দেশের স্বাস্থ্যসেবার অবস্থা নাজুক
২৮ জুলাই ২০২৩, ০৮:২৯ পিএম | আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম
দেশের স্বাস্থ্য খাতের হাল ভালো নয়, করোনা মহামারির সময়ে তা প্রমাণিত হয়েছে। বর্তমানে ডেঙ্গুর প্রকোপেও তা প্রমাণিত হচ্ছে। এ বছরের ডেঙ্গুতে দেশের রোগীর ভোগান্তি ও মৃত্যুহার বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক। হু বলেছে, এ বছর বিশ্বের অর্ধেক মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই দেশে ডেঙ্গু মহামারির আশংকায় আতংক সৃষ্টি হয়েছে। মশক নিধনে ব্যর্থতার কারণেই এ অবস্থা হয়েছে! বাংলাদেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের লোকরা পর্যন্ত! দেশে স্বাস্থ্যসেবা ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত পৌঁছেছে। অবকাঠামোও ভালো। কিন্তু সেবা অত্যন্ত খারাপ। সরকারি বরাদ্দ নগন্য। জনবল ও মেশিনারিজের ঘাটতি অনেক। পরিবেশও প্রতিকূল। অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, অপচয়, দায়িত্বহীনতা, অপরিচ্ছন্নতা, নিরাপত্তাহীনতা ব্যাপক। এসব সরকারি পর্যায়েই বেশি। গ্রাম ও শহরের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবার বৈষম্য ব্যাপক। দেশে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যা আছে তা রাজধানীভিত্তিক। জটিল ব্যাধির চিকিৎসার সুযোগ তেমন নেই রাজধানীর বাইরে। সার্বিকভাবে দেশের স্বাস্থ্যসেবার দুরাবস্থা চরমে। প্রাথমিকভাবে হেলথ আইডি ও মডেল ফার্মেসি চালু করা হয়েছে। এসব উদ্যোগ ভালো হলেও সম্প্রসারণ হয়নি! কমিউনিটি ক্লিনিক বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে। কিন্তু ভালভাবে পরিচালনার অভাবে সুফল কম। গত ৩০ মার্চ থেকে বিকেলে সরকারি হাসপাতালে ডাক্তারদের চেম্বার করার অনুমতি ও ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এটা ভালো সিদ্ধান্ত। দেশের চিকিৎসা ব্যয় অত্যধিক। মানেও প্রশ্ন আছে। ভুল চিকিৎসায় নতুন ব্যাধি সৃষ্টি ও মৃত্যুর ঘটনাও অনেক। কিন্তু এর ক্ষতিপূরণ পায় না কেউই। বেসরকারি হাসপাতালে অপ্রয়োজনে আইসিইউতে নেওয়া, রাখা ও লাশ আটকিয়ে বিল আদায়ের মতো অপকর্ম প্রায়ই ঘটে। স্বাস্থ্য খাতের লোকরা যখন তখন ধর্মঘট করে মানুষকে জিম্মি করে ফেলে! রাজনৈতিক দলাদলির কারণেও স্বাস্থ্য খাতের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তাই ধনীরা চিকিৎসা করায় বিদেশে, যাদের সংখ্যা বছরে গড়ে পাঁচ লাখ। তাতে বছরে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে, যার অধিকাংশই ভারতে। যাদের সামর্থ্য নেই, তাদের একটি অংশ দেশেই চিকিৎসা করায়। ব্যয়ের সিংহভাগ যায় নিজ পকেট থেকে, যা বহন করতে গিয়ে বছরে লাখ লাখ মানুষ দরিদ্র হচ্ছে। তাই দেশের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ বিনা চিকিৎসায় থাকছে। অনেকেই হোমিও, আয়ুর্বেদী, কবিরাজী, পানি পড়া, ঝাড়-ফুঁকের দ্বারস্থ হচ্ছে। এ ব্যাপারে কিছু তথ্য উপস্থাপন করা হলেই বিষয়টি প্রমাণিত হবে।
হু’র নিয়ম হচ্ছে: ডাক্তার ও জনসংখ্যার অনুপাত ১ঃ১০০০, নার্স ও পেশেন্ট সংখ্যার অনুপাত ১ঃ৩, টিচিং ও হসপিটাল সংখ্যার অনুপাত ১ঃ৫, জেনালের হসপিটালে ডাক্তার ও নার্স অনুপাত ১ঃ৩, নার্স ও বেড সংখ্যার অনুপাত ১ঃ৪, ডাক্তার ও স্টাফ অনুপাত ১ঃ৫। কিন্তু বাংলাদেশ এসবের ধারে কাছেও নেই। দেশে বর্তমানে লোক সংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। নিবন্ধিত চিকিৎসকের সংখ্যা ১.২০ লাখ (সরকারি ৩৪ হাজার)। নার্সের সংখ্যা ৮৪ হাজার (সরকারি ৪৪ হাজার)। স্টাফের ঘাটতি অনেক। সরকারি হাসপাতালের সংখ্যা ৬৫৪টি, যার মোট শয্যা সংখ্যা ৫১,৩১৬টি। বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা ৫০৫৫টি, যার শয্যা সংখ্যা ১,০৫,১৮৩টি। সরকারি হাসপাতালে যন্ত্রপাতির ঘাটতি অনেক। যা আছে, তার অনেকগুলো নষ্ট, ভালো থাকলে চালক নেই অনেক ক্ষেত্রে। এছাড়া, স্বাস্থ্যখাতে সরকারি বরাদ্দ নগন্য। জটিল ব্যাধির চিকিৎসা খুব কম হয় দেশে। এসকাপের ২০১৮ সালের প্রতিবেদন মতে, ‘জিডিপি’র বিচারে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৫২টি দেশের মধ্যে স্বাস্থ্যখাতে সবচেয়ে কম বরাদ্দ দেয়া হয় বাংলাদেশে। উপরন্তু বরাদ্দের যতটা না চিকিৎসায় খরচ হয়, তার চেয়ে বেশি খরচ হয় ভৌত অবকাঠামো, প্রশিক্ষণ ও বেতন-ভাতায়। অপরদিকে, বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তাও সম্পূর্ণ খরচ হয় না। ফেরত যায় অনেক টাকা। গত জানুয়ারিতে প্রকাশিত সরকারি স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রতিবেদন মতে, বাংলাদেশে চিকিৎসা সেবায় ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় ২০২০ সালে দাঁড়িয়েছে ৬৯% (সার্কভুক্ত দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ), বাকীটা সরকার ও দাতাদের। হুর মতে, স্বাস্থ্যসেবায় রোগীর ব্যক্তিব্যয়ের বৈশ্বিক গড় ৩২%। আইকিউভিআই এর তথ্য মতে, স্বাস্থ্যসেবায় ওষুধের ব্যয় বাংলাদেশে ৪৪% (বিশ্বে সর্বোচ্চ), যার বৈশ্বিক গড় ১৫%। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনের ওষুধের ৯৩% রোগীর কিনতে হয়। গত ৭ এপ্রিল ডক্টরস প্ল্যাটফরম ফর পিপলস হেলথের সদস্য সচিব বলেছেন, চিকিৎসাব্যয় মিটাতে গিয়ে বছরে ৬৪ লাখ মানুষ দরিদ্র হচ্ছে। তাই বেশিরভাগ মানুষ চিকিৎসার বাইরেই থাকছে। বিশ্ব ব্যাংকের রিপোর্ট-২০২১ মতে, বাংলাদেশের ২৬% মানুষ স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা পায়, ১৩% মানুষ ফার্মেসি ও ১% মানুষ অন্যান্য মাধ্যমে চিকিৎসা নেয়, ৬০% মানুষ চিকিৎসা সেবা নেয় না। তবুও দেশে চিকিৎসা ব্যয় বেড়েই চলেছে। ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ সম্প্রতি বলেছেন, হু হু করে বাড়ছে চিকিৎসা ব্যয়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য স্বাস্থ্যসেবায় ব্যক্তিগত ব্যয় সর্বোচ্চ ৩০% হওয়া দরকার।
স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় অত্যধিক হওয়ার কারণ: বেশিরভাগ ডাক্তারের অতিরিক্ত অপ্রয়োজনীয় ওষুধ ও টেস্ট করার পরামর্শ দেয়া। অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই মাহবুব সম্প্রতি বলেছেন, দেশে ওষুধের দাম একটু বেশি, ডাক্তাররা ওষুধও লেখেন বেশি। এতে ওষুধের অপপ্রয়োগ বেশি হচ্ছে। এ ব্যাপারে সঠিক নীতিমালা নেই, তদারকিও নেই। ওষুধ ও টেস্ট বেশি লেখার ক্ষেত্রে অনেকের ওষুধ কোম্পানি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে যোগসাজস রয়েছে। সরকারি হাসপাতালের রোগী ভাগিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়ার অভিযোগও অনেক। প্রেসক্রিপসন ছাড়া ওষুধ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ফার্মেসিগুলো তা মানে না। স্পষ্ট অক্ষরে প্রেসক্রিপশন লেখার নির্দেশ থাকলেও তা পালিত হচ্ছে না। লাইসেন্সহীন ক্লিনিক, হাসপাতাল, ডায়াগনিক সেন্টার, ফার্মেসি, নকল, ভেজাল ও মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি এবং অধিক মূল্য আদায় ব্যাপক চলছে। এতে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবুও এসবের তদারকি নেই তেমন।
