স্যাংশন নিয়ে আশঙ্কার বিষয়গুলোর দিকে দৃষ্টি দিতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

২৩ মে ২০২৩, ০৮:৩৬ পিএম | আপডেট: ২৪ মে ২০২৩, ১২:০১ এএম

মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ২ বছর অতিক্রম করলেও তা প্রত্যাহার নিয়ে শুরুতে সরকারের তরফ থেকে বেশ তৎপরতা ও আশাবাদ থাকলেও এখন তা নেই। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রশ্নে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের তরফ থেকে যেসব শর্ত বা গাইডলাইনের কথা বলা হয়েছিল, সে বিষয়ে তেমন কোনো অগ্রগতি না থাকায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আপাত সম্ভাবনা নেই। নতুন নিষেধাজ্ঞার আশংকার কথাও শোনা যাচ্ছে। বাংলাদেশে মানবাধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রশ্নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার অবস্থানে অটুট থাকার বার্তা দিয়েছে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠতে শুরু করেছে। বিরোধীদল বিএনপি সিটি নির্বাচন বর্জন করার ফলে সিটিগুলোতে সরকারী দলের মনোনয়ন পাওয়া ব্যক্তিরা নির্বিঘেœ নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও বেশিরভাগ স্থানে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে সংশয় ক্রমে বেড়ে চলেছে। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা সরকারি দলের প্রার্থীর সমর্থকদের আক্রমণের শিকার হয়েছেন। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিকদের কাছে চিঠি দিয়েছেন। এ থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রার্থীর গণতান্ত্রিক অধিকার সংরক্ষণে কার্যকর ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হচ্ছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশেম মানবাধিকারের উন্নয়ন, গণতান্ত্রিক পরিবেশ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও এই একই দাবিতে আন্দোলন করছে। সেখানে একটি রাজনৈতিক সমঝোতার উদ্যোগ না নিয়ে একই সঙ্গে পশ্চিমাদের সাথে এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সরকারের আক্রমণাত্মক মনোভাব প্রতিফলিত হচ্ছে। পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র যে এসব বিষয়ে নজর রাখছে, তাতে সন্দেহ নেই। কয়েক মাস আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফরে তা পর্যবেক্ষণ করে গেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সাথে বৈঠকেও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন ও অন্যান্য বিষয়ে তার নীতির কথা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন। নতুন করে মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রশ্নে সরকারের সংশ্লিষ্ট শীর্ষ ব্যক্তিদের উপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের আশংকা করা হচ্ছে। নতুন নিষেধাজ্ঞা এলে তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক হবে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ. কে. আব্দুল মোমেন। নতুন নিষেধাজ্ঞার কোনো কারণ নেই বলেও তিনি দাবি করেছেন। তবে এ সপ্তাহের শুরুতে ঢাকাস্থ মার্কিন মিশন থেকে বাংলাদেশে মার্কিন নাগরিকদের চলাচলে সতর্কতা জারি করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে চলমান সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবেশ ও নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগই প্রকাশিত হয়েছে। এমনিতেই দেশ একটি অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে। ডলার সংকট, আমদানি-রফতানিসহ অর্থনৈতিক কর্মকা- নেতিবাচকের দিকে ধাবিত। নতুন করে যদি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে হয়, তাহলে দেশের অর্থনীতি ও স্থিতিশীলতার জন্য তা বিপর্যয়কর হয়ে উঠবে।

আগামী জাতীয় নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হওয়া নিয়ে বিএনপিসহ বিরোধীদলগুলো আন্দোলন করছে। এর মধ্যে দলগুলোর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, তাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার ও হয়রানিমূলক মামলার সংখ্যাও বাড়ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রাজনৈতিক ব্যবহার বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন ও অংশগ্রহনমূলক রাজনৈতিক পরিবেশ ব্যহত করছে। মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোও এ ব্যাপারে তাদের অবস্থান ব্যক্ত করছে। এমতাবস্থায় নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি হলে তা হবে খুবই দু:খজনক। সরকারের উচিত যেসব বিষয়ের ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদেশগুলো জোর দিচ্ছে, সেসব বিষয় সমাধানে তৎপর হওয়া। বলার অপেক্ষা রাখে না, আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে পরাশক্তি দেশগুলোর সাথে পেরে ওঠা সম্ভব নয়। অর্থনৈতিক ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক রয়েছে। তারা বিরূপ হলে তা দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না। স্যাংশনের মতো ঘটনা ঘটলে তাতে ধনী শ্রেণীর হয়ত তেমন সমস্যা হবে না, তবে সাধারণ মানুষকে তার কুফল ভুগতে হবে। ফলে সরকারকে দেশের স্বার্থে উন্নয়ন সহযোগী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা উচিৎ।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

রুদ্ধশ্বাস ফাইনাল শেষ বলে জিতে ধোনিকে রাজকীয় বিদায় দিল চেন্নাই

রুদ্ধশ্বাস ফাইনাল শেষ বলে জিতে ধোনিকে রাজকীয় বিদায় দিল চেন্নাই

১৫ বছর পর বন্ধ হলো বেইজিং এলজিবিটি সেন্টার

১৫ বছর পর বন্ধ হলো বেইজিং এলজিবিটি সেন্টার

সাগরে চীনকে প্রতিরোধে ফিলিপিন্স কৌশলের মূল খেলোয়াড় ভিয়েতনাম

সাগরে চীনকে প্রতিরোধে ফিলিপিন্স কৌশলের মূল খেলোয়াড় ভিয়েতনাম

পঙ্গপালের আক্রমণে বিশাল ক্ষতিতে আফগান কৃষকরা

পঙ্গপালের আক্রমণে বিশাল ক্ষতিতে আফগান কৃষকরা

‘পাকিস্তানে আজ নৈরাজ্য, বেকারত্ব সাধারণ ব্যাপার’

‘পাকিস্তানে আজ নৈরাজ্য, বেকারত্ব সাধারণ ব্যাপার’

চলতি অর্থবছরে পাকিস্তানের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ০.২৯ শতাংশ

চলতি অর্থবছরে পাকিস্তানের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ০.২৯ শতাংশ

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪২তম শাহাদাতবার্ষিকী আজ

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪২তম শাহাদাতবার্ষিকী আজ

কানাডায় ছুরিকাঘাতে শিখ নারী খুন

কানাডায় ছুরিকাঘাতে শিখ নারী খুন

মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ

মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ

সংঘাত নয় শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই : প্রধানমন্ত্রী

সংঘাত নয় শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই : প্রধানমন্ত্রী

মার্কিন ভিসা নীতিতে বিএনপির নির্বাচন বর্জনের ষড়যন্ত্র ভেস্তে গেছে

মার্কিন ভিসা নীতিতে বিএনপির নির্বাচন বর্জনের ষড়যন্ত্র ভেস্তে গেছে

কিসের জাদুতে আমেরিকা থেকে রেমিট্যান্স বাড়ছে

কিসের জাদুতে আমেরিকা থেকে রেমিট্যান্স বাড়ছে

মার্কিন ভিসা নীতি বিএনপির ওপরই বড় চাপ সৃষ্টি করেছে

মার্কিন ভিসা নীতি বিএনপির ওপরই বড় চাপ সৃষ্টি করেছে

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে জাতিসংঘ বিশেষ প্রতিবেদক শ্যুটারের উদ্বেগ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে জাতিসংঘ বিশেষ প্রতিবেদক শ্যুটারের উদ্বেগ

বাজেটের পর জ্বালানির দাম সমন্বয়

বাজেটের পর জ্বালানির দাম সমন্বয়

টিভিতে দেখুন

টিভিতে দেখুন

মেয়র তাপসকে গ্রেফতার দাবি

মেয়র তাপসকে গ্রেফতার দাবি

বাফুফেকে পদত্যাগপত্র পাঠালেন ছোটন

বাফুফেকে পদত্যাগপত্র পাঠালেন ছোটন

নেইমারহীন ব্রাজিলে নতুনের ছড়াছড়ি

নেইমারহীন ব্রাজিলে নতুনের ছড়াছড়ি

লেস্টারের অবনমন টিকে রইল এভারটন

লেস্টারের অবনমন টিকে রইল এভারটন