নদীদূষণ রোধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে
১৪ মার্চ ২০২৩, ০৮:৫৫ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৫:২৬ পিএম
বাংলাদেশ বিশ্বের বৃহত্তম ডেল্টা বা ব-দ্বীপ। হিমালয় থেকে উৎসারিত অসংখ্য নদীর পানিবাহিত পলিমাটি দ্বারা এ দেশের ভূ-প্রকৃতি গঠিত। সবুজ প্রকৃতি ও উর্Ÿর পলিমাটিতে খুব সহজেই প্রচুর ফসল ও বৃক্ষরাজী উৎপাদিত হয়। দেশের নদীগুলোর উজানে ভারতের বাঁধ নির্মাণ, পানি প্রত্যাহার ও আভ্যন্তরীণ দূষণের কারণে নদীগুলোর নাব্য হ্রাস এবং ভয়াবহ দূষণের কবলে। দেশের প্রধানতম নদী পদ্মা ও যমুনার উজানে ফারাক্কা ও গজলডোবা বাঁধের কারণে শত শত শাখা নদী অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় পলি জমে পদ্মা-যমুনার মূল প্রবাহে নাব্য সংকট বহু আগেই দেখা দিয়েছে। এর সাথে চলছে মনুষ্যসৃষ্ট নানা অপকর্ম। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়ণের কারণে ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীগুলো চরম মাত্রায় দূষণের শিকার হচ্ছে। ঢাকার চারপাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালুনদী যথেচ্ছ দখল, ভরাট ও শিল্পদূষণের কারণে বহু আগেই ব্যবহার উপযোগিতা হারিয়েছে। গত দুই দশকে শুধুমাত্র বুড়িগঙ্গার দূষণরোধ ও দখল উচ্ছেদে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়ে শত শত কোটি টাকা খরচ করেও কাক্সিক্ষত ফলাফল পাওয়া যায়নি। একইভাবে শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদী দখল, ভরাট এবং দূষণের কারণে অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে।
গতকাল ছিল আন্তর্জাতিক নদীরক্ষা দিবস। নদী সুরক্ষায় দেশের সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয় সম্পর্কে বাস্তব উদ্যোগ ও জনসচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সাল সাল থেকে প্রতি বছর ১৪ মার্চ আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। নদীবহুল দেশ হিসেবে নদী রক্ষার উদ্যোগ আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রির্সাচ সেন্টার (আরডিআরসি) নামে একটি বেসরকারি গবেষণা সংস্থার রিপোর্টে বাংলাদেশের প্রধান নদীগুলোর বর্তমান চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। গত বছরের ফেব্রæয়ারি থেকে চলতি বছরের ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত পরিচালিত তাদের জরিপ রিপোর্টে দেশের ৫৬টি নদীর চরম দূষণের শিকার বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পানির পিএইচ মাত্রা, ডিসল্ভ অক্সিজেনের মাত্রা (ডিও), কেমিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড বা অনুপাত (সিওডি) ইত্যাদি পরিমাপকগুলোর প্রতিটি ক্ষেত্রেই নদীর পানি স্বাভাবিক গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে অনেক কম বা কয়েকগুণ বেশি। ৫৬টি প্রধান নদীর মধ্যে অন্তত ২৫টি নদীর পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা প্রতি লিটারে ৫ মিলিগ্রামেরও কম। এই মাত্রায় দূষিত পানিতে মাছ, জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ জন্মাতে পারেনা। এক সময়ে বুড়িগঙ্গা-শীতলক্ষ্যার স্বচ্ছ পানিতে প্রচুর মাছ ও জলজ উদ্ভিদ ছিল। জনপদের মানুষের সুপেয় পানির চাহিদার পাশাপাশি প্রচুর মাছের উৎস ছিল এসব নদী। বুড়িগঙ্গার পানি এখন পরিশোধন করেও ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। শুধু বুড়িগঙ্গা নয়, দেশের বেশির ভাগ নদ-নদী দখল ও দূষণের শিকার হচ্ছে। এতে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়া থেকে শুরু করে পরিবেশ বিপন্ন হয়ে পড়ছে।
অবৈধ দখল, ভরাট, শিল্পকারখানার কেমিকেল দূষণ ও প্লাস্টিক বর্জ্য নদীগুলোর অস্তিত্ব সংকটের মূল কারণ হয়ে রয়েছে। পরিবেশবাদীদের আন্দোলন এবং আন্তর্জাতিকভাবে দৃষ্টিগ্রাহ্য হওয়ার কারণে কখনো কখনো নদী দূষণের বিপক্ষে সরকারের সংশ্লিষ্টদের ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশিত হলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। আট বছর আগে ২০১৪ সালে সুন্দরবনের শেলা নদীতে তেলবাহী টেঙ্কার ডুবে সেখানকার পানি, মাটি, গাছপালা ও জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছিল। কিছুদিন সেখান বাণিজ্যিক নৌপরিবহন বন্ধ থাকলেও পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। গতকাল ঢাকার একটি ইংরেজী দৈনিক পত্রিকার সচিত্র প্রতিবেদনে তুরাগ নদীতে তেলবাহী টেঙ্কার ডুবে নদীর ৭ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভাসমান তেল ছড়িয়ে পড়ার চিত্র উঠে এসেছে। অয়েলটেঙ্কার ডুবির তিনদিন পরেও তেল অপসারণ করে দূষণের মাত্রা ঠেকানোর কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে, ৫৬টি নদী নানাভাবে দূষিত হয়ে জীববৈচিত্র্য, জনস্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠেছে। শিল্প কারখানায় বাধ্যতামূলক ইটিপি বাস্তবায়ন, নাগরিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকীকরণ, প্লাস্টিক বর্জ্য সুয়ারেজ লাইন, নদী ও উন্মুক্ত স্থানে ফেলার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে না পারলে নদী দূষণ রোধ করা অসম্ভব। প্রতি বছর হাজার হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য নদীতে জমা হয়ে নদীগুলোকে চরমভাবে দূষিত করছে। নদীর পানিতে প্লাস্টিকের ক্ষতিকর ক্ষুদ্র কণা মাছ ও খাদ্যের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে অনিরাময়যোগ্য রোগ সৃষ্টি করছে। এসব প্লাস্টিকের একটি অংশ নদীবাহিত হয়ে সমুদ্রে গিয়ে দূষণ ও প্রাণ-প্রকৃতির উপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করছে। আমাদের কৃষিব্যবস্থা, খাদ্য নিরাপত্তা, বাসযোগ্য জনপদ টিকিয়ে রেখে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে নদী রক্ষা ও দূষণ রোধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের বিকল্প নেই। নদীদূষণ রোধে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্তৃপক্ষকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
অতিসত্বর নির্বাচন হওয়ার দরকার : আমীর খসরু
দুর্নীতিগ্রস্ত লুটেরা মাফিয়াদল যাতে বাংলাদেশে আর ফেরত না আসতে পারে : মেজর হাফিজ
বঞ্চিত ৭৬৪ কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিচ্ছে সরকার
ক্যাডার বর্হিভূত রাখার সুপারিশ প্রত্যাখ্যান শিক্ষা ক্যাডারের
শেখ হাসিনাসহ ৬৩ জনের নামে মামলা
অভিযানের খবরে পালাল শ্রাবণধারা কারখানার পরিচালক-ম্যানেজার
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নেই আশানুরূপ সাড়া
একতাই পারবে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে
তিতাস গ্যাস টি.এন্ড ডি. পিএলসি’র ৫% নগদ লভ্যাংশ অনুমোদিত
ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল্লামা সাজিদুর নির্বাহী সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ
‘আপনারা আমার খালেদকে ফেরত এনে দেন’ : নিখোঁজ সহ-সমন্বয়কের বাবা লুৎফর
২৮ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খেলাফত মজলিসের অধিবেশন প্রেস ব্রিফিংয়ে নেতৃবৃন্দ
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা
ইনসেপ্টার বিক্রয় প্রতিনিধির ২২টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
পিকে হালদারের পাঁচ সহযোগীর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের নির্দেশ
ভূমধ্যসাগরে ৮ বাংলাদেশি নিহত
মুক্তি পেলেন ভারতের সমুদ্রসীমায় গ্রেফতার ১২ বাংলাদেশি
আ.লীগকে পুনর্বাসনকারীদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়বে গণঅধিকার পরিষদ
অন্তর্বর্তী এ সরকারের মধ্যে দুটি সরকার রয়েছে : মাহমুদুর রহমান মান্না
হাসিনার নভোথিয়েটার দুর্নীতি মামলার পুনঃতদন্ত শুরু