গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে জোর দিতে হবে
১১ জুন ২০২৩, ০৮:০৭ পিএম | আপডেট: ১২ জুন ২০২৩, ১২:০১ এএম
‘ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কর্মাস, বাংলাদেশ’ (আইসিসিবি)-এর বার্ষিক সাধারণ সভায় বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আমদানি করা জীবাশ্ম জ্বালানি, এলএনজি এবং কয়লার ওপর নির্ভরতা ঝুঁকি বাড়াচ্ছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং ভর্তুকির বোঝা স্ফীত করছে। এমত পরিস্থিতি নিরসনে ওই সভাতেই বলা হয়েছে, ব্যয়বহুল এলএনজি নিজস্ব প্রাকৃতিক গ্যাসের রিজার্ভ দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে হবে। এজন্য অনশোর এবং অপশোর উভয় ক্ষেত্রে অনুসন্ধান কার্যক্রম বাড়াতে হবে। পাশাপাশি পারমাণবিক ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে গুরুত্ব দিতে হবে। আইসিসিবি’র বার্ষিক সাধারণ সভায় দেয়া এ অভিমত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয়। একথা বলার অপেক্ষা রাখে না, শতভাগ বিদ্যুতায়নের উৎসব পালনের পরও বিদ্যুৎ সমস্যার কোনো সুরাহা হয়নি। বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বলে দাবি করা হয়। প্রতিদিনের চাহিদা ১৫ হাজার মেগাওয়াটের মতো। কিন্তু গ্যাস, কয়লা, তেলের অভাবে এই চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনও সম্ভব হচ্ছে না। ফলে লাগাতার বেপরোয়া লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এতে কৃষি-শিল্প উৎপাদনে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে এবং জনজীবনযাপন রীতিমত দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রধানত গ্যাস, তেল ও কয়লায় হয়ে থাকে। তেল-কয়লার পুরোটাই আমদানি করতে হয়। এলএনজিও আমদানি হয়ে থাকে। এতদিন আমদানিতে তেমন সংকট দেখা না গেলেও ডলার সংকট যখন বাড়তে শুরু করে, তখন থেকেই আমদানিতে সংকট দেখা দিয়েছে। ডলার সংকটের কারণে তেল সরবরাহকারী ছয়টি আন্তর্জাতিক কোম্পানির বকেয়া বিল পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে কোম্পানিগুলোর তরফে বাংলাদেশকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। যে কোনো সময় তারা তেল সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে। গ্যাসের অভাবে গ্যাসনির্ভর বেশ কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র পুরো অথবা আংশিক বন্ধ রয়েছে। কয়লার অভাবেও কয়লানির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়েছে।
এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ও নাজুক পরিস্থিতি হয়তো দেখা দিত না, যদি বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিদেশনির্ভরতা এত ব্যাপকভাবে না থাকতো। নীতিগত এই ভুলের কারণে এখন খেসারত গুনতে হচ্ছে কড়ায়-গ-ায়। বরাবরই গ্যাস থেকে বেশি বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। গ্যাস আমাদের নিজস্ব খনিজ সম্পদ। এখনো গ্যাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ সাড়ে ১১ হাজার মেগাওয়াটের মতো। কয়লা থেকে উৎপাদন হয় পৌনে দু’হাজার মেগাওয়াট। অবশিষ্ট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় তেলনির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে। আমদানি করা কয়লা ও তেলের ওপর এতটা নির্ভরতা না দেখিয়ে যদি আমাদের নিজস্ব খনিজ সম্পদ গ্যাসনির্ভরতা বাড়ানো হতো, তবে এখনকার মতো দুর্ঘটের শিকার হতে হতো না। পরিতাপজনক হলেও বলতে হচ্ছে, আমাদের রাষ্ট্রীয়নীতি নির্ধারকরা আমদানিকেই প্রাধাান্য দিয়েছেন জাতীয় সম্পদ ব্যবহারের পদক্ষেপ না নিয়ে। আমাদের ভূখন্ডে এবং সাগরে বিপুল পরিমাণ গ্যাস ও তেল মজুদ আছে বলে বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ ও গবেষণায় প্রতীয়মান হয়েছে। অথচ, গ্যাস-তেল অনুসন্ধানে ব্যাপকভিত্তিক কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। সাগরে মিয়ানমার, ভারত গ্যাস অনুসন্ধানে ও উত্তোলন শুরু করলেও আমরা এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক টেন্ডার পর্যন্ত করতে পারেনি। জাতীয় সম্পদকে এভাবে অবহেলা-উপেক্ষা না করলে নিজস্ব গ্যাস ও তেল থেকেই আমরা হয়তো এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারতাম। অন্যান্য ক্ষেত্রেও গ্যাস-তেলের ব্যবহার করতে পারতাম। দেশের মাটির নিচে কয়লার বড় রকমের মজুদ রয়েছে। কিন্তু তা তোলার ব্যবস্থা না করে আমরা আমদানি করছি। কেন আমদানি করছি, সেটাই প্রশ্ন। অনেকে বলেন, আমদানিতে মধু আছে।
আইসিসিবি’র বার্ষিক সভায় যে পরামর্শ ও তাকিদ দেয়া হয়েছে, সেটা অত্যন্ত বাস্তবোচিত। ডলার সংকট সহসা কাটবে, এমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং সংকট প্রলম্বিত হতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ চলমান বিদ্যুৎ সংকটকে সাময়িক বলে অভিহিত করেছেন। ‘শতভাগ বিদ্যুতায়ন এবং অতঃপর’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, গ্যাস আসছে, কয়লা আসছে, বিদ্যুৎও ঠিক হবে। ওই বৈঠকেই বক্তাদের কেউ কেউ দেশের গ্যাস কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সাবেক সদস্য (গ্যাস) মো. মকবুল ই-ইলাহী চৌধুরীর বক্তব্য প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়। তিনি বলেছেন, আমাদের দেশের ভেতরে যে গ্যাস উৎসগুলো রয়েছে, সেগুলোকে যদি আমরা কাজে লাগাতে পারি, তাহলে প্রতিটি গ্যাস ক্ষেত্র থেকে যে জ্বালানি উত্তোলন হবে তাতে সব মিলিয়ে একটা লম্বা সময় আমাদের জ্বালানি নিয়ে চিন্তায় থাকতে হবে না। বলা বাহুল্য, জ্বালানি নিরাপত্তা জাতীয় নিরাপত্তারই অংশ। এ নিরাপত্তা দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই হওয়া জরুরি। চলতি অভিজ্ঞতার নিরিখেই বলা যায়, স্থায়ী ও টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তার নিশ্চয়তায় আমাদের নিজস্ব সম্পদের ওপরই নির্ভর করতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে উদ্যোগ নিতে হবে। ভোলায় যে গ্যাস পাওয়া গেছে, সেটা পরিমাণে অনেক বেশি। তা দ্রুত কাজে লাগানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভোলার গ্যাস এলএনজিতে রূপান্তর করে তার বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। জাতীয় নীতির প্রশ্নে পারমাণবিক ও নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। তেল, গ্যাস, কয়লা প্রভৃতি খনিজ সম্পদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ব্যাপক এবং তা অফুরন্ত নয়। কাজেই, পরিবেশ-বন্ধব উৎস থেকে বিদ্যুৎ-জ্বালানি নিশ্চিত করার পথেই হাঁটতে হবে। বিশ্বের বহুদেশ সে পথেই হাঁটছে। আমরা পিছিয়ে থাকতে পারি না।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল
‘স্পেন্ড অ্যান্ড উইন’ ক্যাম্পেইনের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে মাস্টারকার্ড
সিটি ব্যাংক আনল অভূতপূর্ব ভিসা ইনফিনিট ক্রেডিট কার্ড
শেখ হাসিনার কোনো ক্ষমা নেই, জবাব তাকে দিতেই হবে : মির্জা ফখরুল
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে