সাবেক আইনমন্ত্রীর ‘আইনি খড়গ’
৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৪৪ পিএম | আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৪৪ পিএম
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে উল্লেখ করেন সাবেক আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। এ সংক্রান্ত খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ছড়িয়ে পড়ে।
জিয়াউর রহমানকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বলায় আইনমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর এলাকার দেবগ্রামের বাসিন্দা শেখ মো. জাকির হোসেন। ফেসবুকে করা এক কমেন্টস এ তিনি প্রতিবাদ জানান। এরপরই তার উপর নেমে আসে ‘আইনী খড়গ’। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আইনমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কে কি লেখেন সেটা দেখার দায়িত্বে থাকা এক ব্যাংক কর্মকর্তা বিষয়টি আনিসুল হকের ঘনষ্টিজন আখাউড়ার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক তাকজিল খলিফা কাজলকে জানান। এরপরই পুলিশকে বলে বিএনপি সমর্থক জাকির হোসেনকে অন্য একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলে পাঠানো হয়। ২৮ দিন জেল খাটেন তিনি।
তবে শুধু বিএনপি নেতা-কর্মীই নন সাবেক আইনমন্ত্রীর ‘আইনী খড়গ’ থেকে রক্ষা পাননি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও। এমনকি আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শাহ আলমের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলার বেশিরভাগই আইনমন্ত্রী কিংবা তার ঘনিষ্টজনদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে লেখালেখির কারণে করা হয়।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৪ সালে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) সংসদীয় আসন থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মন্ত্রীত্বের দায়িত্ব পেয়ে যান আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের। মূলত রাজনীতিতে কোনো ধরণের ভুমিকা না থাকলেও পারিবারিক ঐতিহ্যের কারণে তিনি যথাযথ সম্মান পান। আনিসুল হকের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক ছিলেন দেশের সংবিধান প্রণেতাদের অন্যতম ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ট সহচর। তাঁর মা জাহনারা হকও ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা।
সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শাহ আলমের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে আনিসুল হককে নির্বাচনের মাঠে আনেন তৎকালীন যুবলীগ নেতা তাকজিল খলিফা কাজল। কম্বল বিতরণ, নৌকা বাইচের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করানোসহ বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে যুক্ত করানো হয় আনিসুল হককে।
দলীয় নেতা-কর্মীরা জানান, শুরু থেকে লেগে থাকার কারণে আনিসুল হক মন্ত্রী হওয়ার পর তাকজিল খলিফা একচ্ছত্র আধিপাত্য বিস্তার করতে থাকেন। পেশায় সহকর্মী অ্যাডভোকেট রাশেদুল কায়সার জীবনকে সহকারি একান্ত সচিব বানানোর পর তিনিও প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। এ নিয়ে রাশেদুল কায়সার ও তাকজিল খলিফার মধ্যে দ্বন্দও প্রকাশ্যে রূপ নেয়। বেশ কয়েকবার মন্ত্রীর সামনেই তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। একজন আরেকজনকে দুর্নীতিবাজ হিসেবে আখ্যায়িত করতেন। কসবায় রাশেদুল কায়সারের ও আখাউড়ায় তাকজিল খলিফার নির্দেশে চলতো সবকিছু।
তবে এ দু’জনই মন্ত্রীর প্রশ্নে ছিলেন আপোষহীন। কসবা ও আখাউড়ায় বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের হয়রানিসহ তাদেরকে চাপে রাখার কাজটি তারাই করতেন। দু’জনই আবার চাটুকার বেষ্টিত হয়ে থাকতেন। মূলত চাটুকাররা তাদেরকে দিক নির্দেশনা দিতেন কাদেরকে কিভাবে দমাতে হবে। তবে রাশেদুল কায়সার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর মন্ত্রীর সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে। সর্বশেষ নির্বাচনে মন্ত্রীর ফুফাত ভাই প্রার্থী হওয়া এবং একই সঙ্গে ‘ভোট ছাপিয়ে’ পাশ করার পর রাশেদুল কায়সার অনেকটাই দূরে সরে যান। তিন বছর যাবত কসবার নিয়ন্ত্রণ চলে আসে মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারি আলাউদ্দিন বাবু ও শফিকুল ইসলাম সোহাগের হাতে। দু’জনের মধ্যে আলাউদ্দিন বাবু মূলত দুই উপজেলারই রাজনীতি থেকে শুরু করে চাকরি দেওয়ার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করতেন।
এদিকে নেতা-কর্মীরা জানান, মন্ত্রী কিংবা তাঁর কোনো ঘনিষ্টজনদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে লেখা ছাড়াও সভা-সমাবেশে মন্তব্য করে হয়রানিমূলক মামলার শিকার হয়েছেন। দলীয় নেতা-কর্মীসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে কসবা ও আখাউড়া থানায় ডিজিটাল আইনে অন্তত ২০টির মতো মামলা-জিডি হয়। এসব মামলায় অনেককেই জেল খাটতে হয়েছে। এছাড়া মন্ত্রীর নামে ভুয়া ফেসবুক আইডি খোলার অভিযোগেও ঢাকাতে জিডি হয়।
সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের মার্চ মাসেই দু’দিনের বিরুদ্ধে সাতটি মামলা দায়ের করা হয় কসবা থানায়। রাশেদুল কায়সার ভুইয়া জীবনসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর ফেসবুক পোস্ট দেওয়ার অভিযাগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় এসব মামলা করা হয়। মামলায় আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য মো. শাহ আলম, এম.পি প্রার্থী শ্যামল রায়, সৈয়দ মো. মহসীন, তসলিমুর রেজাসহ বেশ কয়েকজনকে আসামী করা হয়। মামলা দায়েরের পর তাদের গ্রেপ্তার দাবিতে মিছিলও করা হয়।
২০২০ সালের জুন মাসে ‘হক কথা তিতা লাগে’ নামে একটি ফেসবুক আইডিতে তৎকালীন আইনমন্ত্রীকে নিয়ে কটুক্তি করায় মামলা হয়। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইব্রাহিম মিয়া বাদী হয়ে দায়ের করা মামলায় উপজেলার কায়েমপুর গ্রামের ইয়াকুব আলীর ছেলে মাঈন উদ্দিন সরকারকে আসামী করা হয়।
আনিসুল হকের বিরুদ্ধে বলায় ২০২০ সালের ২ জুলাই আখাউড়াতে ভিপি নূরের বিরুদ্ধে মিছিল হয়। মিছিল শেষে ভিপি নূরের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। এ সময় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
একাধিক সূত্র জানায়, এসব মামলা বা জিডি করার বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী সরাসরি কোনো হস্তক্ষেপ করতেন না। তবে তার অনুমতি নিয়েই এসব আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হতো। মামলা দিয়ে দলীয় লোকজনকে চাপে রাখায় তিনি এলাকায় সমালোচনার মুখেও পড়েন। এছাড়া এমনিতেই তিনি দুই উপজেলার দলের অনেক সিনিয়র নেতা-কর্মীকে বাদ দিয়ে রাজনীতি করতেন। মূলত দু’তিন জনের কথা মতো তিনি রাজনৈতিক বা উন্নয়ন বিষয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতেন।
আখাউড়া উপজেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব মো. খোরশেদ আলম ভুইয়া বলেন, ‘আমাদেরকে রাজনৈতিক কোনো কর্মকান্ড করতে দেওয়া হয়নি। উপরন্তু মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদেরকে হয়রানি করা হয়েছে। বৃদ্ধ বয়সে সিঁড়ি বেয়ে আদালতের চারতলা-পাঁচতলায় বেয়ে উঠতে গিয়ে অনেক সময় অসুস্থ হয়ে পড়েছি।’
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের মাটিতে যত খুন হয়েছে, বিচার বহির্ভূত হত্যকান্ড হয়েছে সবার বিচার এই মাটিতেই হবে; শামা ওবায়েদ
দস্তগীরের বানোয়াট প্রশ্নের সমুচিত জবাব দিলেন ম্যাথু মিলার
কেরানীগঞ্জে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ,আহত ১০
প্রধান উপদেষ্টাকে ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের আমন্ত্রণ
কুড়িগ্রামে ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার
দুই দিনের রিমান্ড শেষে নোয়াখালী-৪ সাবেক এমপি একরামুল কারাগারে
নড়াইলে গরু চোর সন্দেহে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা
চৌগাছায় পল্লী বিদ্যুতের নতুন সংযোগ বন্ধ, বিপাকে গ্রাহকরা
ভূয়া মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দিয়ে রাষ্ট্রের টাকার অপচয় করেছে আওয়ামী সরকার- বিএনপির কেন্দ্রীয় গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক শামীম
ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস খোলার চক্রান্ত রুখে দিতে হবে -ইসলামী আইনজীবী পরিষদ
ঐক্যবদ্ধ্য ভাবে চাঁদাবাজির মূল উৎসগুলো উৎপাটন করতে হবে ..সোনারগাঁওয়ে এস এম ওয়ালিউর রহমান আপেল
কেনাকাটা করতে গিয়ে বিপত্তি, খোদ ফরাসি রাষ্ট্রদূতের মোবাইল চুরি চাঁদনি চকে!
‘ছাত্র-জনতা দুস্কৃতিকারী’ বলার পুরস্কার সদর দফতরের অতিরিক্ত আইজিপি!
কেমন শিক্ষাঙ্গন চায় জানতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রদলের মতবিনিময়
পালিয়ে বিয়ে করে হয়রানির শিকার হয়েছিলেন কোক স্টুডিও তারকা
ব্রাহ্মণপাড়ায় সীরাতুন্নবী (সা.) মাহফিল অনুষ্ঠিত
ইসরাইলকে জব্দ করতে সামরিক বাজেট ৩ গুন বাড়াচ্ছে ইরান
ইবির চারুকলা বিভাগের নতুন সভাপতি ড. কামরুল
৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগের পতন তাদের দোসররা এখনো ঘাপটি মেরে আছে তাই সজাগ থাকতে হবে - বাদশা
শেরপুরে সেনাবাহিনী-মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিপ্তরের যৌথ অভিযানে ২ নারী গ্রেপ্তার গাঁজা-ইয়াবাসহ মাদকদ্রব্য ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার