ভূমিকম্পের ঝুঁকি এড়াতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে
০৬ মে ২০২৩, ০৮:০৪ পিএম | আপডেট: ০৭ মে ২০২৩, ১২:০৩ এএম
গত শুক্রবার ভোর ৫টা ৫৭ মিনিটে ৪.৩ মাত্রার ভূমিকম্পে পুরো ঢাকা শহর কেঁপে ওঠে। অনেকে ঘুমে থাকায় তা টের পাননি। যারা টের পেয়েছেন তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। বিগত কয়েক বছর ধরে দেশে ঘন ঘন ভূমিকম্প দেখা দিচ্ছে। এসব ভূমিকম্প কোনোটা মৃদু, কোনোটা মৃদুর চেয়ে বেশি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিগত বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হয় ২০১৬ সালের ৪ জানুয়ারি। রিকটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৬.৭। এ ভূমিকম্পে পুরো দেশ কেঁপে ওঠে। আতঙ্কে মারা যান ৬ জন। গত ১৫ বছরে দেশ ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে ১৪১ বার। এসব ভূমিকম্পের মাত্রা মৃদু বা ছোট হলেও এগুলো বড় ধরনের ভূমিকম্পের আভাস বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তারা বলছেন, ভারত ও মায়ানমারে ভূগর্ভে যে টেকটোনিক প্লেট রয়েছে, তার ৬০ থেকে ৮০ ভাগ নড়ে গেলে ভয়াবহ ভূমিকম্পে এই অঞ্চল ধ্বংস স্তুপে পরিণত হবে। ভারত এবং মায়ানমারের টেকটোনিক প্লেট এবং ভূতাত্ত্বিক অবস্থান বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘত হানতে পারে। এ ধরনের আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ঢাকা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকায় যদি ৭ মাত্রার ভূমিক¤প আঘাত হানে, তাতে অনেক বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। ভূতাত্ত্বিক কাঠামো অনুযায়ী, বাংলাদেশে তিনটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগ স্থলে অবস্থিত। উত্তরে তিব্বত প্লেট, পূর্বে মায়ানমার সাব-প্লেট এবং পশ্চিমে ইন্ডিয়া প্লেট। এগুলোর বিস্ততি সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার। এই জোনে বড় বড় ভূমিক¤প হয়েছে। সাধারণত শতবর্ষে বড় ধরনের ভূমিক¤প ফিরে আসে। গত কয়েক বছরে দেশে ৩ থেকে ৫ মাত্রার ছোট ছোট বেশ কিছু ভূমিক¤প হয়েছে। গত শত বছরে বড় ধরণের কোন ভূমিক¤প হয়নি। এ কারণেই শঙ্কাটা বেশি। বলার অপেক্ষা রাখে না, বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানলে রাজধানীর যে ক্ষয়ক্ষতি হবে, তা অকল্পনীয়। এমনিতেই রাজধানী অনাবাসযোগ্য অবস্থায় রয়েছে। কোনো ধরনের শৃঙ্খলা নেই। যে যেভাবে পারছে একে ব্যবহার ও সম্প্রসারণ করছে। বিল্ডিং কোড না মানাসহ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে ভবন গড়ে উঠছে। অনেক ক্ষেত্রে ভূমিকম্প সহনীয় বিষয় বিবেচনায় না নিয়ে ভবন তোলা হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে বুয়েটের করা জরিপ অনুযায়ী, ঢাকায় ১৩ লাখ, চট্টগ্রামে ৩ লাখ ও সিলেটে এক লাখ বহুতল ভবন রয়েছে। এসব ভবনের ৭৫ শতাংশ ৬ তলা বা তার চেয়ে উঁচু। ৭ মাত্রার ভূমিক¤প হলে এই ভবনগুলো ও এর বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীতে প্রায় ১৩ লাখ ভবন রয়েছে। নতুন ভবন ছাড়া আছে বহু পুরানো ভবন, যাদের অধিকাংশই ভূমিক¤পসহনীয় নয়। বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানলে প্রায় ৭৩ হাজার ভবন ধুলোয় মিশে যাবে। ১৫ থেকে ২০ লাখ মানুষের মৃত্যু হবে। ভূমিকম্প মোকাবেলায় রাজধানীতে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধাও নেই। ভবন থেকে বের হয়ে মানুষ যে খোলা জায়গায় আশ্রয় নেবে তার সুযোগ নেই। প্রয়োজনীয় জায়গা নেই। ধসে পড়া ভবন বা এলাকায় ফায়ার সার্ভিস ও অন্যান্য সংস্থার উদ্ধার কার্যক্রম চালাতে যাওয়ার মতো পর্যাপ্ত সড়ক নেই। আমরা দেখেছি, সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্কের ভূমিকম্পে কি ভয়াবহ পরিণতি হয়েছে। এমন উন্নত দেশও উদ্ধার কার্যক্রম চালাতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছে। ঢাকায় ভয়াবহ ভূমিকম্প হলে কি পরিস্থিতি হবে, তা সহজেই অনুমান করা যায়। এক রানা প্লাজা ধসে পড়ার ঘটনায় কি পরিস্থিতি হয়েছিল, তা আমাদের স্মরণে আছে।
ভূমিকম্প হলে ভবনের বাসিন্দাদের আতঙ্কিত না হয়ে নিরাপদে বের হয়ে আসা কিংবা ভবনের দুই দেয়ালের সংযোগস্থল, শক্ত খাট, টেবিলের নিচে আশ্রয় নেয়া শ্রেয় বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। ঘরে সবসময় শুকনো খাবার প্যাকেট করে ঐসব স্থানের কাছাকাছি রাখা যেতে পারে যাতে আটকা পড়লেও উদ্ধার কার্যক্রম পর্যন্ত খেয়ে বেঁচে থাকা যায়। বৈদ্যুতিক ও গ্যাসের লাইন বন্ধ করা সম্ভব হলে বন্ধ করে দিতে হবে এবং টর্চ লাইট রাখতে হবে। এসব ব্যবস্থা জরুরিভিত্তিকি। ভূমিকম্পের আঘাতে ধ্বংসযজ্ঞ থেকে রেহাই পেতে হলে প্রথমেই ভূমিকম্প সহনীয় ভবন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। যেসব ভবন ভূমিকম্প সহনীয় নয় কিংবা পুরনো সেসব ভবন কিভাবে ভূমিকম্প সহনীয় করা যায় এ ব্যাপারে রাজউক ও সিটি করপোরেশনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দেয়ার সময় ভূমিকম্প সহনীয়তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। বিল্ডিং কোড সঠিকভাবে মানা হচ্ছে কিনা, তা তদারক করতে হবে। প্রতিটি ভবনে ‘সেফ এক্সিট’ থাকা আবশ্যক। শহরের খোলা জায়গা সৃষ্টি এবং সড়ক প্রশস্তকরণ প্রক্রিয়া শুরু করা অপরিহার্য। প্রাকৃতিক পরিবেশ, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে বৃক্ষরোপন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। নগরীর পানির স্তর সঠিক মাত্রায় রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
জানা গেল ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে ব্রাজিলের একাদশ
বাংলাদেশে ন্যায্য রুপান্তরে অর্থায়নের জন্য ধনী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান
গোপালগঞ্জে কারাগারে থাকা বাবার অবশেষে জামিন মঞ্জর
ওসমানী বিমান বন্দরে বিদেশী বিমান উঠা-নামার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী- প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে সিলেটে স্মারকলিপি
ময়মনসিংহে ফিলিং স্টেশনে আগুনের ঘটনায় মৃত্যু বেড়ে ৬
জানুয়ারি পর্যন্ত ছিটকে গেলেন এনগিডি
দুবাইয়ে নবনিযুক্ত কনসাল জেনারেলের সাথে বাংলাদেশ রেডিমেড গার্মেন্টস ট্রেডার্স আজমানের নেতৃবৃন্দের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গণঅভ্যুত্থানে আহতদের সুবিধা নিশ্চিতে দেওয়া হবে ইউনিক আইডি কার্ড
যে কারণে হারপিকে মেতেছে নেটিজেনরা
আ.লীগের মতো পরিবারতন্ত্র করবে না বিএনপি: তারেক রহমান
প্যারাগুয়ে ম্যাচে কেমন হবে আর্জেন্টিনার একাদশ
অর্থাভাবে ব্যক্তিগত বিমান ভাড়া দিয়েছেন শন ডিডি, বিক্রি করবেন বাড়ি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শ্রেনী কক্ষে অসুস্থ ১০ শিক্ষার্থী
ভারতীয় গণমাধ্যম আমাদের সম্পর্কে অপপ্রচার চালাচ্ছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
নরসিংদীতে ট্রেনের নীচে ঝাঁপ দিয়ে যুবকের আত্মহত্যা
পুলিশ সংস্কার ও একটি কৌশলপত্র
মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে কেন উপদেষ্টা করতে হবে?
শ্যামনগরে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল চালক নিহত
অভ্যুত্থানে আহতদের প্রতি এই অবহেলা অমার্জনীয়
নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদ