গণপরিবহনে শিশুর উপযোগী আসন নিশ্চিত করতে হবে
১১ জুন ২০২৩, ০৮:০৬ পিএম | আপডেট: ১২ জুন ২০২৩, ১২:০১ এএম
উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশে শিশু সুরক্ষায় স্ট্যান্ডার্ড সিট বেল্ট দিয়ে গণপরিবহনে শিশুর আসন নিশ্চিত করতে হবে, যাতে করে দুর্ঘটনায় শিশু সুরক্ষিত থাকে। কারণ, সড়ক দুর্ঘটনায় যখন বড় ধরনের কোনো সংঘর্ষ ঘটে তখন দেখা যায় মায়ের কোলে বসা শিশুটি ছিটকে গিয়ে মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে। একবার ভেবে দেখুন, বিষয়টা কতটা বেদনাদায়ক হয়। একজন অভিভাবক হিসেবে গাড়িতে ভ্রমণ করার সময় আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলির মধ্যে একটি হলো আপনার সন্তানকে নিরাপদ রাখা।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২ সালে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৭৭১৩ জন। এর মধ্যে ৩ মাস থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা ১১৪৩। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে তিনজনের বেশি শিশু সড়কে প্রাণ হারিয়েছে। সড়কে শিশু মৃত্যু ঠেকাতে গাড়িতে সিট বেল্ট বাঁধা, যানবাহনে শিশুদের উপযোগী সিটের ব্যবস্থা করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
একজন অভিভাবক হিসেবে গাড়িতে ভ্রমণ করার সময় আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলির মধ্যে একটি হলো আপনার সন্তানকে নিরাপদ রাখা। গাড়িতে আপনার সন্তানের যে ধরনের আসন প্রয়োজন তা নির্ভর করে আপনার সন্তানের বয়স, আকার এবং বিকাশের প্রয়োজনীয়তাসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর। একটি শিশু সুরক্ষা আসন যাকে কখনও কখনও শিশু সুরক্ষা আসন, শিশু সংযম ব্যবস্থা, শিশু আসন, শিশুর আসন, গাড়ির আসন বা একটি বুস্টার সিট বলা হয়। এটি এমন একটা আসন, যা বিশেষভাবে গাড়ির সংঘর্ষের সময় শিশুদের আঘাত বা মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।
দুর্ঘটনায় শিশু নিহত হওয়া সড়কের ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, মহাসড়কে নিহত হয়েছে ১৬.০৯%, আঞ্চলিক সড়কে নিহত হয়েছে ২৭.৯০%, গ্রামীণ সড়কে নিহত হয়েছে ৪১.৭৩%, শহরের সড়কে নিহত হয়েছে ১৩.০৩% এবং অন্যান্য স্থানে নিহত হয়েছে ১.২২%। ১৩ বছর থেকে ১৭ বছর বয়সে সবচেয়ে বেশি শিশু নিহত হয়েছে ৪৯.৯৫%। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়া-আসার সময় নিহত হয়েছে ৪২৭ শিশু (৩৭.৩৫%) এবং বসতবাড়ির আশেপাশের সড়কে খেলাধুলার সময় নিহত হয়েছে ১১৯ শিশু (১০.৪১%)। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনায় ১ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের মৃত্যুর প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিশু সুরক্ষিত আসনের অভাব। ‘বাংলাদেশের সড়ক ও সড়ক পরিবহন শিশুবান্ধব নয়। শিশুদের জন্য উপযোগী যানবাহন নেই। আবার শিশুরা সড়ক ব্যবহারের কোনো নিয়ম-নীতি জানে না। বিষয়টি নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে যেমন কোনো উদ্বেগ নেই। তেমনি সাধারণ মানুষের মধ্যেও কোনো প্রকার সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। অথচ এই অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে নীরবে আমাদের শিশুরা নিহত হচ্ছে, পঙ্গু হচ্ছে। এটা জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।’
