ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির ছায়া সংসদে প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান প্রতিষ্ঠান নয় ব্যক্তির দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
২৪ আগস্ট ২০২৪, ০৪:৫৫ পিএম | আপডেট: ২৪ আগস্ট ২০২৪, ০৪:৫৫ পিএম
বিগত সময়ে যথেষ্ট আইনি ক্ষমতা থাকা সত্বেও বাংলাদেশ ব্যাংক সঠিকভাবে কাজ করতে পারেনি। চাকুরী হারানোর ভয়ে রাজনৈতিক প্রভাবকে মেনে নিয়ে কাজ করেছে কিছু কিছু কর্মকর্তা, যা কাঙ্খিত ছিলনা। সমাজে আয় বৈষম্য ও বেকারত্ব মানুষকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে। সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনের পেছনে বহুমাত্রিক বৈষম্য টাইম বোমা হিসেবে কাজ করেছে। কতিপয় বড় শিল্প মালিকদের হিসেবের তথ্য চাওয়ায় ব্যবসায়ীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। প্রতিষ্ঠান নয় ব্যক্তির দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ব্যাংকিং খাতের সংস্কার শুরু হওয়ায় আমানতকারীদের চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। ব্যাংক পরিচালনায় পরিবারতন্ত্র কায়েম করা হয়েছিল। বিগত সময়ে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাংক থেকে অর্থ পাচার হয়েছে। খেলাপী ঋণের পরিমাণ রেড়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যাংকিং খাতসহ অন্যান্য সেক্টরে যে সংস্কার করছে, তাকে টেকসই করতে হলে রাজনৈতিক সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সুফল পেতে ভবিষ্যতেও তরুণদের সচেতনভাবে দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখতে হবে। শনিবার (২৪ আগস্ট) এফডিসিতে আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিতকরণ নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিপিডি’র সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রতিযোগিতা শুরুর পূর্বে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নিহত ছাত্র-জনতার রুহের মাগফিরাত কামনা করে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, আমরা দেখেছি গত দেড় দশকে বিগত সরকার দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে চরমভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। ব্যাংক থেকে নামে বেনামে ঋণ গ্রহণ করে ব্যাংকগুলোকে ফোকলা বানিয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের মতো একটি স্বনামধন্য ব্যাংককে লুটপাট করে তছনছ করে দিয়েছিল। মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা দুর্নীতির খবর এখন সবার মুখে মুখে। জ্বালানি খাতে বিশেষ ব্যক্তিদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। আর্থিক খাতে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে তা বন্ধ করতে হবে। ঋণ জালিয়াতকারী ও অর্থ পাচারকারীদের বিচারের আওতায় এনে দৃশ্যমান শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত। সরকার আর্থিক খাত নিয়ে যে শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে যাচ্ছে আশা করি এতে সকল আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য প্রকাশিত হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংককে মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতে দিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীন সত্তা ফিরিয়ে আনা উচিত। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সদিচ্ছাই আর্থিক খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারবে। আমরা খুবই আশাবাদী বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে তাদের সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। এখন শুধু দরকার সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে তাদের কাজে সহযোগিতা করা।
কিরণ বলেন, আমরা ভুলে যাইনি সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, ফার্মারস ব্যাংক লুটের কথা। পিপলস লিজিং, হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঋণ জালিয়াতির ঘটনা। ভুলে যাইনি শেয়ার বাজারে কারসাজির মাধ্যমে কিভাবে লাখ লাখ মানুষকে পথের ভিখারী করা হয়েছে। আমাদের মনে আছে শেয়ার বাজারে সব হারিয়ে রাজধানীর গোপীবাগে লিয়াকত আলী, আমিনুল ইসলাম স্বপন, চট্টগ্রামের দিলদার হোসেনসহ বহু ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগকারীর আত্মহত্যার কথা। আমি মনে করি এগুলো শুধু আত্মহত্যা ছিলনা, এগুলো হত্যার শামিল। যাদের কারণে এসব মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার এখনি উপযুক্ত সময়।
বিগত সরকারের ২০১৫ থেকে ২০২৩ এই নয় বছর ব্যাংকগুলো সিএসআর হিসেবে ৭ হাজার ৯৯ কোটি টাকা খরচ করেছে। এর মধ্যে ৩ হাজার কোটি টাকাই প্রদান করেছে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে। সিএসআর এর এই ৩ হাজার কোটি টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দিতে বাধ্য করেছিলেন ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবি’র সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদার। যা চেক বা পে অর্ডারের মাধ্যমে দেয়া হলেও কোথায় ক্যাশ হতো তা কেউ জানতো না। সিএসআর এর অর্থ বঙ্গবন্ধুর ওপর চলচ্চিত্র, শেখ রাসেল-শেখ কামালের নামে ফুটবল টুর্নামেন্ট, মুজিববর্ষ উদযাপন, শেখ মুজিব ম্যারাথন, জাতীয় শোক দিবস, বেগম ফজিলাতুন্নেসা হাসপাতালসহ শেখ পরিবারের বিভিন্ন কার্যক্রমে ব্যবহার করা হতো বলে অভিযোগ রয়েছে। রানাপ্লাজার মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর দেশি বিদেশি অনেক সংস্থা প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ তহবিলে অর্থ প্রদান করে। রানাপ্লাজার এই তহবিলে কত টাকা জমা হয়েছিল এবং তা কোথায় খরচ হয়েছে তা কেউ জানে না। এসব বিষয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে ‘রাজনৈতিক সদিচ্ছাই আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে পারে’ শীর্ষক ছায়া সংসদে বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি’র বিতার্কিকদের পরাজিত করে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি’র বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন প্রফেসর আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, প্রফেশনাল অ্যাকাউন্টেন্ট মো. আব্দুস সাত্তার সরকার, সাংবাদিক দৌলত আক্তার মালা, সাংবাদিক ইকবাল আহসান। প্রতিযোগিতা শেষে চ্যাম্পিয়ন দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
বিভাগ : অর্থনীতি
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
১৪ মিনিটের ঝড়ে শেষ ধুঁকতে থাকা সিটির জয়ের ধারায় ফেরার স্বপ্ন
বায়ার্নের বিপক্ষে ফের হারল পিএসজি
লেভা-ওলমোয় বার্সার অনায়াস জয়
আইনজীবী হত্যায় প্রধান উপদেষ্টার নিন্দা, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান
ঢাবিতে আইনজীবী সাইফুলের গায়েবানা জানাজা
মায়ামিতে মেসিদের নতুন কোচ মাশ্চেরানো
চিন্ময় সম্পর্কে দিল্লির বক্তব্যকে বন্ধুত্বের চেতনার পরিপন্থী বলে অভিহিত করেছে ঢাকা
উত্তাল ইসলামাবাদে সেনা মোতায়েন
আদানির গ্রেপ্তারের দাবিতে বিহার বিধানসভার সামনে বিক্ষোভ
র্যাবের ‘কসাই’ সাবেক এসপি ফারুকীর বিচার না হলে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে
হজযাত্রী নিবন্ধন ২ মাস বাড়ানোর দাবি
সংঘাত-অস্থিরতার দায় সরকার এড়াতে পারে না : এবি পার্টি
অহিংস গণঅভ্যুত্থানের সংগঠকসহ ১৮ জন কারাগারে
হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ
চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ ড. ইউনূসের
ঐক্যের শক্তি ধ্বংস করতে ছড়ানো হচ্ছে বিভেদের বিষ: মুশফিক আনসারী
পরিবেশ কর্ম-পরিকল্পনা ২০২৪-২০৩০ চালু করেছে এডিবি
লন্ডনে হাইকমিশনার সাইদা মুনার রাজত্বের অবসান হচ্ছে
ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও রাজনৈতিক উস্কানির ফাঁদ পাতা হচ্ছে
জাতীয় অর্জনে কৃষক ও কৃষিবিদদের অবদান অনস্বীকার্য -স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা