তিন চ্যালেঞ্জে অর্থনীতি সিপিডি

অনিয়ন্ত্রিত মুদ্রাস্ফীতি, ঋণের ঝুঁকি ও প্রবৃদ্ধির শ্লথগতি

Daily Inqilab অর্থনৈতিক রিপোর্টার

০৬ মে ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ০৬ মে ২০২৪, ১২:০৭ এএম




মানুষের জীবনমানের সবচেয়ে বড় বাধা অনিয়ন্ত্রিত মুদ্রাস্ফীতি। পাশাপাশি রয়েছে দেশি-বিদেশি ঋণের ঝুঁকি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির শ্লথগতি। মূলত এই তিন চ্যালেঞ্জ নিয়েই আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার- এমনটাই বলছেন অর্থনীতিবিদরা। তবে সরকারি নীতি নির্ধারকরা জানিয়েছেন, মূল্যস্ফীতি মোকাবিলার পাশাপাশি আগামী অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তায় বাড়ানো হবে বরাদ্দ।
রোববার (৫ মে) রাজধানীর গুলশানে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) উদ্যোগে এবং এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ-এর সহযোগিতায় ‘নতুন সরকার, জাতীয় বাজেট ও জনমানুষের প্রত্যাশা’ শীর্ষক সংলাপের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদসহ সরকারের নীতি-নির্ধারকরা অংশ নেন।
আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা হতে মাসখানেক বাকি। আগামী অর্থবছরে দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। এসব কিছুর মাঝেই বাজেট নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। কেমন হতে পারে বাজেট, কোন খাতে বরাদ্দ বেশি প্রয়োজন, কীভাবে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি ঋণের ঝুঁকি থেকে মুক্তির উপায়ই বা কী- এসব নিয়ে জোরেশোরে আলোচনা চলছে।
বর্তমান আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে আসন্ন বাজেটে জনগণের চাহিদা ও প্রত্যাশা নিয়ে ডিজিটাল জরিপ করেছে সিপিডি। জরিপে দেখা যায়, ৮৯ শতাংশ মানুষ বর্তমান সরকারের বাজেট বিষয়ক উদ্যোগগুলোর প্রশংসা করেছে। তবে বাজেট সম্পর্কে সরকারের কাছে কোনো প্রত্যাশা নেই বলেও মনে করেন ৬৪ শতাংশ মানুষ।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এবারের বাজেট একটি জটিল পরিস্থিতিতে প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সরকার। মূলত উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, ঋণের ঝুঁকি ও দেশের প্রবৃদ্ধির হার শ্লথগতির হয়ে পড়াই এর মূল কারণ। বর্তমানে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে সরকারের ঋণ আছে ৪২ শতাংশ, যার প্রভাবে বিনিময় হারে টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে বলেও মনে করছেন তারা।
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, জিডিপিতে সরকারি ঋণ ৩৭ শতাংশ ও ব্যক্তিখাতের ঋণ ৫ শতাংশ। সবমিলিয়ে ৪২ শতাংশ ঋণের যে বোঝা আছে, সেটি সরকারকে ভোগাতে পারে। তিনি বলেন, বাজেট যাই হোক না কেন, তার মধ্যে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতা যেন থাকে। যে টাকাই খরচ হোক না কেন, সেটার সঠিক লক্ষ্য থাকতে হবে। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত বিনিয়োগ কমে যাওয়ার কারণে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রবৃদ্ধির ধারা থেমে গেছে। আর অর্থনীতিতে তিনটি সমস্যা হয়েছে। এছাড়া সরকারের খরচ করার সক্ষমতা কমেছে।
অর্থনীতির ৩টি সমস্যার বিষয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, একটি সমস্যা গতবছরই ছিল। সেটি হলো, উচ্চ মূল্যস্ফীতি। আর সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করার পরও এই মূল্যস্ফীতি অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়েই চলেছে। দ্বিতীয়ত, আমাদের ঋণের ঝুঁকি বাড়ছে। আর তৃতীয়ত, আমাদের যে প্রবৃদ্ধির ধারা রয়েছে সেটা শ্লথগতি হয়ে গেছে। এর সাথে সাথে কর আহরণ ও সরকারের খরচ করার সক্ষমতা আরও সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ এখন দ্বিতীয় প্রজন্মের চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। প্রথম প্রজন্মের চ্যালেঞ্জের অনেক কিছু থেকে উতরে গেলেও দ্বিতীয় প্রজন্মের সমস্যা থেকে বের হতে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর আহ্বাবান জানান তারা। আর তা না হলে বাংলাদেশের জন্য জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা কঠিন হবে বলে জানান সিপিডির আরেক সম্মাননীয় ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান।
প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দ্বিতীয় প্রজন্মের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, শুধু শিক্ষার বিস্তার না মানসম্মত শিক্ষা। শুধু স্বাস্থ্য না, মানসম্মত স্বাস্থ্য। একইসঙ্গে সামাজিক সুরক্ষা থেকে সামাজিক সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। এদিকে রাজনীতিবিদ ও সরকারের নীতি-নির্ধারকরা বলছেন, আগামী বাজেট হতে হবে জনবান্ধব। অপচয় কমিয়ে বাজেটের প্রধান খাতগুলোয় বেশি নজর দিতে হবে।
বাজেট সম্পর্কিত সংসদের স্থায়ী কমিটিগুলোর কার্যক্রম জোরদার করা উচিত বলে মনে করেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এম এ মান্নান।
সিপিডির জরিপে উঠে এসেছে, সাধারণ মানুষ শোভন কর্মসংস্থান, মানসম্মত শিক্ষা ও সম্প্রসারিত সামাজিক সুরক্ষা চায়।

