ঢাকা   শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হাউজিং ব্যবসার নামে প্রতারণার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

১৯ মে ২০২৩, ০৮:১৪ পিএম | আপডেট: ২০ মে ২০২৩, ১২:০৫ এএম

হাউজিং ব্যবসার নামে গ্রাহকদের সাথে একশ্রেণীর প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার অপসংস্কৃতি নতুন কিছু নয়। বিভিন্ন সময়ে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার শিকার হয়ে অনেক গ্রাহক নিঃস্ব হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে প্রতারক প্রতিষ্ঠানের দায় তো রয়েছেই, একই সঙ্গে গ্রাহকদেরও দায় রয়েছে। গ্রাহকরা প্রতিষ্ঠানের সত্যাসত্য যাচাই কিংবা প্রকৃত তথ্য না জেনে শুধু প্রচারণার বাহারে মুগ্ধ হয়ে তাদের ফাঁদে পা দিচ্ছে। অন্যদিকে, প্রতারক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের অর্থে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছে পরিণত হচ্ছে। তারা এসব করছে, প্রশাসনকে নানাভাবে ম্যানেজ করে। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে ‘পুষ্পধারা’র স্বপ্ন বিক্রি’ শিরোনামে এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি চটকদার বিজ্ঞাপন এবং লোভনীয় অফার দিয়ে গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির যতটুকু জমি বা প্লট রয়েছে, তার চেয়ে অধিক দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে বুকিং মানি নিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কৃষি জমি, খাস জমি, জলাভূমি ইত্যাদি দখল ও এগুলোর পাশে সাইনবোর্ড লাগিয়ে গ্রাহকদের দেখিয়ে বুকিং মানি নিচ্ছে। যেসব প্লটের বুকিং মানি নিচ্ছে, সেগুলোর বেশির ভাগ দলিল প্রতিষ্ঠানের মালিকসহ কর্মরতদের নামে। ফলে গ্রাহক যে প্লট দেখে বুকিং মানি দিচ্ছে, তার দলিল তার কাছে না থাকায় আইনের আশ্রয় নিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না। এ এক অভিনব প্রতারণা।

দেশে হাউজিং ব্যবসা ক্রমবর্ধমান। এর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি যেমন শক্তিশালী হচ্ছে, তেমনি অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে। এ খাতে কিছু প্রতারক প্রতিষ্ঠানের প্রতারণামূলক কর্মের কারণে খাতটির প্রতি গ্রাহকদের আস্থা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বহু বছর ধরেই একশ্রেণীর প্রতারক প্রতিষ্ঠান এ কাজ করে আসছে। এ নিয়ে বহু লেখালেখি হলেও খুব একটা প্রতিকার পাওয়া যায় না। কারণ, এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তি, প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাজনৈতিক চক্রের যোগসাজস থাকে। এদের ম্যানেজ করেই প্রতারক প্রতিষ্ঠান তার প্রতারণার কাজ চালিয়ে যায়। চটকদার বিজ্ঞাপন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের দিয়ে বিজ্ঞাপন বানিয়ে প্রচার করে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে। এমনও দেখা গেছে, সরকারি জমি কিংবা অন্যের জমি দেখিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার করেছে। এসব প্রচারণায় আকৃষ্ট হয়ে অনেক গ্রাহক প্লট কিনে প্রতারণার শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। আইনগত ব্যবস্থা নিতে গেলে হুমকি-ধমকিসহ নানা হয়রানির শিকার হচ্ছে। অনেকে বাধ্য হয়ে ক্ষতি মেনে নিয়ে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত থেকেছে। ইনকিলাবের প্রতিবেদনে যে প্রতিষ্ঠানের কথা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে, তাতে তার প্রতারণার সুপরিকল্পিত অপকর্ম প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রশাসন, প্রভাবশালী ব্যক্তি, স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেণীর কর্মকর্তা, রাজনৈতিক সিন্ডিকেটের ছত্রছায়ায় অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। খোঁজ নিলে দেখা যাবে, এ ধরনের আরও প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেগুলো এ ধরনের প্রতারণা করে আসছে। গ্রাহকরা নীরবেই প্রতারণার শিকার হচ্ছে।

