দেশের ঋণমান কমে যাওয়ার বাস্তবতা
৩১ মে ২০২৩, ০৮:০৬ পিএম | আপডেট: ০১ জুন ২০২৩, ১২:০১ এএম
আন্তজার্তিক ইনভেস্টর্স সার্ভিসের অন্যতম রেটিং নির্ধারক সংস্থা মুডিস বিনিয়োগ ও ব্যবসার জন্য উঁচুমাত্রার ঝুঁকির কারণে বাংলাদেশের ঋণমানের অবনমন ঘটিয়েছে। বৈদেশিক রির্জাভের স্থিতি, বাণিজ্য বান্ধব পরিবেশ, রাজস্ব, তারল্য এবং সামগ্রিক রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ভিত্তিতে মুডিস দেশগুলোকে এএএ থেকে সি পর্যন্ত ক্রেডিট রেটিং নির্ধারণ করে থাকে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা এতদিন বিএ৩ থেকে একধাপ নামিয়ে এবার বি১-এ নির্ধারণ করেছে মুডিস। দেশের বিনিয়োগ ও ব্যবসায় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মুডিস রেটিংয়ের এ অবনমন বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে উঁচুমাত্রার ঝুঁকির কথা বলেছে মুডিস। এ বিষয়গুলোকে পাস কাটিয়ে দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল ও শক্তিশালী করা সম্ভব নয়। মুডিসের পূর্বাভাস ও রেটিংয়ের অবনমন দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় অস্থিতিশীলতা, বিশৃঙ্খলা এবং ভঙ্গুরতাকেই নির্দেশ করছে। আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তরফ থেকে ঋণচুক্তির আগে যে সব সংস্কার ও শর্তাবলী আরোপ করা হয়েছিল, তার বাস্তব ফলাফল এখনো দেখা যাচ্ছে না। গত বছরের শেষ দিকে মুডিসের রেটিং অবনমনের কথা শোনা গেলেও অবস্থা ক্রমাবনতিশীল হওয়ায় জাতীয় বাজেটের আগ মুহূর্তে ঋণমান কমিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত প্রকাশ করল মুডিস।
করোনা অতিমারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক সংকটের কথা বলা হলেও বাংলাদেশে আরো অনেক আগে থেকেই ক্রমাবনতিশীল সংকট দেখা দিয়েছিল। বিশেষত বিনিয়োগ না হওয়া, রফতানি বাণিজ্যে বৈষম্য ও ক্রমবর্ধমান ঘাটতি এবং দেশ থেকে বিপুল পরিমান অর্থপাচারের মধ্য দিয়ে জাতীয় অর্থনীতি ভেতর থেকে ফোঁকলা হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ ও ভর্তুকি সত্ত্বেও বিদ্যুত ঘাটতি ও লোডশেডিং বিনিয়োগ ও শিল্পোৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করেছে। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে স্থবিরতা, মানুষের আয় কমে যাওয়ার মধ্যেও ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে দুর্বহ করে তুলেছে। আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বৈষম্য বেড়ে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রির্জাভের উপর চাপ সৃষ্টি হওয়ায় রির্জাভের স্থিতি দ্রুত কমে গিয়ে আমদানি সক্ষমতা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। ডলার সংকটের কারনে ব্যাংকগুলোর এলসি দায় মেটানোর অক্ষমতা, খাদ্য ও জ্বালানি আমদানির ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করায় বিদ্যুত ও জ্বালানি সংকট আরো জটিল আকার ধারণ করেছে। ডলার সংকটের কারণে এলএনজি ও কয়লা আমদানি করতে না পারায় গ্যাস ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্রগুলোর বেশ কিছু ইউনিট বন্ধ হয়ে পড়ায় দেশব্যাপি লোডশেডিংয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করার সাথে সাথে শিল্পোৎপাদন ও রফতানি বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এই প্রচন্ড গরমে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে লোডশেডিংয়ের কারনে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
সামগ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার সাথে দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা ও আস্থার সংকট এখন অর্থনৈতিক সক্ষমতাকে তলানিতে এনে দাঁড় করিয়েছে। আমাদের সরকার ও রাজনৈতিক নেতারা বছরের পর বছর ধরে দেশকে অনেকদূর সামনে এগিয়ে নেয়ার কৃতিত্ব জাহির করলেও দেশ থেকে বছরে ৭০ হাজার কোটি টাকার বেশি বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া এবং দেশে নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান না হওয়ার পেছনের প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করার কোনো বাস্তবসম্মত উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। এহেন ক্রমাবনতিশীল অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতেও ভারতের আদানি গ্রুপের সাথে বিদ্যুত আমদানির নামে জাতীয় সংসদ ও জনগণকে অন্ধকারে রেখে লক্ষকোটি টাকার বিতর্কিত চুক্তি করেছে সরকার। এদিকে ডলার সংকটে কয়লা আমদানি করতে না পারায় সদ্য চালু হওয়া পায়রা বিদ্যুতকেন্দ্রের একটি ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে। মুডিস রেটিংয়ে ঋণমান কমে যাওয়া বাজেট ঘাটতি পুরণে বৈদেশিক ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নতুন প্রতিবন্ধকতা হিসেবে গণ্য হতে পারে। বৈদেশিক বাণিজ্য ও ঋণের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার কারণে ঋণদাতারা সুদের হার বাড়িয়ে আরো কঠিন শর্ত আরোপ করতে পারে। আইএমএফ’র শর্তের কারণে ব্যাংক ঋণে সুদের হার বৃদ্ধি, বিভিন্ন খাতে ভতুর্কি কমানো এবং জ্বালানি ও বিদ্যুত খাতে মূল্যবৃদ্ধির চক্রে মূল্যস্ফীতির যাঁতাকলে জনজীবন আরো দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। অর্থপাচারসহ দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার সাথে আমলাতান্ত্রিক দুর্নীতি ও রাজনৈতিক দুবৃর্ত্তায়নের নিবিড় যোগসুত্র বিদ্যমান। দেশে বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ, সামাজিক-অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে অর্থনৈতিক সক্ষমতা পুনরুদ্ধার অসম্ভব। সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা নিশ্চিত করতে সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির প্রয়োগ নিশ্চিত ও দৃশ্যমান করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
অসহনীয় তাপমাত্রা মানুষের গুনাহের শাস্তির সতর্ক সঙ্কেত
রাউজানে ইসতেস্কার নামাজ আদায়
খুনিদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে ফরিদপুর বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ
'বিগত ১৫ বছরে সাংবাদিকদের ওপরে হামলা-মামলা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে'
বাগেরহাটে কৃষককে পিটিকে হত্যা, আটক ৪
চাঁদপুরে ৬ লাখ টন ইলিশ উৎপাদনের সম্ভাবনা
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে মানসিক প্রতিবন্ধীর লাশ উদ্ধার
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ইসতেস্কার নামাজ আদায়
পঞ্চগড়ে নদীতে গোসল করতে নেমে দুই শিশুর মৃত্যু
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা : সিলেট বিভাগে বিএনপির ৯ নেতা আজীবনের জন্য বহিস্কার
রাজবাড়ীতে রেল মন্ত্রীর চাচাতো ভাই চেয়ারম্যান প্রার্থী
অর্থ আত্মসাতের মামলা : ফের গ্রেফতারি পরোয়ানা রাশেদ বিন আমানের বিরুদ্ধে
বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা জোরদারের সুযোগ রয়েছে : শেখ হাসিনা
হিলিতে গরু বোঝায় ভটভটি ধাক্কায় প্রাণ গেল মোটরসাইকেল আরোহী দুই যুবকের
রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড ৪২ দশমিক ৪
পরিবেশবান্ধব ও বাসযোগ্য শহর বিনির্মাণে কুসিক মেয়রের আহ্বান
দৌলতখানে ইস্তিস্কার নামাজ আদায়, বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা
শুটারগান ও কার্তুজসহ ২ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার
চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাত
শেরপুরে হাতির আক্রমণে নিহত হয় এক কৃষক