মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিরোধে আবারো অশান্ত সীমান্ত: পালিয়ে বাংলাদেশে ১৭৯ বিজিপি সদস্য

Daily Inqilab উখিয়া (কক্সবাজার) উপজেলা সংবাদদাতা

১২ মার্চ ২০২৪, ০১:১৭ পিএম | আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৪, ০১:১৭ পিএম

কয়েক সপ্তাহ কিছুটা শান্ত থাকার পর আবারও বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত অস্থির হয়ে উঠেছে। সীমান্ত এলাকায় বিদ্রোহীদের সঙ্গে মুর্হুমুর্হু গুলি, মর্টার শেল নিক্ষেপ ও মারাত্মক সংঘর্ষে পালিয়ে বাঁচার চেষ্টার সময় মিয়ানমারের অন্তত দুজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল নিহত হয়েছেন বলে সুত্রে জানা যায়। এমন পরিস্থিতিতে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির ১৭৯ সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। আর বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে ‘মিয়ানমার থেকে ছোড়া’ গুলিতে একজন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য আহত হয়েছেন।

সোমবার (১১ মার্চ) রাতে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিনের বরাতে জানা যায়, সোমবার পুরোদিন নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার বিজিপি এর ১৭৯ জন সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশ করে অস্ত্র সমর্পণ করে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। তাদের মধ্যে দুপুরে ২৯ জন এবং সন্ধ্যার পর আরও ১৫০ জন এসেছেন। আশ্রয়প্রার্থীরা অস্ত্র জমা দেওয়ার পর বিজিবি তাদের হেফাজতে নিয়েছে।

ইতিপূর্বেও মিয়ানমারের চলমান অভ্যন্তরীণ সংঘাতের জেরে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিলেন দেশটির সেনাসদস্যসহ ৩৩০ জন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের ফেরত পাঠানো হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, গত ২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্তের ওপারে আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সংঘর্ষ শুরু হয়। এর জেরে ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন এই ৩৩০ জন। তাদের মধ্যে ৩০২ জন বিজিপি সদস্য, ৪ জন বিজিপি পরিবারের সদস্য, ২ জন সেনাসদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য ও ৪ জন বেসামরিক নাগরিক।

অন্যদিকে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের জামছড়ি সীমান্তে ইউপি সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। সোমবার বিকাল ৪টার দিকে জামছড়ি এলাকার মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সাবের আহমদকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আবছার ইমন গনমাধ্যমকে বলেন, ‘সোমবার বিকালে সীমান্ত এলাকা জামছড়ি মসজিদের পাশে স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করছিলেন ইউপি সদস্য সাবের আহমদ। এ সময় মিয়ানমার থেকে আসা একটি গুলি তার কোমরে লাগে। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।’ এ ব্যাপারে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও স্থানীয় প্রশাসনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিরোধ ও বাংলাদেশে তার প্রত্যক্ষ প্রভাব!

 মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে,  একপ্রকার প্রাণ বাঁচাতে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী, বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) এর সদস্যরা দফায় দফায় পালিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে আশ্রয় প্রার্থনা করে, অস্ত্র সমর্পণ করেছেন। আবারো রোহিঙ্গা ঢলের আশংকা রয়েছে। সীমান্তের ওপারে প্রায় ৩ লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের প্রহর গুনছে বলে বিভিন্ন খবরে চাউর হয়ে আছে। কিন্ত আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি’র কড়া নজরদারীতে নতুন করে রোহিঙ্গা ঢল থামানো গেলেও শেষ পর্যন্ত ধরে রাখা যাবে কিনা তা এক কঠিন কাজ বলে মনে হচ্ছে।

বিশেষত: মিয়ানমারের তিনটি প্রধান এথনিক রেজিস্ট্যান্ট গ্রুপ—তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল এলায়েন্স (এমএমডিএ) এবং আরাকান আর্মি’র—সমন্বয়ে গঠিত ‘ব্রাদারহুড অ্যালাইয়েন্স’র ‘অপারেশন ১০২৭’ কাছে মিয়ানমারের মহাপরাক্রমশালী সেনাবাহিনীর নিয়মিত পরাজয়ের খবর আমরা পাচ্ছি। বিশেষ করে, আরাকান আর্মি একটার পর একটা মিয়ানমারের মিলিটারি ঘাঁটি দখল করে নিচ্ছে। সংবাদ মাধ্যমের বরাতে জানা যায়, আরাকান আর্মি ১৩ নভেম্বর রাখাইনে ‘অপারেশন ১০২৭’ শুরু করার পর সিতওয়ে’র নিকটবর্তী পাউকতাও শহর এবং চিন প্রদেশের পালেতাওয়া শহর সহ ১৬০টি অবস্থান থেকে মিয়ানমার জান্তা বাহিনীকে উৎখাত করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত জানুয়ারির শেষ দিকে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইন ও আরাকান রাজ্যেও যুদ্ধ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। মিয়ানমার বিদ্রোহীরা ইতিমধ্যে মিয়ানমারের ৬০% এলাকা দখল করে নিজেদের শক্তিমত্তা প্রকাশ করেছে।
 
অন্যদিকে,গত ছয় বছর পুর্বে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গা সংকটের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীরতার ব্যাপক বিস্তার ঘটলেও এ সংকটে বাংলাদেশ জড়িয়ে পড়েছে আরও আগে, ১৯৭৮ সাল থেকে। কথায় আছে সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের ১০ ফোঁড়ের সমান।  রোহিঙ্গা সমাস্যা এখন স্রেফ দ্বি-পাক্ষিক বিষয় নয়, বহুপাক্ষিক এবং আন্তর্জাতিকও বটে। উভয় দেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি পর্যায়ের অনেকবার বৈঠক অনুষ্টিত হয়েছে কিন্তু তাতে কোনো কাজের কাজ তেমন কিছু হয়নি। এ পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকে তাদের স্বদেশে প্রত্যবর্তন করানো/পাঠানো সম্ভব হয়নি। বরং মিয়ানমানের অভ্যন্তরীন বিবাদ, অস্থিতিশীলতা ও বিভিন্ন অজুহাতে অনানুষ্টানিকভাবে রোহিঙ্গা প্রবেশ করছে।

মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বাহিনী ও স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহীদের চলমান সংঘর্ষের উত্তাপ বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। প্রাণে বাঁচতে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী, বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) এর সদস্যরা দফায় দফায় পালিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে আশ্রয় প্রার্থনা করে, আত্মসমর্পণ করেছেন। এ পর্যন্ত মিয়ানমারের প্রায় ৩৩০ জন সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী ( বিজিপি)’র সদস্য অস্ত্রশস্ত্রসহ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু, ঘুংধুম, উখিয়ার পালংখালীর রহমতের বিল ও আণজুমের পাড়া এবং টেকনাফের হোয়াইক্যং ও হ্নীলা সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে আশ্রয় প্রার্থনা করেছে এবং অস্ত্রসমর্পণ করেছে।  সেই আশ্রিত ৩৩০ জন মিয়ানমার বিজিপি সদস্যদের বাংলাদেশ সরকার তাদের স্বদেশে ফেরত পাঠাতে সক্ষম হলেও, ইতিমধ্যে গতকাল নতুন করে ১৭৯ জন মিয়ানমারের বিজিপি সদস্য নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করেছে।
 

চীন তার ভূরাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় এক রকম অন্ধভাবে মিয়ানমারের পক্ষ নিয়েছে। সব মানবতাকে দক্ষিন চীন সাগরে বিসর্জন দিয়েছে। বাংলাদেশ দ্বি-পক্ষীয়, বহুপক্ষীয়সহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সব ফ্রন্টে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। মিয়ানমার আগের কঠোর অবস্থান থেকে সরে এলেও খুব সহসা তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে তেমন কোনো আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। মিয়ানমারের আন্তরিকতা ও আগ্রহ সম্পর্কে সবারই প্রশ্ন আছে। তাই সঙ্গত কারণেই সবাই বলছেন সমস্যার সমাধান সহজে হচ্ছে না।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশকে একটা নাতিদীর্ঘ সময় প্রায় ১৪ লাখ রোহিঙ্গার বোঝা টানতে হতে পারে। সমাধানের পথ দীর্ঘ হলে এ ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বর্তমানের মতো একই মাত্রায় অ্যাক্টিভ রাখা আগামীতে বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। অন্যদিকে ১৪ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে অর্ধেকই শিশু-কিশোর। এরা তো বড় হবে। ক্ষোভ, হতাশা, বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসার জায়গা থেকে এর একটা স্বল্প সংখ্যাও যদি সন্ত্রাস এবং বিদ্রোহের পথ বেছে নেয় তাহলে সেটা পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য ভীষণ বিপজ্জনক হবে। মিয়ানমার তো নয়ই, চীন, ভারত কেউ এ বিপদের বাইরে থাকতে পারবে না। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ভারত ও চীনের সব স্বার্থ অনবরত হুমকির মধ্যে থাকবে। 

সমাধানের পথে সবচেয়ে বড় শঙ্কার জায়গাটি হলো, রোহিঙ্গাকে সমস্যাটি এখন আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শক্তির জন্য এ অঞ্চলে প্রভাব বলয় বিস্তারে দাবার ঘুটিতে পরিণত হওয়ায় মিয়ানমার সরকার এক বৃহৎ রাষ্ট্রের অন্ধ সমর্থন পাচ্ছে। আবার ভূ-রাজনীতির কারনে অন্যদিকে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতও মায়ানমারের পক্ষ্যেই অনঢ় রয়েছে অনেকাংশে। তাই বাংলাদেশকে সুদূরপ্রসারী চিন্তা এবং সংকটের ভবিষ্যতে রূপরেখা সম্পর্কে আগাম বিচার বিশ্লেষণ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

পাশের পাহাড়ে গড়ে উঠেছে সন্ত্রাসীদের অভয়ারন্য। ক্যাম্পের ভিতরে বসে রীতিমত নেশা ও মাদকের আস্তানা। মাঝে মধ্যে আইন শৃংখলা বাহিনীর সাথে (ক্যাম্পের ভিতরে ও বাইরে) সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারীদের বন্দুক যুদ্ধের খবরা খবর পত্র প্ত্রিকায় চোখে পড়ে। পত্র পত্রিকায় যেসব খবর আসে তা মুল খবরের কিয়দংশ মাত্র। আসল অনেক খবর অগোচরে রয়ে যায় জনমের মত।বাংলাদেশ সরকারের ঘোষিত মাদক ও দূর্নীতির বিরোদ্ধে জিরো টলারেন্স, এই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এসে বড় রকমের হোঁচট খেয়েছে। মাদকের থাবা এসব রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এভাবে বিস্তৃত যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনাকেও ব্যর্থতায় পর্যবসিত করে তুলেছে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের সাথে আঁতাত করা স্থানীয়, দেশি-বিদেশি দুর্বত্তরা!

স্থানীয় জনগোষ্টীর মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন বৈধ ব্যবসার আড়ালে অবৈধ ইয়াবা কারবারের সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে পড়েছে। রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে যাওয়ার বাসনায় ও শর্টকাট ম্যাথডে কোটিপতি হওয়ার মানসিকতায় স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধি ও স্বার্থান্বেসী লোক এই মরন নেশা ইয়াবা কারবারীতে জড়িয়ে পড়েছে বলে বিভিন্ন পত্র পত্রিকার মাধ্যমে জানা যায়। অনেক ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা জনগোষ্টী ও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি যৌথভাবে এসব মরন খেলায় আইন শৃংখলা বাহিনী ও প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে (অনেকে বলেন, এক প্রকার আঁতাত করে) এসব অপকর্ম করে চালিয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা স্থানীয় লোকদের ধরে নিয়ে মুক্তি পণ আদায় করছে, দিনে ও রাতে ডাকাতি, অপহরণ, পণ আদায়, মুক্তিপণ না পেলে খুন করা, জাহাজে করে মানুষকে মালেশিয়া নিয়ে যাবার কথা বলে জোর করে ধরে নিয়ে গিয়ে নৌকায় তুলে সমুদ্রে ভাসিয়ে দিয়ে, পরে তাদেরকে মারধর করে আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে পণ গ্রহন ইত্যকার ঘটনাগুলো প্রতিনিয়ত ঘটাচ্ছে এসব রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। অনেক স্বার্থান্বেষী স্থানীয় লোক রোহিঙ্গাদের সাথে মিশে ঐসব অপকর্ম করে চলেছে বলে বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে, তাদের নিজেদের মধ্যে ঐক্য ও একতা গড়ে তোলা হয়েছে অত্যন্ত সু-কৌশলে। তাদের একতা ও ঐক্য এমন ইস্পাত কঠিন, এদেশের আইন শৃংখলা বাহিনীর সাথে রীতিমত বিবাদ তৈরি করে পুলিশ, বিজিবি, আর্মির সাথেও তারা মুখোমুখি হতে বিন্ধু পরিমান ভয় পায়না এমনকি পরোয়াও করেনা ! মাঝে মাঝে অনেক ছোট খাট ব্যাপারেও তারা আইন শৃংখলা বাহিনীর সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের একতা, ঐক্য ও শক্তি সামর্থ্য দেখাতে-ইচ্ছে করেই এরুপ কার্যকলাপ করে বলে অনেকেই মনে করেন। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভিতরে বিভিন্ন গ্রুপ, উপ গ্রুপে সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছে, তাদের হাতে রয়েছে অত্যাধুনিক অস্ত্র শস্ত্র। রয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন সন্ত্রাসী সঙ্ঘঠনের সাথে লেজুড়ভিত্তি। অনেক যোদ্ধা অস্ত্র শস্ত্রের ট্রেনিং গ্রহনের জন্য বিভিন্ন দেশে ও অঞ্চলে চলে যায়, দেশে এসে অন্যান্য গ্রুপ্দের প্রশিক্ষন প্রদান করে পুরো রোহিঙ্গা জনগোষ্টি রাষ্ট্র যন্ত্রের বিরোদ্ধে প্রতিনিয়ত যুদ্ধের দামামা বাজানোর জন্য সদা সর্বদা প্রস্তুত। অনেক ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অলিখিত তাদের শাসনে চলে যেখানে আইন শৃংখলা বাহিনী দেশি ও বিদেশী ষড়যন্ত্রের কাছে নিরুপায় ও অসহায় আত্বসমর্পন করে। আন্তর্জাতিক এন জিওগুলোর প্রশাসনের অধীনে চলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো, তখন আমাদের আইন শৃংখলা বাহিনীর কিছু করার থাকেনা। তারা অসহায় হয়ে তাদের কথা মেনে চলতে বাধ্য হয় অনেক ক্ষেত্রে।
মায়ানমারের বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্টি যারা আমাদের উখিয়া টেকনাফের বিভিন্ন অঞ্চলে/ক্যাম্পে অবস্থান করছেন । প্রথম থেকেই রোহিঙ্গা বাংলাদেশের জন্য একটা সংকট ছিল নিঃসন্দেহে। কিন্তু বর্তমানে এটি সংকট থেকে মহা সংকটে রুপান্তর হতে চলেছে ধীরে ধীরে। এটা অনেকেই গোঁদের উপর বিষ ফোঁড়া বলে মনে করছেন। রোহিঙ্গা বাংলাদেশের জন্য একটি গভীরতর উদ্বেগের বিষয় হয়েও দাঁড়িয়েছে। 

উদ্বেগের আরও কারণ হচ্ছে, যদি রাখাইনে আরাকান আর্মির সাথে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর লড়াই দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং রাখাইনে যদি একটা দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়, তখন রাখাইনে বসবাসকারী প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা তাদের জীবন বাঁচানোর জন্য নতুন করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করার জোর চেষ্টা করবে।

তখন রোহিঙ্গাদের এই নতুন অনুপ্রবেশ ঠেকানো বাংলাদেশের জন্য একটা বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। যদি কোনো কারণে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর কাছে আরাকান আর্মির পরাজয় ঘটে (সেই সম্ভাবনাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না), তখনো আরাকান আর্মির প্রতি সমর্থন থাকার কারণে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নতুন করে দমনপীড়ন চালাবে। তখন রাখাইনে বসবাসরত রোহিঙ্গারা নিজেদের ‘প্রাণ’ বাঁচানোর জন্য বাংলাদেশে নতুন করে অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা করবে।

বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা ছাড়াও মিয়ানমারের বিভিন্ন স্থানে জান্তা সৈন্যদের সঙ্গে বিদ্রোহীদের চলমান যুদ্ধ বেশ প্রকট হয়ে উঠেছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর আসছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ সীমান্ত আরাকানে এলাকায় আরাকান আর্মি (এএ), অন্যান্য এলাকায় পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ) ও জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন (ইএও) জান্তা শাসকের বিভিন্ন সামরিক ও প্রশাসনিক লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ বাড়িয়েছে বলে ইরাবতী জানিয়েছে। গণমাধ্যমটি বলছে, মিয়ানমার জান্তা গত চার দিনে একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেলসহ আরও সৈন্য হারিয়েছে এবং কৌশলগত দুর্গসহ ঘাঁটিও হারিয়েছে। গণমাধ্যমটি বলছে, আরাকান আর্মি গত শুক্রবার ইয়ে তুত উইন নামে এই সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে। এর আগে আরাকান আর্মি কৌশলগত কমান্ডার কর্নেল মায়ো মিন কো কো, মেজর স তোয়ে, লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফিও থু অংসহ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে।

আরাকানের বাইরে চীনের সীমান্তের কাছে গত সপ্তাহে কাচিন ইনডিপেনডেন্স আর্মি জান্তার সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে ২০টির বেশি ফাঁড়ি ও ঘাঁটি দখল করে নিয়েছে এবং সেখানে এখনও যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে বলে ইরাবতীর খবরে বলা হয়েছে।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের
গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা
রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি
বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম
২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
আরও

আরও পড়ুন

ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের

ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের

গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা

গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা

রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি

রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি

বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম

বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান

২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার

ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার

লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৪৭

লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৪৭

প্লাটফর্ম বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

প্লাটফর্ম বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

শক্তিশালী অর্থনীতি ও গর্বিত জাতি গড়তে শহীদ জিয়ার দর্শন ধারণ করতে হবে : আমির খসরু

শক্তিশালী অর্থনীতি ও গর্বিত জাতি গড়তে শহীদ জিয়ার দর্শন ধারণ করতে হবে : আমির খসরু

কী আছে তৌফিকার লকারে?

কী আছে তৌফিকার লকারে?

ঘটনার তিনদিন পর থানায় মামলা

ঘটনার তিনদিন পর থানায় মামলা

অনিয়ম ঢাকতে তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের পাঁয়তারা

অনিয়ম ঢাকতে তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের পাঁয়তারা

শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা

শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা

৯৬টি সিএনজি ভাঙ্গাড়ি হিসাবে সাড়ে ১১ লাখ টাকায় বিক্রি

৯৬টি সিএনজি ভাঙ্গাড়ি হিসাবে সাড়ে ১১ লাখ টাকায় বিক্রি

৩১ দফা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে রূপগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ

৩১ দফা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে রূপগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ

রেজিস্ট্রেশন এমপ্লয়ীজ এসোসিয়েশনের সভাপতি হেলেনা-সম্পাদক বায়েজিদ

রেজিস্ট্রেশন এমপ্লয়ীজ এসোসিয়েশনের সভাপতি হেলেনা-সম্পাদক বায়েজিদ

নতুন বাজার মনোপলি সিন্ডিকেটের ঊর্ধ্বে থাকবে : ঢাকার ডিসি

নতুন বাজার মনোপলি সিন্ডিকেটের ঊর্ধ্বে থাকবে : ঢাকার ডিসি

হাসিনা সরকারের অনিয়ম-দুর্নীতিতে শক্তি জুগিয়েছে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ-এডিবির প্রশংসা

হাসিনা সরকারের অনিয়ম-দুর্নীতিতে শক্তি জুগিয়েছে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ-এডিবির প্রশংসা

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে পরিচালক মনিরুজ্জামানকে বদলি

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে পরিচালক মনিরুজ্জামানকে বদলি