ঢাকা   শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৩ পৌষ ১৪৩১

অবকাঠামো উন্নয়নের সুফল নিশ্চিত করতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৪ মে ২০২৩, ০৭:৫৬ পিএম | আপডেট: ০৫ মে ২০২৩, ১২:০১ এএম

অবকাঠামো উন্নয়ন মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথকে ত্বরান্বিত করতে মূল ভূমিকা পালন করে থাকে। গত এক দশকে অবকাঠামো খাতে লক্ষকোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। মানুষের জীবন যাত্রার স্বাচ্ছন্দ্য ও জীবনমানের উন্নয়নে এসব প্রকল্প এখনো কাঙ্খিত ভূমিকা রাখতে না পারলেও এর প্রয়োজনীয়তা ও উপযোগিতা অস্বীকার করা যায়না। সমন্বিত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার অভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ফ্লাইওভারগুলো রাজধানীর যানজট নিরসনে তেমন ভূমিকা রাখতে পারেনি। একইভাবে দেশের প্রধান হাইওয়েগুলোর লেন বৃদ্ধি করার পরও এখনো মহাসড়কে যানজট, বিশৃঙ্খলা লেগে থাকতে দেখা যায়। অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি এসব অবকাঠামো থেকে জনগণের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে যে সব উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন তা না থাকায় উন্নয়ন প্রকল্পগুলো থেকে কাঙ্খিত সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। ঢাকার যানজট নিরসন এবং নগরীর উপর চাপ কমানোর জন্য যে সব উদ্যোগের কথা এ যাবৎ ভাবা হয়েছে, তার মধ্যে নগরীকে পূর্বদিকে সম্প্রসারণ এবং পূর্বাচলের সাথে ঢাকার সুপ্রশস্ত সংযোগ সড়ক নির্মানের ধারণাকে সবচেয়ে বেশি কার্যকর বলে বিবেচনা করা যায়। পূর্বাচলে নতুন শহরের বাস্তবায়ন খুব ধীরে এগিয়ে চললেও ৩০০ফুট প্রশস্ত সংযোগ সড়কের বাস্তবায়ন এরই মধ্যে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে। চলতি বছরের মধ্যেই ৩০০ফুট সড়কের উদ্বোধন হতে পারে বলে আশা করা যাচ্ছে।

রাজধানীর উত্তরা কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে কাঞ্চন ব্রীজ পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়েকে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অন্যতম দৃষ্টিনন্দন রাস্তা হিসেবে বিবেচিত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন। প্রায় একদশক আগে ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ এই প্রকল্পের নকশায় কিছু পরিবর্তন ঘটেছে। রাস্তাটি ৩০০ফিট চওড়া হওয়ার কথা থাকলেও ইতিমধ্যে দুই পাশে লেকের জন্য ৬৫ফুট ছেড়ে দেয়ার কারণে একটি অংশে রাস্তাটির প্রশস্ততা দাঁড়িয়েছে ২৩৫ ফিট। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নের আগেই নগরবাসির কাছে তিনশ ফিট রাস্তা অন্যতম বিনোদন আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এর নান্দনিক সৌন্দর্য এবং উপযোগিতা ঢাকার নাগরিক জীবনে এক নতুন মাত্রা যুক্ত করবে বলে আশা করা যায়। প্রগতি সরণী ও বিমান বন্দর সড়কের ও পূর্বাচলগামী সড়কের সাথে সংযুক্ত তিনশ ফিট রাস্তা ঢাকার অন্যতম পর্যটন ও বিনোদন আকর্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। একটি প্রয়োজনীয় সড়ক অবকাঠামোও যে বিনোদন ও পর্যটন স্পট হতে পারে তিনশ ফিট রাস্তা তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে। পদ্মাসেতু বাস্তবায়নের পর দেশের প্রথম ১৪ লেনের বহুমাত্রিক এই সড়ক দেশের অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে অন্যতম মাইল ফলক হয়ে উঠতে চলেছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাছে স্বপ্নের পদ্মাসেতু যেভাবে বাস্তব রূপ লাভ করেছে, রাজধানীবাসির জন্য ৩০০ফিট রাস্তা, এক্সপ্রেসওয়ে এবং বিআরটি প্রকল্প তেমনই এক স্বপ্ন জাগিয়ে রেখেছে।

একেকটি মেগা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দেশের জনগণের উপর নতুন করে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণের বোঝা চেপে বসছে। দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ ফিরিয়ে আনা এবং যানজটসহ জনদুর্ভোগ লাঘবে এসব প্রকল্প কাঙ্খিত মাত্রায় সহায়ক ভ’মিকা রাখতে পারলেই প্রকল্প ব্যয় সার্থক ও সফল হতে পারে। ফিজিবিলিটি ও ভুল নকশার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নের পর তা থেকে প্রত্যাশিত সুফল না পাওয়ার উদাহরণও আমাদের সামনে আছে। তবে আমরা আশা করি ৩০০ফিট রাস্তা উন্নয়নের ফলে ঢাকার নগর জীবনের চালচিত্রে অনেকটা ইতিবাচক পরিবর্তন সূচিত হবে। সেই সাথে বহু প্রত্যাশিত ড্যাপ এবং নগর উন্নয়ন প্রকল্পের সমন্বিত বাস্তবায়নও নিশ্চিত করতে হবে। শুধুমাত্র রাজধানীকেন্দ্রিক উন্নয়ন গ্রাম থেকে শহরমুখী মানুষের ঢল থামাতে পারছে না। সারাদেশে স্থানীয় কর্মসংস্থান, শিক্ষা-চিকিৎসা ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানসহ অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পিত উদ্যোগই কেবল রাজধানীতে ভাসমান মানুষের চাপ কমিয়ে আনতে পারে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ দেশের সবগুলো মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা, দখলবাজি ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম দূর করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি এসব অবকাঠামো থেকে জনসাধারণের সর্বোচ্চ সুফল নিশ্চিত করতে হলে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা এবং নাগরিক সচেতনতা নিশ্চিত করতে সমন্বিত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

শুধু নামেই জিমনেসিয়াম
মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে কী পরিবর্তন আসছে?
অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতদ্বৈততা কাম্য নয়
সচিবালয়ে আগুন সন্দেহজনক
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের যত্ন নিতে হবে
আরও

আরও পড়ুন

পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা

পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা

কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন

কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন

গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত

গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত

মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ

মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ

কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের

কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের

৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী

৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী

৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান

৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান

তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ

তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ

ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?

ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?

মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি

মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি

গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের

গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের

পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি

পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি

আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান

আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান

শুধু নারীদের জন্য

শুধু নারীদের জন্য

নিথর দেহ

নিথর দেহ

আত্মহননে

আত্মহননে

জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী

জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী

মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়

গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়

শুধু নামেই জিমনেসিয়াম

শুধু নামেই জিমনেসিয়াম