লবণ আমদানি নয়, উদ্বৃত্ত লবণ রপ্তানির লক্ষ্য নিয়ে আগাম মাঠে নামছে ৫০ হাজার লবণ চাষি- সংবাদ সম্মেলনে লবণ চাষি নেতৃবৃন্দ
০২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৪০ পিএম | আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৪০ পিএম
লবণ আমদানি নয়, উদ্বৃত্ত লবণ রপ্তানির লক্ষ্য নিয়ে আগাম মাঠে নামছে ৫০ হাজার লবণ চাষি। স্বনির্ভর লবণ খাতের উন্নয়ন ও লবণ চাষিদের জীবন মান উন্নয়নে ১১ দফা দাবী আদায়ে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ।
আজ সকালে কক্সবাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে লবণ চাষি কল্যাণ সমিতির নেতৃবৃন্দ এ দাবী জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানাো হয়, বাংলাদেশে শুধুমাত্র কক্সবাজার জেলায় ৯০% ও ১০% চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার মোট ৯০০ বর্গ কিঃমিঃ উপকূলীয় এলাকায় লবণ উৎপাদন হয়। যা দিয়ে দেশের লবণের চাহিদা পূরণ করা হয়ে থাকে। লবণ উৎপাদন হতে ভোক্তার হাত পর্যন্ত প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ এ শিল্পের সাথে জড়িত এবং এই লবণ শিল্প জিডিবিতে প্রায় ১০ ভাগ অবদান রেখে আসছে।
কক্সবাজার জেলা এবং বাঁশখালীতে প্রায় ৫০ হাজার লবণ চাষীসহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ্যভাবে অত্র এলাকার প্রায় ৩ লক্ষ মানুষ লবণ উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল এবং অত্র অঞ্চলের আর্থ- সামাজিক মর্যাদা নির্ভর করে লবণ চাষের উপর। ১৫ দিন পরে লবণ মৌসুম শুরু হচ্ছে। ৫০ হাজার লবন চাষি আগামা মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
২০১১ সালে জাতীয় লবণ নীতি প্রণয়ন করা হয়। সে সময় সংশ্লিষ্ট সকলে মিলে দেশে লবণের যে চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছিল তা যুক্তি-যুক্ত। তারপর আমরা দেখলাম ২০১৬ হতে ২০২০ পর্যন্ত সময়ে দেশে পর্যাপ্ত লবণ উৎপাদন হওয়ার পরও মিথ্যা তথ্য দিয়ে নানা অজুহাতে ঘাটতি দেখিয়ে অসাধু ব্যবসায়ী/আমদানীকারক ভারত থেকে লবণ আমদানী করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে দেশীয় স্বনির্ভর লবণ শিল্পকে ধ্বংস করে ভারতীদের তাবেদার বানানোর চেষ্টায় লিপ্ত ছিল। এখন আবারো ফ্যাসিবাদের দোসর সেই চোরাচালান চক্রটি কৌশনে লবণ আমদানী চক্রান্ত শুরু করেছে।
লবণ চাষিদের নানা ভাবে প্রতিবাদে বিগত সরকার লবণ আমদানীতে বিধি নিষেধ আরোপ করার ফলে ঐসকল অসাধু লবণ আমদানীকারক ও ব্যবসায়ীর প্ররোচনায় বা মিথ্যা তথ্যের আলোকে বিগত সরকার ২০২২ সালে জাতীয় লবণ নীতি প্রণয়ন করার সময় দেশে লবণের চাহিদা অতিরিক্ত দেখানো হয় অর্থাৎ ২০২৪ এ ২৫.২৮ লক্ষ মেঃ টন।
বিভিন্ন হিসাব মতে ২২ লক্ষ মেঃ টনের বেশী হওয়ার কথা নয়।
জাতীয় লবণ নীতি ২০১১ বা ২০১৬ এর আলোকে ২০২২ সালের শুধুমাত্র শিল্পখাতে লবণের চাহিদা হয় ৪.৬০ লক্ষ মেঃ টন, কিন্তু জাতীয় লবণ নীতি ২০২২ অনুযায়ী তা হল ৬.৯২ লক্ষ মেঃ টন এবং এখানে আরো উল্লেখ্য যে, ২০১১ সালের নীতিতে ৫% বৃদ্ধি ধরা হলেও ২০২২ সালের লবণ নীতিতে ১৫% বৃদ্ধি ধরা হয়েছে যা অসম্ভব। অর্থাৎ ২০২৪ সালের শিল্প খাতে চাহিদা ১০.২০ লক্ষ মেঃ টন (প্রসেস লসসহ) এবং ২০২৫ সালে তা বৃদ্ধি হয় ১১.৮২ লক্ষ মেঃ টন। বাস্তবতা হল এই খাতে চাহিদা কোনক্রমেই ৭.০০ লক্ষ মেঃ টন এর বেশী নয়।
বিসিকের হিসাব অনুযায়ী সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে অর্থাৎ ৬৩ বছরের মধ্যে ২০২৩-২৪ লবণ মৌসুমে আমরা লবণ চাষীরা সর্বোচ্চ ২৪.৩৮ লক্ষ মেঃ টন লবণ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু চাহিদা অতিরিক্ত থাকায় তা স্পর্শ করতে পারেনি। উৎপাদন চাহিদা ২৫.২৮ লক্ষ মেঃ টন হতে ০.৯০ লক্ষ (৯০ হাজার) মেঃ টন কম। চাহিদার যে হিসাব তা সঠিক নয় বলে তারা মনে করেন।
নির্ধারিত চাহিদা অনুযায়ী চলতি বছরের নয় মাসে ১৯ লক্ষ মেঃ টন লবণ ব্যবহার হওয়ার কথা। সে আলোকে ৫ লক্ষ মেঃ টন লবণ মজুদ থাকার কথা নয় (কারণ গত বছরের কোন লবণ মজুদ ছিল না)। কিন্তু বাস্তবতা হল ২৩ সেপ্টেম্বর'২৪ তারিখে বিসিকের হিসাব অনুযায়ী লবণ মাঠে ৭.৭৮ লক্ষ মেঃ টন এবং মিল পর্যায়ে ২.৩৬ লক্ষ মেঃ টন মোট ১০.১৪ লক্ষ মেঃ টন লবণ মজুদ আছে। বাস্তবতায় তার পরিমান আরো বেশী। মাঠ পর্যায়ে লবণ বেচা-কেনাও অনেক কম, দামও গত বছরের চেয়ে মণপ্রতি প্রায় ২০০/- টাকারও কম। এই বিক্রয় মূল্যে উৎপাদন খরচ তুলাও সম্ভব হচ্ছে না। ফলে আমরা লবণ চাষীরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আগামী নভেম্বর মাসে নতুন লবণ উৎপাদন করার জন্য মাঠ প্রস্তুতিতে যেতে হবে কিন্তু এতো মজুদ লবণ নিয়ে আমরা বিপাকে আছি। পাশাপাশী আর্থিক ভাবেও অনটনের মধ্যে আছি।
এমতাবস্তায়, অতিরিক্ত লবণ বিদেশে রপ্তানীর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তাতে একদিকে যেমন বৈদেশিক মুদ্রা আসবে অন্যদিকে লবণ চাষীরাও লবণের ন্যায্য মূল্য পাবে।
লবণ চাষিরা বলেন, আমাদের দীর্ঘ দিনের দাবী ছিল একটি লবণ বোর্ড গঠন করার কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুলা ঝুলানোর মত লবণ উপদেষ্টা বোর্ড গঠন করেছেন যা দিয়ে লবণ শিল্পের কোন কাজই হয়নি। এই জন্য মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার নিকট আকুল আবেদন লবণ এবং লবণ চাষীদের জীবন-মান উন্নয়নে আমাদের ১১ দফা দাবী বাস্তবায়ন করুণ।
লবণ চাষিদের ১১ দফা দাবীসমূহ
০১। লবণ চাষীদের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি ও আগামীতে আরো বেশী লবণ উৎপাদন করার উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্য অতি দ্রুত কমপক্ষে ৩.০০ লক্ষ মেঃ টন লবণ রপ্তানীর ব্যবস্থা করতে হবে। ০২। লবণের উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য বৈদ্যুতিক মোটরের ব্যবহার সহজ লভ্য করা, জমির লীজমানি কমানো এবং প্রকৃত প্রান্তিক লবণ চাষীকে সরকারের খাস জমি বরাদ্দ প্রদানের পদক্ষেপ গ্রহণ করাতে হবে।
০৩। অসুস্থ ও দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় মাঠ পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্থ লবণ চাষীদের সরকার কর্তৃক চিকিৎসা ও পুর্নবাসন নিশ্চিত করতে হবে।
০৪। বর্ষা মৌসুমে প্রান্তিক লবণ চাষীদের ১০/- (দশ) টাকা কেজি মুল্যে প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাউল বরাদ্দ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
০৫। বিসিকের মাধ্যমে আধুনিক পদ্ধতিতে লবণ চাষে প্রকৃত লবণ চাষীদের উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
০৬। দেশে লবণের খাত ভিত্তিক চাহিদা নিরুপণের জন্য পুর্ণাঙ্গ জরিপ করে জাতীয় লবণ নীতি- ২০২২ এর সংশোধন করতে হবে।
০৭। জরীপের মাধ্যমে লবণ জমির পরিমাণ চিহ্নিত করাসহ লবণ চাষীদের পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ তৈরি করে প্রত্যেককে আইডি কার্ড প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
০৮। অল্প জমিতে অধিকতর, পরিপক্ক, দানাদার ও গুনগত মানসম্পন্ন লবণ উৎপাদন এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে লবণ গবেষণা ইউনিষ্টিটিউট ও লবণ চাষী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।
০৯। লবণ চাষীদের নামে মাত্র নয়, বাস্তবিক ভাবেই সহজ শর্তে ব্যাংক বা অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে খণ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং প্রান্তিক লবণ চাষিদের স্বল্পমূল্যে লবণ উৎপাদনের উপকরণ (পলিথিন ও জ্বালানী) সরবরাহ করতে হবে।
১০। জাতীয় লবণ নীতি অনুযায়ী সরকারিভাবে এক লক্ষ মেঃ টন লবণের বাফার স্টক গড়ে তোলার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১১। নামে মাত্র লবণ উপদেষ্টা বোর্ড নয়, লবণ শিল্পের নিবিড় তদারকির জন্য পৃথক লবণ বোর্ড গঠন করতে হবে।
সলবাদ সম্মেলনে ১১ দফা মেনে নিয়ে অসহায় দরিদ্র লবণ চাষীদের জীবন-মানের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবী জানান। অন্যথায় অবহেলিত অসহায় লবণ চাষীরা একাত্রিত হয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে দাবী আদায় করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে হুশিয়ারী জানানা।
সংবাদ সম্মেলনে লিকিত বক্তব্য পাঠ করেন কক্সবাজার জেলা লবণ চাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি এড, শাহাব উদ্দিন।
বক্তব্য রাখেন, কক্সবাজার জেলা লবণ চাষি কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম হাসান, এজেএম গিয়াস উদ্দিন, জাফর আলম জফুর, আরিফ উল্লাহ সিকদার, মোঃ শরীফ, নুরুল হোসাইন, এখলাছুর রহমান, আবুল কাশেম, একরাম উদ্দিন চৌধুরী, মোঃ হাবিবুল মতিন, ডা. নুরুল ইসলাম মনি, ডাক্তার সোহেল, সাইফু ইসলাম বাবলু ও নিজামুদ্দিন উজ্জল প্রমুখ লবণ চাষি নেতৃবৃন্দ।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভারতকে ছেড়ে কেন চীনের ঘনিষ্ঠ হচ্ছে শ্রীলঙ্কা?
রাজনৈতিক উত্তরণে অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করবে জাপান
প্রবাসী উপদেষ্টার আশ্বাসে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছুদের আন্দোলন স্থগিত
মহার্ঘভাতার সঙ্গে ভ্যাট বাড়ানোর কোনো সম্পর্ক নেই: অর্থ উপদেষ্টা
পুরো বইমেলা মনিটরিং হবে ড্রোনে-ডিএমপি কমিশনার
যানবাহন চালক-পথচারীদের জন্য ডিএমপির বিশেষ নির্দেশনা
মাস্ক বা অন্য কেউ টিকটক কিনলে বিনিয়োগ করবে প্রিন্স তালালের কোম্পানি
মৃত বাবার রেখে যাওয়া ঋণ পাওনাদার নিতে না চাওয়া প্রসঙ্গে?
খেলাধুলার মাধ্যমে তরুণদের শারীরিক ও মানসিক বিকশিত হয় -ডিসি তৌফিকুর রহমান
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিজিবি বিএসএফ বৈঠক
জিয়াউল হক মাইজভা-ারী ট্রাস্টের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান
অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তে সিলেটজুড়ে স্বস্তি
৪ দিনের রিমান্ডে সাবেক এমপি আবু রেজা নদভী
মাদারীপুরে জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবপাচারের আন্তঃসম্পর্কবিষয়ক কর্মশালা
রাজশাহীতে ছাত্রাবাসে ঢুকে সমন্বয়ককে মারধর
মাদারীপুরে হত্যার দায়ে ৫ জনের যাবজ্জীবন
এক বছরে উখিয়া-টেকনাফে ১৯২ জন অপহরণ
‘সমন্বয়ক মরার জন্য প্রস্তুত হ’ দেয়ালে লিখে হত্যার হুমকি
বিমানের এই কর্মকা- সহ্য করার মতো নয় -সিলেট সুধীজন
বাণিজ্যমেলায় শেষ মুহূর্তে নিত্যপণ্য কেনাকাটার ধুম