ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪ | ৩০ কার্তিক ১৪৩১

বাজেট বাস্তবায়নে ধীরগতি

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৯ মার্চ ২০২৩, ০৭:৫২ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৪:১৮ এএম

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিসহ জাতীয় বাজেট বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় ও দফতরগুলোর অপারগতা নতুন করে বলার কিছুই নেই। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সময়ে এ নিয়ে অর্থমন্ত্রনালয়সহ সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে অসন্তোষ প্রকাশিত হতে দেখা গেছে। বাজেটের অর্থসংস্থানে অনিশ্চয়তা এবং বাস্তবায়নের ব্যর্থতার কারণে প্রায় প্রতিবছরই অর্থবছরের মাঝপথে গৃহীত জাতীয় বাজেটকে কাটছাঁট করে সংশোধিত বাজেট আকারে প্রকাশ করতে দেখা যায়। এবারও তার ব্যত্যয় হয়নি, অর্থবছরের ৭ মাসের মাথায় গত ১ মার্চ জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের সভায় চলতি বছরের উন্নয়ন বাজেটের আকার ২ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ২ লাখ ২৭ হাজার কোটিতে নামিয়ে আনা হয়েছে। বাজেটে সরকারের কৃচ্ছ্রতার নীতি এবং সরকারের অগ্রাধিকার হিসেবে জনবল ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে অনুকুল প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে বাড়তি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। যথাযথ গতিশীল প্রক্রিয়ায় বাজেট বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নতুন কর্মপ্রবাহ সৃষ্টির তাগিদ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশিত হলেও তা অনুসরণের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছেনা। গতমাসে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা গিয়েছিল, অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে জাতীয় বাজেট বাস্তবায়নের হার শতকরা মাত্র ১৭ ভাগ। গতকাল পত্রিকান্তরে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা গেল, অর্থবছরের ৬ মাসে গড় বাজেট বাস্তবায়নের হার ২৪ভাগ। বার্ষিক উন্নয়ন খাতের বাজেট বাস্তবায়নের হার মাত্র ১৪ ভাগ। বাজেট বাস্তবায়নের এ হার অনাকাঙ্খিত ও হতাশাজনক।

অর্থবছরের অর্ধেক সময় পেরিয়ে বাজেটের অর্থসংস্থান ও বাস্তবায়নের যে চিত্র পাওয়া যাচ্ছে তা সুখকর নয়। বিশাল ঘাটতি বাজেট বাস্তবায়নে দেশি-বিদেশি যে সব উৎস থেকে অর্থ সংস্থানের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল সে লক্ষ্যের ধারেকাছেও যেতে পারেনি। অর্থবছরের শুরুতে ঘাটতি পুরনে বিদেশি উৎস থেকে প্রায় সাড়ে ৯৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ পাওয়ার নীট লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও প্রথম ৬ মাসে পাওয়া গেছে মাত্র ৪ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা। একইভাবে, দেশীয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এ সময়ে পাওয়া গেছে ২৪ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা। বাজেট বাস্তবায়ন ও অর্থসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও সুদ বাবদ ব্যয় করা হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অনেক বেশি। সরকারের পরিচালন ব্যয়ের সাড়ে ১৯ শতাংশ সুদখাতে ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে ২৭দশমিক ৮ শতাংশ এ খাতে ব্যয় হয়েছে। উন্নয়ন বাজেটের সুপরিকল্পিত বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বিনিয়োগ ও কর্মপ্রবাহ বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে কর্মসংস্থানে একটি গতিশীল অবস্থা সৃষ্টির যে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছিল, সেখানেই ব্যর্থতার হার সবচেয়ে বেশি। প্রাক্কলিত ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার মধ্যে ৬ মাসে ব্যয় করা হয়েছে মাত্র ৩৬ হাজার ৪১ কোটি টাকা। বাকি ৬ মাসে অবশিষ্ট ২ লক্ষাধিক কোটি টাকার বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব কিনা, তা সহজেই অনুমেয়।

শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে বিশাল আকারের ঘাটতি নিয়ে প্রতিবছরই বাজেটের আকার বৃদ্ধি করা হচ্ছে। অত:পর একাধিকবার কাটছাঁট, সংশোধনের পরও বাজেট বাস্তবায়ন করতে না পারার ধারাবাহিক ব্যর্থতা যেন পিছু ছাড়ছে না। সিপিডি’র মত বেসরকারি থিঙ্কট্যাঙ্ক এবং অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বাজেটের আকার বৃদ্ধি না করে বাস্তবায়নযোগ্য ও সুষম বাজেট প্রণয়নের তাগিদ দিয়ে আসছেন। অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য চলতি অর্থবছরের বাজেট আরো ‘আগেই তামাদি হয়ে গেছে’ বলে মন্তব্য করেছেন। প্রথাগত বাজেট বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় অর্থনৈতিক মন্দা এড়ানো ও কর্মপ্রবাহ সৃষ্টির লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয় বলে যে অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছিল, তার প্রতিফলন এখন দেখা যাচ্ছে। বিশেষত উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে শেষদিকে তড়িঘড়ি দৌড়ঝাপ, যেনতেন প্রকারে প্রকল্পের কাজ শেষ করে অর্থের অপচয়, লুটপাট ও কাজের মান বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ হয়। অনুকুল সময়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে বর্ষার সময়ে, পাহাড়ি ঢল ও আকষ্মিক বন্যার ঝুঁকিকে সামনে রেখে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, বেড়িবাঁধ ও রাস্তা নির্মানের তড়িঘড়ি ব্যবস্থা শুধুমাত্র অর্থব্যয় ছাড়া আর কোনো লক্ষ্য পুরণ করতে পারেনা। উন্নত-সমৃদ্ধ, ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সরকার যে রূপরেখা মেলে ধরছে, বাজেট বাস্তবায়নের চলমান হার ও পন্থায় তা সম্ভব কিনা তা সরকারকে গুরুত্ব দিয়ে ভেবে দেখতে হবে। অর্থনৈতিক মন্দা ও কর্মসংস্থানে স্থবিরতার এ সময়ে অর্থবছরের ৬ মাসে উন্নয়ন বাজেটের ১৪ ভাগ বাস্তবায়নের নজির হতাশাব্যঞ্জক। এ থেকে উত্তরণে সুনির্দিষ্ট পথনির্দেশ বা কর্মপন্থা গ্রহণ অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

মূল্যস্ফীতি রোধে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে
যৌথবাহিনীর অভিযান জোরদার করতে হবে
সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষায় নজর দিন
পুলিশকে জনবান্ধব বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে
মূল্যস্ফীতি রোধে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে
আরও

আরও পড়ুন

সংস্কৃতি উপদেষ্টার আশ্বাসে প্রতিবাদ সমাবেশ বাতিল করলো গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন

সংস্কৃতি উপদেষ্টার আশ্বাসে প্রতিবাদ সমাবেশ বাতিল করলো গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন

শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের আশ্বাস, হোয়াইট হাউজে ট্রাম্প-বাইডেন বৈঠক

শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের আশ্বাস, হোয়াইট হাউজে ট্রাম্প-বাইডেন বৈঠক

ভারত-পাকিস্তান বিরোধ: আইসিসিকে যে পরামর্শ দিলেন রশিদ লতিফ

ভারত-পাকিস্তান বিরোধ: আইসিসিকে যে পরামর্শ দিলেন রশিদ লতিফ

পুরস্কারের অর্থ এখনও বুঝে পাননি অনেক ক্রিকেটার

পুরস্কারের অর্থ এখনও বুঝে পাননি অনেক ক্রিকেটার

গাজায় যুদ্ধের অবসান হওয়া উচিৎ : অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন

গাজায় যুদ্ধের অবসান হওয়া উচিৎ : অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন

আবারও ইমরানের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল পাকিস্তান

আবারও ইমরানের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল পাকিস্তান

শীতে এই ৫টি জিনিস ব্যবহারে ত্বক দেখে মুগ্ধ হবে সবাই!

শীতে এই ৫টি জিনিস ব্যবহারে ত্বক দেখে মুগ্ধ হবে সবাই!

ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের চাকরি ছাড়লেন শহীদ আবু সাঈদের দুই ভাই

ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের চাকরি ছাড়লেন শহীদ আবু সাঈদের দুই ভাই

প্রতিরক্ষামূলক টানেল নেটওয়ার্ক নির্মাণ করবে ইরান

প্রতিরক্ষামূলক টানেল নেটওয়ার্ক নির্মাণ করবে ইরান

আইন উপদেষ্টাকে হেনস্তার ঘটনায় জেনেভা মিশনের শ্রম কাউন্সেলরকে ‘স্ট্যান্ড রিলিজ’

আইন উপদেষ্টাকে হেনস্তার ঘটনায় জেনেভা মিশনের শ্রম কাউন্সেলরকে ‘স্ট্যান্ড রিলিজ’

তারুণ্যের প্রভিভা অনুসন্ধানে আসছে রক রিয়েলিটি শো "দ্য কেইজ"

তারুণ্যের প্রভিভা অনুসন্ধানে আসছে রক রিয়েলিটি শো "দ্য কেইজ"

মন্দ কাজের সমালোচনায় সরব থাকবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

মন্দ কাজের সমালোচনায় সরব থাকবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

বশির-ফারুকীকে অপসারণসহ ৯ দাবি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের

বশির-ফারুকীকে অপসারণসহ ৯ দাবি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের

পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর অভিযানে নিহত ১২

পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর অভিযানে নিহত ১২

হত্যা মামলায় ভোলার সাবেক এমপি আলী আজম মুকুল ঢাকায় গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় ভোলার সাবেক এমপি আলী আজম মুকুল ঢাকায় গ্রেপ্তার

ঘোড়াঘাটে শ্বাসরোধে যুবকের মৃত্যু, হত্যাকান্ডের অভিযোগে স্ত্রী আটক

ঘোড়াঘাটে শ্বাসরোধে যুবকের মৃত্যু, হত্যাকান্ডের অভিযোগে স্ত্রী আটক

ইসরাইলি বাহিনীর বর্বর হামলায় গাজায় নিহত ৪৭

ইসরাইলি বাহিনীর বর্বর হামলায় গাজায় নিহত ৪৭

করাচি থেকে প্রথম সরাসরি কার্গো পৌঁছেছে চট্টগ্রামে

করাচি থেকে প্রথম সরাসরি কার্গো পৌঁছেছে চট্টগ্রামে

হিজবুল্লাহর সাথে সংঘর্ষে নিহত ৬ ইসরাইলি সেনাসদস্য

হিজবুল্লাহর সাথে সংঘর্ষে নিহত ৬ ইসরাইলি সেনাসদস্য

রাত আড়াইটায় পঙ্গু হাসপাতালে মাহফুজসহ ৪ উপদেষ্টা, অতঃপর...

রাত আড়াইটায় পঙ্গু হাসপাতালে মাহফুজসহ ৪ উপদেষ্টা, অতঃপর...