সংঘাতময় পরিস্থিতি কাম্য নয়
৩০ জুলাই ২০২৩, ০৯:২০ পিএম | আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২৩, ১২:২২ এএম
গত শনিবার সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা দাবীতে রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশমুখে বিরোধীদল বিএনপি এবং তার সমমনা দলগুলোর অবস্থান কর্মসূচি ছিল। মাতুয়াইল, ধোলাইখাল, আমিনবাজার, উত্তরাসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে তারা অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে সংঘর্ষ বাঁধে। এসময় পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। যাত্রাবাড়ি-মাতুয়াইলসহ অন্য কয়েকটি জায়গায় বাসে আগুন ও যানবাহন ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। প্রায় সব জায়গায়ই কমবেশি সংঘর্ষ হয়। এ সময় বিএনপির ৯০ নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, রাজধানীর ধোলাইখালে অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় সূত্রাপুর থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলায় বিএনপির সাংগঠনিক স¤পাদক আব্দুস সালাম আজাদ ও ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ স¤পাদক অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীসহ ২৪ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে আরও ৩০০/৪০০ নেতাকর্মীকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে আব্দুস সালাম আজাদসহ পাঁচজন পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। নিপুণ রায়সহ ১৯ জনকে পলাতক দেখানো হয়েছে। সূত্রাপুর থানার এসআই নাসির উদ্দিন হাওলাদার বাদী হয়ে এ মামলা করেন। বিএনপি’র এ কর্মসূচি ও সংঘর্ষের ঘটনায় বিদেশি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও টেলিভিশনে প্রচার হয়েছে।
গত ২৮ জুলাই বিএনপি নয়াপল্টনে শান্তিপূর্ণভাবে মহাসমাবেশের আয়োজন করে। একই দিন আওয়ামী লীগের তিন অঙ্গসংগঠনও সমাবেশের আয়োজন করে। প্রায় এক-দেড় কিলোমিটারের ব্যবধানে দুটি সমাবেশকে ঘিরে নানা শঙ্কা থাকলেও উভয় দলের মধ্যে কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। এতে রাজনৈতিক অঙ্গণে কিছুটা স্বস্তি দেখা দেয়। তবে পরের দিন বিএনপি’র পরবর্তী অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, তা দুঃখজনক। এ নিয়ে পুলিশ এবং বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে চিরায়ত পারস্পরিক দোষারোপ করতে দেখা যায়। বিএনপি বলেছে, তার শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশ হামলা চালিয়ে টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও লাঠিপেটা করেছে। ধোলাইখালে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে সড়কে ফেলে পুলিশের লাঠিপেটা করার ভিডিও এবং তাকে পুলিশ হেফাজতে নেয়ার চিত্র বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। আমিন বাজারে বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমানের সাথে পুলিশের বাগবিতন্ডা করতে দেখা যায় এবং এক পর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে মাটিতে শুয়ে পড়লে তাকে পুলিশ তুলে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে। পুলিশ উভয় নেতাকে গ্রেফতার না দেখিয়ে ছেড়ে দেয়। লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, বিরোধীদলের কর্মসূচি পালনে পুলিশকে আগে যেরকম আক্রমণাত্মক ভূমিকায় দেখা যেত, এবার সেরকম দেখা যায়নি। কর্মসূচির শুরুতে মারমুখী দেখা গেলেও পরবর্তীতে পুলিশ সংযমী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। তবে পুলিশের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের লোকজনের বাড়াবাড়ি এবং আক্রমণাত্মক ভূমিকা দৃষ্টিকটু ছিল। বিরোধীদল তার রাজনৈতিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উপায়ে পালন করবে এবং তাতে কোনো ধরনের বাধা না দেয়া ক্ষমতাসীন দল ও পুলিশের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। রাষ্ট্রের পুলিশ ও প্রশাসনের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণই কাম্য। তারা কোনো দলের হয়ে কিংবা দলীয় বাহিনীর মতো আচরণ করবে না, এটাই স্বাভাবিক প্রত্যাশা। বিরোধীদলের কর্মসূচি পালনকালে কোনো ধরনের সংঘাত ও সংঘর্ষ যাতে না হয় এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে, তার জন্য আগে থেকেই পুলিশকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ, সতর্কতা অবলম্বন এবং সংযমের পরিচয় দিতে হয়। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতেও বিরোধীদলের কর্মসূচির ক্ষেত্রে পুলিশ পারত পক্ষে আক্রমণাত্মক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় না। বিরোধীদলেরও গণতান্ত্রিক অধিকার রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে দেখা যায়। সেখানে পারস্পরিক দোষারোপ করতে দেখা যায় না।
বিএনপি’র কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বাধা দেয়া ও সংঘর্ষ নিয়ে অন্যান্য বিরোধীদলগুলো নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, আসন্ন নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসবে বিরোধীদলগুলো তাদের দাবী আদায়ে আরও সোচ্চার হয়ে উঠবে। আন্দোলনের তীব্রতা বাড়াবে এবং সংঘাত ও সংঘর্ষ হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পাবে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে যথেষ্ট উদ্বেগ বিরাজ করা স্বাভাবিক। এমনিতেই সাধারণ মানুষ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক সংকটে চরম দুর্বিপাকে রয়েছে। তাদের ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ অবস্থার মধ্য দিয়ে দিন কাটছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত ও সংঘাতপূর্ণ হয়ে উঠলে তাদের দুর্দশার অন্ত থাকবে না। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট তীব্র হয়ে উঠলে দেশের পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা আন্দাজ করতে কষ্ট হয় না। এ প্রেক্ষিতে, রাজনৈতিক সমঝোতা জরুরি। এই সমঝোতার দায়িত্ব সরকারের। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারকে এ ব্যাপারে সদিচ্ছার পরিচয় দিতে হবে। পর্দার আড়ালে হোক কিংবা প্রকাশ্যে হোক, সমঝোতার উদ্যোগ নিতে হবে এবং চালিয়ে যেতে হবে। দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে ও সংঘাতময় পরিস্থিতি এড়াতে সব মহলের কাছে গ্রহণযোগ্য সমঝোতার বিকল্প নেই।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সিরিয়ার আকাশে নিষিদ্ধ হলো ইরানের বিমান
বিমানে ‘ঘুমিয়ে’ ছিলেন বাইডেন : সেনাদের লাশ পেতে অপেক্ষায় স্বজনরা
ভারতে পণ আইন নিয়ে বিতর্ক, এক ব্যক্তির আত্মহত্যা ঘিরে আলোড়ন
ভারত সীমান্তের শূন্যরেখায় পড়ে ছিল বাংলাদেশির গুলিবিদ্ধ লাশ
এক্সপ্রেসওয়েতে কভার্ডভ্যান ও প্রাইভেটকার সংঘর্ষে নারী নিহত, আহত ৫
ব্রাজিলে বাড়ির ওপর বিমান বিধ্বস্ত, সব যাত্রী নিহত
চুয়াডাঙ্গার রামদিয়ায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে একজনকে হত্যা, আহত ৫
চীনের নতুন বাঁধ প্রকল্পে তিব্বতিদের প্রতিবাদ, দমন-পীড়ন ও গ্রেফতার
গাজীপুরে চাঁদা তোলাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় যুবকের মৃত্যু
সউদীতে এক সপ্তাহে ২০ হাজারের বেশি প্রবাসী গ্রেপ্তার
শহীদ মিনারে ছাত্র আন্দোলনে নিহত আরাফাতের জানাজা বিকালে
নিউইয়র্ক সাবওয়েতে নারীকে পুড়িয়ে হত্যা
ঘনকুয়াশার কারণে ৭ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ৫০
আওয়ামী পন্থী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুক্তরাজ্য শাখা বিএনপি নেতার মতবিনিময়
পরিসংখ্যান ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক শরিফুলের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ
আ.লীগের দোসর সালাম আলী এখন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী!
ঘুস নেওয়ার অভিযোগ, টিউলিপ সিদ্দিককে যুক্তরাজ্যে জিজ্ঞাসাবাদ
তালাক নিয়ে যুক্তরাজ্যে যেতে চান বাশার আল-আসাদের স্ত্রী
গভীর রাতে মেসে ছাত্রীদের বিক্ষোভ, মালিকের দুই ছেলেকে পুলিশে সোপর্দ