রাজনৈতিক সমাবেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে হবে
২৫ জুলাই ২০২৩, ০৮:০৪ পিএম | আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৩, ১২:০৪ এএম
বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠণের এক দফা দাবি আদায়ে সিরিজ কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় রাজপথের মাঠের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি ২৭ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে। গত ১২ জুলাই ঢাকার নয়া পল্টনে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় সমাবেশ থেকে এবং ৩৬টি রাজনৈতিক দল যুগপৎভাবে ১ দফা কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিএনপি ১৮ ও ১৯ জুলাই শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা এবং ২২ জুলাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের তারুণ্যের সমাবেশে ব্যাপক জনসমাগম করে শান্তিপূর্ণভাবে সফল করতে সক্ষম হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা মহাসমাবেশ বিএনপি’র অন্যতম বৃহৎ কর্মসূচি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা ঢাকা সফরের সময় গত ১২ জুলাই সমাবেশের দিন বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর যুগপৎ কর্মসূচির দিন আওয়ামী লীগ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশ করে। এ নিয়ে অনেক আশঙ্কার কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত উভয় সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হওয়ায় তা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়। তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি’র শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের কর্মীদের হামলার ঘটনা অগ্রাহ্য করা যায়না। হামলা ও সংঘাতে বিএনপি’র দুই কর্মীর মৃত্যু এবং শতাধিক আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে, যা দেশের রাজনৈতিক সংঘাতের পুরনো দৃশ্যপটের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।
গত ২২ জুলাই তারুণ্যের সমাবেশ থেকে ২৭ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করার প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের কয়েকটি অঙ্গ সংগঠনের পূর্ব নির্ধারিত ২৪ জুলাইয়ের তারুণ্যের জয়যাত্রা কর্মসূচির তারিখ পিছিয়ে ২৭ জুলাই আরো বড় পরিসরে শান্তি সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিরোধীদলের কর্মসূচির দিন ক্ষমতাসীন দলের কর্মসূচি ঘোষণার বিষয়টি সাধারণ মানুষসহ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা ভালোভাবে নিচ্ছে না। তারা একে ‘পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া’ করার প্রবণতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। পর্যবেক্ষকরা বলছে, ক্ষমতাসীন দল বিরোধীদলের কর্মসূচির আগে বা পরে কর্মসূচি পালন করতে পারে। এতে সংঘাতের কোনো শঙ্কা থাকে না। বিরোধীদলের কর্মসূচির দিনই ক্ষমতাসীন দলের কর্মসূচি পালন এক ধরনের প্রতিক্রিয়াশীল মনোভাবের বিহঃপ্রকাশ। এতে সংঘাত এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠবে। নির্বাচনের আরো ৫ মাস বাকি। সংকট নিরসনে আলোচনা ও সমঝোতার সুযোগ এখনো শেষ হয়ে যায়নি। রাজপথে সংঘাত-সহিংসতা সৃষ্টি করে প্রাণহানি বা রক্তারক্তি ঘটনার জন্ম হলে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সংকট নিরসনের সম্ভাবনা হয়তো আর থাকবে না। এ ধরণের পরিস্থিতি কারোই কাম্য নয়। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলকে শান্তি বজায় রাখতে ধৈর্যশীল ও সহনশীল ভূমিকা পালনের বিকল্প নেই। বিরোধীদলের ঘোষিত মহাসমাবেশের দিন পাল্টা কর্মসূচি দেয়াকে বিরোধীদল উস্কানিমূলক এবং সংঘাত সৃষ্টির পাঁয়তারা হিসেবে দেখছে। যদিও ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, সংঘাতে সৃষ্টি হবে না। তারপরও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা ক্ষমতাসীন দলের কর্মসূচি বিরোধীদলের কর্মসূচির দিনে পালন করা নিয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারছে না। উন্নত দেশের রাজপথেও দিনের পর দিন হাজার হাজার মানুষের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়। সেখানে শান্তি ও জননিরাপত্তা বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষ ও শক্ত ভূমিকা পালন করলেও একই সময়ে সরকার সমর্থকদের পাল্টা কর্মসূচির নজির দেখা যায় না।
বিভিন্ন স্থানে বিএনপি’ র শান্তিপূর্ণ পদযাত্রার সময় আওয়ামী লীগ কর্মী ও পুলিশের হামলায় কয়েকজনের মৃত্যু ও অনেকের আহত হওয়ার ঘটনা অস্বাভাবিক ও অনাকাক্সিক্ষত। আওয়ামীলীগ পাল্টা কর্মসূচির ঘোষণা না দিলে এ ধরণের সংঘাত ও রক্তক্ষয় হত না। পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে জনমনে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করা কোনো গণতান্ত্রিক সমাজে অপ্রত্যাশিত ও অগ্রহণযোগ্য। এক্ষেত্রে, সরকারের দায়িত্ব বেশি। তাকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হয়। তা না করে, উল্টো উস্কানিমূলক কর্মসূচি দিলে সংঘাতের শঙ্কা প্রবল হয়ে উঠে। দেশের প্রাচীনতম ও দক্ষ দল হিসেবে আওয়ামী লীগের মতো দলের কাছ থেকে এমন অসহনশীল আচরণ কাম্য নয়। বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি ইতিমধ্যেই বিশ্বসম্প্রদায়ের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সরকারের উপর নানামুখী চাপ এবং সরকারি সংস্থার উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা দেশের ভাবমর্যাদার জন্য হানিকর। দীর্ঘ মেয়াদে দেশের বাণিজ্য ও অর্থনীতির উপরও এর বিরূপ প্রভাব পড়তে বাধ্য। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের প্রশ্নে সব রাজনৈতিক দল তথা জাতীয় ঐক্যমত্য একটি ঐতিহাসিক বাস্তবতা। এর ধরণ ও রূপরেখা নিয়ে রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে মতবিরোধ থাকতে পারে। পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে সংঘাত-সহিংসতা সৃষ্টি করে বা উত্তেজনা বাড়িয়ে এ সমস্যার সমাধান অসম্ভব নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আকাক্সক্ষা ও প্রত্যাশাকে ক্ষমতার জোরে দাবিয়ে রাখার যেকোনো প্রয়াস গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। এ মুহূর্তে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোর ঢাকা সফর করছেন। বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট এবং মানবাধিকার পরিস্থিতির উপর জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে। এক দফা দাবির সমর্থনে ২৭ জুলাই বিএনপি’র মহাসমাবেশ এবং বিরোধীদলগুলোর যুগপৎ সমাবেশের দিকে আন্তর্জাতিক মহলের তীক্ষè নজরদারি থাকা স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে সরকারি দলের পাল্টা কর্মসূচি ও পুলিশের গায়েবি মামলা ও হামলার ঘটনা বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নের প্রত্যাশাকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারে। ফলে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনদল ও বিরোধীদলগুলোকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। ক্ষমতাসীন দলের উচিত বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে সহায়তা করা কিংবা উস্কানিমূলক কোনো কর্মসূচি না দেয়া। অন্যদিকে, বিরোধী দলের উচিত নিজের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ করতে সর্বাত্মক প্রয়াস চালানো। উভয়কেই রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। সংঘাত-সহিংসতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সিরিয়ার আকাশে নিষিদ্ধ হলো ইরানের বিমান
বিমানে ‘ঘুমিয়ে’ ছিলেন বাইডেন : সেনাদের লাশ পেতে অপেক্ষায় স্বজনরা
ভারতে পণ আইন নিয়ে বিতর্ক, এক ব্যক্তির আত্মহত্যা ঘিরে আলোড়ন
ভারত সীমান্তের শূন্যরেখায় পড়ে ছিল বাংলাদেশির গুলিবিদ্ধ লাশ
এক্সপ্রেসওয়েতে কভার্ডভ্যান ও প্রাইভেটকার সংঘর্ষে নারী নিহত, আহত ৫
ব্রাজিলে বাড়ির ওপর বিমান বিধ্বস্ত, সব যাত্রী নিহত
চুয়াডাঙ্গার রামদিয়ায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে একজনকে হত্যা, আহত ৫
চীনের নতুন বাঁধ প্রকল্পে তিব্বতিদের প্রতিবাদ, দমন-পীড়ন ও গ্রেফতার
গাজীপুরে চাঁদা তোলাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় যুবকের মৃত্যু
সউদীতে এক সপ্তাহে ২০ হাজারের বেশি প্রবাসী গ্রেপ্তার
শহীদ মিনারে ছাত্র আন্দোলনে নিহত আরাফাতের জানাজা বিকালে
নিউইয়র্ক সাবওয়েতে নারীকে পুড়িয়ে হত্যা
ঘনকুয়াশার কারণে ৭ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ৫০
আওয়ামী পন্থী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুক্তরাজ্য শাখা বিএনপি নেতার মতবিনিময়
পরিসংখ্যান ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক শরিফুলের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ
আ.লীগের দোসর সালাম আলী এখন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী!
ঘুস নেওয়ার অভিযোগ, টিউলিপ সিদ্দিককে যুক্তরাজ্যে জিজ্ঞাসাবাদ
তালাক নিয়ে যুক্তরাজ্যে যেতে চান বাশার আল-আসাদের স্ত্রী
গভীর রাতে মেসে ছাত্রীদের বিক্ষোভ, মালিকের দুই ছেলেকে পুলিশে সোপর্দ