রাজধানীকে নিরাপদ করতে হবে
১০ মার্চ ২০২৩, ০৭:৪৬ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৩৯ পিএম
রাজধানীতে একের পর এক বিস্ফোরণের ঘটনায় জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। কখন, কোথায় আচমকা বিস্ফোরণের শিকার হয়ে আহত-নিহত হবে, এমন শঙ্কা বিরাজমান। পাইপ লাইনে জমে থাকা গ্যাস বিস্ফোরণে সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকার একটি ভবন বিধ্বস্ত ও অনেকের হতাহতের দুই দিন পরই সিদ্দিকবাজারের একটি ভবনে গ্যাস বিস্ফোরণে ২০ জনের মৃত্যু এবং শতাধিক আহত হওয়ার মতো ট্রাজিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। তার আগে সীতাকু-ের একটি অক্সিজেন কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনা রাজনৈতিক বাগবিতন্ডারও জন্ম দিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এসব ঘটনা বিএনপি’র নাশকতামূলক কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। অন্যদিকে, বিএনপি বলেছে, সরকারের তদারকি সংস্থার সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। এসব পারস্পরিক দোষারোপের মধ্যে নগরবিদ ও বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিল্ডিং কোড না মানা, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ যথাযথ না হওয়া এবং তদারকি না করা, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন শনাক্ত না করা ইত্যাদি বিস্ফোরণ ও দুর্ঘটনার কারণ।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বড় ধরনের ভবন ধস, অগ্নিকা- ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটার পরই কেবল এ নিয়ে সকলের টনক নড়ে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে। তবে সে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আর আলোর মুখ দেখে না। কারা দায়ী তারও কোনো হদিস পাওয়া যায় না। এক সময় এসব ঘটনা ও তদন্ত ডিপ ফ্রিজে চলে যায়। আরেকটি দুর্ঘটনা ঘটা না পার্যন্ত হুঁশ হয় না। ঢাকা বহুবছর ধরে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে রয়েছে। বায়ুদূষণ, শব্দদূষণসহ এমন কোনো দূষণ নেই যা এ নগরীতে নেই। দূষণের দিক থেকে বিশ্বে শীর্ষ সারিতে রয়েছে। এ নিয়ে বহু লেখালেখি ও বিশেষজ্ঞ মতামত প্রকাশিত হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে উদাসীন হয়ে রয়েছে। তাদের আচরণে এমন প্রতিভাত হয়, যেমন চলছে চলুক। এই মনোভাব এবং যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে ঢাকা এখন ঝুঁকিপূর্ণ নগরীতে পরিণত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজউক, সিটি করপোরেশনসহ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকর তদারকি ও উদ্যোগের অভাবে একের পর এক ট্রাজিক ঘটনার সৃষ্টি হচ্ছে। ধারাবাহিক বিস্ফোরণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকাকে এখন ‘বিস্ফোরণের নগরী’ হিসেবে আখ্যয়িত করা হচ্ছে। কেমিক্যাল গোডাউন ও কারখানার কারণে বহু আগে পুরান ঢাকাকে বিস্ফোরক এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রায় প্রতিবছর এ এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকা-ের বেদনাদায়ক ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। এ এলাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন ও কারখানা সরিয়ে নেয়ার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত সরিয়ে নেয়া হয়নি। এছাড়া অভিজাত এলাকায় ভবন ধ্বস ও অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটলে ‘ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ’, ‘বিল্ডিং কোড মেনে করা হয়নি’, ‘যথাযথ অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ছিল না’ ইত্যাদি কারণ উঠে আসে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তখন দুর্ঘটনা কবলিত ভবন ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়। অথচ কিভাবে কর্তৃপক্ষের সামনে নিয়ম না মেনে এসব ভবন গড়ে উঠেছে, তা ঘটনা ঘটার আগে তদারকি করা হয় না। ঘটনার পর দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ শাস্তি দেয়ারও নজির দেখা যায়নি। সাম্প্রতিক গ্যাস বিস্ফোরণের যে কারণ বলা হচ্ছে, এক্ষেত্রে তিতাস, ওয়াসা কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারে না। গতকাল একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীর ৬০ শতাংশ গ্যাসের পাইপ লাইনের মেয়াদ ২০ বছর আগে শেষ হয়ে গেছে। পাইপ লাইনগুলো গ্যাস বোমায় পরিণত হয়েছে। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, এমন ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যেই নগরবাসীকে বসবাস করতে হচ্ছে। শুধু রাজধানীতে নয়, তিতাসের গ্যাস বিতরণের অন্যান্য জেলায়ও একই পরিস্থিতি হয়ে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যে আভাস দিয়েছেন, ঢাকা নগরী বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। মাঝারি মানের ভূমিকম্প হলে হাজার হাজার ভবন মুহূর্তে ধসে পড়বে এবং কয়েক লাখ মানুষের মৃত্যু হবে। বেশির ভাগ মৃত্যু হবে গ্যাস ও বিদ্যুত লাইনের বিপর্যয়ে অগ্নিকা-ের কারণে। অর্থাৎ ভবন চাপা পড়ে যত না মৃত্যু হবে, তার চেয়ে বেশি মৃত্যু হবে গ্যাস-বিদ্যুৎ থেকে অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে। আমরা দেখেছি, সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর এর উদ্ধার কাজ শেষ হতে এক মাসের বেশি সময় লেগেছে। এখন আমাদের ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বাড়লেও রাজধানীর অলি-গলি ও সড়ক সরু হওয়ায় বড় ধরনের ভূমিকম্প, ভবন ধস ও অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটলে ঘটনাস্থলে যেতেই তাদের অনেক সময় লেগে যাবে। ইতোমধ্যে আমরা পুরনো ঢাকায় অগ্নিকা-ের সময় এ পরিস্থিতি দেখতে পেয়েছি।
রাজধানীর সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সীমাহীন গাফিলতি নতুন কিছু নয়। নগরবাসী ন্যূনতম সেবা পায় না। যথাযথভাবে ট্যাক্স দিয়েও কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছে না। শত সমস্যার মধ্যে এখন বিস্ফোরণের ঘটনা তাদের কাছে আতঙ্ক হয়ে রয়েছে। নগরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সবদিক থেকে রাজধানী এক অনিরাপদ শহরে পরিণত হয়েছে। সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। জনগণের অর্থে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের এ ধরনের ব্যর্থতা মেনে নেয়া যায় না। এক্ষেত্রে সরকারকে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নগরীকে নিরাপদ ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে সিটি করপোরেশন, রাজউক, গ্যাস-বিদ্যুৎ, ওয়াসাসহ সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। স্ব স্ব সংস্থার অধীনে যেসব সেবা রয়েছে সেগুলোর উন্নয়ন, আধুনিক ও মানসম্মত করতে পরিকল্পিতভাবে এলাকাভিত্তিক সংস্কার ও তদারকি ব্যবস্থা করতে হবে। পুরনো ঢাকার কেমিক্যালের গোডাউন ও কারখানা সরিয়ে নেয়ার দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। গ্যাস-বিদ্যুৎ ও ওয়াসার লাইন যথাযথভবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিরাপদ করতে হবে। বিল্ডিং কোড মেনে ভবন তৈরি করা হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে হবে। যেসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে, তা চিহ্নিত করে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সংস্কৃতি উপদেষ্টার আশ্বাসে প্রতিবাদ সমাবেশ বাতিল করলো গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন
শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের আশ্বাস, হোয়াইট হাউজে ট্রাম্প-বাইডেন বৈঠক
ভারত-পাকিস্তান বিরোধ: আইসিসিকে যে পরামর্শ দিলেন রশিদ লতিফ
পুরস্কারের অর্থ এখনও বুঝে পাননি অনেক ক্রিকেটার
গাজায় যুদ্ধের অবসান হওয়া উচিৎ : অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন
আবারও ইমরানের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল পাকিস্তান
শীতে এই ৫টি জিনিস ব্যবহারে ত্বক দেখে মুগ্ধ হবে সবাই!
ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের চাকরি ছাড়লেন শহীদ আবু সাঈদের দুই ভাই
প্রতিরক্ষামূলক টানেল নেটওয়ার্ক নির্মাণ করবে ইরান
আইন উপদেষ্টাকে হেনস্তার ঘটনায় জেনেভা মিশনের শ্রম কাউন্সেলরকে ‘স্ট্যান্ড রিলিজ’
তারুণ্যের প্রভিভা অনুসন্ধানে আসছে রক রিয়েলিটি শো "দ্য কেইজ"
মন্দ কাজের সমালোচনায় সরব থাকবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
বশির-ফারুকীকে অপসারণসহ ৯ দাবি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের
পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর অভিযানে নিহত ১২
হত্যা মামলায় ভোলার সাবেক এমপি আলী আজম মুকুল ঢাকায় গ্রেপ্তার
ঘোড়াঘাটে শ্বাসরোধে যুবকের মৃত্যু, হত্যাকান্ডের অভিযোগে স্ত্রী আটক
ইসরাইলি বাহিনীর বর্বর হামলায় গাজায় নিহত ৪৭
করাচি থেকে প্রথম সরাসরি কার্গো পৌঁছেছে চট্টগ্রামে
হিজবুল্লাহর সাথে সংঘর্ষে নিহত ৬ ইসরাইলি সেনাসদস্য
রাত আড়াইটায় পঙ্গু হাসপাতালে মাহফুজসহ ৪ উপদেষ্টা, অতঃপর...