ছাত্রসমাজের দাবি: গণতন্ত্রের পথে আওয়ামী লীগের বিচার জরুরি
১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৫১ পিএম | আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৫১ পিএম
বাংলাদেশের রাজনীতিতে তরুণ ও শিক্ষিত সমাজের মতামত সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দৈনিক ইনকিলাব পরিচালিত সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের বড় একটি অংশ আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। দেশের বেশিরভাগ জনগণ আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের বিপক্ষে মত দিয়েছেন। বিশেষত তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এই মতামত প্রবলভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের বিপক্ষে তরুণ প্রজন্ম। আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে তাদেরকে রাজনৈতিক দল হিসেবে মানতে নারাজ তারা। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়ার পরিবর্তে আওয়ামী লীগের বিচার দাবি করেন জেন-জিরা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজের শিক্ষার্থী তানভীর খান তরুণ বলেন, আওয়ামী লীগ মাত্র ৩৫ দিনে প্রায় দুই হাজার ছাত্র জনতাকে গুলি করে হত্যা করেছে, আরও ৩০-৪০ হাজার মানুষের অঙ্গহানি ঘটিয়েছে, ৭ শতাধিক ছাত্রের চোখ কেড়ে নিয়েছে। এতে তাদের বিন্দুমাত্র অনুসূচনা নেই, তাদের নেত্রী বিদেশে বসে একের পর এক দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে চলেছে। যে দলটির প্রধান থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের কর্মী পর্যন্ত গণহত্যার সমর্থক, আমার মনে হয় না এই দেশের মানুষ তাদের বিচারের আগে অ্যাকসেপ্ট করবে। এছাড়া আওয়ামী লীগের গত প্রায় ১৬ বছর লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার দূর্নীতি, মানি লন্ডারিং, হত্যা, গুমের জন্য পৃথিবীর ইতিহাসে কলঙ্কিত হয়ে থাকবে। এমন সন্ত্রাসী দলটি কোনোমতেই নতুন বাংলাদেশে নির্বাচন করার অধিকার রাখে না।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী মোসাব্বিরুল আজিজ আসিফ বলেন, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর, ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিনা ভোটের পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করাই হয়ে ওঠে আওয়ামী জোটের প্রধান লক্ষ্য। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একদলীয় নির্বাচনে ১৫৩ জন অটো এমপি নিয়ে তারা ক্ষমতায় আসে। পরবর্তীতে, ২০১৮ সালে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিরোধী জোটকে নির্বাচন এনে সারাদেশে ভোট-ডাকাতি করে আওয়ামীলীগ। সবশেষ ২০২৪ সালে ডামি নির্বাচন করে ন্যক্কারজনক ইতিহাস জন্ম দেয়। দেশব্যাপী স্বৈরতন্ত্র কায়েম,জনগনের ভোটাধিকার হরণ, অর্থ পাচার, বিরোধী মতকে দমন-পীড়নসহ এমন কোনো ঘৃণিত কাজ নেই যা আওয়ামীলীগ করেনি। তাই আমি মনে করি, অদূর ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের সুযোগ দেওয়া না হোক।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মেশকাত মিশু বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল না, আওয়ামী লীগ হলো একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। যারা বাংলাদেশে রাষ্ট্র কাঠামো ও সরকার ব্যবস্থা নষ্ট করে দিয়েছিলো ও পুরোপুরি দখল করে নিয়েছিলো। তাদেরকে নিয়ে রাজনীতি করার কিছুই নেই, তাদের রাজনীতি করতে হয়,তাহলে তাদের রাজনৈতিক দল হিসেবেই আসতে হবে। রাজনৈতিক দলের যে চরিত্র, যে গুণাবলি, যে কার্যক্রম যেটাতে তাদের ফিরতে হবে। তাদের গণতন্ত্রে ও মানুষের ক্ষমতায় বিশ্বাস করতে হবে। এ বিষয়গুলো এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করার কোনো লক্ষণ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। এতবড় একটি গণহত্যা চালানোর পর তারা কোন মুখে মানুষের সামনে রাজনীতি করতে যাবে? এ জিনিটাতো আওয়ামী লীগকে সলভ করে আসতে হবে। এখন এতবড় গণহত্যা চালানোর পর ৪ মাস হয়ে গেলো কিন্তু তাদের মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই। তারা কি বিষয়টি দেখার পর ও না দেখার ভান করছে নাকি, নাকি তাদের কৃতকর্মটিকে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার পায়তারন করতেছে মানবাধিকার ও গণহত্যা চালিয়ে। আওয়ামী হলো একটি সামাজিক সমস্যা যেটি আমাদেরকে দীর্ঘদিন ডিস্টার্ব করবে সর্বহারাদের মতো।
সর্বহারারা যেভাবে চুরি, ডাকাতির মতো খুন ও রক্তপাতের সাথে জড়িত ছিলো ঠিক সর্বহারাদের মতো তারা বাংলাদেশকে বিভিন্নভাবে ডিস্টার্ব করবে। আওয়ামী লীগকে সামাজিকভাবেই বয়কট করতে হবে, রাজনৈতিকভাবে তো অবশ্যই বয়কট করতে হবে। সামাজিকভাবে আওয়ামী লীগকে চিহ্নিত করে প্রত্যেকটি নেতৃত্বস্থানীয় জায়গা থেকে উৎখা করতে হবে। বাংলাদেশের যেসব রাজনৈতিক পক্ষগুলো আছেন যারা বাংলাদেশকে ভালোবাসে, যারা গণতন্ত্র ও সুস্থ ধারার রাজনীতি চায় এবং একটি প্রগতিশীল বাংলাদেশ চায় তাদের সবাইকে একটি কমন আন্ডারস্ট্যান্ডিং জায়গায় আসতে হবে যে আওয়ামী লীগের প্রশ্নে তাদের অবস্থান কি হবে? তাদেরকে নিয়ে রাজনীতি করা হবে কি, হবে না, এই জায়গায় তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে।
লুটপাট এবং সন্ত্রাসী দল আওয়ামী লীগ দেশের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে। সুষ্ঠু বিচারের পর যদি তারা মাফ পায়, তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। অন্যথায় তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিত নয় বলে জানিয়েছন বিশ্লেষকগণ।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার, আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতেখার আলম মাসুদ বলেন, ফ্যাসিবাদী কায়দায় চাপিয়ে দেয়া কোনো কিছু যেকোনোভাবে টেকানো যায় না এটা তার প্রমাণ। আওয়ামী লীগ তাদের দলীয় এজেন্ডাকে যেভাবে জাতির সামনে উপস্থাপন করেছে ইতিহাসের চরম বিকৃতি ঘটিয়ে। অনেক ইতিহাস থেকে চাপিয়ে দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতীতে তারা সীমা ছাড়িয়ে গেছে। তাদের দলীয় নেতাকে হাইলাইট করার জন্য ২৫ জন নেতাকে তারা বিতর্কিত করেছে। তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশ তাদের চাপিয়ে দেয়া ইতিহাস ছাড়া কিছু জানে না। ২৪শে যে গণঅভ্যুত্থান সেটা কিন্তু তরুণরা এনেছে এবং তাদের চাপিয়ে দেওয়া ইতিহাস একদম ধ্বসে পড়েছে। তারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। ফ্যাসিবাদের চাপিয়ে দেওয়া ইতিহাস কখনো চলেনি পৃথিবীতে সেটা আবারও প্রমাণ করে দিলো তারা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. আমজাদ হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা জবরদখল করে রেখেছে এবং ইতিহাসের সবচেয়ে ঘৃণিত ফ্যাসিবাদী দল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। দলীয় বিবেচনায় ব্যাংক সেক্টর লুটপাট করেছে, বিশেষত এস আলমের সহযোগিতায় ইসলামি ব্যাংকগুলোর লুটপাট নজিরবিহীন। ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের ভুয়া নির্বাচন তাদের স্বৈরতন্ত্রের চূড়ান্ত উদাহরণ। সাম্প্রতিক আন্দোলনে তাদের পতন ঘটেছে এবং শেখ হাসিনাসহ দলের সকল ফ্যাসিস্টদের বিচারের আওতায় আনা জরুরি। তিনি বলেন, “সুষ্ঠু বিচারের পর যদি তারা মাফ পায়, তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। অন্যথায় তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিত নয়।”
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক দেশের ভিসা
মেডিকেল কলেজে শিক্ষক বাড়ানোর কথা ভাবছে সরকার
ছাত্রদলের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি আজ
গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠনে ১০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন
অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে তাকিয়ে ইইউ
ভারতের উদ্বেগের মধ্যে হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে পাকিস্তান
সান্ত¡না খুঁজে পাচ্ছেন না, দুই দেশে কলঙ্কিত টিউলিপ
দুর্নীতির মামলায় ইমরান খান ও বুশরা বিবির কারাদণ্ড
বিদেশে টাকা পাচারের রাজনীতি মানুষ চায় না : পীর সাহেব চরমোনাই
শেখ পরিবারের রক্তের জন্যই দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন টিউলিপ -রিজভী
নামাজ মু’মিনের জন্য মেরাজস্বরূপ
ক্রেডিট কার্ডে বিদেশে বাংলাদেশিদের লেনদেন কমেছে
স্বনির্ভর অর্থনীতির পথে দেশ
বগুড়ার বিমানবন্দর দ্রুত চালুর দাবি
আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বাংলাদেশকে মানবাধিকার লংঘন বন্ধ করতে হবে : হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
হাজারীবাগের ট্যানারির গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড
জুলাই বিপ্লব ঘোষণাপত্র দেওয়া জরুরি : নুরুল হক নুর
গণঅভ্যুত্থানের ইশতেহারে বিএনপির ভূমিকা লিখতে হবে : জয়নুল আবদিন
নির্বাচনে রাজনৈতিক নেতাদের পরিবেশ রক্ষায় প্রতিশ্রুতি দিতে হবে
ব্যবসা বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রে অফিস খুলবে