পুলিশের বাড়াবাড়ি ও এক কিশোরীর মর্মান্তিক মৃত্যু
২৬ জুলাই ২০২৩, ০৯:২৪ পিএম | আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৩, ১২:০৭ এএম
আধুনিক সভ্যতা ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় পুলিশ জনগণের বন্ধু। পুলিশের নিরপেক্ষ জনবান্ধব ভ’মিকা ছাড়া গণতান্ত্রিক সরকার, রাষ্ট্রব্যবস্থা ও সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। আমাদের পুলিশ বাহিনীও জনবান্ধব বা জনগণের বন্ধু দাবি করে কিংবা হয়ে উঠতে চায়। সামগ্রিকভাবে পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা বাহিনীগুলোকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। আমাদের সংবিধানের সংরিক্ষত নাগরিক অধিকার ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করাই পুলিশের মূল দায়িত্ব। পেশাগত দায়িত্ব ও সেবার মনোভাব থেকে এক শ্রেণীর পুলিশ সদস্য দূরে সরে গিয়ে নানা রকম দুর্নীতি ও দুস্কর্মে লিপ্ত হওয়ার কারণে সমাজে এক ধরণের বিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে। দায়িত্ব পালনের নামে গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে পুলিশ সদস্যরা। পুলিশ ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় দাগি আসামিসহ রাঘব-বোয়াল অপরাধীরা সমাজে দাপিয়ে বেড়ালেও তাদের ধলে আইনের আওতায় আনা হয়না। অন্যদিকে সাধারন মানুষের মধ্যে সন্দেহভাজন অভিযুক্ত কিংবা মিথ্যা মামলার আসামী অনেকেই পুলিশ হেফাজতে ভয়ঙ্কর নির্যাতন ও নানামাত্রিক হয়রানির শিকার হয়। মাদক চোরাচালানের আন্তর্জাতিক রুট কিংবা রাঘব-বোয়াল মাদক ব্যবসায়ীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও মাঠ পর্যায়ের ক্রেতা-বিক্রেতা চক্রের সাথে পুলিশের ইঁদুর-বিড়াল খেলা ও নিয়মিত মাসোহারা আদায়ের অভিযোগ অনেক পুরনো। রাজধানীর পল্লবীতে মাদক মামলায় অভিযুক্ত এক নারীর বাড়িতে অভিযানের নামে এক মর্মান্তিক মৃত্যুর জন্ম দিয়েছে স্থানীয় পুলিশ সদস্যরা।
গতকাল ইনকিলাবসহ প্রায় সবগুলো দৈনিকে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, সোমবার রাতে রাজধানীর পল্লবী থানাধীন আদর্শ নগরের এক বাড়িতে পল্লবী থানা পুলিশের কয়েকজন এসআই স্থানীয় সোর্সদের নিয়ে অভিযুক্ত জনৈকা লাভলী বেগমকে তার বাড়ি থেকে তুলে আনতে গেলে তার মেয়ে বৈশাখী বেগম বাঁধা দেয়। জোরপূর্বক তুলে আনতে গিয়ে লাভলী বেগমের পরিধেয় বস্ত্র ছিন্ন করারও অভিযোগ উঠেছে। মেয়ের সামনে মায়ের অপমান ও জবরদস্তিতে বিক্ষুব্ধ মেয়েকে টেনে হেঁচড়ে একটি কক্ষে আটকে রেখে বাইরে থেকে তালা মেরে দেয় পুলিশ। তার মাকে ছেড়ে না দিলে মেয়েটি আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছিল। তাতে পুলিশ সদস্যদের মনে কোনো প্রভাব সৃষ্টি হয়নি। তারা লাভলী বেগমের কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করেছিল বলে জানা যায়। লাভলী বেগম এক সময় মাদক ব্যবসা করলেও গত বছর মামলা খাওয়ার পর থেকে আর এ ব্যবসা করেনা বলে জানিয়েছে তার পরিবারের সদস্যরা। টাকা দিতে অস্বীকার করায় তাকে টেনে হিঁচড়ে নিচে নামানোর সময় মেয়ে বৈশাখী বেগম তালাবদ্ধ কক্ষে ফ্যানের সাথে ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলে আত্মহত্যা করে। চারতলা থেকে ওড়না এনে জানালা দিয়ে মেয়েটির হাতে দিয়ে পুলিশ সদস্যরা বৈশাখীকে আত্মহত্যায় সহায়তা করেছে বলে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা যায়। পুলিশ সদস্যরাই গলাটিপে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছে, এমন অভিযোগও করেছেন পরিবার ও প্রতিবেশীদের কেউ কেউ।
মাদক মামলার আসামি ধরার নামে মোটা অংকের অর্থ আদায় করতে গিয়ে খোদ রাজধানীতে সাদা পোশাকের পুলিশের হাতে মা ও মেয়ের অপমান-লাঞ্ছনা ও মেয়ের আত্মহত্যার ঘটনা থেকে পুলিশ বাহিনীর মাঠ পর্যায়ের অপরাধ প্রবণ সদস্যদের আচরণের একটি চিত্র উন্মোচিত হল। পুলিশের অভিযানের নামে আটক ও জিম্মি করে অর্থ আদায়ের খবর গণমাধ্যমে প্রায়শ উঠে আসে। সংঘবদ্ধ প্রতারক ও অপরাধিচক্রও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে অর্থ আদায়ের ঘটনারও অনেক নজির রয়েছে। এক পর্যায়ে পুলিশের সাদা পোশাকে অভিযান নিষিদ্ধ করে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক শ্রেণীর সদস্য আইন আদালতকে থোড়াই কেয়ার করছে। পুলিশের কাজ নাগরিকদের জান-মালের নিরাপত্তা বিধান করা এবং মামলায় অভিযুক্তকে সমন করে আদালতে বিচারের সম্মুখীন করা। আমাদের পুলিশ বাহিনী অভিযুক্ত ও অপরাধিদের সাথে গোপন অবৈধ লেনদেনে লিপ্ত হয়ে প্রকারান্তরে মাদকসহ বিভিন্ন ধরণের অপরাধ অব্যাহত রাখতে সহায়ক ভ’মিকা পালন করছে। পুলিশি অভিযানের সময়, থানায় হেফাজতে অকথ্য নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তসাপেক্ষে অপরাধিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হলে এ ধরণের অপরাধ কমে আসতে পারে। রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় চুরির মামলার আসামী থানা হাজতে আত্মহত্যা কিংবা বনানীতে বিউটি পার্লারে অভিযান চালানোর সময় ছাদ থেকে লাফ দিয়ে তরুণীর আত্মহত্যার ঘটনাও খুব বেশিদিন আগের নয়। সারাদেশে বের্শিরভাগ থানায় পুলিশের এমন বাড়াবাড়ি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অসংখ্য নজির খুঁজে পাওয়া যায়। মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দেশের নাগরিক সমাজের পাশাপাশি উন্নয়ন সহযোগী ও পশ্চিমা বিশ্বের চাপে রয়েছে সরকার। পল্লবীতে পুলিশের হাতে কিংবা প্ররোচনায় কিশোরীর মৃত্যু ও নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং আইনের শাসনের প্রয়োজনে পুলিশের অপরাধসমুহ সম্পর্কে পুলিশ বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
স্লোভাক প্রধানমন্ত্রীর মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক
কুমিল্লায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ৩ কিশোর নিহত
গাজীপুরে কারখানা থেকে দগ্ধ আরও এক লাশ উদ্ধার
সিরিয়ার আকাশে নিষিদ্ধ হলো ইরানের বিমান
বিমানে ‘ঘুমিয়ে’ ছিলেন বাইডেন : সেনাদের লাশ পেতে অপেক্ষায় স্বজনরা
ভারতে পণ আইন নিয়ে বিতর্ক, এক ব্যক্তির আত্মহত্যা ঘিরে আলোড়ন
ভারত সীমান্তের শূন্যরেখায় পড়ে ছিল বাংলাদেশির গুলিবিদ্ধ লাশ
এক্সপ্রেসওয়েতে কভার্ডভ্যান ও প্রাইভেটকার সংঘর্ষে নারী নিহত, আহত ৫
ব্রাজিলে বাড়ির ওপর বিমান বিধ্বস্ত, সব যাত্রী নিহত
চুয়াডাঙ্গার রামদিয়ায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে একজনকে হত্যা, আহত ৫
চীনের নতুন বাঁধ প্রকল্পে তিব্বতিদের প্রতিবাদ, দমন-পীড়ন ও গ্রেফতার
গাজীপুরে চাঁদা তোলাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় যুবকের মৃত্যু
সউদীতে এক সপ্তাহে ২০ হাজারের বেশি প্রবাসী গ্রেপ্তার
শহীদ মিনারে ছাত্র আন্দোলনে নিহত আরাফাতের জানাজা বিকালে
নিউইয়র্ক সাবওয়েতে নারীকে পুড়িয়ে হত্যা
ঘনকুয়াশার কারণে ৭ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ৫০
আওয়ামী পন্থী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুক্তরাজ্য শাখা বিএনপি নেতার মতবিনিময়
পরিসংখ্যান ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক শরিফুলের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ
আ.লীগের দোসর সালাম আলী এখন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী!