কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় আতঙ্কের আরেক নাম অবৈধ ট্রলি ট্রাক্টর। দিন-রাত আঞ্চলিক সড়কসহ গ্রামের অলিগলিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব অবৈধ ট্রলি ট্রাক্টর। এসব ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচলের কারণে প্রায় দুর্ঘটনা শিকার হচ্ছে পথচারীর সহ-সাধারণ মানুষ। বেপরোয়া গতি ও শব্দে আতঙ্কে থাকতে হয় ছোট যাবাহনসহ পথচারীদের। বিকট আওয়াজে কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ মানুষের বুক ধরফর শুরু করে দেয়।
গত ২১ ডিসেম্বর বেপরোয়া ট্রাক্টরের চাপায় উপজেলার চান্দলা এলাকার সজীব নামে এক কলেজ ছাত্রের মৃত্যু হয়। এসব অবৈধ যান প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে চলাচল করলেও অদৃশ্য কোনো কারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না প্রশাসন।
এছাড়া আঞ্চলিক ও গ্রামের কাঁচা-পাকা সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ার বেশিরভাগ অংশে দায়ী করা হয় এসব ট্রাক্টরকে। আঞ্চলিক সড়ক গুলো সরু হওয়ায় এসব সড়কে অন্যান্য যানবাহন চলাচল ও ক্রসিং করতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়। এসব ট্রাক্টরের বিরুদ্ধে কথা বললে ট্রাক্টরের ড্রাইভার ও মালিকদের রোশানলে পড়তে হয় সাধারণ মানুষের।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, অবৈধ ট্রলি ট্রাক্টর দিন-রাত ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার অলিগলিসহ আঞ্চলিক মহাসড়কে চলাচল করছে। সরকারী ভাবে এসব ট্রাক্টর জমিতে চাষাবাদ করার অনুমোদন থাকলেও অসাধু মালিকগণ ট্রলি জুড়ে দিয়ে ইট, বালু সিমেন্ট, রডসহ অন্যান্য ভারী জিনিসপত্র বহনে ব্যবহার করছে। ট্রাক্টরের ট্রলি গুলোতে বহনের সক্ষমতার চেয়ে দেড় থেকে দুই গুণ বেশি মালামাল বহন করছে। ফলে সড়ক মহাসড়ক গুলোতে পিচ উঠে গিয়ে ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে সড়কগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
এসব ট্রাক্টারের রাস্তায় চলাচলের নেই কোন বৈধতা এবং ড্রাইভারদের নেই কোন লাইসেন্স। অনুমোদন না থাকলেও তারা দাপিয়ে বেড়ায় সড়ক মহাসড়কে। এসব ট্রাক্টর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহার হয় বিভিন্ন ইট ভাটায় এবং রড সিমেন্টের দোকানগুলোতে। এছাড়া সাধারণ মানুষও কম খরচে পরিবহন করা যায় দেখে এসব ট্রাক্টর ব্যবহার করে।
ট্রাক্টর গুলো জমিতে হাল চাষ করার কথা থাকলেও মালিকগণ বেশি আয়ের আশায় বিভিন্ন ট্রলি জোরে দিয়ে ইট, বালু সিমেন্ট, পরিবহনে সারা বছর ব্যস্ত থাকে। এ সকল মালামাল পরিবহন করার সময় রাস্তায় সাধারণ মানুষের চলাচলের সময় নাকে চোখে ধুলাবালি পরে। ফলে হাঁচি কাশিসহ শ্বাস কষ্টের মতো রোগ দেখা দেয়।
মিজানুর রহমান,রিয়াজ উদ্দিন, ফয়েজ ইসলামসহ কয়েকজন বলেন, ট্রাক্টর যাওয়া-আসার সময় রাস্তার পাশে বাড়িঘর কাঁপতে থাকে। ট্রাক্টরের বেপরোয়া গতির কারণে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে খুব ভয় হয়। কখন যে ট্রাক্টরের চাকায় পিষে যায় এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকি। কারণ প্রায়ই ট্রাক্টর দুর্ঘটনায় বিভিন্ন স্থানের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।
উপজেলার চান্দলা এলাকার বাসিন্দা পলাশ বলেন, বেপরোয়া এই ট্রাক্টর এর কারণে গত ২১ ডিসেম্বর আমার ছোট ভাই সজীবকে হারাতে হয়েছে। সজীব রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় বেপরোয়া ট্রাকটি ধাক্কা মেরে পাশে ফেলে দিলে সে সাথে সাথে মারা যায়। আমি চাই আমার ভাইয়ের মতো এ ধরনের মৃত্যু যেন না হয়।
ব্রাহ্মণপাড়া সিদলাই আমির হোসেন জোবেদা ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, ট্রাক্টরের চলাচলের সময় স্কুল কলেজের ছেলে মেয়েরা প্রায় আতঙ্কিত হয়ে পরে। শব্দের কারণে বুক ধরফর করে। ভয়ে তারা রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকে। এছাড়া বেপরোয়া ট্রাক্টরের আতঙ্কে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা অভিভাবক ছাড়া স্কুলে যেতে চায়না।
এ ব্যাপারে সচেতন মহল মনে করে এসব ট্রলি ট্রাক্টর বন্ধ হওয়া উচিত। না হয় যে কোন সময় আরো অনেকের জীবন যাবে। এছাড়া কর্তৃপক্ষ চাইলে গভীর রাতে চলাচল করতে পারে। এ বিষয়ে ব্রাহ্মণপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ দেলোয়ার হোসেন বলেন, এ ট্রাক্টর মূলত জমিতে হালচাষ করার জন্য অনুমতি আছে কিন্তু ব্রাহ্মণপাড়া হরহামেশাই দেখা যায় বিভিন্ন পরিবহনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। আমার অচিরেই এ ট্রাক্টর বন্ধের ব্যপারে প্রশাসনে সাথে আলোচনা করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এ ব্যপারে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সামিউল ইসলাম বলেন, ব্রাহ্মণপাড়া যত অবৈধ যানবাহন আছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ভ্রাম্যমান আদালতে মাধ্যমে জরিমানা করব এবং ভবিষ্যতে যেন এসব যানবাহন রাস্তায় চলাচল করতে না পারে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করব।