কুতুবউদ্দিন আইবেকের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ-১
২৫ মে ২০২৩, ১১:৪৯ পিএম | আপডেট: ২৫ মে ২০২৩, ১১:৪৯ পিএম

ভারতে মুসলিম রাজত্ব প্রতিষ্ঠার পেছনে কুতুবউদ্দিন আইবেকের ভূমিকা ও অবদান অবিস্মরণীয়। সুলতান মুহম্মদ ঘুরীর সিপাহসালার এবং ভারতে তার প্রতিনিধি হিসেবে কুতুবউদ্দিন আইবেকের প্রধান লক্ষ্য ছিল মুসলিম শাসন নিরাপদ ও নিরঙ্কুশ করা। কার্যত তিনিই বিভিন্ন রাজ্য বিজয়ের মধ্য দিয়ে দিল্লীকেন্দ্রিক সালতানাত প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি সমকালীন বিশ্বের অন্যতম সেরা সিপাহসালারই ছিলেন না, শ্রেষ্ঠ শাসকও ছিলেন। ন্যায়বিচারক হিসেবেও তার বিপুল খ্যাতি ছিল। দানশীলতায় ছিলেন কিংবদন্তি। তিনি ধার্মিক ছিলেন। আওলিয়া-দরবেশদের সেবক ও অনুরাগী ছিলেন। তিনি বিদ্যোৎসাহী ও জ্ঞানীগুণীর পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। দিল্লীতে তিনি প্রথম মসজিদ নির্মাণ করেন, যার নাম ছিল ‘কুওয়াতুল ইসলাম’ বা ‘ইসলামের শক্তি’। তিনি মুসলিম বিজয়ের স্মৃতি চির-জাগরূক রাখার জন্য নির্মাণ করেন বিস্ময়কর এক মিনার, যার নাম কুতুবমিনার।
সাধারণত মুসলিম বিজেতারা কোনো অমুসলিম রাজ্য অধিকার করলে প্রথম কর্তৃব্য হিসেবে সেখানে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। বিশ্বের যেখানেই মুসলিম বিজেতারা দখল ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন, সেখানেই এটা লক্ষ করা গেছে। শুধু তাই নয়, বিশ্বের যেখানেই মুসলমানরা বসতি স্থাপন করেছে, সেখানেই সর্বপ্রথম মসজিদ নির্মাণ করেছে। দিল্লীতে কুতুবউদ্দিন আইবেকের কুওয়াতুল ইসলাম মসজিদ প্রতিষ্ঠা তাই নতুন কোনো ঘটনা নয়। সৌন্দর্য, উচ্চতা ও বিশালতার দিক দিয়ে মসজিদটি অনন্যসাধারণ। স্থাপত্যকলার বিচারে অতুলনীয়। অবশ্যই কুতুবমিনার অতুল্য এক স্থাপত্যকীর্তি। জানা যায়, আফগানিস্তানের জাম মিনারের অনুকরণে এটি তৈরি। সে সময় আফগানিস্তানসহ কোনো কোনো এলাকায় মুসলিম বিজেতারা বিজয়স্তম্ভ হিসেবে মিনার নির্মাণ করতেন। কুতুবমিনার ভারতে মুসলিম বিজয়ের স্মারক। ইট ও বেলে পাথরে নির্মিত এ মিনার বিশ্বে সর্বোচ্চ মিনার হিসেবে গণ্য। ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ইলতুতমিশের শাসনামলে মিনারের নির্মাণ সমাপ্ত হয়। আর আলাউদ্দিন খিলজীর শাসনামলে প্রাঙ্গন ও বহিরাঙ্গনের কাজ শেষ হয়। (গত লেখায় এ ব্যাপারে বিস্তারিত উল্লেখ আছে।) কুতুবমিনার কমপ্লেক্স, যার মধ্যে কুওয়াতুল ইসলাম মসজিদসহ আরো বিভিন্ন স্থাপনা রয়েছে; ভারতেরই শুধু নয়, বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবেও এটি খ্যাত। ইউনেস্কো একে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। শত শত বছর ধরে বিশ্বের অন্যতম বিস্ময় ও পর্যটন-আকর্ষণ এই কমপ্লেক্স দেখতে প্রতিদিন অগনিত মানুষ ভীড় করে।
অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, কথিত মসজিদ ও মিনারকে বিতর্কিত করার, মুসলিম বিজয়ের এই দুই প্রতীক ও ঐতিহাসিক নিদর্শনকে মুছে ফেলার সক্রিয় তৎপরতা চলছে। উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই তৎপরতা জোরদার হয়েছে। এক শ্রেণীর ভারতীয় ও ব্রিটিশ ইতিহাস লেখকের বক্তব্য, কুওয়াতুল মসজিদ ও কুতুবমিনার মন্দির ভেঙ্গে মন্দিরের উপকরণ দিয়ে তৈরি হয়েছে। ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর বিবিসি বাংলা এক রিপোর্টে জানায়: ঐতিহাসিক স্থাপত্য কুতুবমিনার প্রাঙ্গনে অতীতে হিন্দু ও জৈন মন্দিরের অস্তিত্ব ছিল বলে দাবি জানিয়ে মামলা করেছেন দু’জন আইনজীবী। তারা কথিত মন্দিরে পূজা ও উপাসনা করার অধিকার চেয়েছেন। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ তাদের দাবিতে সমর্থন জানিয়েছে। বিবিসি রিপোর্টে ঐতিহাসিকদের অভিমত উদ্ধৃত করে বলা হয়: সে দেশে (ভারত) মুসলিম শাসনামলের বিভিন্ন পুরার্কীতি যেভাবে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চলছে, কুতুবমিনার সেই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন। (চলবে)
বিভাগ : ভারতের সভ্যতায় মুসলমানদের অবদান
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

রুদ্ধশ্বাস ফাইনাল শেষ বলে জিতে ধোনিকে রাজকীয় বিদায় দিল চেন্নাই

১৫ বছর পর বন্ধ হলো বেইজিং এলজিবিটি সেন্টার

সাগরে চীনকে প্রতিরোধে ফিলিপিন্স কৌশলের মূল খেলোয়াড় ভিয়েতনাম

পঙ্গপালের আক্রমণে বিশাল ক্ষতিতে আফগান কৃষকরা

‘পাকিস্তানে আজ নৈরাজ্য, বেকারত্ব সাধারণ ব্যাপার’

চলতি অর্থবছরে পাকিস্তানের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ০.২৯ শতাংশ

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪২তম শাহাদাতবার্ষিকী আজ

কানাডায় ছুরিকাঘাতে শিখ নারী খুন

মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ

সংঘাত নয় শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই : প্রধানমন্ত্রী

মার্কিন ভিসা নীতিতে বিএনপির নির্বাচন বর্জনের ষড়যন্ত্র ভেস্তে গেছে

কিসের জাদুতে আমেরিকা থেকে রেমিট্যান্স বাড়ছে

মার্কিন ভিসা নীতি বিএনপির ওপরই বড় চাপ সৃষ্টি করেছে

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে জাতিসংঘ বিশেষ প্রতিবেদক শ্যুটারের উদ্বেগ

বাজেটের পর জ্বালানির দাম সমন্বয়

টিভিতে দেখুন

মেয়র তাপসকে গ্রেফতার দাবি

বাফুফেকে পদত্যাগপত্র পাঠালেন ছোটন

নেইমারহীন ব্রাজিলে নতুনের ছড়াছড়ি

লেস্টারের অবনমন টিকে রইল এভারটন