গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়
১৭ মে ২০২৩, ০৮:১৫ পিএম | আপডেট: ১৮ মে ২০২৩, ১২:০১ এএম
সরকার আবারো গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। দেশের বৃহত্তম গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি তিতাস গ্যাসের পক্ষ থেকে আবাসিকে দুই চুলার গ্যাস সংযোগে ৫১২ টাকা বৃদ্ধি করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এই প্রস্তাব বিইআরসি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য গ্রহণ করেছে বলে গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়। গত এক দশকে গ্যাসের মূল্য অন্তত ৫গুণ বাড়ানো হলেও গ্যাসের চাপ ও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ অব্যাহত রাখতে পারছে না তিতাস গ্যাস কোম্পানি। খোদ রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ এলাকায় দিনের বেশিরভাগ সময় চুলায় গ্যাস থাকে না। শহরের প্রায় অর্ধেক এলাকায় মধ্যরাত থেকে ২-৩ঘন্টা গ্যাস পাওয়া গেলেও তা তেমন কোনো কাজে লাগে না। রান্নাবান্নার মত অত্যাবশ্যকীয় কর্মকান্ড গ্যাস সরবরাহের উপর নির্ভরশীল। মানুষ বাসাবাড়িতে সিলিন্ডার গ্যাস কিংবা ইন্ডাকশন চুলার বাড়তি খরচ বহন করে প্রয়োজন মেটাতে বাধ্য হচ্ছে। এহেন বাস্তবতায় গ্যাসের বিল নেয়া সমিচীন কিনা সে প্রশ্ন যখন উঠছে, তখন গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত না করেই অস্বাভাবিক হারে মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য। নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের চাপে সাধারণ মানুষের নাভীশ্বাস অবস্থায় আবারো গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির উদ্যোগ কোনো মানদন্ডেই বিবেচনার দাবি রাখে না।
গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মূল্যস্ফীতি তথা দ্রব্যমূল্যের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে থাকে। চলমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় সাধারণ মানুষের আয় কিংবা কর্মসংস্থান না বাড়লেও অব্যাহত মূল্যস্ফীতি জনজীবনে চরম দুর্ভোগ হয়ে দেখা দিয়েছে। মানুষের পুষ্টি চাহিদা, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার উপর নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করছে। বিদ্যুতে লোডশেডিং এবং গ্যাসের চুলায় গ্যাস না থাকার কারণে এমনিতেই মানুষের মধ্যে বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। গত বছরের শেষদিকে আবাসিকে গ্যাসের মূল্য প্রায় ২৩ শতাংশ বাড়িয়ে ডাবল বার্নার চুলায় ৯৭৫ টাকা থেকে ১০৮০ টাকা নির্ধারণ করেছিল বিইআরসি। তিতাসের এই মূল্যবৃদ্ধির সাথে সাথে ১২ কেজি সিলিন্ডার গ্যাসের দাম রাতারাতি ৪-৫শ টাকা বাড়িয়ে দেয়া হয়। এখন তিতাসের প্রস্তাব অনুসারে আবাসিক গ্যাসের মূল্য প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে এক বার্নার ১৩৮০ টাকা এবং ডাবল বার্ণার ১৫৯২ টাকা নির্ধারণ করা হলে তা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় বড় ধরণের নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করবে। গ্যাস ও বিদ্যুৎখাতে নানাবিধ অসঙ্গতি, অস্বচ্ছতা, দুর্নীতি ও সিস্টেম লসের নামে লুটপাট বন্ধ না করে জনগণের উপর বার বার মূল্যবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির বোঝা চাপানোর বিষ্ময়কর এক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
জ্বালানি সংকট ও গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা, উৎপাদন ব্যবস্থা, বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে এক ধরণের স্থবিরতা দেখা দিতে শুরু করেছে। গতকাল সহযোগী একটি দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টে তৈরী পোশাক খাতে অর্ডার কমে যাওয়া এবং বহুসংখ্যক ছোট ছোট কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার তথ্য জানা যায়। গ্যাস ও বিদুতের সংকট ও মূল্যবৃদ্ধি দেশের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা রাখা তৈরী পোশাক খাতটিকে বড় ধরণের ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেবে। বছরের শুরুতে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর এফবিসিসিআই’র পক্ষ থেকে রফতানিমুখী শিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারিয়ে ফেলা, বর্ধিত খরচের কারণে ক্রয়াদেশ হ্রাস পাওয়ার যে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল, ইতিমধ্যেই তার বাস্তব রূপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এহেন বাস্তবতাকে সামনে রেখে আবারো গ্যাসের ৫০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব অবিবেচনাপ্রসুত বেপরোয়া উদ্যোগ হিসেবে গণ্য করা যায়। সারাদেশে লাখ লাখ অবৈধ গ্যাস সংযোগ থেকে সরকার কোনো রাজস্ব পায়না। এসব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে নতুন গ্যাস সংযোগ দেয়ার পাশাপাশি সিস্টেম লস, ত্রুটিপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাস সংযোগ সংস্কার করে রাজস্ব বৃদ্ধির মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সংযোগ নিশ্চিত করে রাজস্ব বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। শহরের অধিকাংশ আবাসিক এলাকায় দিনরাতের বেশিরভাগ সময় চুলা না জ্বললেও মানুষের কাছ থেকে গ্যাসের বিল আদায় করা অনৈতিক ও অগ্রহণযোগ্য। এ সময়ে আবাসিকে গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর প্রক্রিয়া বন্ধ করে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এই খাতে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি ও চুরি-ডাকাতি বন্ধ করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন
গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত
মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ
কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের
৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী
৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান
তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ
ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?
মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি
গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের
পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি
আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান
শুধু নারীদের জন্য
নিথর দেহ
আত্মহননে
জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী
মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু
গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়
শুধু নামেই জিমনেসিয়াম