সরকারি হাসপাতালে অব্যবস্থাপনা চরমে! সম্প্রতি মধ্যবেলায় সরকারি এক বড় হাসপাতালে গিয়েছিলাম এক রোগীর সাথে। দেখলাম, প্রচন্ড ভীড়। তিল ধারণের ঠাঁই নেই কোথাও। রোগীর চেয়ে সঙ্গীর সংখ্যা ২-৩ গুণ বেশি। মূল গেইট থেকে শুরু করে ফ্লোর এবং ডাক্তারের রুম ও বিভিন্ন কেন্দ্রের কোথাও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। দলে দলে মানুষ ইচ্ছামাফিক ঢুকছে, বের হচ্ছে। তাই প্রতিটি স্তরেই প্রচন্ড ভীড়, ঠেলাঠেলি, ঝগড়া, ধাক্কাধাক্কি, মারামারি, রোগীর ট্রলি নিয়ে টানাটানি ইত্যাদি! শিশুদের কান্নাকাটি, দৌড়-ঝাঁপ ব্যাপক। নার্স ছাড়া ডাক্তার ও স্টাফের নির্ধারিত ইউনিফরম ব্যবহার চোখে পড়েনি। ফলে কে ডাক্তার, কে স্টাফ, কে রোগী চেনার উপায় নেই। সকলেই একাকার। ডাক্তার রোগী দেখার সময় হুট করে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা ওষুধ ও উপহার নিয়ে ঢুকে পড়ছে বিনা অনুমতিতেই! আউট সোর্সিংয়ের স্টাফদের দৌরাত্ম্য বেশি। পরিচ্ছন্নতা ও বাথরুমের অবস্থা শোচনীয়! অর্থাৎ সেখানে চরম অস্বাভাবিক ও অস্বাস্থ্যকর অবস্থা বিরাজ করছে। পরিচালনায় কর্তৃপক্ষের অদক্ষতা কিংবা দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণেই এসব হচ্ছে। অনুমেয় সরকারি সব হাসপাতালেরই অবস্থা কম-বেশি এ রকমই। অবশ্য, এর আগে বেসরকারি বড় হাসপাতালে গিয়েছি অনেকবার। সেখানে অব্যবস্থাপনা তেমন চোখে পড়েনি। কর্তৃপক্ষ সমগ্র কার্যক্রম সিসি ক্যামেরাতে দেখে প্রতিটি অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে দ্রুত। তবে, সেখানে ব্যয় অত্যধিক! কয়েকটি দেশ বাংলাদেশে বিশ্বমানের হাসপাতাল করার প্রস্তাব দিয়েছে। সেটা অনুমোদন দেওয়া হলে দেশের হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যয় কমবে, সেবা বাড়বে।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত নিয়ে দেশি-বিদেশি প্রখ্যাত কিছু গবেষকের সাম্প্রতিক কিছু গবেষণার রেজাল্ট হচ্ছে: শব্দ দূষণের কারণে রাজধানীর ব্যস্ত সড়কে দায়িত্বপালনকারী ট্রাফিক পুলিশের ৬৪% শ্রবণ সমস্যায় ভুগছে। উচ্চতায় যে দেশের মানুষেরা এগিয়ে, তাদের তুলনায় বাংলাদেশসহ চারটি দেশের ৫-১৯ বছর বয়সী মেয়েরা নি¤œমানের পুষ্টির কারণে সাত ইঞ্চির বেশি উচ্চতা হারাচ্ছে। ১৮.৫% প্রাপ্তবয়স্ক এবং ১৩% শিশু-কিশোরের মানসিক স্বাস্থ্যসমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে ৯২% মানুষই কোনো ধরনের সেবা নেয় না চিকিৎসকের অভাবে। বিশ্বে মুখগহ্বরের ক্যান্সার শনাক্তের হারের দিক থেকে বাংলাদেশ দ্বিতীয় আর মৃত্যুর হারে শীর্ষে। কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডারদের অধিকাংশই সংক্রমণ প্রতিরোধ বিষয়ে জানে না। যারা জানে, তারা তা মানে না। ২০০০-০৪ সালের তুলনায় ২০১৭-২০২২ সময়কালে অতি তাপমাত্রার কারণে মৃত্যু বেড়েছে ১৪৮%। ৩.