বদর যুদ্ধের তাৎপর্য ও শিক্ষা
১৭ মার্চ ২০২৫, ১২:১১ এএম | আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৫, ১২:১১ এএম

১৭ রমজান ঐতিহাসিক বদর দিবস। পবিত্র মাহে রমজান একটি মহিমান্বিত মাস এবং ১৭ রমজান ইতিহাসের একটি তাৎপর্যময় দিন। প্রতি বছর ঘুরে এ মাসটি অত্যন্ত মর্যাদার সাথে আমাদের সামনে উপস্থিত হয়। এ মাসে মুসলিম এবং কাফিরদের মধ্যে ঘটে যাওয়া একটি ঐতিহাসিক যুদ্ধ বিষয়ক ঘটনার তাৎপর্য বিশ্বের মুসলমানদের দ্বীন কায়েমের সংগ্রামে নতুনভাবে উজ্জীবিত করে। রমজানের মহিমান্বিত ১৭তম দিনে ঐতিহাসিক বদর নামক প্রান্তরে যুদ্ধটি সংঘঠিত হওয়ার কারণে এর নাম দেয়া হয় জঙ্গে বদর বা ‘বদর যুদ্ধ’। এ যুদ্ধ কাফেরদের সাথে মুসলমানদের প্রথম যুদ্ধ। প্রতি বছর এ দিনটি আমাদের মাঝে আসে ঈমানী চেতনা জাগ্রত, ইসলামের সুমহান আদর্শের বিপ্লবী দাওয়াত মানুষের কাছে পৌঁছানো এবং দ্বীন কায়েমের বার্তা নিয়ে। এ দিনটি আসে মুসলিম উম্মাহকে বাতিল শক্তির বিরুদ্ধে জিহাদে অংশ গ্রহণে উজ্জীবিত করতে। বদর যুদ্ধ ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ মার্চ মদিনা থেকে ৮০ মাইল দূরে বদর নামক প্রান্তরে সংঘঠিত হয়। ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য বদর যুদ্ধের বিজয় ছিল একটি ঐতিহাসিক বিজয়। তাই ইতিহাসে বদর যুদ্ধের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনস্বীকার্য। এ যুদ্ধ ছিল সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে এবং অসত্য, জুলুম, অত্যাচার, অন্যায়, অবিচার ও অবৈধ আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে। এ যুদ্ধে মুসলমানরা সংখ্যায় অনেক কম হয়েও মক্কার কাফির পরাশক্তিকে পরাজিত করে ইসলামের স্বর্ণোজ্জ্বল ইতিহাসের সূচনা করে। এর মাধ্যমে সত্য মিথ্যার পার্থক্য সূচিত হয় এবং মুসলিম উম্মাহ দ্বীন কায়েমের অনুপ্রেরণা পায়। এজন্য এ যুদ্ধকে সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী বলা হয়।
আমাদের প্রিয় নবী মুহম্মদ (সা.) পবিত্র ভূমি মক্কা থেকে মদিনা মুনাওয়ারায় হিজরত করার পর সেখানে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন এ রাষ্ট্রের প্রধান। তিনি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় শান্তি এবং নিরাপত্তার লক্ষ্যে মদিনার অন্যান্য জাতি গোষ্ঠীর সাথে একটি শান্তি চুক্তিতে আবদ্ধ হন। এটি মদিনা সনদ নামে পরিচিত। মদিনায় রাসুল (সা.) তাঁর সুদক্ষ নেতৃত্বে অতি অল্প সময়ের মধ্যে দ্বিধা-বিভক্ত জাতিকে একটি সুশৃঙ্খল জাতিতে পরিণত করেন। একটি নতুন ধর্ম ও রাষ্ট্রের উত্থান এবং রাসুল (সা.) ও মুসলমানদের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি মক্কা-মদিনার ইসলামবিরোধী শক্তিগুলোর জন্য প্রবল আতঙ্ক ও গাত্রদাহের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাছাড়া ইসলাম নামক নতুন ধর্মের উদ্ভবে তাদের প্রাধান্যও খর্ব হয়। এ স্বতন্ত্র মদিনা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে মক্কা থেকে সিরিয়া পর্যন্ত কুরাইশদের যে সীমাহীন অবাধ বাণিজ্য প্রতিষ্ঠিত ছিল তাতে বিঘœ ঘটে। এ জন্য মক্কার কুরাইশরা মদিনায় নব প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখে। এমনকি মদিনা আক্রমণ করে তারা রাসুল (সা.) এবং ইসলামকে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা করে। তারই অংশ হিসেবে তারা কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে একটি বাণিজ্যিক কাফেলা সিরিয়ায় পাঠিয়েছিল অস্ত্রশস্ত্র ও খাদ্য-সামগ্রী নিয়ে আসার জন্য। মক্কার আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা কেউ বাদ পড়েনি এ বাণিজ্যে পুঁজি বিনিয়োগ করতে। শুধু বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরং পূণ্যের কাজ এবং সামাজিক কর্তব্য মনে করে সবাই এতে অংশগ্রহণ করেছিল। রাসুল (সা.) এক পর্যায়ে সংবাদ পেলেন আবু সুফিয়ান সিরিয়া থেকে অস্ত্রশস্ত্র ও খাদ্য-সামগ্রীর বিশাল সম্ভার নিয়ে মক্কায় ফিরছেন।
এমতাবস্থায়, রাসুল (সা.) বদর গিরিপথে আবু সুফিয়ানকে বাধা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। কারণ, মক্কায় এ অস্ত্র ও খাদ্য-রসদ ভা-ার পৌঁছলে কুরাইশরা তা নিয়ে মদিনায় সহজে হামলা চালাবে। এ উদ্দেশ্যে রাসুল (সা.) দ্বিতীয় হিজরীর ১২ রমজান ৩১৩ জন সাহাবীর একটি ক্ষুদ্র বাহিনী নিয়ে মদিনা থেকে ৮০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে বদর গিরিপথের দিকে রওয়ানা হন। আবু সুফিয়ান তার বাণিজ্যিক কাফেলার ওপর মুসলমানদের আক্রমণের সম্ভাবনা বুঝতে পেরে দমদম আল গিফারীর মাধ্যমে মক্কায় সংবাদ পৌঁছে দিলেন যে, মাল-সামানাসহ বাণিজ্যিক কাফেলাকে মুসলমানদের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য অতিসত্ত্বর তারা যেন এগিয়ে আসে। কুরাইশরা আবু জাহলের নেতৃত্বে আবু সুফিয়ানকে সাহায্য করার জন্য অস্ত্রশস্ত্রসহ ১০০০ সুসজ্জিত সৈন্যের বিশাল এক বাহিনী নিয়ে রওয়ানা করে। আবু লাহাব ব্যতিত কুরাইশদের প্রায় সকল গোত্রের দলপতিই উক্ত বাহিনীতে অংশগ্রহণ করে। এ বাহিনী যথাস্থানে পৌঁছে সংবাদ পেল যে, আবু সুফিয়ান বাণিজ্যিক কাফেলা নিয়ে নিরাপদে মক্কায় চলে গেছেন। সে সময় আবু জাহেল তার দলকে বলল, ‘মুসলমানগণ যেন এত বড় দুঃসাহস আর কোনো দিন দেখাতে না পারে তাই তাদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার করা আবশ্যক। আবু জাহেল বলল, ‘চলো বদর প্রান্তরে একটি উৎসব করে যাই।’ রাসুল (সা.) সাফরা নামক স্থানে পৌঁছার পর আবু জাহেলের নেতৃত্বে আসা মক্কা বাহিনীর বিশাল রণ-প্রস্তুতির কথা অবহিত হলে তাদের শক্তি ও প্রাচুর্যের কথা সাহাবায়ে কিরামকে জানিয়ে দিলেন এবং তাদের সঙ্গে পরামর্শ সভায় মিলিত হলেন। সভায় মুহাজির আনসার সকলেই কুরাইশ বাহিনীর মুখোমুখি হওয়ার ব্যাপারে মত দেন। বিশেষ করে হযরত মিকদাদ বিন আসওয়াদ (রা.) ও সাদ বিন মাআয (রা.) এর বক্তব্যে রাসুল (সা.) এর হাস্যোজ্জ্বল চেহারা ফুটে উঠে। অতঃপর রাসুল (সা.) সাহাবায়ে কিরামকে নিয়ে বদর প্রান্তরে উপনীত হন। যুদ্ধের আগাম ফলাফল ঘোষণা করে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর স্মরণ কর! আল্লাহ তোমাদের প্রতিশ্রুতি দেন যে, দুই দলের একদল তোমাদের আয়ত্ত্বে আসবে। অথচ, তোমরা চেয়েছিলে যে নিরস্ত্র দলটি তোমাদের আয়ত্ত্বে আসুক। আর আল্লাহ চেয়েছিলেন সত্যকে তার বাণী দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে এবং অবিশ্বাসীদেরকে নির্মূল করতে।’ [সূরা আনফাল: আয়াত-০৭]।
১৭ রমজান শুক্রবার বদর প্রান্তরে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠল। সে যুগের প্রথা অনুযায়ী দ্বৈতযুদ্ধে হযরত হামযা (রা.) তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী উতবা বিন রাবিআকে, হযরত আলী (রা.) তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ওলিদ বিন উতবাকে প্রথম আঘাতেই খতম করে ফেলেন। এদিকে বয়োবৃদ্ধ হযরত উবাইদা বিন হারিস (রা.) তাঁর প্রতিপক্ষ শায়বা বিন রাবিআর সঙ্গে যুদ্ধে আহত হলেন। হযরত আলী (রা.) ও হযরত হামযা (রা.) হযরত উবাইদা (রা.) এর সাহায্যে এগিয়ে এসে তাঁকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিলেন। এরই মধ্যে হযরত আলী (রা.) শায়বাকে হত্যা করেন। প্রথম আঘাতেই সেরা তিনজন বীরযোদ্ধা ও গোত্র নেতাকে হারিয়ে কুরাইশ পক্ষ মরিয়া হয়ে মুসলমানদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। রাসুল (সা.) এর নির্দেশে মুসলমানরা ঈমানী শক্তিতে বলিয়ান হয়ে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে লাগলেন। তুমুল যুদ্ধে আনসারদের বনু সালামা গোত্রের কিশোর দুই ভাই হযরত মুআয ও হযরত মুআওয়িয ইবনু আফরা (রা.) আবু জাহেলকে বীরদর্পে আক্রমণ করেন এবং হত্যা করেন। হযরত বেলাল (রা.) এর হাতে তাঁর সাবেক মনিব উমাইয়া ইবনে খালফ নিহত হন। উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) তাঁর মামা আস ইবনে হিশাম ইবনে মুগিরাকে হত্যা করেন। বিকেলের মধ্যে যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়। ভীষণ এ যুদ্ধে কুরাইশ বাহিনী শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করে। মুসলমানদের ভাগ্যে ঐতিহাসিক বিজয়ের গৌরব অর্জিত হল। হক ও বাতিলের মধ্যে চূড়ান্ত ফয়সালা হল। পবিত্র কুরআনের বর্ণানানুযায়ী এ যুদ্ধে আল্লাহ তাআলা ফেরেশতা প্রেরণ করে মুসলমানদের সাহায্য করেন। এ যুদ্ধে মুসলমানদের মধ্যে ৬ জন মুহাজির ও ৮ জন আনসারসহ মোট ১৪ জন শহীদ হন। কাফিরদের পক্ষে ৭০ জন নিহত ও ৭০ জন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ধৃত ও বন্দি হয়। এক পর্যায়ে তাদের বড় বড় ২৪ জন নিহত নেতাকে বদরের একটি পরিত্যক্ত দুর্গন্ধময় কূপে নিক্ষেপ করা হয়। তারপর মুসলমানগণ প্রচুর গনীমতের মালের অধিকারী হন। যুদ্ধ শেষে আরবের রীতি অনুযায়ী রাসুল (সা.) মুসলিম বাহিনীসহ বদর ময়দানে তিন দিন অবস্থান করার পর নিজ বাহিনী নিয়ে মদিনায় ফিরে আসেন।
মুসলমানদের প্রতি কুরাইশদের ঈর্ষা, আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের ষড়যন্ত্র, মদিনায় ইহুদিদের বিশ্বাসঘাতকতা, বাণিজ্য পথে রুদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা, কুরাইশদের দস্যুবৃত্তি ও লুটতরাজ, নাখলার খ-যুদ্ধ, আবু সুফিয়ানের অপপ্রচার এবং মহানবী (সা.) এর আল্লাহর পক্ষ থেকে ঐশীবাণী লাভ ইত্যাদি ছিল বদর যুদ্ধের মৌলিক কারণ।
বদর যুদ্ধের পর রাসুল (সা.) এর চিন্তাভাবনা ছিল পরাজিত যুদ্ধ বন্দিদের হত্যা না করা ও কষ্ট না দেয়া। আরবের তৎকালীন প্রথানুযায়ী যুদ্ধ বন্দিদেরকে হত্যা করা, চির দাস বানানো অথবা মুক্তিপণ নিয়ে তাদের মুক্তি দেয়া হতো। সাহাবায়ে কিরামের সাথে পরামর্শক্রমে রাসূল (সা.) বন্দিদের হত্যা না করে মুক্তি দানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সিদ্ধান্ত ঘোষিত হলো, মুক্তিপণ দেয়ার মতো যাদের সামর্থ আছে তারা মুক্তিপণ দিয়ে মুক্তি লাভ করবে। আর যাদের সামর্থ নেই তাদের মুক্তিপণ নির্ধারিত হল আনসার সাহাবীদের ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া শিক্ষা দেয়া। বদরের বন্দিদের প্রতি রাসুল (সা.) যে আদর্শ ও উদার ব্যবহার করলেন, জগতের ইতিহাসে তার তুলনা হয় না। তাঁর আদেশে মদিনার আনসার ও মুহাজিররা সাধ্যানুযায়ী বন্দিদেরকে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়ে আপন আপন গৃহে স্থান দেন এবং আত্মীয়-স্বজনের মতোই তাদের সঙ্গে সৌহার্দপূর্ণ ব্যবহার করেন। বন্দিদের স্বগতোক্তি ছিল ‘মদিনাবাসীদের ওপর আল্লাহর রহমত নাযিল হোক। তাঁরা আমাদের উটে চড়তে দিয়ে নিজেরা পায়ে হেঁটে গেছে, নিজেরা শুষ্ক খেজুর খেয়ে আমাদের রুটি খেতে দিয়েছে।’ রাসুল (সা.) ও সাহাবায়ে কিরামের এমন সুন্দর ও উদার ব্যবহার দেখে বন্দিদের মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে। ফলে পরবর্তীতে অনেকেই ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেন।
ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য এক ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হচ্ছে বদর যুদ্ধ। এ যুদ্ধ থেকে আমরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অনুপ্রেরণা লাভ করতে পারি।
১. দোয়ায় শিথিলতা প্রদর্শন না করা: হাদিসের ভাষ্য মতে, দোয়া হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কঠিন বিপদ-আপদ এমনকি জীবনে চরম মুহূর্তে দোয়ার ব্যাপারে শিথিলতা প্রদর্শন না করতে বদর যুদ্ধ আমাদেরকে শিক্ষা দেয়। কেননা বদর যুদ্ধের পূর্ব মুহূর্তে আল্লাহর সাহায্য কামনায় রাসুল (সা.) আল্লাহর দরবারে মিনতি সহকারে বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার সাথে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছ তা পূর্ণ কর। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট তোমার ওয়াদাকৃত সাহায্যের নিবেদন করছি। হে আল্লাহ! আজ যদি তুমি এ দলকে ধ্বংস কর তাহলে তোমার ইবাদত করার জন্য পৃথিবীতে কেউ থাকবে না।’ [সহীহ মুসলিম: কিতাবুল জিহাদ ওয়া সিয়ার]। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘স্মরণ কর, যখন তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করেছিলে তখন তিনি তোমাদেরকে জবাব দিলেন, আমি তোমাদেরকে এক হাজার ফেরেশতা দিয়ে সাহায্য করব যারা পরপর আসবে।’ [সূরা আনফাল: আয়াত-৯৯]। রাসুল (সা.) এর সে দিনের দোয়া শুধু কবুলই হয়নি, বরং সে দোয়ার মহিমায় আজ আমরা পরিপূর্ণ ইসলামের দর্শন পেয়েছি।
২. সকল কাজে আল্লাহর ওপর অগাধ বিশ্বাস ও ভরসা রাখা: দুনিয়া-আখিরাতের সকল কাজে, সকল মাকসুদ হাসিল করার জন্য এবং সকল বালা-মুসিবত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য একমাত্র আল্লাহতায়ালার ওপর ভরসা রাখা হচ্ছে ইসলাম ও ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। বদর থেকে আমরা সেই মহান শিক্ষাটাই পেয়ে থাকি। মহান আল্লাহ বলেন, আর আল্লাহর ওপরই মুমিনদের ভরসা করা উচিত। [সূরা ইবরাহীম:আয়াত-১১]। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান।’ [সূরা তালাক: আয়াত-০৩]। বদর যুদ্ধ প্রমাণ করে সংখ্যা ও সরঞ্জামের কম-বেশি হওয়া বিজয়ের মাপকাটি নয়। বরং মহান আল্লাহর ওপর দৃঢ় ঈমান ও নির্ভরতা হল বিজয়ের মূল অস্ত্র। এ যুদ্ধ মুসলমানদের শিখিয়েছে জাগতিক সব প্রস্তুতির পরেও সাফল্যের জন্য নির্ভর করতে হবে একমাত্র মহান আল্লাহর ওপর। তবেই মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সীমাহীন সাহায্য আসবে এবং বিজয় সম্ভব হবে।
৩. সংখ্যাধিক্য বিজয়ের শর্ত নয়: বিজয়ের ক্ষেত্রে সংখ্যাধিক্য বিজয়ের মূল বিষয় নয়। আল্লাহর ওপর ভরসা করে সততা ও ইখলাস সহকারে তাঁর দ্বীনের পতাকাকে উত্তোলন করার লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার কারণে সংখ্যায় কম হওয়া সত্ত্বেও তিনি বদর প্রান্তরে মুসলমানদের বিজয় ও সফলতা দিয়েছেন। আমরা জানি, এ যুদ্ধে মাত্র ৩১৩ জনের ক্ষুদ্র মুসলিম দল ১০০০ জনের পরিপূর্ণ অস্ত্রে সজ্জিত কাফিরদের বিরুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলেন। এটি নি:সন্দেহ আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্যের বিজয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘এবং আল্লাহ তোমাদের হীন অবস্থায় বদর যুদ্ধক্ষেত্রে তোমাদের সাহায্য করেছেন, সুতরাং আল্লাহকে ভয় কর। যেন তোমরা শুকর গোজার হতে পার।’ [সূরা আলে ইমরান, আয়াত-১২৩]।
৪. ঐক্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন: ঐক্য হচ্ছে সফলতা ও বিজয়ের অন্যতম ভিত্তি। আমরা লক্ষ্য করি বদর যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয়ের অন্যতম কারণ ছিল তাঁদের দৃঢ়পদ অবস্থান, একতা ও অবিচলতা। অন্যদিকে শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণকারী কাফিরদের অবস্থা ছিল ভঙ্গুর। ফলে তারা সহজেই পরাজিত হয়েছিল। আজও ইসলাম বিদ্বেষীদের যুলম-নির্যাতন, শিরক, কুফর, অসত্য ও অন্যায়ের মুকাবিলায় মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন বিজয় ছিনিয়ে আনতে অবশ্যই সক্ষম। তাই বদর যুদ্ধকে স্মরণ করে বর্তমান সময়ে সমাজে ও রাষ্ট্রে যত প্রকার অনৈক্য, অনাচার, অবিচার ও বৈষম্য আছে তার বিরুদ্ধে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করা সময়ের অনিবার্য দাবি।
লেখক: শিক্ষাবিদ গবেষক ও কলামিস্ট।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

সুনামগঞ্জে বিজিবি’র অভিযানে ৪১ লাখ টাকার অবৈধ মালামাল জব্দ

ইসরায়েলি গণহত্যায় মার্কিন সমর্থন বন্ধের আহ্বান ইরানের

ভারতকে কোনোক্রমে সভ্য রাষ্ট্র বলা চলে না : শায়খ আহমদুল্লাহ

সরকার পতনের যে নীলনকশা প্রমাণসহ ফাঁস করলেন পিনাকী

ঢাকা উত্তর বিএনপির ৭ নেতা বহিষ্কার, মিরপুরে বিক্ষোভ

নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্তে উত্তাল ইসরায়েল, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা প্রধান বরখাস্তের উদ্যোগ

মেসির দুর্দান্ত গোল, মায়ামির হ্যাটট্রিক

আছিয়া হত্যার বিচারের দাবিতে সাতক্ষীরায় মহিলা জামায়াতের মানববন্ধন

অপরাধে জড়িয়ে পড়লে কাউকে ছাড় নয়-মাহবুব আলমগীর আলো

কত হাজার কোটি টাকার মালিক শেখ সেলিম? জানা গেলো চাঞ্চল্যকর তথ্য!

ফরিদপুরে শিশুকে যৌন হয়রানির অভিযোগে ব্যবসায়ীকে গণপিটুনি

ঢাকায় হিজবুত তাহরীরের সক্রিয় সদস্য গ্রেপ্তার

১৯ দেশের মিশন প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে বসছে ইসি

ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের তীব্র নিন্দা

নর্থ মেসিডোনিয়ার নাইটক্লাবে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড: নিহত ৫৯, আটক ১০

ট্রেনে ঈদযাত্রা: ২৭ মার্চের টিকিট বিক্রি শুরু

কর্মবিরতি প্রত্যাহার, মেট্রোরেলে টিকিট ব্যবস্থা চালু

নাটোরে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আটক

ঢাকাসহ ৩ বিভাগে বৃষ্টি ও বজ্রপাতের পূর্বাভাস

ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি নিয়ে পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন ট্রাম্প