বিপর্যয়ের মুখে অর্থনীতি
০৭ মে ২০২৩, ০৮:১৭ পিএম | আপডেট: ০৮ মে ২০২৩, ১২:০১ এএম
দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটজনক। রফতানি আয়, রেমিটেন্স, বিনিয়োগ, রাজস্ব আহরণÑ কোনো ক্ষেত্রেই সুখবর নেই। রফতানি আয় কমতে শুরু করেছে। এপ্রিলে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০৫ কোটি ডলার। আয় হয়েছে ৩৯৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় কমেছে ২১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ৪৭৯ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। এ হিসাবে আয় কমেছে ১৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, এপ্রিলে রেমিট্যান্স এসেছে ১৬৮ কোটি ৩৫ লাখ ডলার। মার্চের তুলনায় তা ১৭ শতাংশ কম। গত বছর এপ্রিলে এসেছিল ২০১ কোটি ডলার। সে হিসাবে আয় প্রায় ১৭ শতাংশ কমেছে। সাধারণত ঈদের সময় রেমিট্যান্স বেশি আসে। এবার ঈদে প্রত্যাশার তুলনায় কম এসেছে। এটা একটা লক্ষ্যযোগ্য ব্যতিক্রম। একথা কারো অজানা নেই, আমাদের রফতানি আয়ের তিন চতুর্থাংশের বেশি আসে গার্মেন্ট থেকে। সেই গার্মেন্ট রফতানি বড় রকমে কমেছে। গার্মেন্ট পণ্যের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। মার্চে কেবলমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই রফতানি কমেছে প্রায় ৩৬ শতাংশ। আগের বছর মার্চে রফতানি হয়েছিল ১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলার। এবার হয়েছে ৬৬৬ দশমিক শূন্য ৩ মিলিয়ন ডলার। সামনের মাসগুলোতেও গার্মেন্ট রফতানি কমার আশংকা করা হচ্ছে। বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান এ বছর গার্মেন্ট রফতানি গভীর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন। তার মতে, বিশ্ববাজারে গার্মেন্ট রফতানি অন্তত ১০ শতাংশ কমে যেতে পারে। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর ক্রেতারা ইতোমধ্যে তাদের ক্রয় কমিয়ে দিয়েছে। তারা এমনকি ৫ শতাংশ মূল্য ছাড়ও দাবি করছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশের জন্য এটা যে খুবই উদ্বেগজনক বাস্তবতা, তাতে সন্দেহ নেই। আমাদের অর্থনীতির প্রধান দুই স্তম্ভ হলো গার্মেন্ট রফতানি ও রেমিট্যান্স। এই দু’ ক্ষেত্রেই যদি আয় কমে, তবে অর্থনীতি গভীর খাদে গিয়ে পড়তে বাধ্য।
দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি আগের মতই। সরকারের তরফে লাগাতার বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানানো সত্ত্বেও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের তেমন আগ্রহ লক্ষ করা যাচ্ছে না। বিনিয়োগ ছাড়া কোনো দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি, কর্মসংস্থান ও জনগণের জীবনমানের উন্নতি সাধিত হতে পারে না। বহু বছর ধরে বিনিয়োগ ক্ষেত্রে এক ধরনের শ্লথতা বা বন্ধ্যাত্ম্য চলছে। সরকার বিনিয়োগ পরিবেশ ও সুবিধা নিয়ে যত কথাই বলুক, বাস্তবে তা নেই বলেই বিনিয়োগকারীদের অভিমত। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বিনিয়োগের সাতটি বড় বাধার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই বাধাগুলো হলো: দুর্নীতি, আইনের দ্রুত প্রয়োগ না হওয়া, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও সময়ক্ষেপণ, অবকাঠামো দুর্বলতা, জমিক্রয়ে জটিলতা, বড় অংকের ঋণপ্রাপ্তির অনিশ্চয়তা এবং স্থানীয় ও বিদেশিদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব। বলা বাহুল্য, এসব বাধা বর্তমান থাকলে বিনিয়োগ আগ্রহ ও তার বাস্তবায়ন তরান্বিত হতে পারে না। বিনিয়োগ বাড়াতে হলে এর বাধাগুলো আগে দূর করতে হবে। স্মরণ করা যেতে পারে, সরকার মীরেরসরাই-সীতাকু--ফেনী-সোনাগাজীতে দেশের বৃহত্তম বঙ্গবন্ধু শিল্প নগর প্রতিষ্ঠাসহ বহু শিল্পনগর প্রতিষ্ঠা করছে। এসব শিল্প নগর বা অর্থনৈতিক জোনে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির সংস্থান ইত্যাদির কাজ অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছে। এসবের নিশ্চয়তা না মিললে বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে আসবে না। সরকারকে এটা মনে রাখতে হবে এবং এসব কাজ দ্রুতায়িত করতে হবে। রাজস্ব আয় অর্থাগমের একটি প্রতিষ্ঠিত ও গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এনবিআর ও সরকার প্রতি বছর রাজস্ব আয়ের একটা অসম্ভবপর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে এবং কোনো বছরই সে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় না। চলতি অর্থ বছর শেষ হতে এখন মাস তিনেক বাকী। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে রাজস্ব বোর্ডকে তিন মাসের প্রতি মাসে গড়ে ৪৮ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা আহরণ করতে হবে। এও কি সম্ভব? রাজস্ব বাড়ানোর যত সম্ভাবনাই থাক, রাজস্ব বোর্ড তা বাস্তবায়ন করতে অপারগতা দেখিয়ে আসছে বছরের পর বছর ধরে। প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান না হলে উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি কীভাবে হবে?
দেশের অর্থনীতি যে মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে, উপর্যুক্ত তথ্য ও পর্যালোচনায় সেটা স্পষ্ট। ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে ভয়াবহ মন্দার মধ্যে নিক্ষেপ করেছে। এই মন্দা, মন্দাজনিত মুদ্রাস্ফীতি, মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট ইত্যাদি আমাদের অর্থনীতিকে মোটাদাগে স্পর্শ করেছে। শুধুমাত্র ডলার সংকট আমাদের মহাবিপাকে ফেলে দিয়েছে। রিজার্ভ থেকে ডলার দিতে দিতে রীতিমত রিজার্ভ হুমকিতে পড়েছে। তাতেও পার পাওয়া যাচ্ছে না। অতিপ্রয়োজনীয় আমদানি পর্যন্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। ডলার সংকটজনিত কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তেল-গ্যাস-কয়লা আমদানি ব্যহত হওয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর এ বেহাল হয়েছে। সরকার জ্বালানি আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এতে ডলার আরো বেরিয়ে যাবে। গত মঙ্গলবার রিজার্ভ ছিল মাত্র তিন হাজার ৯৬ কোটি ডলার। বলা যায়, ডলার রীতিমত তলানিতে এসে ঠেকেছে। এটা আশঙ্কাজনক। এদিকে প্রতিটি প্রয়োজনীয় পণ্যর দাম হু হু করে বাড়ছে। নিয়ন্ত্রণ করার কেউ নেই। সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্নদশার মুখে উপনীত হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে কীভাবে অর্থনীতিকে সচল-গতিশীল রাখা যাবে, উৎপাদন রফতানি বাড়ানো যাবে, মানুষের জীবনযাপনকে যতটা সম্ভব সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করা যাবে, সেটা সরকারকে গভীরভাবে ভাবতে হবে। রাজনৈতিক বুলিবচন ও বাগাড়ম্বর থেকে বিরত হয়ে, প্রশ্নবিদ্ধ পরিসংখ্যান দিয়ে বাহবা লাভের প্রবণতা পরিহার করে অর্থনীতি ও উন্নয়নধারা সুরক্ষা করার কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, অর্থনীতি বাঁচলে দেশ বাঁচবে, মানুষ বাঁচবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের
পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি
আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান
শুধু নারীদের জন্য
নিথর দেহ
আত্মহননে
জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী
মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু
গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়
শুধু নামেই জিমনেসিয়াম
মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে কী পরিবর্তন আসছে?
অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতদ্বৈততা কাম্য নয়
সচিবালয়ে আগুন সন্দেহজনক
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি পরিকল্পিত নাশকতা: ইসলামী আইনজীবী পরিষদ
আশিয়ান সিটির স্টলে বুকিং দিলেই মিলছে ল্যাপটপ
‘প্রতিবন্ধীদের সংগঠন ও সম্পদ দখল করে পতিত সরকারের শিল্পমন্ত্রীর কন্যা’
পরকীয়া প্রেমের ঘটনায় গৌরনদীতে উপ-সহকারী ২ কৃষি কর্মকর্তা এলাকাবাসীর হাতে আটক
সচিবালয়ে আগুন: গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতাকে দায়ী করলো এবি পার্টি
বিএনপি মুক্ত সাংবাদিকতায় বিশ্বাসী: শাহজাহান চৌধুরী
টিভিতে দেখুন