আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় আতঙ্কে ভুক্তভোগীর পরিবার
১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে মোঃ লিটন (৪০) নামের এক মুদি ব্যবসায়ীর ওপর হামলা চালিয়েছে মারধর করেছে দৃবত্তরা। এ সময় ভুক্তভোগীর পাঁচ শতক জমির ওপর নির্মিত স্থাপনার (গ্যারেজ) প্রাচীর ভাঙচুর করে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভাঙচুরে বাধা ও স্বামীকে বাচাতে গিয়ে শীলতাহানির স্বীকার হন স্ত্রী নাজমিন আক্তার। হামলার সময় আহত হয় ভুক্তভোগীর অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে লিজানও (১৪)।
গত শনিবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে মানিকগঞ্জ পৌরসভার পশ্চিম দাশরা এলাকার শুরুন্ডী গ্রামের এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরে ভুক্তভোগী মুদি ব্যবসায়ী লিটনের স্ত্রী নাজমিন আক্তার বাঁদি হয়ে সদর থানায় দশ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মামলা রুজু করে। তবে ঘটনার চার দিন পার হলেও মামলার অভিযুক্ত হাবলুসহ কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এতে আতঙ্কে দিন কাটছে ভুক্তভোগী পরিবারটির।
মঙ্গলবার(১১ ডিসেম্বর) দুপুরে সরজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, পাঁচ শতক জমির উপর চারদিকে ইটের প্রাচীর দিয়ে নির্মিত গ্যারেজটি ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভুক্তভোগীর ব্যবহার করা একটি মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করা হয়েছে। অভিযুক্ত হাবলু স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় প্রতিবেশীরাও তার অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পান না। দিনে দুপুরে একজনের গ্যারেজ এভাবে ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়ার পরও স্থানীয় কেউ তার কুকর্মের কথা গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে বলতে রাজি হননি।
পুলিশ ও মামলার এজাহারা সূত্রে জানা গেছে, জমি সংক্রান্ত বিরোধ এবং পূর্ব শত্রুতার জেরে দীর্ঘদিন ধরে হাবিব দেওয়ান ওরফে হাবলু সাথে ভুক্তভোগী লিটনের দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এর জের ধরে গত শনিবার(৭ ডিসেম্বর) হাবলু তার লোকজন নিয়ে এসে স্থাপনা থেকে সরে যেতে বলে এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এর এক পর্যায়ে তার লোকজন স্থাপনাটি ভাঙতে শুরু করলে লিটন ও তার পরিবারের সদস্যরা বাধা দেয়। পরে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে তাকে মারধর করলে তার স্ত্রী নাজমিন ও ছেলে লিজান এগিয়ে আসে। পরে ভুক্তভোগী স্ত্রীকে টানা হেঁচড়া সহ শীলতাহীনের চেষ্টা করা হয় এবং ছেলেকে মারধর করে হাবলুর লোকজন। এর পর স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসার পর হাবলু ও তার লোকজন ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। এর পর আহত লিটনকে উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনার পরে ভুক্তভোগীর স্ত্রী সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করলে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। অভিযোগটি তদন্ত করে মামলা রুজু করা হয়। তবে মামলা হওয়ার পরেও ঘটনার চার দিন চলে গেলেও মামলার এজাহারভুক্ত হাবলুসহ কোনো আসামিকে এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাবিব দেওয়ান ওরফে হাবলু বিগত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। তার দাপটে এলাকার সাধারণ মানুষ সব সময় ভয়ে থাকতো এবং সুদের ব্যবসা করতো। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার স্থানীয় কয়েকজন বলেন, হাবলু আওয়ামী লীগের নেতা আপেল ও আবদুস সালাম ওরফে টিন সালামের সঙ্গে রাজনীতি করেছে। এখন বিএনপির নেতাদের সঙ্গে মিলতাল দিয়ে চলছে।
ভুক্তভোগীর বাবা মোঃ পলান (৭০) বলে, আমি ভোগসত্ব হিসেবে এই জমিটুকু আমার স্ত্রীকে লিখে দিয়েছিলাম। আমার স্ত্রী মূর্খ মানুষ কিছুই বুঝে না। হাবলু তার কাছ থেকে জোর করে জমিটুকু লিখে নিছে। ভোগসত্ব জমি তো সে বিক্রি করতে পারে না। আমার স্ত্রী এই জমি বিক্রির কোনো টাকাও পায় নাই, সে জানেও না জমিটা হাবলু লিখে নিছে। জাল দলিল করে হাবলু জমি লিখে নিয়েছে আর এ বিষয়ে আদালতে মামলাও চলমান।'
তিনি বলেন, 'আমার ছেলের বউ এবং ছোট নাতিকে ওরা (হাবলু গং) মারধর করেছে। আমার শার্টের কলার ধরে রেখেছিল আমার চোখের সামনেই আমার ছেলেকে মারছে। এই ঘটনায় মামলা করে আসার পরও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করে নাই। আমরা খুবই ভয়ে আছি।'
মামলার বাদী নাজমিন আক্তার বলেন, 'চারদিন হলেও এখনো পর্যন্ত কোনো আসামী গ্রেপ্তার হয়নি। ঘটনার পর পুলিশ একবার আসছিল। হাবলু ও তার লোকজন এখনো এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমাদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে, হুমকি দিচ্ছে। পরিবার নিয়ে খুবই আতঙ্কে আছি, আমরা গরীব মানুষ। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনগতভাবে সুষ্ঠু বিচারের দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত হাবিব দেওয়ান ওরফে হাবলু বলেন, ওই জমিটি আমার, আমার জমিতে ওরা জোর করে প্রাচীর করেছে। আমার জায়গায় অন্যকেউ দখল করবে, সেটা তো আমি হতে দেবো না। প্রাচীর ভাঙচুরের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, আমার জায়গার প্রাচীর আমি লোকজন নিয়ে ভেঙে দিয়েছি। তবে ভুক্তভোগী লিটন ও তার পরিবারের সদস্যদের মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। আওয়ামী লীগ রাজনীতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কোনো দলের রাজনীতি করি না। তবে মনে মনে বিএনপিকে সমর্থন করি। যারা বলতে আমি আপেল বা সালামের সঙ্গে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছি, সেটা মিথ্যা।
সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এসএম আমানুল্লাহ বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্ত্রী বাঁদি হয়ে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শেরপুরে প্রবীণ হিতৈষী সংঘের শীতবস্ত্র বিতরণ
সিংগাইরে কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত
ঢাবি প্রক্টরের সঙ্গে বাম ছাত্রনেতাদের মারমুখি আচরণ
মুদ্রাস্ফীতি ও ভ্যাট বাড়ানোর ইস্যুতে শনিবার বিএনপির সংবাদ সম্মেলন
নৌঘাটের চাঁদাবাজি বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ নৌপরিবহন উপদেষ্টার
আন্তর্জাতিক সম্মাননা পেলেন জহিরুল ইসলাম
বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক ইতিবাচক দিকে এগিয়ে নিতে চায় ভারত
তিন দল নিয়ে হচ্ছে মেয়েদের বিপিএল
ইসরায়েলের মন্ত্রিসভায় গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির অনুমোদন
ইরানে হিফজ প্রতিযোগিতা: বিকলাঙ্গ হাফেজসহ বাদ ২ প্রার্থী
সিলসের ছোবল সামলে শাকিল-রিজওয়ানের দৃঢ়তা
সুরেক্স’র কমিটি পরিচিতি ও বার্ষিক বনভোজন ৭ ফেব্রুয়ারি
বকেয়া বেতনের দাবিতে নবীনগর- চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ
বিএনপি চাঁদাবাজের দল নয়: দিপু হায়দার
তারকা হওয়ার সব গুনাবলী আছে নাহিদ রানার মধ্যে: আর্থার
গুমের তদন্ত করে বিচারের প্রতিশ্রুতি: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশংসা করল হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
বাংলাদেশের একটি আইসিসি ট্রফি দরকার: আর্থার
নেপালি মেয়েকে ব্ল্যাকমেইল, যুবককে গ্রেফতার করলো সিআইডি
ওমরাহ পালন করতে গিয়ে মতলবের বৃদ্ধের মৃত্যু
বৈষম্যহীন দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ কায়েম না হওয়া পর্যন্ত থামবো না: ডা. শফিকুর রহমান