৫ কোটির বেশি শিশু শরীরে ক্ষতিকর সিসা রয়েছে। শিশু ও নারীদের মধ্যে অনুপুষ্টিকণার ঘাটতি রয়েছে অনেক। আট জেলার ভূগর্ভস্থ পানিতে ভারী ধাতু রয়েছে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। ৪১% মানুষ নিরাপদ পানির সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বাড়িতে নিরাপদ স্যানিটেশন সুবিধা পায় না ৬১%। বায়ুদূষণে বছরে প্রতি ১ লাখে ১৪৯ জন মারা যায়। করোনাকালে সেবা দেওয়া চিকিৎসকদের ২৮% অবসাদে রয়েছে। নবজাতকের জন্ম হয় ৫০% বাড়িতে, ১৪% সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে, ৩২% বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে এবং ৪% এনজিও’র প্রতিষ্ঠানে। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে জন্ম নেওয়া শিশুর অধিকাংশই হয় ব্যয় বহুল সিজারিয়ানে। মানুষের গড় আয়ু ৭৪.৩ বছর। তবে স্বাস্থ্যকর আয়ু ৬৪.৩ বছর। বৈশ্বিক হিউম্যান ক্যাপিটাল ইনডেক্স-২০২৩ মতে, ১৭৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১২৩তম। উপরন্তু খাদ্যে ভেজাল, পরিবেশ দূষণ, অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ, তামাক পণ্য, মাদক ইত্যাদির ব্যবহার ও দুর্ঘটনার হার ব্যাপক। ফলে নানা ব্যাধি বাড়ছে!
বাংলাদেশে মোট ৮৩টি মেডিকেল কলেজ রয়েছে (সরকারি ৩৭টি)। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আছে মাত্র ৫টি। দেশে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংকট তীব্র। দ্বিতীয়ত: সরকারি যে ৩৭টি মেডিকেল কলেজ আছে তন্মধ্যে ১৮টিতেই কোনো হাসপাতাল নেই। উপরন্তু নানা সমস্যাও প্রকট। তৃতীয়ত: দেশের মেডিকেল শিক্ষার কারিকুলাম সেকেলে। শিক্ষার মানও খারাপ! গবেষণাও হয় না তেমন। তাই বিশ্বে বাংলাদেশের মেডিকেল শিক্ষার মূল্যায়ন খুব কম। অথচ, বিশ্বে অনবরত নতুন নতুন ভয়ংকর ব্যাধি সৃষ্টি হচ্ছে। তৎপ্রেক্ষিতে নতুন ওষুধ আবিষ্কৃত হয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে। ৫জিসহ নানা প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে চিকিৎসা সেবায়। টেলি মেডিসিন চালু হয়েছে। সর্বশেষে চিকিৎসাসেবায় যুক্ত হয়েছে এআই চালিত রোবট। এসবের সাথে সমন্বয় করে মেডিকেল শিক্ষা আধুনিক করা হচ্ছে বহু দেশে। কিন্তু তার লেশমাত্র নেই বাংলাদেশে! অপরদিকে, দেশে প্রায় ৫০০ নার্সিং কলেজ ও ইনস্টিটিউট আছে। এর মধ্যে সরকারি প্রায় ১৫০টি। শিক্ষার মানও খারাপ। ইংরেজি ভাষায়ও অদক্ষ। তাই বিদেশে ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও যেতে পারছে না।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক তথ্য মতে, বর্তমানে দেশে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২৯৫টি অ্যালোপ্যাথিক, ২৮৪টি ইউনানি ও ২০৫টি আয়ুর্বেদিক, ৭১টি হোমিওপ্যাথিক ও ৩১টি হার্বাল। সব মিলে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার ওষুধ তৈরি হচ্ছে। তাই অভ্যন্তরীণ চাহিদার বেশিরভাগ পূরণ হয়ে ১৫০টি দেশে রফতানি হচ্ছে। এলডিসিভুক্ত দেশ হিসাবে পেটেন্ট সুবিধা পাওয়ায় এটা হয়েছে। তবে দেশে দামী ওষুধ উৎপাদনের হার খুব কম। তাই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।
সার্বিকভাবে দেশের স্বাস্থ্যখাতের অবস্থা খুবই নাজুক। গত ২৫ জুন জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় এমপিরা বলেছেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতি চলছে। প্রতি বছর বাজেটের টাকা ফেরতও যায়। অথচ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বেহাল, জনবল নেই, ডাক্তার নেই, নার্স নেই।’ ল্যানসেটের বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সূচক-২০১৮ মতে, ১৯৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৩৩তম। বর্তমানে উক্ত অবস্থানের তেমন উন্নতি হয়নি। কারণ, স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় জিডিপির শতকরা দুই অংকের ঘরেই ঘুরপাক খাচ্ছে! সম্প্রতি খবরে প্রকাশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের মানুষের মাথাপিছু স্বাস্থ্যব্যয় বেড়ে হয়েছে ৫৪ ডলার। কিন্তু স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়েনি। এসডিজি ২০৩০ এর অন্যতম হচ্ছে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসুরক্ষা। এটা অর্জনের জন্য স্বাস্থ্যসেবায় ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় সর্বোচ্চ ৩২% করতে হবে। সে জন্য স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দ বাড়িয়ে জিডিপির ৬% করা, হুর নিয়ম মোতাবেক ডাক্তার, নার্স, স্টাফ নিয়োগ এবং তাদের নিয়মি উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রদান, প্রয়োজনীয় মেশিনারিজ সরবরাহ এবং তা সার্বক্ষণিক সচল রাখা, মেডিকেল শিক্ষার সর্বাধুনিক ও মানোন্নয়ন, স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা দূর এবং রোগ প্রতিরোধের দিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। রোগ প্রতিরোধের অন্যতম হচ্ছে: সব ধরনের দূষণ, দুর্ঘটনা, নকল ও ভেজাল বন্ধ এবং অধিক বৃক্ষ রোপণ। হু’র মতে, স্বাস্থ্যখাতে ১ ডলার ব্যয় অর্থনীতিতে ২-৪ ডলার হয়ে ফিরে আসে। গ্লোবাল নিউট্রিশনের মতে, অপুষ্টি প্রতিরোধ করার জন্য প্রতি ১ মার্কিন ডলার বিনিয়োগে ১৬ মার্কিন ডলার উঠে আসে। এসব থিউরী দেশে যতই বাস্তবায়িত হবে ততই মঙ্গল।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
[email protected]
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিমানে ‘ঘুমিয়ে’ ছিলেন বাইডেন : সেনাদের লাশ পেতে অপেক্ষায় স্বজনরা
ভারতে পণ আইন নিয়ে বিতর্ক, এক ব্যক্তির আত্মহত্যা ঘিরে আলোড়ন
ভারত সীমান্তের শূন্যরেখায় পড়ে ছিল বাংলাদেশির গুলিবিদ্ধ লাশ
এক্সপ্রেসওয়েতে কভার্ডভ্যান ও প্রাইভেটকার সংঘর্ষে নারী নিহত, আহত ৫
ব্রাজিলে বাড়ির ওপর বিমান বিধ্বস্ত, সব যাত্রী নিহত
চুয়াডাঙ্গার রামদিয়ায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে একজনকে হত্যা, আহত ৫
চীনের নতুন বাঁধ প্রকল্পে তিব্বতিদের প্রতিবাদ,দমন-পীড়ন ও গ্রেফতার
গাজীপুরে চাঁদা তোলাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় যুবকের মৃত্যু
সউদীতে এক সপ্তাহে ২০ হাজারের বেশি প্রবাসী গ্রেপ্তার
শহীদ মিনারে ছাত্র আন্দোলনে নিহত আরাফাতের জানাজা বিকালে
নিউইয়র্ক সাবওয়েতে নারীকে পুড়িয়ে হত্যা
ঘনকুয়াশার কারণে ৭ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ৫০
আওয়ামী পন্থী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুক্তরাজ্য শাখা বিএনপি নেতার মতবিনিময়
পরিসংখ্যান ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক শরিফুলের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ
আ.লীগের দোসর সালাম আলী এখন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী!
ঘুস নেওয়ার অভিযোগ, টিউলিপ সিদ্দিককে যুক্তরাজ্যে জিজ্ঞাসাবাদ
তালাক নিয়ে যুক্তরাজ্যে যেতে চান বাশার আল-আসাদের স্ত্রী
গভীর রাতে মেসে ছাত্রীদের বিক্ষোভ, মালিকের দুই ছেলেকে পুলিশে সোপর্দ
প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস