ঢাকা   শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১

তারেক রহমান কেন বলেছিলেন ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’

Daily Inqilab কামরুল হাসান দর্পণ

২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১৪ এএম | আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১৪ এএম

প্রায় সাড়ে চার বছর আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাংলাদেশের জনগণের উদ্দেশ্যে ‘টেকব্যাক বাংলাদেশ’ নামে একটি শ্লোগান দিয়েছিলেন। ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি স্বাধীনতার ঘোষক এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৪তম জন্মদিবস উপলক্ষে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ শ্লোগানটি উচ্চারণ করেছিলেন। তিনি এমন এক সময় এ শ্লোগান দিয়েছিলেন, যখন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নির্মম ও নিষ্ঠুর শাসনে দেশের মানুষের জীবন অতিষ্ঠ ছিল। তারা এ থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছিল না। তাদের সামনে কোনো আশার পথ ছিল না। পুরো দেশ অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল। তারা ধরেই নিয়েছিল, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসন থেকে কখনো মুক্তি পাবে না। সেই সময়ে সুদূর লন্ডন থেকে আলোর দিশারী হয়ে তারেক রহমান ‘টেকব্যাক বাংলাদেশ’ শ্লোগান দিয়ে দেশবাসীকে আশার আলো দেখিয়েছিলেন। আশা যে শেষ হয়ে যায়নি, দূর দিগন্তে ‘সিলভার লাইনিং’ হয়ে আছে, এর সন্ধান দিয়ে দেশবাসীকে তিনি উজ্জীবিত করেছিলেন। তাঁর এই আহ্বান বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে তো বটেই ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতনের যাঁতাকলে পিষ্ঠ হওয়া সাধারণ মানুষের মধ্যে বজ্রধ্বনির মতো বিদ্যুৎ গতিতে ছড়িয়ে পড়ে। হতাশায় নুয়ে পড়া মানুষ যেন মাথা তুলে তাকায়। তারা তারেক রহমানকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার কবল থেকে উদ্ধারের নেতা এবং ত্রাতা হিসেবে আশায় বুক বাঁধে। যদিও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামলের শুরু থেকেই তারেক রহমান তাঁর অসাধারণ বুদ্ধিদীপ্ত ও দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে নিপীড়িত-নির্যাতিত, খুন-গুম, হামলা-মামলায় পর্যুদস্ত দলের নেতাকর্মীদের উদ্দীপ্ত করে ক্রমাগত আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছেন। একজন তৃণমূল নেতার সাথেও যোগাযোগ করে প্রেরণা ও আন্দোলনের শক্তি যুগিয়েছেন। তবে জনগণের উপর হিমালয়ের মতো ভারি হয়ে বসে থাকা ফ্যাসিস্ট হাসিনার পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এমন নির্দয়ভাবে বিএনপির নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের উপর হামলা-মামলা, গ্রেফতার, গুলি, তুলে নিয়ে যাওয়াসহ সীমাহীন রাক্ষসীয় আচরণ করেছিল যে, প্রাণহানির ভয়ে তারা কুঁকড়ে ছিল। অনেককে ফেরারি জীবনযাপন করতে হয়েছে। এই সীমাহীন দুঃসহ পরিস্থিতিতেও তারেক রহমানের প্রাজ্ঞ ও বিজ্ঞ নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা অদম্য হয়ে লড়ে যেতে থাকে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার দোসর মিডিয়া কতভাবে যে তাঁকে হেনস্থা ও অপমানিত করেছে, তা সকলেরই জানা। তাতে তারেক রহমান দমে যাননি। ধৈর্য্যরে পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে অভিভাবকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের আগলে রেখে তাদের দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি যুগিয়েছেন। বিএনপির প্রত্যেক নেতাকর্মী তাঁর প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস রেখে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রাণপণ লড়ে গেছে। তারা তাঁর প্রতিটি নির্দেশনা মেনে দাঁতে দাঁত চেপে সবকিছু ত্যাগ করে লড়াই করেছে, প্রাণ দিতেও এতটুকু দ্বিধা করেনি। শুধু বিএনপির নেতাকর্মীই নয়, সাধারণ মানুষও তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে লড়াই-সংগ্রামে শামিল হয়েছে। আমরা দেখেছি, গত বছর বিএনপি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের একদফা আন্দোলনের অংশ হিসেবে জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে যে মহাসমাবেশ করেছিল, হাসিনাবাহিনীর সকল বাধা উপেক্ষা করে সাধারণ মানুষ কিভাবে শত শত মাইল পায়ে হেঁটে, সাঁতার কেটে, দুর্গম পথ পেরিয়ে, রাস্তার পাশে গুমিয়ে, রাত জেগে সেসব সমাবেশে অংশগ্রহণ করেছিল। স্বাধীনতার পর এমন অভূতপূর্ব দৃশ্য খুব কম দেখা গেছে। এটা সম্ভব হয়েছিল, তারেক রহমানের উজ্জীবনী আহ্বান ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’র কারণে।

দুই.
তারেক রহমান কেন ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’র আহ্বান জানিয়েছিলেন? এর কি কারণ? এ প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, এর পেছনে রয়েছে তাঁর গভীর দেশপ্রেম, দর্শন, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার দূরদর্শী চিন্তা ও প্রজ্ঞা। তিনি এ আহ্বান জানিয়েছিলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মদিনে, যিনি ’৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে অরক্ষিত হয়ে যাওয়া বাংলাদেশের জনগণের অভিভাবকের ভূমিকা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে নিজেও সম্মুখ যুদ্ধে নেমেছিলেন। সেই জিয়াউর রহমানের জ্যেষ্ঠপুত্র তারেক রহমানই স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে পুনরায় স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার হাতে যখন দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন, দেশের মানুষ অরক্ষিত, তখনই ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশে’র আহ্বান জানিয়ে তাদের সামনে আশার প্রদীপ হয়ে ছিলেন। সেদিন তিনি কোন প্রেক্ষিতে ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ উচ্চারণ করেছিলেন, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, স্বাধীন দেশের নাগরিকরা নিজ দেশেই এখন যেন পরাধীন। শুধু পরাধীনই নয়, ধীরে ধীরে দেশের ভৌগোলিক স্বাধীনতাও হুমকির মুখে। তাই, এবারের আন্দোলন মাতৃভূমির স্বাধীনতা রক্ষার আন্দোলন। এই আন্দোলনের শ্লোগান, ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’। তিনি বিএনপিসহ বাংলাদেশের পক্ষের শক্তিকে এই আন্দোলনর জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়ার আহবান জানিয়ে বলেছিলেন, এই আন্দোলন শুধুমাত্র বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার আন্দোলন নয়, এই আন্দোলন মাতৃভূমির স্বাধীনতা রক্ষার আন্দোলন, জনগণের বাংলাদেশ জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার আন্দোলন। গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, বাক ও ব্যক্তিস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। তিনি বলেছিলেন, প্রায় প্রতিদিন সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিকদের হত্যা করা হচ্ছে, নানা অজুহাতে ভারত থেকে পুশ ব্যাক চলছে, বাংলাদেশের (স্বৈরাচারী হাসিনার আমলে) প্রতিবাদ করার সাহস নেই। তিনি বলেছিলেন, ভারতে বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন পাশ করার ফলে বাংলাদেশে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সুতরাং এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় ভেবে চুপ করে থাকার সুযোগ নেই। এই সত্য কথাটি বাংলাদেশ (পতিত স্বৈরাচার হাসিনা সরকার) সাহস করে বলতে পারছে না। বাংলাদেশ তিস্তা চুক্তি করতে ব্যর্থ হয়েছে, অথচ বছরের পর বছর ধরে ফেনী নদীর পানি নিচ্ছে ভারত। বাংলাদেশের নিজেদের অধিকারের পক্ষে কথা বলার সাহস নেই। বিমানবন্দর তৈরির অজুহাতে বাংলাদেশের জমি দখল করতে চায় ভারত, অথচ বাংলাদেশের কোনো প্রতিবাদ নেই। তিনি বলেছিলেন, পররাষ্ট্রনীতি হওয়া উচিৎ পার¯পরিক স্বার্থ ও মর্যাদার ভিত্তিতে, অথচ বাংলাদেশ নির্লজ্জভাবে চালু করেছে স্বামী-স্ত্রীর কূটনীতি। তারেক রহমান বলেছিলেন, ভারত নাকি বাংলাদেশের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে, পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই একটি বিশেষ পাশ ইস্যুর মাধ্যমে ৪৮ অথবা ৭২ ঘন্টার জন্য ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ দেয়ার জন্য। এ ধরণের পরিকল্পনা বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী। মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর লক্ষ লক্ষ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। এরই মধ্যে দুইবছর অতিবাহিত হওয়ার পরও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে চরমভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে সরকার। তিনি বলেছিলেন, ’৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ববিরোধী ষড়যন্ত্রের মোকাবেলায় ’৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্ব, দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেয়া, প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন সফল ও সার্থক। তাই, যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, জিয়াউর রহমান বেঁচে থাকবেন জনগণের হৃদয়ে। মানুষের ভালোবাসায়। তারেক রহমান বলেছিলেন, জিয়াউর রহমানের জন্য জনগণের ভালোবাসা আদায়ে আদালতের আশ্রয় নিতে হয়না, কাউকে কারাদ- দিতে হয়না, মানুষকে র‌্যাব-পুলিশের ভয় দেখাতে হয়না। কারণ, জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস ছিল জনগণ। জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, ‘জনগণ যদি রাজনৈতিক দল হয়, তাহলে আমি সেই দলে আছি’। জনগণের সেই রাজনৈতিক দলই হচ্ছে বিএনপি। তাই বছরের পর বছর ধরে প্রতিহিংসার রাজনীতি কিংবা মিথ্যাচার করেও জিয়াউর রহমান কিংবা তার প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপিকে জনবিচ্ছিন্ন করা যায়নি। বরং জনগণ ভোটাধিকার পেলে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বিএনপি যায়। তিনি বলেছিলেন, স্বাধীনতার দেড় দুই বছরের মাথায় ’৭৩ সালের নির্বাচনেও হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় ব্যালট বক্স এনে তাদের দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করেছিল আওয়ামী লীগ। রেডিও টিভিতে ঘোষণা দিয়েও প্রার্থীর নির্বাচনী ফলাফল পাল্টে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। কি কারণে স্বাধীনতার দেড় বছরের মাথায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও আওয়ামী লীগকে ভোট চুরির আশ্রয় নিতে হয়েছে, তা সকলেরই জানা। তারেক রহমানের এই বক্তব্য থেকে দেশের মানুষের বুঝতে অসুবিধা হয় না, তিনি কেন ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশে’র কথা বলেছিলেন। তিনি এই শ্রুতিমধুর, আধুনিক, স্মার্ট এবং সময়োপযোগী শ্লোগানের মাধ্যমে অসীম দেশপ্রেম, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার দৃঢ়তা, দেশের মানুষের প্রতি দরদ, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন। একজন প্রকৃত রাষ্ট্রনায়কের মতোই দেশের ক্রান্তিলগ্নে দেশ রক্ষায় মানুষের দিশা হয়ে উঠেছেন। তিনি তাঁর পিতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং মা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী আপসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ারই যেন শানিত প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছেন। তারেক রহমান মনেপ্রাণে বাংলাদেশী এবং উদার গণতান্ত্রিক। তিনি প্রায়ই বলেন, দল, মত, বিশ্বাস, দর্শন যার যার, কিন্তু দেশটা আমাদের সবার।

তিন.
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও দার্শনিক ড. বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন যখন দেশটির সংবিধান রচনা করছিলেন, তখন এক বয়স্ক মহিলা তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, হে ডক্টর, তুমি কি লিখছ? বেঞ্জামিন ছোট্ট করে উত্তর দিয়েছিলেন, ‘গণতন্ত্র, যদি তোমরা বোঝ।’ তারেক রহমানও দার্শনিক হয়ে ছোট্ট করে বলেছিলেন, ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’। তাঁর এই ছোট্ট কথায় শুধু গণতন্ত্র নয়, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার দৃঢ়তা রয়েছে। সাধারণ মানুষ ঠিকই তা বুঝে নিয়েছে। তারা বুঝে নিয়েছে, তারেক রহমানের নেতৃত্বেই, নিষ্ঠুর স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্য দিয়ে রক্ষা পাবে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। পুনরুদ্ধার হবে গণতন্ত্র। প্রতিষ্ঠিত হবে বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। তবে ফ্যাসিস্ট হাসিনা যেভাবে নিñিদ্র ও দুর্ভেদ্য লৌহ কুঠোরিতে দেশের মানুষকে আবদ্ধ করে রেখেছিল, তা ভেদ করা ছিল পাথরে মাথা ঠোকার মতো। তারপরও বিএনপির নেতাকর্মীরা তারেক রহমানের ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশে’ উদ্ভুদ্ধ হয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার দুর্ভেদ্য দুর্গে বারবার আঘাত করে গেছে। ইতিহাসের কঠিনতম এ লড়াই করেছে। লড়াই করতে গিয়ে নির্মম স্বৈরাচারী হাসিনাবাহিনীর হাতে বিএনপির শত শত নেতাকর্মী নিহত ও আহত হয়েছে। শত শত মামলা মাথায় নিয়ে গ্রেফতার হয়েছে, জেল খেটেছে, সংসারহারা হয়েছে, ঘরবাড়ি-এলাকাছাড়া হয়েছে, চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে রিকশা চালিয়েছে, হকার হয়েছে, মাঠে-ঘাটে রাত কাটিয়েছে। তারপরও তারা থেমে যায়নি। তাদের এই থেমে না যাওয়ার কারণ, দেশমতৃকা রক্ষায় তারেক রহমানের ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ শ্লোগানের অমিত শক্তি। গত বছর মার্চে আমি যখন দুইদিন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলাম, তখন দেখেছি, সেলগুলোর দেয়ালে লেখা, ‘শহীদ জিয়া অমর হোক’, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’। যখন পুলিশ ভ্যানে করে জেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখনও তরুণরা ভ্যানের মধ্যেই শ্লোগান দিচ্ছিল, ‘জিয়া, খালেদা, জিয়া, খালেদা।’ বুঝতে অসুবিধা হয়নি, বিএনপির নেতাকর্মীরা জেল-জুলুমেও ভীত হয়নি, দমে যায়নি। কী অদম্য, আপসহীন তারা! জেল-জুলুমকে জীবনের অংশ করে তারা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সাড়ে ১৫ বছর লড়াই সংগ্রাম করে গেছে। জেলের দেয়ালে দেয়ালে দেশের স্বাধীনতার কথা, তাদের আন্দোলন এবং ত্যাগের কথা লিখে রেখেছে। তাদের এই শক্তি ও দৃঢ় মনোবলের উৎস কোথায়? উৎস স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তরুণ প্রজন্মের আইডল দেশনায়ক তারেক রহমান। বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মীকে তারেক রহমান যেভাবে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার নিষ্ঠুর নির্যাতনের মধ্যে আগলে রেখেছেন এবং তাদেরকে প্রেরণা দিয়েছেন, তা বিশ্বে অতুলনীয়, অবিস্মরণীয়। তারা শুধু তাঁর কথা শোনে না, মনেপ্রাণে এবং অস্তিত্বে ধারন করে। তাঁর অমিত শক্তির ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ শ্লোগান ধারন করেই অলঙ্ঘনীয় দুর্গে থাকা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আতঙ্ক হয়ে ছিল। হিমালয়সম হয়ে উঠেছিল। অন্যদিকে, এই শ্লোগান ফ্যাসিস্ট হাসিনার বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিল। এই শ্লোগানের মর্ম তিনি বুঝেছিলেন। বুঝেছিলেন বলেই তার নেতাদের দিয়ে বিকৃত করে বলিয়েছেন, তারেক রহমান বাংলাদেশকে পাকিস্তানে ফিরিয়ে নিতে চায়। অথচ তারা যে ভারতের কাছে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়ে বসে আছে, ভারতের অঙ্গরাজ্যে পরিণত করার প্রক্রিয়া চালিয়েছে, সে কথা এখন সচেতন ও সাধারণ মানুষ বলছে। তারা এটাও বলছে, তারেক রহমানই ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ শ্লোগান দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রাচীর গড়ে দিয়েছেন। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে তার প্রভু ভারতেই গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। উল্লেখ করা প্রয়োজন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার যে আন্দোলন হয়েছে, তার ভিত্তি রচিত হয়েছে তারেক রহমানের নেতৃত্বে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের ধারাবাহিক আন্দোলনের উপর ভিত্তি করে। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে দেড় দশকের বেশি সময় ধরে বিএনপির শত শত নেতাকর্মী জীবন দিয়েছে, শত শত গুম হয়েছে, হাজার হাজার পঙ্গু হয়েছে, লাখ লাখ মামলার আসামী হয়েছে, বছরের পর বছর জেল খেটেছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের রক্তে লেখা এ ইতিহাস অস্বীকার করার উপায় নেই। এই যে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন পরবর্তীতে যা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রূপ লাভ করে এবং সফল হয়, তাতে বিএনপির যেমন সমর্থন ছিল, তেমনি তার নেতাকর্মীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। এ আন্দোলন করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি বিএনপির নেতাকর্মী নিহত হয়েছে। আন্দোলনে এ পর্যন্ত যে ৮৭৫ জন শহীদ হয়েছে, তার মধ্যে বিএনপির কমপক্ষে ৪২২ জন নেতাকর্মী রয়েছে। পঙ্গু ও অন্ধ হয়েছে অসংখ্য। শহীদদের মধ্যে বিএনপির অনেক সমর্থকও রয়েছে। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, নিষ্ঠুর স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনে বিএনপির নেতাকর্মীদের রক্তঝরা ধারাবাহিক আন্দোলন এসে মিশেছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে এবং তা সফল হয়।

