তে বাংলাদেশ হিযবুল্লাহ জমিয়াতুল মুছলিহীনের পক্ষ থেকে দেশ, জাতি ও উম্মাহর কল্যাণার্থে ০৭ দফা প্রস্তাব পেশ করা হলেÑউপস্থিত জনতার স্বতস্ফূর্ত সমর্থন ও তকবির ধনির মধ্য দিয়ে সমর্থিত হওয়ায় তা এখন জাতীয় দাবি ও কর্তব্য হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। প্রস্তাবসমূহ এই:Ñ০১. মুসলিমবিশ্বের সরকারসমূহের পারস্পরিক দূরত্ব ঘুচিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়া; ০২. মুসলমানদের কোন দল, কোন শ্রেণি বা কোন গোষ্ঠীকে প্রতিপক্ষ সাব্যস্ত না করে পরস্পর কাদা-ছোড়াছুড়ি বন্ধ রেখে হযরত কাযেদ ছাহেব হুজুর রহ. প্রবর্তিত ‘ইত্তেহাদ মায়াল ইখতেলাফ’ তথা ‘মতানৈক্যসহ ঐক্য’ দর্শনের ভিত্তিতে সহনশীল ও ঐক্যবদ্ধ হওয়া; ০৩. জাতীয় অধঃপতন ঠেকাতে সর্বপ্রকার বেপর্দেগী-বেলেল্লাপনা ও অশ্লীলতা প্রতিরোধে দেশের সকল রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক দল ও সচেতন নাগরিকসমাজের এগিয়ে আসা; ০৪. স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিলীনের ষড়যন্ত্রে আমদানিকৃত সমুদয় পাঠ্যপুস্তক প্রত্যাহার করা; ০৫. মাপদরাসা শিক্ষার জন্য স্বতন্ত্র কারিকুলাম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নসহ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী চালুর ব্যবস্থা গ্রহণ করা; ০৬. নিজ পরিবারকে দ্বীনের দুর্গ হিসেবে গড়ে তোলা ও শিশুদেরকে ফরয-আন্দাজ এল্মেদ্বীন শিক্ষা দেওয়া; ০৭. সামাজিক দুর্দশা ও জনক্ষোভ লাঘবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যকর ও বাস্তব-সম্মত ব্যবস্থা গ্রহণ।এসব প্রস্তাব গৃহীত হবার পর হযরত নেছারাবাদী হুজুর সকলকে মুবারকবাদ জ্ঞাপন করে আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করেন।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
আনচেলত্তির মাইলফলক ম্যাচ জয়ে রাঙাল রিয়াল
৩০ পেরোনোর আগেই ফুটবলকে বিদায় বলে দিলেন জিদানপুত্র
ব্রুকের সেঞ্চুরিতে অজিদের জয়রথ থামিয়ে টিকে থাকল ইংল্যান্ড
বাংলাদেশকে পূর্ণ সমর্থন বাইডেনের
পাবর্ত্য চট্টগ্রামে দুর্গম পাহাড়ি সেনা ক্যাম্প পরিদর্শন সেনা প্রধানের
নিউইয়র্কে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সাথে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক
আম্মু তোমাকেও আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে
দেশের মাজার রক্ষা করতে হাইকোর্টের নির্দেশ
বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য চীন খুবই গুরুত্বপূর্ণ: উপদেষ্টা সাখাওয়াত
ক্ষোভ বাড়ছে ভারতে
ভারতীয় সাংবাদিকদের এড়িয়ে গেলেন ড. ইউনূস
সোনারগাঁওয়ে তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর হামলা, আহত ৮
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাচার্য চায় পবিপ্রবির গ্রাজুয়েটবৃন্দ
হামজাকে পাওয়ার আরও কাছে বাংলাদেশ
বান্দরবানে জামাতুল আনসারের ৩১ সদস্য কে ৪ মামলায় জামিন
সাগরে লঘুচাপ, চার সমুদ্রবন্দরে বন্দরে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত
সকল অপকর্মে জড়িতদের বিরুদ্ধে যার যার অবস্থান থেকে সামাজিক আন্দোলন জোরদার করতে হবে -চকরিয়ায় নারী সমাবেশে বক্তারা
সেনা কর্মকর্তা হত্যাকারীদের অবিলম্বে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে
অবশেষে স্বস্তির বৃষ্টি পঞ্চগড়ে
আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে: ডিএমপি কমিশনার