 

 


বিভাগ : অর্থনীতি


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

সমীকরণ মেলানোর রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তা শেষে চেন্নাইকে বিদায় করে প্লে-অফে বেঙ্গালুরু

সমীকরণ মেলানোর রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তা শেষে চেন্নাইকে বিদায় করে প্লে-অফে বেঙ্গালুরু

ইসরাইলি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে

ইসরাইলি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে

প্রোটিন উদ্ভাবনে নতুন উদ্যোক্তাদের সুযোগ দিচ্ছে ইউএসএসইসি-এর পিচ-টু-ফর্ক

প্রোটিন উদ্ভাবনে নতুন উদ্যোক্তাদের সুযোগ দিচ্ছে ইউএসএসইসি-এর পিচ-টু-ফর্ক

স্যানিটেশন কর্মীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা দিতে হারপিক ও সাজেদা ফাউন্ডেশন সমঝোতা

স্যানিটেশন কর্মীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা দিতে হারপিক ও সাজেদা ফাউন্ডেশন সমঝোতা

বড় পরিসরে আর. কে. মিশন রোডে ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা উদ্বোধন

বড় পরিসরে আর. কে. মিশন রোডে ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা উদ্বোধন

বিএনপি ভোট বর্জন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে : শামসুজ্জামান দুদু

বিএনপি ভোট বর্জন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে : শামসুজ্জামান দুদু

ভালুকার সেই শিশু দত্তক নিতে ৪ আবেদন, সিদ্ধান্ত রোববার

ভালুকার সেই শিশু দত্তক নিতে ৪ আবেদন, সিদ্ধান্ত রোববার

যক্ষা রোগ প্রতিরোধে ওয়ার্ডভিত্তিক প্রচারণা

যক্ষা রোগ প্রতিরোধে ওয়ার্ডভিত্তিক প্রচারণা

সুনামগঞ্জে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের দাফন সম্পন্ন

সুনামগঞ্জে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের দাফন সম্পন্ন

পানির সংকট

পানির সংকট

নীতি ও দুর্নীতির লড়াই

নীতি ও দুর্নীতির লড়াই

শিক্ষা ব্যবস্থার ভয়াল দশা

শিক্ষা ব্যবস্থার ভয়াল দশা

মামলাজট কমাতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে

মামলাজট কমাতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে

ইসলামী আন্দোলনের নেতা অধ্যাপক বেলায়েত হোসেনের দাফন সম্পন্ন

ইসলামী আন্দোলনের নেতা অধ্যাপক বেলায়েত হোসেনের দাফন সম্পন্ন

দালালীকে পেশা হিসাবে নেওয়া প্রসঙ্গে।

দালালীকে পেশা হিসাবে নেওয়া প্রসঙ্গে।

দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হামাস ভয়াবহ আঘাতের মুখে ইসরাইল

দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হামাস ভয়াবহ আঘাতের মুখে ইসরাইল

পথ হারিয়েছে বিশ্ব : জাতিসংঘ

পথ হারিয়েছে বিশ্ব : জাতিসংঘ

তাইওয়ান প্রণালীতে মার্কিন জাহাজের অনুপ্রবেশ

তাইওয়ান প্রণালীতে মার্কিন জাহাজের অনুপ্রবেশ

যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি না করা

যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি না করা

গাজা ইস্যুতে বন্ধু হারাচ্ছে ইসরাইল নানামুখী চাপে নেতানিয়াহু

গাজা ইস্যুতে বন্ধু হারাচ্ছে ইসরাইল নানামুখী চাপে নেতানিয়াহু