লোডশেডিংয়ের বিকল্প খুঁজে বের করতে হবে
২০ মে ২০২৩, ০৮:১৪ পিএম | আপডেট: ২১ মে ২০২৩, ১২:০২ এএম
লোডশেডিং জেঁকে বসেছে। তাতে করে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। একদিকে মাত্রারিক্ত গরম, অন্যদিকে বিদ্যুতের এই আছি এই নেই অবস্থায় সাধারণ জনগণের নাভিশ্বাস হওয়ার উপক্রম হচ্ছে। শহর থেকে গ্রামগঞ্জের প্রতিটি জনগণ লোডশেডিংয়ের বিরূপ প্রভাবে বিরক্ত। গেল রোজার সময়েও লোডশেডিং মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ করে তুলেছিল। মাঝে ঈদের বন্ধে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও বর্তমানে আবারো লোডশেডিংয়ের প্রকট রূপ ধারণ করেছে। রেকর্ড পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হলেও গ্রাহক পর্যায়ে ব্যবহার বহুগুণে বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে হিমশিম খাচ্ছে। ঢাকা শহরের লোডশেডিং পরিস্থিতি একটু সহনীয় হলেও ঢাকার বাইরের অবস্থা খুবই নাজুক। ঢাকার অদূরে সাভারের অবস্থা দিনে ১ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলে আড়াই ঘণ্টা লোডশেডিং চলে। ভোর ৬টা থেকে এই কর্ম পালাক্রমে চলতে থাকে। অন্যদিকে সারাদিনের লোডশেডিংয়ের পরে রাতেও পালাক্রমে চলতে থাকে লোডশেডিং। যেখানে গভীর রাতে টানা ২-৩ ঘণ্টার লোডশেডিং নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। তীব্র দাবদাহে সারাদিনের কর্মময় ব্যস্ত দিন শেষ করে মানুষ যখন রাতে একটু নির্বিঘেœ ঘুমাতে যাবে গভীর রাতের লোডশেডিংয়ের কারণে সেই পথ বন্ধ।
সম্প্রতি কিছুদিন গ্রামে অতিবাহিত করে মনে হয়েছে গ্রামের বিদ্যুতের অবস্থাও বেশ নাজুক। গ্রামের মানুষ নানান কাজে সারাদিন ঘরের বাইরে অবস্থান করায় দিনে লোডশেডিং হলেও তাদের জীবনে তেমন প্রভাব পড়ে না। কিন্তু যখন গভীর রাতেও পালাক্রমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং হয়, তখন তাদের মেজাজ বিগড়ে যায়। কেননা, সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রমের পরে রাতে শান্তিতে ঘুমানোর নিশ্চয়তা তাদের নেই। গ্রামের মানুষের সাথে এই লোডশেডিং নিয়ে কথা হলে অনেকেই অভিযোগ করে বলেছে, ‘বিদ্যুৎ না থাকলে একরকম মানিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু বিদ্যুতের এমন লাগামহীন লোডশেডিং মেনে নেওয়া কষ্টকর’। অনেকেই আমাকে লোডশেডিং কমানোর বিষয় নিয়ে লিখতে বলেছে। তাদের দাবি, যখন গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না তখন কেরোসিন বা ডিজেলের সাহায্যে হারিকেন বা কুপি বাতি জ্বালিয়ে প্রয়োজন মিটালেও এখনকার এই লোডশেডিংয়ের চেয়ে তখনকার দিনে অধিকতর স্বস্তি ছিল। কেউ কেউ মনে করে, বিদ্যুৎ সংযোগ আসার পরে সার্বিক পরিস্থিতি অনেক বেশি অবনতি হয়েছে। মাত্রারিক্ত লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে বিদ্যুৎ নিয়ে এমন হাজারো অভিযোগ গ্রামবাসীর। তবে তাদের অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। প্রায় ২০ বছর আগে আমাদের গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু তখনকার পরিস্থিতির থেকে বর্তমান পরিস্থিতির দৃশ্যমান তেমন কোনো উন্নয়ন চোখে পড়েনি, বরং ভোগান্তি বহুগুণে বেড়েছে।
সার্বিক দিক বিবেচনায় বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়লেও গ্রাহক পর্যায়ে হয়রানি বেড়েছে। হয়রানি বাড়ার মূল কারণ মাত্রারিক্ত লোডশেডিং। মাত্রারিক্ত বলছি এই কারণে, এই লোডশেডিংয়ের এখন আর নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই। পালাক্রমে সারাদিন লোডশেডিং হলেও জনগণ সেটা মানিয়ে নিত। কিন্তু যখন সারারাত ধরে লোডশেডিংয়ের ধারাবাহিকতা চলতে থাকে তখন সেখানে মানুষের ক্ষিপ্ত হওয়াটা স্বাভাবিক। হাইওয়ে দিয়ে চলাচলের সময় প্রায়ই চোখে পড়ে বড় বোর্ডে সাঁটা থাকে, ভিক্ষুকমুক্ত অমুক উপজেলায় আপনাকে স্বাগতম। এই বোর্ডের সাথে ইদানিং আরও একটা বিষয় সংযোজন হয়েছে সেটা হচ্ছে ‘শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলায় আপনাকে স্বাগতম’। এধরনের খবরগুলো নিঃসন্দেহে মনে আশার সঞ্চার করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এসকল উপজেলা কি সত্যিই শতভাগ ভিক্ষুকমুক্ত বা শতভাগ বিদ্যুতায়িত! ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছে দিয়ে যদি সেখানে লোডশেডিংয়ের কারণ দেখিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুতের সাপ্লাই বন্ধ রাখা হয় তাহলে সেখানে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা কর্তৃপক্ষের ভেবে দেখা উচিত। বরং এতে করে জনগণের ভোগান্তি বহুগুণে বেড়ে জনজীবন বিপর্যস্ত করে তোলে। কেননা মাত্রারিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে ছেলেমেয়ের লেখাপড়ায় বিঘœ ঘটা থেকে শুরু করে মানুষের স্বাস্থ্যহানির মতো অবস্থা ঘটছে।
ঘুম প্রতিটি মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা। মানুষ ক্রমাগত পরিশ্রমের ফলে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন শরীরকে বিশ্রাম দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। আর এই বিশ্রামের পূর্বশর্ত নির্বিঘেœ ঘুম। একজন মানুষের সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে হলে প্রতিদিন ৬-৮ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুমের প্রয়োজন আছে। কিন্তু কতজন মানুষ এই ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমাতে পারছে সেটা এখন প্রশ্নের বিষয়। সারাদিনের পালাক্রমে লোডশেডিংয়ের পরে যখন গভীর রাতেও লোডশেডিং হয় তখন ঘুম দৌড়ে পালিয়ে যায়। শিশু, বৃদ্ধ থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ের মানুষের ঘুমানোর জন্য অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে দেখলাম, দেশের প্রতি ৪ জনে ১ জন উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, সাথে খাবারে ভেজালের দৌরাত্ম্য এবং পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব মানুষের এই উচ্চ রক্তচাপ থেকে শুরু করে আরও জটিল রোগের প্রধান কারণ বলে প্রতীয়মান হয়। শহরাঞ্চলে আগে মানুষের হাঁটাচলার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা ছিল। বর্তমানে সেই পরিবেশ নেই। তাছাড়া বাইরের ধূলিকণা যুক্ত পরিবেশ আদৌ স্বাস্থ্যের জন্য সহনীয় নয়। তাই দুঃসহ এই লোডশেডিংয়ে জনগণের রাস্তায় হেঁটে চলে সময় অতিবাহিত করার চেয়ে ঘরের ভিতরে অবস্থান করাটাই অধিকতর শ্রেয়।
লোডশেডিংয়ের সংজ্ঞানুযায়ী আমরা জানি, যখন প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের তুলনায় উৎপাদন মাত্রা কম হয় তখন বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দেয় এবং সেই ঘাটতি পূরণের জন্য নির্দিষ্ট অঞ্চলে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। কিন্তু লোডশেডিংয়ের ফলে আদৌ কতখানি বিদ্যুৎ সাশ্রয় হচ্ছে সেটা বিদ্যুৎ সাপ্লাই কর্তৃপক্ষের তদারকি করা উচিত। কেননা, একটু সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের ঘরে ঘরে এখন এয়ার কন্ডিশন লাগানো হয়েছে। সুপারমলের কথা বাদ দিলাম, অধিকাংশ লোকাল মার্কেটে এখন মার্কেট খোলা থেকে বন্ধ হওয়া অবধি সকল লাইট, ফ্যান, এয়ার কন্ডিশন পালাক্রমে চলতে থাকে। আর্থিকভাবে একটু স্বচ্ছলদের অধিকাংশের বাসায় আইপিএস আছে বা চার্জারের ফ্যান এবং লাইট আছে। বিদ্যুৎ থাকা অবস্থায় যেখানে চার্জ করে রাখা হয়। আবার বিদ্যুতের লোডশেডিং শুরু হওয়ার সাথে সাথে আইপিএস থেকে পাওয়ার ব্যাকআপ শুরু হয়। আইপিএসের মাধ্যমে এসি কারেন্টকে ডিসিতে রূপান্তরিত করে স্টোরেজ করে রাখা হয়। আবার ব্যাকআপের সময় উক্ত ডিসি কারেন্টকে এসিতে রূপান্তরিত করে ব্যাকআপ দেওয়া হয়। এই উভয় রূপান্তরের সময়ে সিস্টেম লসের কারণে বেশ খানিকটা বিদ্যুতের অপচয় হয়। সেকারণে লোডশেডিং দিয়ে বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করলেও এতে খুব বেশি বিদ্যুৎ বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে শহরের একটু সামর্থ্যবান হলেই বাসায় এয়ার কন্ডিশান লাগাচ্ছে। রান্নার কাজে উচ্চ শক্তির হট প্লেট বা ইলেক্ট্রিক চুলা ব্যবহার করছে। প্রতিটি বাসায় ভাত রান্নায় ব্যবহার করা হচ্ছে উচ্চ শক্তির রাইচ কুকার। এছাড়া ইলেক্ট্রনিক বহু আধুনিক যন্ত্রপাতি আছে যেগুলো ব্যবহারে মানুষ অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। লোডশেডিং দিয়ে বিদ্যুতের ঘাটতি পোষানোর ব্যবস্থা করা হলেও বিভিন্ন চার্জিং ডিভাইস বিদ্যুৎ স্টোরেজ করে সিস্টেম লসের নামে অনেক বেশি অপচয় হচ্ছে। তাই বিদ্যুতের ঘাটতি মোকাবেলায় লোডশেডিংয়ের বিকল্প পথ অবলম্বন করতে হবে।
এই বিকল্প ব্যবস্থার মধ্যে সবার আগে প্রাধান্য দিতে হবে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো। এক্ষেত্রে নবায়নযোগ্য শক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রতি বেশি জোর দিতে হবে। সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, পানিশক্তি, ভূশক্তির মাধ্যম ব্যবহার করে বিকল্প উপায়ে শক্তি উৎপাদন করে সেটাকে বিদ্যুৎশক্তিতে রূপান্তরিত করার ব্যবস্থা করতে হবে। গ্রামাঞ্চল থেকে শহরাঞ্চলে সোলার এনার্জি বা সৌরশক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ বর্ধিত করতে হবে। প্রয়োজনে প্রতিটি বাসাবাড়ি বা অফিস আদালতে সোলার প্যানেল সংযোগ স্থাপন বাধ্যতামূলক করতে হবে। সৌরপ্যানেলের মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুতের অপচয় রোধ করতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করার ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে সার্বিক সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে হবে। ক্ষেত্রবিশেষ স্বল্পমূল্যে বা বিনামূল্যে সৌর প্যানেল সরবরাহ করতে হবে। প্রয়োজনে দেশের বাইরে থেকে সৌরপ্যানেল আমদানি করে জনগণকে বিনা শুল্কে ব্যবহারের সুযোগ করে দিতে হবে। এতে করে প্রাথমিক পর্যায়ে ইন্সটলেশন বাবদ খরচ একটু বেশি হলেও সুদূরপ্রসারী ভালো ফল আশা করা যায়। প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারের পক্ষ থেকে যে মোটা অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয় সেটার কিছু অংশ নবায়নযোগ্য শক্তির পেছনে ব্যয় করলে সরকার সুদূরপ্রসারী ফল পাবে। সেইসাথে জনগণও বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হবে। যত্রতত্র এয়ার কন্ডিশন ব্যবহারের বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করতে হবে। এরপরেও যদি লোডশেডিংয়ের প্রয়োজন পড়ে তাহলে জনগণকে ১/২ দিন পূর্বে লোডশেডিংয়ের পুরো শিডিউল সম্পর্কে অবগত করতে হবে। বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ ওয়েবসাইট নিয়মিত হালনাগাদ করার মাধ্যমে এই তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে পারে। অথবা অফিসিয়াল পেজের দ্বারা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও এই তথ্য জনগণকে দেওয়া যেতে পারে। এতে করে লোডশেডিংয়ের পূর্বে জনগণের গুরুত্বপূর্ণ কাজ সেরে নেওয়ার পাশাপাশি লোডশেডিং সম্পর্কে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারবে।
গরমের তীব্রতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। ঠিক তেমনি তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে বিদ্যুৎ বিতরণ ও সঞ্চালন লাইনে ব্যাপক বিদ্যুৎ অপচয় হয়। কেননা, বিদ্যুৎ উৎপাদনের উৎসস্থল থেকে গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছাতে অনেক লম্বা দূরত্ব অতিক্রম করতে হয়। পরিবেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে এই দূরত্ব পাড়ি দিতে পরিবাহী তারের রোধ বেড়ে যায়। এই রোধ তাপমাত্রার সমানুপাতিক। অর্থাৎ পরিবেশের তাপমাত্রা যত বৃদ্ধি পায় বিদ্যুৎ পরিবাহী তারের রোধও তত বৃদ্ধি পায়। ফলস্বরূপ পরিবাহীর পরিবাহিতা হ্রাস পায় এবং বিদ্যুতের অপচয় হয়। যেটা বিদ্যুৎ বিতরণের অনেক বড় একটা সিস্টেম লস। বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে সিস্টেম লসের কারণে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ১০ দশমিক ৪১ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে বিতরণ এবং সঞ্চালন লাইনে, যার মধ্যে সঞ্চালন লাইনেই ক্ষতি হয়েছে ২ দশমিক ৮৯ শতাংশ। বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরে গ্রাহকদের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছাতে ছয়টি বিতরণ কোম্পানি কাজ করে। এর মধ্যে ঢাকায় ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) নামে দুইটি কোম্পানি কাজ করে। এই কোম্পানি দু’টো তুলনামূলক কম দূরত্বে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার ফলে এদের সঞ্চালন লাইনে ক্ষতির পরিমাণ যথাক্রমে ৬ দশমিক ১৩ শতাংশ ও ৫ দশমিক ৬২ শতাংশ। যেটা অন্যান্য কোম্পানির বিতরণে ক্ষতির চেয়ে কম। উত্তরবঙ্গে কাজ করা নর্দান ইলেকট্রিসিটি কোম্পানি (নেসকো) আছে সিস্টেম লসের শীর্ষে। গত বছর তাদের এ খাতে অপচয় ছিল ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। এর পরই আছে দেশের সবচেয়ে বড় বিতরণ সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। তার সিস্টেম লস ছিল ৯ দশমিক ০ শতাংশ। পিডিবির সিস্টেম লস ৮ দশমিক ১০ শতাংশ এবং ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। বিদ্যুতের এই সিস্টেম লস বেশ কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে, যার মধ্যে বিদ্যুতের উৎপত্তিস্থল থেকে গ্রাহকের দূরত্ব এবং পরিবেশের তাপমাত্রা অন্যতম। তাই উৎপত্তিস্থল থেকে গ্রাহকের দূরত্ব কমিয়ে বিদ্যুতের সিস্টেম লস অনেকটা কমানো সম্ভব। এছাড়া গরমের দিনে বেশি লোডশেডিং হওয়ার কারণ গরমের দিনে সকলের বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের তাপমাত্রা বেড়ে সঞ্চালন লাইনেও বিদ্যুতের বড় একটা অংশ অপচয় হয়। কিন্তু যদি বিদ্যুতের সংযোগ মাটির নিচ দিয়ে করা যায় তাহলে পরিবেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে বিতরণ লাইনে ব্যাপক পরিমাণ যে বিদ্যুতের অপচয় হয়, সেটি বাঁচানো সম্ভব। এছাড়াও মাটির নিচ দিয়ে বিতরণ লাইন হলে ঝড় বৃষ্টি বা যেকোন বৈরি আবহাওয়ায় বিদ্যুৎ বিতরণ লাইনে ত্রুটি হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যাবে। এছাড়া যেকোন শহরের সৌন্দর্য বর্ধনে বিতরণ লাইনের বিদ্যুৎ সরবরাহ মাটির নিচ দিয়ে করার জুড়ি নেই। পাশাপাশি মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুতের সংযোগ গেলে বিদ্যুতের দুর্ঘটনায় কবলিত হয়ে মানুষের মৃত্যুর হার অনেকাংশে কমে যাবে। উন্নত বিশ্বের সব জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগের লাইন মাটির নিচ দিয়ে হয়ে থাকে। তাই মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুতের বিতরণ ও সঞ্চালন লাইন দেওয়ার বিষয় অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভেবে দেখতে হবে।
বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা বেড়েছে ঠিকই কিন্তু তার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে গ্রাহকের সংখ্যা এবং গ্রাহক সংখ্যার বিপরীতে বিদ্যুৎ ব্যবহারের চাহিদা। জনগণের দৈনন্দিন সকল চাহিদার বিপরীতে প্রযুক্তি যেমন জনজীবনকে সহজ থেকে সহজতর করছে, ঠিক তেমনি এই আধুনিক সুবিধার সুফল নিতে গেলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ থাকা বাঞ্ছনীয়। জীবনকে স্বাচ্ছন্দ্যময় ও সহজতর করতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের কোনো বিকল্প নেই। সময়ের সাথে সাথে প্রযুক্তি এগুচ্ছে। জনজীবনকে সহজ থেকে সহজতর করতে আবিষ্কৃত হচ্ছে নিত্য নতুন উদ্ভাবন। প্রয়োজনীয় এসব উদ্ভাবনী ব্যবহারে মানুষ দিন দিন অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। তাই নিঃসন্দেহে বিদ্যুতের চাহিদা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকবে। এই বাড়তি চাহিদাকে সামাল দিতে নবায়নযোগ্য শক্তিসহ সকল উৎস থেকে বিদ্যুতের উৎপাদন অবশ্যই বাড়াতে হবে।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট।
[email protected]
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন
গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত
মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ
কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের
৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী
৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান
তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ
ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?
মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি
গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের
পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি
আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান
শুধু নারীদের জন্য
নিথর দেহ
আত্মহননে
জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী
মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু
গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়
শুধু নামেই জিমনেসিয়াম