হাউজিং খাতে প্রতারণার বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গভীরভাবে খতিয়ে দেখা উচিৎ। যেসব প্রতিষ্ঠান চটকদার বিজ্ঞাপন, লোভনীয় অফার ও জৌলুসপূর্ণ কর্মকা- দিয়ে অপকর্মে লিপ্ত, সে ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেয়া উচিৎ। এ ক্ষেত্রে হাউজিং সংশ্লিষ্ট সমিতিগুলোরও দায়িত্ব রয়েছে। তাদের সদস্যভুক্ত কোনো প্রতিষ্ঠান এ ধরনের অপকর্মে লিপ্ত থাকলে, তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। মনে রাখা দরকার, কিছু প্রতিষ্ঠানের অপকর্মের দায় পুরো আবাসন খাতকে বদনামের শিকার করছে। প্রতারক প্রতিষ্ঠানের দায় তাদের ওপর বর্তাচ্ছে। গ্রাহকদের আস্থা নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে, প্রতারক প্রতিষ্ঠান প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত অর্থ বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে। আবাসন খাতে এ ধরনের প্রতারণার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টদের সোচ্চার হওয়া জরুরি। প্রশাসনের নাকের ডগার সামনে প্রতারক প্রতিষ্ঠান প্রতারণা করে যাবে, এটা বরদাস্ত করা যায় না। এর দায় তার ওপরও বর্তায়। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। গ্রাহকদেরও সচেতন ও সতর্ক হওয়া উচিৎ। তাদের মধ্যে এক ধরনের লোভ কাজ করে। চটকদার বিজ্ঞাপন ও অফার দেখে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজ-খবর নেয়া আবশ্যক। ফাঁদে পড়ার আগে সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। তা নাহলে, প্রতারণার শিকার হওয়া অবসম্ভাবী।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধে জাতিসংঘকে কার্যকরী উদ্যোগ নিতে হবে -বিক্ষোভ সমাবেশে খেলাফত মজলিস

ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধে জাতিসংঘকে কার্যকরী উদ্যোগ নিতে হবে -বিক্ষোভ সমাবেশে খেলাফত মজলিস

বকেয়া বেতন চাওয়ার কারনে গৃহকর্মীকে নির্যাতন

বকেয়া বেতন চাওয়ার কারনে গৃহকর্মীকে নির্যাতন

মায়ের দূর সম্পর্কের বোনকে বিয়ে করা প্রসঙ্গে।

মায়ের দূর সম্পর্কের বোনকে বিয়ে করা প্রসঙ্গে।

উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীদের কর ফাঁকি দেয়ার সুযোগ দিচ্ছেন অসাধু কর কর্মকর্তারা : সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে

উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীদের কর ফাঁকি দেয়ার সুযোগ দিচ্ছেন অসাধু কর কর্মকর্তারা : সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে

দু’সহোদর হাফেজ শ্রমিক হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে -মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ

দু’সহোদর হাফেজ শ্রমিক হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে -মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রশ্নবিদ্ধ তথ্য প্রচারের নিন্দা ডিআরইউর

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রশ্নবিদ্ধ তথ্য প্রচারের নিন্দা ডিআরইউর

মির্জাপুরে রাজশাহী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন ১০ যাত্রী আহত

মির্জাপুরে রাজশাহী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন ১০ যাত্রী আহত

ফরিদগঞ্জে বিয়ে না দেওয়ায় মাকে গলা কেটে হত্যা

ফরিদগঞ্জে বিয়ে না দেওয়ায় মাকে গলা কেটে হত্যা

মোদির গোলামির জিঞ্জিরে দেশকে আবদ্ধ করেছে সরকার -মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম

মোদির গোলামির জিঞ্জিরে দেশকে আবদ্ধ করেছে সরকার -মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম

গাজায় ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কারে লাগতে পারে ১৪ বছর : জাতিসংঘ

গাজায় ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কারে লাগতে পারে ১৪ বছর : জাতিসংঘ

তীব্র তাপদহে বৈরী আবহাওয়া, ভোরে কুয়াশা, মসজিদে মসজিদে বিশেষ দোওয়া অনুষ্ঠিত

তীব্র তাপদহে বৈরী আবহাওয়া, ভোরে কুয়াশা, মসজিদে মসজিদে বিশেষ দোওয়া অনুষ্ঠিত

ফতুল্লায় ৫ যুবক আটক, ‘ডাকাতির প্রস্তুতি’র অভিযোগ

ফতুল্লায় ৫ যুবক আটক, ‘ডাকাতির প্রস্তুতি’র অভিযোগ

কুষ্টিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় সাংবাদিকের মৃত্যু

কুষ্টিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় সাংবাদিকের মৃত্যু

মন্দিরে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে তদন্তভিত্তিক বিচারের দাবি

মন্দিরে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে তদন্তভিত্তিক বিচারের দাবি

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান

ইরানের কৃষি-খাদ্য রপ্তানি বেড়েছে ২২ শতাংশ

ইরানের কৃষি-খাদ্য রপ্তানি বেড়েছে ২২ শতাংশ

বিয়ে করা হলো না কালামের

বিয়ে করা হলো না কালামের

শনিবার ১২ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়

শনিবার ১২ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়

চুয়াডাঙ্গায় এ মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস

চুয়াডাঙ্গায় এ মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস

কুষ্টিয়ায় তীব্র তাপদাহ, তাপমাত্রার পারদ উঠল ৪১.৮ ডিগ্রিতে

কুষ্টিয়ায় তীব্র তাপদাহ, তাপমাত্রার পারদ উঠল ৪১.৮ ডিগ্রিতে