চার.
তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রূপ লাভ করে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার কবল থেকে যে বাংলাদেশকে ছিনিয়ে নতুন বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছে, তা তারেক রহমানের ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ দার্শনিক ও তাত্ত্বিক শ্লোগানেরই বাস্তবায়ন। এই শ্লোগানের মধ্যেই স্বাধীন বাংলাদেশকে ভারতের অঙ্গরাজ্যে পরিণত করার শেখ হাসিনার পরিকল্পনাকে ভেস্তে দেয়ার তাৎপর্য নিহিত। ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বাতিঘর। এই বাতিঘরের রূপকার তারেক রহমান। তিনি সত্যিকার অর্থে একজন দেশনায়ক। তাঁর বাবা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দেশপ্রেমের ইস্পাত কঠিন আদর্শের পথ ধরেই এগিয়ে চলেছেন। দেশের মানুষ তারেক রহমানকে ইতিহাসের ‘বরপুত্র’ হিসেবেই গণ্য করবে। কেন করবে না, ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনামুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়তে তিনি এবং তাঁর দল বিএনপি যে ত্যাগ স্বীকার করেছে, তা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। এই ইতিহাস চলমান, জীবন্ত। কখনো থামে যাবে না। কারণ, তারেক রহমান ইতিহাস রচয়িতা এবং তার ইতিহাসের ধারক-বাহক হয়ে আগামীর পথে নিয়ে যাবে বিএনপির নেতাকর্মী ও দেশের জনগণ। তাঁর কথার সাথে সুরে সুরে বলবে, ‘আমার অধিকার, আমার দেশ, টেক ব্যাক বাংলাদেশ।’

[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার

ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার

আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়

আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়

হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড  ইংল্যান্ড

হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড  ইংল্যান্ড

পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের

পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের

বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি

বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু

সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু

রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে

রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে

বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত

বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে

বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা

বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা

লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই

লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই

রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে

রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে

দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা

দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা

জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ

জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ

উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী  প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন

উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন

সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।

পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।

ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার

ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার

রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল

রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল