আঞ্চলিক আধিপত্যবাদ ও গণতান্ত্রিক-মানবিক বিপর্যয়
১৪ মার্চ ২০২৩, ০৮:৫৩ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৫:২৬ পিএম
দেশের রাজনীতি ও শাসনব্যবস্থার সাথে বাজার ব্যবস্থাপনা ও অর্থনীতির অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে। বাজারে নিত্যপণ্যের ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির হাত ধরে জীবনযাত্রার ব্যয়ভার দুর্বহ হয়ে পড়েছে। সবকিছু দরিদ্র ও সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে আইএমএফ’র কাছে ঋণ করতে গিয়ে তার জনস্বার্থ বিরোধী শর্তগুলো সরকারকে মেনে নিতে হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাত সরকারের প্রভাবশালী রাঘব-বোয়ালদের লুটপাট ও অর্থপাচারের অন্যতম বড় খাত। গ্যাস-বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির সাথে শিল্প ও কৃষিখাতে সামগ্রিক উৎপাদন ব্যয় ও পণ্যমূল্যের স্ফীতি সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। দীর্ঘদিন ধরে দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে খরা চলছে। করোনাকালীণ বাস্তবতায় সাধারণ মানুষের আয় কমে গেছে। লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হারানোর মধ্য দিয়ে দেশে দারিদ্র্যের হার অন্তত ১০ ভাগ বেড়ে দুই দশক আগের অবস্থানে চলে গেছে। গত চার দশকে কৃষি ও রফতানিমুখী শিল্পখাতের হাত ধরে দেশের জাতীয় উৎপাদন ও জিডিপি বেড়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি দেশ এলডিসি থেকে নি¤œমধ্যআয়ের তালিকায় উত্তীর্ণ হলেও মানুষের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংহতি ও সামগ্রিক নিরাপত্তার প্রত্যাশা হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছে। রাষ্ট্রশক্তি যেন জনগণের কাছে কমিটমেন্ট ও দায়দায়িত্বের কথা ভুলে গিয়ে কর্পোরেট মুনাফাবাজ, ব্যাংক জালিয়াত, সা¤্রাজ্যবাদের ক্রীড়নক আইএমএফ ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের স্বার্থ হাসিলের অভয়ারন্যে পরিনত হয়েছে। দেশ থেকে প্রতিবছর লক্ষকোটি টাকা পাচার হওয়ায় টাকার মানের ক্রমাবনতি ঘটছে। মূল্যস্ফীতির কারণে নি¤œ আয়ের কোটি কোটি মানুষ ন্যুনতম খাদ্য, পুষ্টি ও প্রোটিনের চাহিদা পুরণ করতে পারছে না। অন্যদিকে, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ণ ও আমলাতান্ত্রিক দুর্নীতির যোগসাজশে আরেক শ্রেণীর কয়েক হাজার মানুষ ব্যাংকের আমানত, পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ ও জনগণের রাজস্ব থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আমেরিকা, কানাডা, মালয়েশিয়া, দুবাই, সিঙ্গাপুর ও ইউরোপে সম্পদ পাচার করে সেখানে সেকেন্ড হোম গড়ে তুলেছে। একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ও অঙ্গীকারের বাস্তবায়নের জন্য স্বাধীনতার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হলেও স্বাধীনতাত্তোর পঞ্চাশ বছরে অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং রাজনৈতিক গণতন্ত্রায়ণের পথ থেকে জাতি আরো পিছিয়ে পড়েছে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, বাজার ব্যবস্থাপনা, অর্থব্যবস্থা, রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে অস্বচ্ছ, অগণতান্ত্রিক ও অব্যবস্থাপনার নিগড়ে ঠেলে দেয়ার সাথে সাথে জনগণের উপর বাড়তি করের বোঝা চাপিয়ে উন্নয়ন কর্মকাÐের নামে দেশের অর্থনীতিকে একটি লুটপাটের মচ্ছবে পরিনত করা হয়েছে। একদিকে গোপনে অস্বচ্ছ চুক্তি করে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশি কোম্পানির অ্যাকাউন্টে তুলে দেয়ার দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা হয়েছে, অন্যদিকে বাজেটের ঘাটতি ও ভতুর্কির যোগান মেটাতে বারবার বিদ্যুতের মূল্য বাড়িয়ে একটি অর্থনৈতিক দুঃসময়ে জনগণের উপর বাড়তি খরচের বোঝা চাপিয়ে জীবনযাত্রা আরো দুর্বিষহ করে তোলা হয়েছে। দেশের অর্থনীতি যখন চরম সংকটের মুখোমুখী দাঁড়িয়েছে, তখন আন্তর্জাতিকভাবে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ও বিপর্যস্ত ভারতীয় কর্পোরেট কোম্পানি আদানির সাথে বাংলাদেশ সরকারের ২৫ বছর মেয়াদি গোপন বিদ্যুৎ চুক্তির তথ্য ফাঁস হয়েছে।
একদিকে বাজারের উত্তাপ, অন্যদিকে রাজনীতির উত্তাপে সাধারণ মানুষের জীবন চরম দুর্ভোগ ও অনিশ্চয়তায় ঘুরপাক খাচ্ছে। মানবাধিকার, রাজনৈতিক অধিকার ও ভোটাধিকারের প্রশ্ন সেসবের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষের কাছে। ঐতিহাসিকভাবেই এ দেশের মানুষ রাজনৈতিক অধিকারের প্রশ্নে যথেষ্ট সচেতন এবং আপোসহীন। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় করা অবকাঠোমো উন্নয়নের চমক দেখিয়ে এ দেশের মানুষকে রাজনৈতিকভাবে বিভ্রান্ত করা যায়না। বৃটিশদের উন্নয়নের চমকে কলকাতার বাবুরা বাঙ্গালির নবজন্ম দেখলেও পূর্ববাংলার মুসলমানরা পলাশির প্রান্তরে হারিয়ে যাওয়া স্বাধীনতার সূর্য ফিরিয়ে আনতে যে রক্তশপথ গ্রহণ করেছিল, চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তারা থেমে যায়নি। ইতিমধ্যে দুই দুইবার স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিয়ে বিজয়ের পতাকা ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হলেও মানুষের অধিকার আদায়ের সেই সংগ্রাম এখনো চলছে। আইয়ুব খানের উন্নয়নের চমক এ জাতিকে গলাতে পারেনি, এরশাদও সেই উন্নয়নের ছবক দিয়ে অবৈধ ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চেয়েছিলেন। অবশেষে রাজনৈতিক দলগুলোর ন্যুনতম সমঝোতার ভিত্তিতে গণতন্ত্রের স্বপক্ষে সাধারণ মানুষের ঐক্য দেশকে এক নতুন রাজনৈতিক সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছিল। রাষ্ট্রপতির শাসন থেকে ওয়েস্ট মিনিস্টার টাইপ সংসদীয় গণতন্ত্রে পদার্পণ এবং নির্বাচনকালীন তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা কায়েমের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দিকে যাত্রা শুরু করেছিল। গণতান্ত্রিক রাজনীতির বিপর্যয় সত্তে¡ও উৎপাদন ব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক গতিশীলতার যে দৃষ্টান্ত গত দুই দশকে দেখা গেছে, তাতে সহজেই অনুমান করা যায়, স্থিতিশীল গণতন্ত্র এবং প্রাতিষ্ঠানিক পুর্নগঠনসহ সুশাসন নিশ্চিত করা গেলে দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির যে সম্ভাবনা রয়েছে, তা রুখে দেয়ার সাধ্য কারো নেই। এ কারণেই আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক আধিপত্যবাদের যোগসাজশে এখানে সেনাসমর্থিত একটি ওয়ান-ইলেভেন সরকারের পটভ‚মি সৃষ্টি করা হয়েছিল। অত:পর বিশ্ব পরিমন্ডলে কৌশলগত কিছু পরিবর্তন ঘটে গেলেও বাংলাদেশে একটি বশংবদ সরকারকে অগণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতায় রেখে আঞ্চলিক কৌশলগত ও অর্থনৈতিক লুণ্ঠন প্রক্রিয়ায় ভাগাভাগির ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করার আয়োজন এখনো সক্রিয় রয়েছে। সাম্প্রতিক উপনির্বাচনে দেখা গেছে, বিরোধীদলগুলোর ভোট বর্জনের কারণে সরকারের ব্যাপক প্রচারণা ও আয়োজন সত্তে¡ও শতকরা ১০ ভাগ ভোটারও ভোট দিতে যায়নি। এ থেকে আঁচ করা যায়, মানুষের রাজনৈতিক সমর্থনের পাল্লা ৯০ ভাগই সরকারের বিপক্ষে অবস্থান করছে। তারা নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠুনির্বাচন দেখতে চায় এবং নিজেদের পছন্দের দল ও প্রার্থীর পক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। বাহ্যিকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা উন্নয়নসহযোগী ও বাণিজ্যিক অংশীদার দেশগুলোও বাংলাদেশের জনগণের দাবীর সাথে একাত্ম হয়ে একটি অবাধ-সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে জোরালো অবস্থান নিশ্চিত করেছে। জাতিসংঘসহ বিশ্বসম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে একটি গণতান্ত্রিক গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ করতে যখন কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে, তখনো সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বিদ্যমান সাংবিধানিক ব্যবস্থার দোহাই দিয়ে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনেই একতরফাভাবে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বয়ান চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারের এই অবস্থানের পাশে দাঁড়িয়ে আরেকটি ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে আরো ৫ বছর ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে আবারো ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবকে মার্কিন পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সফরের সময় আকস্মিক ঢাকায় উড়ে এসে অনেকটা নির্লজ্জভাবে, কূটনৈতিক শিষ্টাচারের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বর্তমান সরকারে প্রতি ভারতের পূর্ণ সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করে গেছেন।
নানাভাবে দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সঙ্কুচিত করে তোলা হয়েছে। বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পথ রুদ্ধ করে একদলীয় বাকশাল কায়েম এবং সব পত্রপত্রিকা বন্ধ করে স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে রাজনীতির যে নবযাত্রার সূচনা করা হয়েছিল, দেশের মানুষ তা মেনে নেয়নি। স্বাধীনতার সুর্বণজয়ন্তী পেরিয়ে এসে স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দলের শাসনামলে দেশে যে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংস্কৃতি চালু করা হয়েছে, দেশের সাধারণ মানুষ তা গ্রহণ করছে না। কার্যত দেশের মানুষের রায় বা ম্যান্ডেটের তোয়াক্কা না করেই তথাকথিত উন্নয়ন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতার স্বপক্ষের নামে রাজনৈতিক প্রপাগান্ডার মোড়কে একটি কর্তৃত্ববাদী শাসন চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা লুন্ঠনের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার বদলে অনেকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। অন্যদিকে, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেত্রী, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী জোটনেতাকে মাত্র দুই কোটি টাকার ট্রাস্টের অর্থ হস্তান্তরে নিয়মের বরখেলাফের অভিযোগে বছরের পর বছর ধরে আটক করে কার্যত গণতন্ত্রের পথকে রুদ্ধ করা হয়েছে। গণতন্ত্র না থাকলে মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকেনা। প্রশাসনিক জবাবদিহিতা থাকেনা। জনপ্রতিনিধিত্বের গুরুত্ব ও জবাবদিহিতা থাকেনা। আইনের শাসন ও জননিরাপত্তা চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়। আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজ আজ চরম গণতন্ত্র সংকটের সম্মুখীন। ঔপনিবেশিক আমলে বিদেশি শাসকদের বশংবদ একশ্রেণীর জমিদার যেভাবে দেশের মানুষকে নীচশ্রেণীর প্রজা জ্ঞান করতো, আজকের বাংলাদেশে একশ্রেণীর রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত সাধারণ মানুষের অধিকার নিয়ে একই ধরণের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। জাতীয় রাজনীতি থেকে পাড়া-মহল্লা ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস পর্যন্ত দুর্বৃত্তায়ণের রাজনীতি এখন সর্বগ্রাসি হয়ে উঠেছে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে বৈশ্বিক বাস্তবতা ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রয়োজন, প্রত্যাশা থেকে বিচ্যুত করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শিক্ষা ও গবেষণার বদলে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের সন্ত্রাস-নৈরাজ্য, নিষ্ঠুরতা-নির্যাতন, খুন-ধর্ষণের অভয়ারণ্যে পরিনত করার মধ্য দিয়ে দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করে ফেলা হচ্ছে। একদিকে শিক্ষাব্যবস্থায় বিজ্ঞান শিক্ষার নামে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস ও ঈমান-আকিদার পরিপন্থী মতবাদ এবং ইতিহাস শিক্ষার নামে মুসলমানদের গৌরবময় ইতিহাসকে বিকৃতভাবে উপস্থাপনের অপতৎরতায় দেশের সাধারণ মানুষও সংক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। উচ্চশিক্ষার পরিবেশ, মান ও গবেষণার ক্রমাবনতির মধ্য দিয়ে আমাদের উচ্চশিক্ষা শ্রেফ সার্টিফিকেট বাণিজ্যে পরিনত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা উচ্চশিক্ষিত যুবকরা দেশের দক্ষ জনবল তথা কর্মসংস্থান ও অর্থনীতিতে প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখতে পারছেনা।
বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার জন্য আঞ্চলিক আধিপত্যবাদের দায় অনেক বেশি। বাংলাদেশে বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে ভারতের প্রবল প্রভাব বাংলাদেশকে বিশ্বের অন্যতম হাইব্রীড রিজিমের তালিকায় ঠেলে দিয়েছে। এই রিজিম টিকিয়ে রাখতে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও আন্তর্জাতিকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপবাদ ও নিষেধাজ্ঞার ধকল সহ্য করতে হচ্ছে। হিন্দুত্ববাদী শাসনে ভারত নিজেও তার সেক্যুলার, গণতান্ত্রিক ইমেজ ধরে রাখতে পারছেনা। জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের দাবিদার ভারতকে এখন আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর অন্যতম বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। বিশ্বের গণতান্ত্রিক-রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করে সুইডেনের ভি ডেম ইনস্টিটিউট। এই প্রতিষ্ঠান তাদের ২০২৩ সালের রিপোর্টে গত ১০ বছরে ভারতের আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অবস্থা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাবলী পর্যালোচনা করে ভারতকে বিশ্বের অন্যতম স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলে অভিহিত করা হয়েছে। বহুত্ববাদের দাবিদার ভারতে প্রায় তিরিশ কোটি মানুষের দ্বিতীয় বৃহত্তম সম্প্রদায় মুসলমানদের উপর গণহত্যার আলামত ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিশ্বের বৃহত্তম গোমাংস রফতানিকারক দেশ ভারতে গরুর গোশত খাওয়া, রাখা কিংবা পরিবহনের অপরাধে মুসলমানদের পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। এ সপ্তাহেও বিহারে গরুর মাংস বহনের অভিযোগে নাসিম কুরেশি নামের এক মধ্য বয়েসী ব্যক্তিকে ২০ জন হিন্দুত্ববাদী পিটিয়ে হত্যা করেছে। হিন্দুত্ববাদের আঁচ ও প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ছে। ভারতের সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার কারণেই বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসিরা পিটিয়ে হত্যা করেছিল। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জনমত এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ উপেক্ষা করে যে রিজিমকে ভারতের বর্তমান হিন্দুত্ববাদী সরকার অন্ধভাবে সার্পোট দিয়ে আসছে, তারা ভারতবিরোধী মন্তব্যের কারণে পিটিয়ে হত্যা করতেও কুণ্ঠিত হয়না। মোদির ঢাকা সফরের প্রতিবাদী জনতার উপর ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিবর্ষণে মানুষ হত্যাসহ যে যুদ্ধংদেহী রূপ দেখা গিয়েছিল, কোনো সভ্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে তা কল্পনা করা যায়না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গত নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরাজয় নিশ্চিত হওয়ার পর ট্রাম্পের উগ্র বর্ণবাদী সমর্থকরা নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে ওয়াশিংটনে ক্যাপিটল হিল- হোয়াইটহাউজে তাÐব চালিয়েছিল, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গত দুইশ’ বছরের ইতিহাসে নজিরবিহীন। দিনের পর দিন ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে সহিংস, উচ্ছৃঙ্খল বিক্ষোভকারীরা রাষ্ট্রীয় সুরক্ষিত অফিস ও হলরুমগুলো তছনছ করার সময়ও সেখানকার নিরাপত্তারক্ষীরা যতটুকু না করলেই নয় ততটুকু শক্তি প্রয়োগ করেছে। অথচ নরেন্দ্র মোদির সফরে ভারতে বিজেপির ইসলাম বিদ্বেষী কার্যকলাপের প্রতিবাদ করায় শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের বাংলাদেশে শত শত মানুষ পুলিশের গুলি-টিয়ারশেল, রাবার বুলেটের শিকার হয়েছিল। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশের গুলিতে অন্তত ১৭ জন নিহত হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর মোদি বিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশে ছাত্রলীগের হামলার ঘটনাও ঘটেছে। ভারতে মুসলমানবিদ্বেষ, হিন্দুত্ববাদী সহিংসতা, গণতন্ত্র হত্যা, আদানিদের কর্পোরেট লুন্ঠনের ঘটনার সাথে বাংলাদেশকেও আষ্টে-পৃষ্ঠে বেঁধে ফেলা হয়েছে। এ থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হচ্ছে দেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও দেশে সুশাসন, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার সমুন্নত করতে সব রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের ঐক্য ও গণআন্দোলন গড়ে তোলা।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
অতিসত্বর নির্বাচন হওয়ার দরকার : আমীর খসরু
দুর্নীতিগ্রস্ত লুটেরা মাফিয়াদল যাতে বাংলাদেশে আর ফেরত না আসতে পারে : মেজর হাফিজ
বঞ্চিত ৭৬৪ কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিচ্ছে সরকার
ক্যাডার বর্হিভূত রাখার সুপারিশ প্রত্যাখ্যান শিক্ষা ক্যাডারের
শেখ হাসিনাসহ ৬৩ জনের নামে মামলা
অভিযানের খবরে পালাল শ্রাবণধারা কারখানার পরিচালক-ম্যানেজার
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নেই আশানুরূপ সাড়া
একতাই পারবে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে
তিতাস গ্যাস টি.এন্ড ডি. পিএলসি’র ৫% নগদ লভ্যাংশ অনুমোদিত
ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল্লামা সাজিদুর নির্বাহী সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ
‘আপনারা আমার খালেদকে ফেরত এনে দেন’ : নিখোঁজ সহ-সমন্বয়কের বাবা লুৎফর
২৮ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খেলাফত মজলিসের অধিবেশন প্রেস ব্রিফিংয়ে নেতৃবৃন্দ
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা
ইনসেপ্টার বিক্রয় প্রতিনিধির ২২টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
পিকে হালদারের পাঁচ সহযোগীর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের নির্দেশ
ভূমধ্যসাগরে ৮ বাংলাদেশি নিহত
মুক্তি পেলেন ভারতের সমুদ্রসীমায় গ্রেফতার ১২ বাংলাদেশি
আ.লীগকে পুনর্বাসনকারীদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়বে গণঅধিকার পরিষদ
অন্তর্বর্তী এ সরকারের মধ্যে দুটি সরকার রয়েছে : মাহমুদুর রহমান মান্না
হাসিনার নভোথিয়েটার দুর্নীতি মামলার পুনঃতদন্ত শুরু