আইএমএফ প্রতিনিধিদলকে সঠিক তথ্য দিতে হবে
২৮ এপ্রিল ২০২৩, ০৭:৪৫ পিএম | আপডেট: ০১ মে ২০২৩, ১২:১৯ এএম
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ শর্ত পূরণ করছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করতে ঢাকা সফর করছে সংস্থাটির একটি প্রতিনিধি দল। তারা বাংলাদেশ কী পরিমাণ বৈদেশিক ঋণ নিয়েছে তার ডাটাবেইজের তথ্য চেয়েছে। এছাড়া ডাটাবেইজে কোন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, সেটিও জানতে চেয়েছে। গত বৃহস্পতিবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সঙ্গে এক বৈঠকে এসব তথ্য জানতে চেয়েছে আইএমএফের সদস্যরা। পত্রিকান্তরে জানা যায়, ইআরডির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, প্রতিনিধি দল রাশিয়ার সঙ্গে এডজাস্টমেন্ট অ্যাকাউন্ট খুলেছে কিনা, তাও জানতে চেয়েছে। আমরা বলেছি, সেটি খোলা হয়েছে। এছাড়া সংশোধিত উন্নয়ন বাজেট নিয়ে জানতে চেয়েছে তারা। জানা গেছে, আইএমএফের ঋণ নিতে ছোট-বড় ৩৮টি শর্ত পূরণ করতে হবে বাংলাদেশকে। শর্তগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই আর্থিক খাতের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। আর্থিক খাতের মধ্যে আবার বড় অংশ জুড়ে রয়েছে ব্যাংক খাত। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বে। প্রতিনধিদল ও ইআরডি’র মধ্যে বৈঠকে গত মার্চ পর্যন্ত অর্জন এবং আগামী জুন ও সেপ্টেম্বরের মধ্যে যেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে সেগুলোর বাস্তবায়ন পরিস্থিতি যাচাইসহ ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে যেসব শর্ত বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছে সরকার সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য আগামী বাজেটে কী কী উদ্যোগ থাকছে, তা পর্যালোচনা করা হবে।
করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক মন্দা ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বে যে অর্থনৈতিক মন্দাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। অর্থনৈতিক মন্দাবস্থার অবনতি ঠেকাতে সরকার আইএমএফের কাছে ঋণ চায়। আইএমএফ তাতে সাড়া দিয়ে গত ৩০ জানুয়ারি ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। এর মধ্যে এক্সটেনডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ) বা বর্ধিত ঋণসুবিধা ও এক্সটেনডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি (ইএএফএফ) বা বর্ধিত তহবিল সুবিধার আওতায় ৩৩০ কোটি ডলার এবং নতুন গঠিত তহবিল রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় আরও ১৪০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করা হয়। ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের তিনদিন পরই আইএমএফ প্রথম কিস্তিতে ছাড় করে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার। সংস্থাটি ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে মোট ৭ কিস্তিতে ঋণের পুরো অর্থ দেবে। এই ঋণের শর্ত যথাযথভাবে পূরণ করা হচ্ছে কিনা, তা যাচাই করার জন্য আইএমএফের প্রতিনিধি দল নিয়মিত মনিটরিং করছে। এর অংশ হিসেবেই সংস্থাটির প্রতিনিধি দল এসেছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, আইএমএফের শর্ত পূরণের প্রভাব জনজীবনে পড়েছে। জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি তার অন্যতম। কৃষিতে ভর্তুকি কমানোসহ সারের দাম বৃদ্ধিও তার অংশ বলে মনে করছেন তারা। বলার অপেক্ষা রাখে না, যেসব প্রতিষ্ঠান ঋণ প্রদান করে, তাদের শর্ত ঋণগ্রহীতাকে পূরণ করতে হয়। আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য যে ঋণ অনুমোদন করেছে, তা কিস্তিতে দেয়া হবে এবং সংস্থাটির শর্ত পূরণ করছে কিনা, তা নিয়মিত মনিটরিং হবে। শর্তে গরমিল থাকলে বা সংস্থাটি সন্তুষ্ট না হলে পরবর্তী কিস্তি বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। এদিকে, রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ঘোষণায় বলা হয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধে মদদ দেয়ায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল টিকাদার রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান রোসাটমকে। ফলে রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র যথাসময়ে বাস্তাবয়ন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে সময় এবং ব্যয় দুটোই বাড়তে পারে।
আইএমএফের প্রতিনিধি দল ঋণ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা, তা সরেজমিনে দেখতে বাংলাদেশে এসেছে। এক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে সঠিক তথ্য তাদের দেয়া উচিৎ। তা নাহলে, সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, এমনকি ঋণ পাওয়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, পরিসংখ্যান দিয়ে দেশের মানুষকে বোঝানো যাবে, তবে বেঠিক তথ্য দিয়ে আইএমএফ বা বিদেশি কোনো ঋণদাতা সংস্থাকে বোঝানো সম্ভব নয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সতর্ক থাকা জরুরি, যাতে আইএমএফের প্রতিনিধিদল অসন্তোষ প্রকাশ না করে। আমরা মনে করি, আইএমএফের ঋণ অব্যাহত রাখা এবং তার যথাযথ ব্যবহারে সংশ্লিষ্ট সকলে আন্তরিকতার সাথে কাজ করবে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র যথাসময়ে বাস্তবায়ন নিয়ে যে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে, তা কাটাতে সরকারের নীতিনির্ধারকদের বিশেষভাবে চিন্তা করতে হবে। নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে ভারত, মধ্যপ্রাচ্যের কোনো কোনো দেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ কিভাবে রাশিয়ার সাথে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, তা পর্যবেক্ষণ করে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন
গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত
মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ
কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের
৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী
৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান
তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ
ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?
মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি
গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের
পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি
আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান
শুধু নারীদের জন্য
নিথর দেহ
আত্মহননে
জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী
মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু
গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়
শুধু নামেই জিমনেসিয়াম