র‌্যাব-পুলিশের বাড়াবাড়ি

Daily Inqilab ইনকিলাব

১৯ মার্চ ২০২৩, ০৮:৩৫ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৪১ এএম

র‌্যাব, পুলিশ প্রভৃতি আইনশৃংখলা বাহিনীর এক শ্রেণির কর্মকর্তা ও সদস্যের বেপরোয়া আচরণ ও কর্মকা- ওইসব প্রতিষ্ঠানের ভাবমর্যাদাই নষ্ট করছে না, দেশের ভাবমর্যাদারও ক্ষতিসাধন করছে। বিষয়টি সকলেরই জানা; তারপরও তাদের অপকর্ম ও দৌরাত্ম্য নিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। আইনশৃংখলা বাহিনীসমূহের বিরুদ্ধে সাধারণ অভিযোগ, তাদের এক শ্রেণির সদস্য বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, হেফাজতে হত্যা, অপহরণ, ঘুষ, চাঁদাবাজিসহ এমন কোনো অপরাধ নেই, যা করছে না। এজন্য তাদের বিচার-সাজা কিছুই হচ্ছে না। না হওয়ার কারণে তাদের অপরাধের সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে। গতকালই দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় খবর আছে, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে র‌্যাবের অভিযানের সময় একজন বৃদ্ধ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ও অপর একজন আহত হয়েছে। র‌্যাবের তরফে বলা হয়েছে, আত্মরক্ষার জন্য র‌্যাব গুলি চালাতে বাধ্য হয়, যাতে ওই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, র‌্যাবের দলটি সাধারণ মানুষের পোশাকে হত্যা মামলার আসামি ধরতে সেখানে গিয়েছিল। এনিয়ে গ্রামবাসী ও র‌্যাব সদস্যদের তর্ক-বির্তকও হয়। নিহতের স্ত্রীর দাবি, তার স্বামীকে মারধর করার পর গুলি করা হয়। পর্যবেক্ষকদের মতে, র‌্যাবের সদস্যদের সাধারণ মানুষের পোশাকে যাওয়ার কথা নয়। এ কারণে গ্রামবাসীর মধ্যে ভুলবুঝাবুঝি সৃষ্টি হয়। ডাকাত ভেবে ৯৯৯ নম্বরে ফোনও করে একজন গ্রামবাসী। নিহত ব্যক্তি টুকরি বোনার কাজ করতো। তার পরিবার অপরিসীম শোকের পাশাপাশি গভীর অনিশ্চয়তায় পড়লো। বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-সহ বিভিন্ন অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তার কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও অনুরূপ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রচেষ্টার জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের তরফে বলা হয়েছে, তারা পর্যবেক্ষণ করছে। এমতাবস্থায়, র‌্যাবের হাতে যদি হত্যাকা- হতে থাকে কিংবা তার আচরণ ও কর্মের মধ্যে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন না আসে, তবে কীভাবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আশা করা যায়?

পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। হত্যা-নির্যাতন থেকে শুরু করে ছিনতাই-রাহাজানি পর্যন্ত সব কিছুর অভিযোগই রয়েছে। গতকালেরই খবর, মাহিয়া মাহি নামের একজন চিত্র নায়িকাকে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার অভিযোগে দুপুরে গ্রেফতার করে পুলিশ। গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। কয়েক ঘণ্টা পরে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করলে তিনি মুক্ত হন। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা হয়েছে। তিনি ওইদিন সউদী আরব থেকে দেশে আসেন এবং বিমানবন্দরেই তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। জানা গেছে, মাহিয়া মাহি অন্তসত্তা। একজন অন্তসত্তা মহিলা, যিনি সেলিব্রোটিও বটেন, তার গ্রেফতারে এত ‘দায়িত্ববোধের পরিচয়’ থেকে বলতে হয়, এরূপ দায়িত্ববোধ তো অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় না। পর্যবেক্ষকদের মতে, এখানে এক ধরনের বাড়াবাড়ির নজির স্থাপন করা হয়েছে। অনেকে বলেন, পুলিশের একাংশ নিজেদের দেশের রাজা মনে করেন। কোনো কিছু তোয়াক্কা করার প্রয়োজন তারা দেখান না। ক’দিন আগে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে পুলিশ যে চন্ড আচরণ ও তা-ব প্রদর্শন করেছে, তা মানুষকে বিস্মিত ও হতবাক করেছে। নির্বাচনকেন্দ্র থেকে একটি বিশেষ দলের ভোটার আইনজীবীদের জোর করে বের করে দিয়েছে। ঠেলা-ধাক্কা তো দিয়েছেই। আর সাংবাদিকদের বেধড়ক পিটিয়েছে। তাদের ক্যামেরা ও অন্যান্য সরঞ্জাম কেড়ে নিয়েছে। দেশটা কি মগের মুল্লুক হয়ে গেছে যে, পুলিশ যখন তখন যা-ইচ্ছা তাই করতে পারবে? স্মরণ করা যেতে পারে, সরকারি দলের সমর্থক কিছু আইনজীবী ও পুলিশ একজোট হয়ে আদালত অঙ্গনকে কলুষিত করেছে এবং নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙ্গে দিয়েছে। এতে সার্বিক বিবেচনায় যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়।

একটা দেশের আইনশৃংখলা, শান্তি-নিরাপত্তা, শাসন-বিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পুলিশের প্রয়োজনীয়তা, গুরুত্ব ও ভূমিকা বলার অপেক্ষা রাখে না। যে কোনো দেশ অনেক কিছু না হলেও চলতে পারে। কিন্তু পুলিশ ছাড়া চলতে পারে না। পুলিশের এই অপরিহার্যতা স্বীকার করেও অনেকে মনে করেন, ‘শূন্য গোয়াল ভালো, দুষ্ট ষাঁড়ের চেয়ে’। এটা অবশ্য ক্ষোভের কথা; আসল কথা নয়। আসল কথা, পুলিশ আমাদের জীবনেরই অংশ। অবশ্যই তা ‘জেন্টেলম্যান পুলিশ’, ‘জনবান্ধব পুলিশ’। অন্যায়-অত্যাচার, আতংক-ভীতি, জোর-জবরদস্তি সব সমাজেই আছে কমবেশি। এসব থেকে সমাজকে মুক্ত রাখা, মানুষের জীবন যাপন স্বচ্ছন্দ্য, স্বাভাবিক ও নিরাপদ রাখা পুলিশের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এজন্য পুলিশকে হিতৈষি ও সহৃদয় হতে হবে। হতে হবে ন্যায়পরায়ণ, সৎ, কর্তব্যনিষ্ঠ, নির্মোহ ও নিরপেক্ষ। এই সব গুণাবলী আমাদের পুলিশের সবার মধ্যে নেই। অনেকেরই মধ্যেই দলান্ধতা, লোভ, হিংসা, নিষ্ঠুরতা, ক্ষমতাপ্রিয়তা এবং কোনো কিছু বেতোয়াক্কা করার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। এদের জন্যই প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুলিশের এত অখ্যাতি। অথচ, ব্যক্তির অপরাধের দায় প্রতিষ্ঠানের ওপর পড়তে পারে না। ব্যক্তির অপরাধের যথাযথ বিচার দ্রুত হলে প্রতিষ্ঠান নিস্কলুষ থাকতে পারে। দুর্ভাগ্য যে, আমাদের দেশের অপরাধী র‌্যাব-পুলিশ সদস্যের উপযুক্ত বিচার ও শাস্তি হয় না। বলার অপেক্ষা রাখে না, অর্থনৈতিক উন্নতি, ব্যবসা-বাণিজ্যের অগ্রগতি, উন্নয়ন, বিনিয়োগ ইত্যাদি শান্তি ও সুষ্ঠু আইনশৃংখলার অভাবে ব্যহত ও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে রফতানিপণ্য বছরের পর বছর ধরে চুরি ও লুট হচ্ছে। অথচ, পুলিশ চোর-লুটেরাদের দমন করতে পারছে না। অভিযোগ রয়েছে, এর সঙ্গে পুলিশের একশ্রেণির সদস্যের হাত রয়েছে। এরকম অভিযোগ রাস্তাঘাট, মার্কেট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির ক্ষেত্রেও রয়েছে। চাঁদাবাজি, কমিশনবাজি, তোলাবাজি সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতির এই প্রেক্ষাপটে আইনশৃংখলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বাহিনীগুলোকে নিয়ন্ত্রণ ও দায়িত্বশীল করার বিকল্প নেই।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

পাঠদান পদ্ধতির আধুনিকায়ন জরুরি
পিলখানা ম্যাসাকার তদন্ত কমিশন : রিপোর্টের জন্য জনগণের রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা
অর্থনীতি ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গতিশীল করতে হবে
নানা ইস্যু সামনে এনে মাঠ গরমের চেষ্টা
বদর যুদ্ধের তাৎপর্য ও শিক্ষা
আরও
X

আরও পড়ুন

সঙ্গে থাকা বাচ্চা মেরে কুকুরটি কামড়ালো বৃদ্ধ, শিশুসহ ছয়জনকে

সঙ্গে থাকা বাচ্চা মেরে কুকুরটি কামড়ালো বৃদ্ধ, শিশুসহ ছয়জনকে

তাহাজ্জুদ নামাজের পর বেতের পড়তে গিয়ে তাহাজ্জুদ বেতের দু’টোই মিস হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে।

তাহাজ্জুদ নামাজের পর বেতের পড়তে গিয়ে তাহাজ্জুদ বেতের দু’টোই মিস হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে।

গুলিস্তানে মার্কেট দখল করতে গিয়ে গ্রেফতার

গুলিস্তানে মার্কেট দখল করতে গিয়ে গ্রেফতার

জামানত ছাড়াই ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা

জামানত ছাড়াই ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা

ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি ঘনিয়ে আসছে রাশিয়ার কুর্স্ক আক্রমণে ভরাডুবি কিয়েভের

ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি ঘনিয়ে আসছে রাশিয়ার কুর্স্ক আক্রমণে ভরাডুবি কিয়েভের

ঢাকায় মার্কিন সিনেটর চার্লস পিটার্স

ঢাকায় মার্কিন সিনেটর চার্লস পিটার্স

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগের স্থায়িত্ব নির্ভর করে বিচার বিভাগের ওপর

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগের স্থায়িত্ব নির্ভর করে বিচার বিভাগের ওপর

ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ আজ?

ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ আজ?

ড. ইউনূস এর মতো সরকার প্রধান পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার :জামায়াত নেতা ড. ইকবাল

ড. ইউনূস এর মতো সরকার প্রধান পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার :জামায়াত নেতা ড. ইকবাল

ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের কমিটি কেনো অবৈধ ঘোষণা করা হবে না

ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের কমিটি কেনো অবৈধ ঘোষণা করা হবে না

কৃষি জমির মাটি কেটে নেওয়ার অপরাধে দুই ব্যক্তির কাছ থেকে ২ লাখ ৫০ টাকা জরিমানা

কৃষি জমির মাটি কেটে নেওয়ার অপরাধে দুই ব্যক্তির কাছ থেকে ২ লাখ ৫০ টাকা জরিমানা

প্রেষনে বিমান বাহিনী থেকে লোকবল নিয়োগ বাতিল সহ ৪ দফা দাবীতে সিলেটে বেবিচক কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিক্ষোভ

প্রেষনে বিমান বাহিনী থেকে লোকবল নিয়োগ বাতিল সহ ৪ দফা দাবীতে সিলেটে বেবিচক কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিক্ষোভ

নিষিদ্ধ সময়ে মেঘনায় অবাধে মাছ শিকার, নিয়ন্ত্রণে কমলনগরের দুই নেতা!

নিষিদ্ধ সময়ে মেঘনায় অবাধে মাছ শিকার, নিয়ন্ত্রণে কমলনগরের দুই নেতা!

ছাগলনাইয়ায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দু-পক্ষের সংঘর্ষে ৫ জন আহত, পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে চারটি মোটরসাইকেল

ছাগলনাইয়ায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দু-পক্ষের সংঘর্ষে ৫ জন আহত, পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে চারটি মোটরসাইকেল

বিএনপিকে আবার মিডিয়া ট্রায়ালে ফেলা হচ্ছে: তারেক রহমান

বিএনপিকে আবার মিডিয়া ট্রায়ালে ফেলা হচ্ছে: তারেক রহমান

পাঠদান পদ্ধতির আধুনিকায়ন জরুরি

পাঠদান পদ্ধতির আধুনিকায়ন জরুরি

পিলখানা ম্যাসাকার তদন্ত কমিশন : রিপোর্টের জন্য জনগণের রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা

পিলখানা ম্যাসাকার তদন্ত কমিশন : রিপোর্টের জন্য জনগণের রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা

অর্থনীতি ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গতিশীল করতে হবে

অর্থনীতি ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গতিশীল করতে হবে

শান্তিরক্ষীই যুদ্ধ

শান্তিরক্ষীই যুদ্ধ

পূর্ণ শক্তি

পূর্ণ শক্তি