বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে আরো সতর্ক হওয়া বাঞ্চনীয়
২০ মে ২০২৩, ০৮:১৫ পিএম | আপডেট: ২১ মে ২০২৩, ১২:০২ এএম
আমাদের অর্থনৈতিক এবং ব্যবসা-বাণিজ্যিক সম্পর্ক পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্যের ১৯ শতাংশ হয় যুক্তরাষ্ট্রে। এ রফতানির পরিমাণ প্রায় ১১.১৭ বিলিয়ন ডলার। এর বিপরীতে বাংলাদেশ ক্রয় করে মাত্র ২.৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। শুধু তাই নয়, দেশের প্রধান রফতানি খাত পোশাক শিল্পের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ। বাংলাদেশে তৈরি পোশাক এসব দেশে রফতানি হয় বলেই গার্মেন্ট খাত টিকে আছে। এ খাত থেকে যেমন দেশের প্রায় ৮৩ ভাগ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়, তেমনি প্রায় ৪০ লাখ মানুষ এতে কর্মরত। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের তরফে ‘যারা বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেবে, সেসব দেশ থেকে কোনো কিছু কেনা হবে না’ বলে যে বক্তব্য দেয়া হয়েছে, তাতে গার্মেন্ট ও অন্যান্য রফতানি খাতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। এ বক্তব্য যে প্রধানত যুক্তরােেষ্ট্রর দিকে ইঙ্গিত করেই করা হয়েছে, তাতে পর্যবেক্ষকদের সন্দেহ নেই। তারা মনে করছেন, এ বক্তব্যের কারণে যদি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলো অসন্তুষ্ট হয়, তাহলে বাংলাদেশের রফতানি খাত বিপুল ক্ষতির মুখে পড়বে।
শুধু অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নয়, আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বরাবরই পশ্চিমা দেশগুলোর সহযোগিতা নিতে হয়। দেশগুলো শুধু অর্থনৈতিকভাবেই উন্নত ও শক্তিশালী নয়, বিশ্ব রাজনীতি ও কূটনীতিরও নিয়ন্ত্রক। দেশগুলোর সিদ্ধান্ত ও পলিসির প্রতিক্রিয়া সারাবিশ্বে পড়ে। এক ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বে কি ধরনের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়েছে, তা নতুন করে বলার কিছু নেই। খাদ্য ও জ্বালানি সংকট থেকে শুরু করে বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলো রীতিমতো খাবি খাচ্ছে। আমাদের দেশেও এর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়েছে এবং সরকারও তা স্বীকার করছে। আফ্রিকার কোনো কোনো দেশ দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি। যেসব দেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে বা হচ্ছে, তাদের অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ছে। শুধু খাদ্য ও জ্বালানি সংকটই নয়, বিশ্ব রাজনীতি ও কূটনীতিতে এক ধরনের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। এর নেতিবাচক প্রভাব থেকে আমাদের দেশও মুক্ত নয়। ইতোমধ্যে রিজার্ভ সংকট থেকে শুরু করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ দিশেহারা পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে। আর্থিক সংকট সামাল দিতে সরকারকে আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকের কাছে যেতে হয়েছে। এই লোন নিতে গিয়ে আইএমএফের নানা কঠিন শর্ত মানতে হয়েছে, যার বিরূপ প্রতিক্রিয়া জনগণের ওপর পড়েছে। তারপরও আইএমএফের লোন নিয়ে অর্থনীতিকে চাঙা রাখার চেষ্টা করতে হয়েছে। বিশ্বব্যাংকও লোন দিয়ে সহযোগিতা করছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলো নিরঙ্কুশভাবে নিয়ন্ত্রণ করে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র দেশগুলো। তাদের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী, এসব সংস্থা পরিচালিত হয়। কোন দেশ লোন পাবে কিংবা পাবে না, তা তাদের ইশারা-ইঙ্গিতেই হয়। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলোর ইতিবাচক মনোভাব থাকে বলেই লোন পেয়ে থাকে। আমাদের মতো ছোট ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এই বলয় থেকে বের হওয়া খুবই কঠিন। বিশ্বের রাজনীতি ও কূটনীতিতেও পশ্চিমা বিশ্বের ব্যাপক প্রভাব বিদ্যমান। জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট করেই বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র চাইলে যেকোনো দেশের সরকার পরিবর্তন করতে পারে।’ তাঁর এ কথা অস্বীকার করা যায় না। পাকিস্তানে ইমরান খানের সরকারের পতনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের নেপথ্য ভূমিকার কথা অনেকটা ওপেন সিক্রেট। স্বয়ং ইমরান খান তার বিরুদ্ধে সংসদে অনাস্থা প্রস্তাব এবং তার সরকারের পতনের মূল ব্যক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু- কে দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছেন। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদেশগুলোর প্রভাব কতটা রয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, আমাদের মতো দেশগুলোর অবস্থান ও পরিস্থিতি এমন নয় যে, যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে টক্কর দেয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে বক্তব্য দেয়ার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা বাঞ্চনীয়।
যেসব দেশের সাথে আমাদের অর্থনৈতিক ও ব্যবসা-বাণিজ্যিক সম্পর্ক ওতোপ্রোতভাবে সম্পর্কিত, সেসব দেশের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার নীতি অবলম্বন করাই শ্রেয়। আমাদের পররাষ্ট্র নীতির মূল কথা হচ্ছে, ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’। এ প্রেক্ষিতে, কোনো দেশের সাথে সম্পর্কের টানাপড়েন পরিহার করা উত্তম। বরং তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থ সুরক্ষা করাই সঙ্গত। আমরা আশা করব, সরকারের দায়িত্বশীলরা কথা-বার্তার ব্যাপারে সতর্ক হবেন এবং অনাকাক্সিক্ষত মন্তব্য ও বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত থাকবেন।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন
গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত
মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ
কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের
৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী
৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান
তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ
ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?
মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি
গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের
পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি
আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান
শুধু নারীদের জন্য
নিথর দেহ
আত্মহননে
জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী
মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু
গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়
শুধু নামেই জিমনেসিয়াম