সমকামীকতা বান্ধব আইনের খসড়া প্রণয়নের বিরুদ্ধে সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিবাদ

Daily Inqilab ময়মনসিংহ ব্যুরো

০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ এএম

 

সমকামীতা বান্ধব আইনের খসড়া প্রণয়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদসহ ১৪ দফা দাবি জানিয়েছে সচেতন নাগরিক সমাজ। সংগঠনটির অভিযোগ, অন্তর্বর্তী সরকারকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছে দ্রুত নির্বাচন দেয়ার জন্য। কিন্তু তাকে কোন আইন প্রণয়নের অধিকার দেয়া হয়নি এবং আইন প্রণয়নের কোন অধিকারও তার নেই।

শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে রাজধানীর মালিবাগ মোড় ফালইয়াফরাহু চত্বরে এসব কথা বলেন সংগঠনটির সদস্যরা।

সভায় বক্তারা বলেন, সম্প্রতি সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন-১৯৭৩ এর ৮টি ধারায় সংশোধনে খসড়া তৈরী করেছে। এর মধ্যে একটি ধারায় ‘লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা’ শব্দদ্বয় ব্যবহার করে, সমকামী বান্ধব ধারা সংযুক্ত করেছে, যার মাধ্যমে সমাজে সমকামীদের বিশেষ নিরাপত্তা দেয়া হবে এবং কেউ সমকামীতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে তাকে অপরাধী হিসেবে গণ্য করে শাস্তি দেয়া হবে।

পবিত্র কুরআন-সুন্নাহ অনুসারে সমকামীতা নিকৃষ্ট অপরাধ এবং বাংলাদেশের আইনেও নিষিদ্ধ। কিন্তু তারপরও সমকামী বান্ধব এ ধরনের আইন তৈরীর উদ্যোগ দেশের জনগণের দ্বীনি অনুভূতির বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর এক ষড়যন্ত্র। আমরা এর তীব্র ও নিন্দা প্রতিবাদ জানাই এবং সরকারের উচিত হবে অবিলম্বে উক্ত খসড়াটি বাতিলপূর্বক দেশ ও জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।

দেশ ও জাতির কল্যাণে সচেতন নাগরিক সমাজের ১৪ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে-

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুবারক শানে কোন কুলাঙ্গার মানহানী করলে তার শরঈ শাস্তি বাস্তবায়ন করতে হবে।

পাঠ্যক্রমে নূরে মুসজাসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং মহাসম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র জীবনী মুবারক অন্তর্ভূক্তকরণ এবং পবিত্র দ্বীন ইসলাম নির্ভর শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে। আরবী ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।

পবিত্র কুরআন সুন্নাহ বিরোধী কোন কুফরী আইন পাশ করা যাবে না। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন-১৯৭৩ সংশোধনের খসড়ায় সমকামীতার বিরুদ্ধাচারণকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করায়, খসড়াটি বাতিল করতে হবে। কোন আইন বা সংবিধানের ধারা সংস্কার করতে হলে অবশ্যই তা পবিত্র কুরআন-সুন্নাহের ভিত্তিতেই করতে হবে, এর ব্যতিক্রম করা যাবে না। তবে অবশ্যই হযরত খোলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের আদলে দেশ পরিচালনা করতে হবে। যা করলে সর্বোত্তমভাবে দেশ পরিচালিত হবে।

বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কোন অফিস স্থাপন করা যাবে না। বিদেশীদের কোনো অফিস বা ঘাটি এই দেশে করতে দেয়া যাবেনা।

দ্রব্যমূল্য ও চিকিৎসা সেবার উর্ধ্বগতি হ্রাস করতে হবে। মূল্য বা খরচ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে। দেশের ৪০ কোটিরও বেশি জনগণের খাদ্য, চিকিৎসা, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা এবং সাংসারিক জীবনযাত্রার খরচ কমাতে হবে। মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের নিশ্চয়তা দিতে হবে।

পাহাড়ে উপজাতিদের আদিবাসী বলা যাবে না। উপজাতিদের পৃথক রাষ্ট্র গঠনের ষড়যন্ত্র দমন করতে হবে। পাহাড়ে কথিত রাজার শাসনের অবসান ঘটাতে হবে। সারা দেশে একই আইনে শাসন চলবে, পার্বত্য এলাকায় ভিন্ন আইন চলবে না।

নারিকেল জিঞ্জিরা দ্বীপ ভ্রমণে সর্বপ্রকার নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে। সারা দেশে যেভাবে মানুষ প্রয়োজন মাফিক ভ্রমণ করতে পারে, নারিকেল জিঞ্জিরা দ্বীপেও একইভাবে সারাবছর ভ্রমণ করতে পারবে।

হিন্দুত্ববাদ ও ভারতসহ বিদেশী রাষ্ট্র তোষণ বন্ধ করতে হবে। ফিলিস্তিন, ভারতসহ পৃথিবীর যে প্রান্তেই মুসলিম নির্যাতন হবে সরকারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে তার প্রতিবাদ করতে হবে। নির্যাতিত মুসলমানদের সহযোগীতার জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ নিতে হবে।

জরায়ু ক্যানসার প্রতিরোধের টিকার নামে মেয়েদের বন্ধাত্ব তৈরী করা যাবে না। এইচপিভি টিকা কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। গত কয়েকদিন টিকা দিয়ে শেরপুর, চট্টগ্রাম, ভোলা, ঝিনাইদহ, পাবনা, ময়মনসিংহ, গাইবান্ধা, লক্ষীপুর, কুষ্টিয়া, পটুয়াখালীতে হাজার হাজার ছাত্রী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এবং অনেক ছাত্রী মারাও গেছে। এই সকল ছাত্রীদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। দেখা যাচ্ছে, এ টিকা দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরেও কিছু বিদেশী দালালরা মিথ্যা গুজব রটনা করছে। তাদের এ মিথ্যা রটনার জন্য তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। জনসংখ্যা জনসম্পদ এবং জনশক্তি। তাই জন্মনিয়ন্ত্রণের যাবতীয় পদ্ধতি বাতিল করতে হবে।

বাসাবাড়িতে নতুন গ্যাস সংযোগ দিতে হবে। অবৈধ সংযোগগুলোকে বৈধ ভাবে সংযুক্ত করলে রাষ্ট্রীয় আয়ও বাড়বে।

পলিথিন নিষিদ্ধ নয় রিসাইক্লিং পদ্ধতি চালু করতে হবে। পলিথিন ব্যবসার সাথে জড়িত কোটি কোটি মানুষের আর্থিক ক্ষতি করা চলবে না।

নদী ও সাগরে মাছধরার উপর কোন রূপ নিষেধাজ্ঞা দিয়ে জেলেদের রুটি-রুজির উপর আঘাত দেয়া চলবে না। সারা বছর মাছ ধরতে দিতে হবে।

ভারত থেকে পাথর আমদানি বন্ধ করতে হবে। দেশের প্রয়োজনীয় বালি-পাথর দেশের উতস থেকেই উত্তোলন করতে হবে। এজন্য বাংলাদেশের পাথর ও বালি উত্তোলনে কোন নিষেধাজ্ঞা দেয়া যাবে না। সর্ব প্রকার নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে। এই কাজের জড়িত কোটি কোটি বেকার লোককে কর্মে ফিরিয়ে আনতে হবে।

মুসলমানদের বাক স্বাধীনতা হরণ না করা:
সবাই নিজেদের অধিকারের কথা বলতে পারলে মুসলমানরা কেন বলতে পারবে না? মুসলমানদেরকেও নিজেদের অধিকারের কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। কিছুতেই মুসলমানদের বাক স্বাধীনতা হরণ করা চলবে না।

প্রতিবাদ সমাবেশে সচেতন নাগরিক সমাজের শতাধিক কর্মী এবং দুই শতাধিক আম জনতা উপস্থিত ছিলেন।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

তদন্তের কমিটির কাজ চলমান অবস্থায় ডা: শামীমকে ওএসডি
প্রখ্যাত ইসলামী বক্তা মাওলানা মুফতি মো. বজলুর রশীদ মিঞার বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় প্রতারণার মামলা
রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দিনের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত
অপ-সাংবাদিকতা রোধে যৌথভাবে মোকাবিলা করার প্রত্যয়
সাতক্ষীরায় আট কোটি টাকার ট্রাক ভর্তি ভারতীয় শাড়িসহ বিভিন্ন পণ্য আটক
আরও
X

আরও পড়ুন

তদন্তের কমিটির কাজ চলমান অবস্থায় ডা: শামীমকে ওএসডি

তদন্তের কমিটির কাজ চলমান অবস্থায় ডা: শামীমকে ওএসডি

প্রখ্যাত ইসলামী বক্তা মাওলানা মুফতি মো. বজলুর রশীদ মিঞার বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় প্রতারণার মামলা

প্রখ্যাত ইসলামী বক্তা মাওলানা মুফতি মো. বজলুর রশীদ মিঞার বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় প্রতারণার মামলা

রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দিনের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত

রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দিনের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত

অপ-সাংবাদিকতা রোধে যৌথভাবে মোকাবিলা করার প্রত্যয়

অপ-সাংবাদিকতা রোধে যৌথভাবে মোকাবিলা করার প্রত্যয়

মৌলিক সংস্কার না হলে নির্বাচনে অংশ না-ও নিতে পারে এনসিপি: নাহিদ

মৌলিক সংস্কার না হলে নির্বাচনে অংশ না-ও নিতে পারে এনসিপি: নাহিদ

সাতক্ষীরায় আট কোটি টাকার ট্রাক ভর্তি ভারতীয় শাড়িসহ বিভিন্ন পণ্য আটক

সাতক্ষীরায় আট কোটি টাকার ট্রাক ভর্তি ভারতীয় শাড়িসহ বিভিন্ন পণ্য আটক

বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে অস্থিরতা, নতুন রেকর্ড

বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে অস্থিরতা, নতুন রেকর্ড

রাবিতে ১৫ বছরের দুর্নীতি-অনিয়মের খোঁজে বিশেষ কমিটি, টার্গেটে নিয়োগ ও উন্নয়ন প্রকল্প

রাবিতে ১৫ বছরের দুর্নীতি-অনিয়মের খোঁজে বিশেষ কমিটি, টার্গেটে নিয়োগ ও উন্নয়ন প্রকল্প

বিশ্বের ঘৃণিত দেশের তালিকায় ভারতের নাম, শীর্ষে রয়েছে আরও যেসব দেশ

বিশ্বের ঘৃণিত দেশের তালিকায় ভারতের নাম, শীর্ষে রয়েছে আরও যেসব দেশ

কসবায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে দুজনের মৃত্যু

কসবায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে দুজনের মৃত্যু

এবার রেলপথ অবরোধের ঘোষণা পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের

এবার রেলপথ অবরোধের ঘোষণা পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের

এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমরা উড্ডয়ন শুরু করে  ফেলেছি নামার সুযোগ নেই : পরিসংখ্যান সচিব

এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমরা উড্ডয়ন শুরু করে ফেলেছি নামার সুযোগ নেই : পরিসংখ্যান সচিব

ইসরায়েলের প্রস্তাবে রাজি নয় হামাস, চায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি

ইসরায়েলের প্রস্তাবে রাজি নয় হামাস, চায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি

বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য নতুন নির্দেশনা

বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য নতুন নির্দেশনা

লক্ষ্মীপুরে অবৈধভাবে চিপস-চানাচুর-আইসক্রিম তৈরি, দুই কারখানার ৩ লাখ টাকা জরিমানা

লক্ষ্মীপুরে অবৈধভাবে চিপস-চানাচুর-আইসক্রিম তৈরি, দুই কারখানার ৩ লাখ টাকা জরিমানা

কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অবকাঠামো উন্নয়নে উদ্যোগ নিতে হবে: ব্যারিস্টার ফুয়াদ

কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অবকাঠামো উন্নয়নে উদ্যোগ নিতে হবে: ব্যারিস্টার ফুয়াদ

দাউদকান্দিতে ছাত্র আন্দোলনে নিহত বাবু হত্যা মামলার আসামীসহ গ্রেফতার -৩

দাউদকান্দিতে ছাত্র আন্দোলনে নিহত বাবু হত্যা মামলার আসামীসহ গ্রেফতার -৩

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে সিলেটে কর আইনজীবী সমিতির মানববন্ধন

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে সিলেটে কর আইনজীবী সমিতির মানববন্ধন

প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শন ঐতিহাসিক বংশীপুর শাহী মসজিদ

প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শন ঐতিহাসিক বংশীপুর শাহী মসজিদ

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ গ্রেপ্তার করছে না প্রশাসন ; ছাত্রদল নেতা সালাউদ্দিন

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ গ্রেপ্তার করছে না প্রশাসন ; ছাত্রদল নেতা সালাউদ্দিন