গেল বছরের ২৭ ডিসেম্বরে গেজেট আকারে প্রকাশিত বিধিমালায় শিশুযাত্রীর জন্য সিটবেল্ট বাঁধা সংক্রান্ত নির্দিষ্ট বিধান কর্তৃপক্ষ প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জারির কথা বললেও শিশু আসনের বিষয়ে কোনো বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। উচ্চ গতির যুগে এবং গাড়িতে আটকে থাকা রাস্তা, চালকদের বেপরোয়াতায়, ভ্রমণের সময় শিশুর ঝুঁঁকি বেড়ে যায়। অতএব, শিশুদের নিরাপদ পরিবহনের জন্য, শিশুদের উপযোগী সুরক্ষিত আসন অত্যন্ত জরুরি।
সড়ক দুর্ঘটনারোধে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮। আইনটি যুগোপযুগি হওয়া সত্বেও এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আইনটিতে মোটরসাইকেলে হেলমেট পরিধান বাধ্যতামূলক করে দেয়া হলেও মানসম্মত হেলমেট ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা কিংবা এর মানদ- নির্ণয় করে দেয়া হয়নি। এ আইনে গতিসীমা লঙ্ঘনের বিধান বর্ণিত থাকলেও গতিসীমা নির্ধারণ কিংবা পর্যবেক্ষনের নির্দেশনা ও পরিকল্পনা উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া যাত্রীদের সিটবেল্ট ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা ও শিশুদের ক্ষেত্রে চাইল্ড রেস্ট্রেইন বা শিশুদের জন্য নিরাপদ বা সুরক্ষিত আসন ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা আইনটিতে নেই।
শিশু আসনের পক্ষে কারণগুলির মধ্য অন্যতম হচ্ছে সড়কে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে শিশু আসন থাকায় শিশুকে সুরক্ষায় রাখে, ধাক্কা ছাড়াই এবং সর্বাধিক গতির অসুস্থতার প্রভাবসহ একটি নিরাপদ ভ্রমণ প্রদান করে। সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু মৃত্যুর হার বৃদ্ধির কারণসমূহের মধ্যে অন্যাতম হচ্ছে দেশের সড়ক ও সড়ক পরিবহন শিশুবান্ধব না হওয়া, গাড়িতে শিশুদের উপযুক্ত আসনের ব্যবস্থা না থাকা, সড়ক ও সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা শিশুদের জন্য নিরাপদ না করা ইত্যাদি।
দেশে গণপরিবহনে শিশু আসন তৈরি করার কোন আইনি বিধি-বিধান নেই। তাই বর্তমান নীতিমালায় শিশু আসন বাস্তবায়নে একটি সংযোজন প্রয়োজন। দেশে সঠিকভাবে শিশু নিরাপত্তা আসন ব্যবহার করা হলে যাত্রীবাহী গাড়িতে শিশুমৃত্যু কমাতে শিশু নিরাপত্তা আসন ৭১ শতাংশ কার্যকর এবং শিশুর মৃত্যু কমাতে ৫৪ শতাংশ কার্যকর হবে। দেশের ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি যাতে সিট তৈরির সময় শিশুদের বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে। এছাড়া বাইরে থেকে যারা সিট আনে তারাও যেন শিশুদের বিষয়টি গুরুত্ব দেয় সেজন্য গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা রোধে যানবাহন চালক ও সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হবে।
আমাদের দেশের গণপরিবহনে শিশু আসন খুবই জরুরি। শিশু আসনের ক্ষেত্রে নতুন আইন প্রণয়ন করে তা অতি দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক। প্রতিবছরে সড়কে আমাদের দেশে অভাবণীয় শিশুর প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। আর এই মৃত্যুর হাত থেকে শিশুদের সুরক্ষা রাখতে শিশু আসন আইন প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন চাই।
লেখক: অ্যাডভোকেসি অফিসার (কমিউনিকেশন), রোড সেইফটি প্রকল্প, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল
‘স্পেন্ড অ্যান্ড উইন’ ক্যাম্পেইনের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে মাস্টারকার্ড
সিটি ব্যাংক আনল অভূতপূর্ব ভিসা ইনফিনিট ক্রেডিট কার্ড
শেখ হাসিনার কোনো ক্ষমা নেই, জবাব তাকে দিতেই হবে : মির্জা ফখরুল
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে