ভারতে বিজেপির উগ্রহিন্দুত্ববাদের উত্থান এবং যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে ‘ইসলাম মহান ধর্ম’ বিল উত্থাপন
১৭ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৪৩ পিএম | আপডেট: ১৮ আগস্ট ২০২৩, ১২:০৮ এএম
পুনরায় ক্ষমতায় আসার জন্য ভারতের হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) যেন উতলা হয়ে উঠেছে। বিগত দুইটি নির্বাচনে দলটির বিজয়ের পেছনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে তার উগ্র হিন্দুত্ববাদী নীতি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বরাবরই এ নীতি কাজে লাগিয়েছেন। এ নীতির সারকথা হচ্ছে, ভারতকে যেকোনো উপায়ে একটি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করতে হবে। এখানে অন্যকোনো ধর্মের মানুষ থাকতে পারবে না। একমাত্র হিন্দুরাই দেশটিতে বসবাস করবে। এমন বার্তা তিনি তার বিগত দুই শাসনামলে ছড়িয়ে দিয়েছেন। এতে তার অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএস। বিশ্ব হিন্দু পরিষদসহ অন্যান্য উগ্র হিন্দুত্ববাদী নেতৃবৃন্দ। বেশিরভাগই মোদির এ নীতি অবলম্বন করে চলেছেন। বিজেপি রাজ্যগুলোতে মুসলমানদের ওপর বিগত এক দশক ধরে নানা ধরনের নিপীড়ন ও দমনমূলক প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। মুসলমানদের ভারতছাড়া করার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবেও বৈষম্যমূলক নাগরিকত্ব আইন এনআরসি প্রণয়নসহ নানা আইন করা হয়েছে। কাশ্মীরে মুসলমানদের ওপর চালানো হচ্ছে নির্মম নির্যাতন। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, একটি দল বা নেতার ক্ষমতায় থাকা এবং পুনরায় আসার জন্য রাষ্ট্রের একটি জাতিকে নির্মূলের এমন নিকৃষ্টতম প্রক্রিয়া বিশ্বে বিরল। ভারতের যে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি, তা সমূলে উচ্ছেদ করতে মোদি সরকার দ্বিধা করছে না। বিজেপি’র এ নীতির সঙ্গে ভারতের সাধারণ হিন্দু কিংবা সচেতন শ্রেণীর কতটা সমর্থন রয়েছে, তার হিসাব করা হচ্ছে না। ফলে বিজেপি তার পুরনো অস্ত্র উগ্রহিন্দুত্ববাদকে কাজে লাগাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। কারণ, আগামী নির্বাচনে মোদির ক্ষমতায় আসার ক্ষেত্রে নতুন করে চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে সোনিয়া ও রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে গঠিত ‘ইন্ডিয়া জোট’। এর সাথে পশ্চিমবঙ্গের মমতা ব্যানার্জীর তৃণমূল কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধীদল যুক্ত হয়েছে। ফলে মোদির জন্য তা ভয়ের কারণ হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে সংসদে তার ওপর অনাস্থা প্রস্তাব একটি প্রাথমিক ধাক্কা হিসেবে কাজ করেছে। তার চেয়ে বড় কথা, ইতোমধ্যে বিজেপি’র মুসলমান বিদ্বেষ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করার অভিযোগ বিশ্বব্যাপী সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এসব তোয়াক্কা না করেই মোদি সরকার হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠায় মুসলমানদের উপর নির্যাতন ও উচ্ছেদের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। তার সাম্প্রতিক নজির হচ্ছে, মনিপুরে মুসলমান ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের উপর ব্যাপক আক্রমণ, খুন ও ধর্ষণ এবং হরিয়ানায় মুসলমানদের নির্যাতন ও বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া। এর মধ্য দিয়ে বিজেপি এই ম্যাসেজ দিতে চাচ্ছে, যেকোনো মূল্যে ভারতকে শুধু হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করতে বদ্ধপরিকর এবং এখানে অন্য কোনো ধর্মের মানুষের বসবাস সহ্য করা হবে না।
দুই.
বিগত প্রায় দুই যুগের বেশি সময় ধরে পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ইসলাম ও মুসলমানদের উগ্রবাদী হিসেবে আখ্যায়িত করে ‘ওয়ার অন টেরোরিজম’ শুরু করে। বিশ্বে মুসলমানদের অগ্রযাত্রায় ‘ইসলামোফোবিয়া’য় আক্রান্ত হয়ে তা দমনে রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করে। বিপদগামী কিছু মুসলমান নামধারীকে দিয়ে জঙ্গী সংগঠন সৃষ্টি করে তা দমনের নামে মধ্যপ্রাচ্যসহ আফ্রিকার বিভিন্ন মুসলমান দেশকে ধ্বংস করতে যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়। একে একে ধ্বংস করে দেয় ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান ও লিবিয়াকে। অশান্ত করে তোলে ইয়েমেনসহ অন্যান্য মুসলমান অধ্যুষিত দেশ। এসব দেশ ধ্বংস ও অশান্ত করে তুলতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করে। শেষ পর্যন্ত সেসব দেশ থেকে তাকে ব্যর্থ হয়ে বিদায় নিতে হয়েছে। আফগানিস্তান থেকে তো রাতের আঁধারে পালিয়ে গেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র বুঝতে পেরেছে, ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে নির্মূল করা সম্ভব নয়। বিশ্ব রাজনীতিতে যে পরিবর্তন এসেছে, তাতে ইসলাম ও মুসলমানরা এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, যে যুক্তরাষ্ট্র এতদিন ইসলাম ও মুসলমানদের নিয়ে ‘ইসলামোফোবিয়ায়’ আক্রান্ত হয়ে নির্মূলীকরণে মেতে উঠেছিল, সেই যুক্তরাষ্ট্রই এখন ইসলামকে ‘মহান ধর্ম’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। গত ৬ আগস্ট ডেমোক্রেট কংগ্রেসম্যান আল গ্রিণ ইসলামকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য কংগ্রেসে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। প্রস্তাবটি সমর্থন করেন কংগ্রেস সদস্য ইলহাম ওমর, রাশেদা তাইয়েব এবং আন্দ্রে গারসন। প্রস্তাবে বিশ্বজুড়ে শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষায় ইসলামের অবদানের স্বীকৃতি দেয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রস্তাবটি কংগ্রেস গ্রহণ করে পররাষ্ট্র বিষয়ক হাউস কমিটিতে ভোটাভুটির জন্য পাঠিয়ে দিয়েছে। প্রস্তাবে আল গ্রিণ যুক্তরাষ্ট্রে ইসলামী মূল্যবোধ ও বিশ্বাস বৃদ্ধি, ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান ও মর্যাদাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি ইসলামের মৌলিক বিধিবিধান ও মুসলিম বিশ্বের ঐতিহ্য, আচার-আচরণ সম্পর্কে উল্লেখ করে বলেন ইসলাম শব্দের অর্থ ‘আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ ও শান্তি। পবিত্র কোরআন মুসলমানদের মৌলিক গ্রন্থ এবং ইসলাম ও মুসলমান বিশ্বে দ্বিতীয় দ্রুত বর্ধনশীল ধর্ম। যুক্তরাষ্ট্রেই ৩৫ লাখ মুসলমানের বসবাস। ইসলামকে উগ্রবাদী ধর্ম হিসেবে যে অপপ্রচার চলছে, তিনি তা ঠেকাতে এ প্রস্তাব দিয়েছেন। আল গ্রিণ এ প্রস্তাব এমন এক সময় দিয়েছেন, যখন ইউরোপে পবিত্র কোরআন অবমাননা করা হচ্ছে। বলা বাহুল্য, তার এ প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের নিয়ে যুগের পর যুগ যে ভ্রান্ত ধারণা এবং তা ঠেকাতে ‘ওয়ার অন টেরোরিজম’ চালু করা হয়, তার অবসান ঘটাতে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। যে যুক্তরাষ্ট্র ইসলাম ও মুসলমানদের ধ্বংসযজ্ঞে মেতে উঠেছিল, সেই যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতেই এ ধরনের প্রস্তাব উঠা ইসলামেরই বিজয়। বিশ্ব রাজনীতিতে নিশ্চিতভাবেই এর প্রভাব পড়বে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসলামই মূল নিয়ামক হয়ে উঠবে, তা এ প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে প্রতিভাত হয়েছে। অথচ যে ভারত শত শত বছর ধরে মুসলমান স¤্রাটদের দ্বারা শাসিত হয়েছে এবং সব ধর্মের মানুষ পারস্পরিক সহাবস্থানের মধ্যে বসবাস করেছে, সেই ভারতে বিজেপি ক্ষমতায় এসে তা ধ্বংস করে দিচ্ছে। উগ্র হিন্দুত্ববাদ দিয়ে মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন ও স্টেটলেস করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। মুসলমানদে ঐতিহাসিক স্থাপনা ও বাড়িঘর ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছে। সাম্প্রদায়িকতার উগ্র বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিচ্ছে শুধুমাত্র মোদির ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য। মোদির মুসলমান বিদ্বেষ তার মজ্জাগত। আমরা যদি ২০০২ সালে গুজরাটের দাঙ্গার দিকে দৃষ্টিপাত করি তাহলে দেখা যাবে, সে সময় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন মোদি। বলা হয়ে থাকে, মোদির পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ ইন্ধনে বিজেপি ও উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগিয়ে দেয়া হয়। গুজরাটের গোধরায় একটি ট্রেনে আগুন লাগা এবং তাতে ৫৮ জন হিন্দু তীর্থযাত্রী নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে এ দাঙ্গা লেগেছিল। উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো অভিযোগ করে বসে ট্রেনটিতে নাকি মুসলমানরা আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল। গুজরাটের স্থানীয় পত্র-পত্রিকাগুলোও মুসলমানরা এ কাজ করেছে বলে বানোয়াট ও অসত্য সংবাদ পরিবেশন করে। মুসলমানরা হিন্দুদের অপহরণ ও ধর্ষণ করছে বলে উল্লেখ করা হয়। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তখন মুসলমানদের বাড়িÑঘর ও ব্যবসা কেন্দ্রের ঠিকানা ও অবস্থান লিফলেট আকারে ছড়িয়ে দেয়। এসব লিফলেট তৎকালীন গুজরাটের প্রশাসন থেকেই উগ্র হিন্দুদের হাতে পৌঁছে দেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। আরএসএস, বজরঙ দল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্যরা গেরুয়া পোশাক পরে ট্রাকে চড়ে সরবরাহকৃত ঠিকানা অনুযায়ী খুঁজে খুঁজে মুসলমানদের হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট এবং বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়ার উল্লাসে মেতে উঠে। আড়াইশ’র মতো নারীকে গণধর্ষণ করে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়, নারীদের উলঙ্গ করে প্যারেড করানো হয়, গর্ভবতী মায়ের পেট কেটে বাচ্চা বের করে পিঁষে মারা হয়, শিশুদের জোর করে পেট্রল খাইয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়, অসংখ্য মুসলমানের গলা কেটে, দেহ থেকে হাত-পা বিচ্ছিন্ন করে, পেট চিরে পুড়িয়ে মারা হয়। সেখানের গুলবাগ সোসাইটির এহসান জাফরি নামের এক ব্যক্তি উগ্রবাদী হিন্দুদের কাছে অনুনয়-বিনয় করে তার পরিবারের লোকজনদের বাঁচানোর আঁকুতি জানিয়েছিলেন। হিন্দুরা তার আঁকুতি তো শোনেইনি, উল্টো তাকে উলঙ্গ করে টেনেহিঁচড়ে রাস্তায় নিয়ে আসে এবং তাকে ‘জয় শ্রী রাম’ বলার জন্য আদেশ দেয়। তিনি তা না করায় শিরñেদ করে দেহ আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়। তার বাড়ি জ্বালিয়ে পুরো পরিবারকে পুড়িয়ে মারা হয়। তথ্য মতে, উগ্র হিন্দুরা প্রায় দেড় হাজার মুসলমান হত্যা করে। ২৩০টি মসজিদ এবং ২৭৪টি দরগা ধ্বংস করে দেয়া হয়। মুসলমানদের ১ লাখ বাড়ি-ঘর, ১১০০ হোটেল, ১৫০০ ব্যবসা কেন্দ্র ও ৫ হাজার গাড়ি ধ্বংস করা হয়। উগ্রবাদী হিন্দুদের এমন বর্বরতা ইতিহাসে নজিরবিহীন। এসবই হয়েছিল গুজরাটে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় এবং যার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদি। এ ঘটনায় ক্ষুদ্ধ হয়ে সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট নরেন্দ্র মোদিকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। দাঙ্গার পরও উগ্র হিন্দুত্ববাদী নেতারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রচ- বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিতে থাকে। শিবসেনা নেতা বালথেকারে বলেছিলেন, মুসলমানরা ভারতের জন্য ক্যান্সার। ক্যান্সার অনিরাময়যোগ্য। এটা কেবলমাত্র থামানো যায় অপারেশনের মাধ্যমে। তিনি হিন্দুদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘ও হিন্দুরা, অস্ত্র হাতে তুলে নাও এবং তোমার মূল থেকে এ ক্যান্সার নির্মূল করো।’ বিশ্ব হিন্দু পরিষদের আর্ন্তজাতিক প্রেসিডেন্ট প্রভিন টোগাদিয়া বলেছিলেন, হিন্দুদের প্রতিপক্ষ প্রত্যেককেই মৃত্যুদ-ে দ-িত করা হবে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তৎকালীণ প্রেসিডেন্ট অশোক সিঙ্গাল বলেছিলেন, গুজরাটের দাঙ্গা সফল হয়েছে, যা আগামীতে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া হবে। নরেন্দ্র মোদি এখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তার মুসলমান বিদ্বেষ এখনও যায়নি। এখন ভারতকে পুরোপুরি একটি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার মিশন নিয়ে নেমেছে। ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতা নীতি সমূলে উৎপাটন করে দিচ্ছে। এর সঙ্গে ভারতের সাধারণ হিন্দুরা একমত তা মনে করার কারণ নেই। তারা শুধু দেখছে একটি দল ও তার সমর্থকদের উগ্রতা।
তিন.
ভারতে মুসলমানরা উগ্র হিন্দুদের দ্বারা কীভাবে প্রতিনিয়ত খুন, নিপীড়ন, নির্যাতন শিকার নতুন কিছু নয়। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিগত এক দশকে মুসলমানদের অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। দলটি পুরো ভারত বর্ষে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিচ্ছে। এর থেকে বাদ যাচ্ছে না বলিউডের মুসলমান সুপারস্টাররাও। বলিউড রাজত্ব করা তিন ‘খান’Ñশাহরুখ খান, আমির খান, সালমান খান বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে উগ্রবাদী হিন্দুদের দ্বারা হেনস্তার শিকার হয়েছেন। কিছু বলিউড অভিনেত্রীও মুসলমান বিদ্বেষী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এর মধ্যে কঙ্গণা রানাউত বিভিন্ন সময়ে মুসলমানদের ধর্মীয় রীতিনীতি নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরপরই বলিউডে খানদের বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইন শুরু হয়। বিজেপি এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নেত্রী সাদভী প্রাচি আমির খান, সালমান খান ও শাহরুখ খানকে বয়কট করার জন্য সবাইকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তিন খানের অভিনীত সিনেমা নাকি সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে এবং তরুণদের জিহাদে উদ্বুদ্ধ করছে। প্রাচি উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, তিন খানের সিনেমার পোস্টার ছিঁড়ে জ্বালিয়ে দিতে। তার এ কথায় সাড়া দিয়ে সে সময় উগ্র হিন্দু সংগঠনগুলো শাহরুখ খানকে ‘পাকিস্তানি এজেন্ট’ হিসেবে মন্তব্য করেছে। এসব ঘটনায় প্রতীয়মাণ হয়, বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর ভারতের সাধারণ মুসলমানদের ওপর যেমন নিপীড়ন-নির্যাতন নেমে এসেছে, তেমনি বলিউডের তিন মুসলমান সুপারস্টার যারা ভারতকে হাজার হাজার কোটি রুপি যোগান দেন, তাদের সরিয়ে দেয়ার জন্য বিভিন্নভাবে প্রচেষ্টা চালায়। অথচ সালমান খান ভারতে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে নিজ দায়িত্ববোধ থেকে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ব্যক্তিগত উদ্যোগে ‘বিইয়িং হিউম্যান’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি অসহায়দের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। এ সংগঠন থেকে সকল ধর্মের মানুষ সহায়তা পাচ্ছে। সালমান স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘আমি কখনো জিজ্ঞেস করি না, তুমি কে বা কি, তুমি কোন গোত্র থেকে এসেছ। আমরা প্রত্যেকে এক ছাদের নিচে বসবাস করছি। আমাদের পরিচয় আমরা ভারতীয়। এখানে ভেদাভেদ নেই।’ ভারতে যখন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা উগ্র হিন্দুদের দ্বারা মুসলমানরা প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হচ্ছে, তার বিপরীত চিত্র আমাদের দেশে দেখা যায়। আমাদের দেশের শতকরা ৯২ ভাগ মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও হাজার বছর ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রয়েছে। বিশ্বের আর কোনো দেশে এমন সম্প্রীতির পরিবেশ দেখা যায় না। এমনকি সরকারি চাকরি থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রে হিন্দুসহ অন্যান্য ধর্মাবম্বীরা সমান সুযোগ লাভ করছে। আমরা যদি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দিকে দৃষ্টিপাত করি, তাহলে দেখব, এসব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ও উচ্চপদে অনেক হিন্দু কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছে। এটা সম্ভব হয়েছে, সব ধর্মের প্রতি আমাদের দেশের মানুষের সম্প্রীতির দৃষ্টিভঙ্গির কারণে। এই দৃষ্টিভঙ্গি তৈরিতে হাজার বছর ধরে ভূমিকার পালন করছে আমাদের দেশের আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখ। তারা ইসলামের মূল্যবোধ, শান্তি ও অন্য ধর্মের প্রতি সহনশীলতার মৌলিক আচরণকে ধারণ করে সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় রেখেছেন। এমনকি অন্য ধর্মের কেউ একশ্রেণীর দুষ্কৃতিকারীর আক্রমণের শিকার হলে সবার আগে তারাসহ ধর্মপ্রাণ মুসলমানরাই এর প্রতিবাদে এগিয়ে আসেন। অন্যদিকে, ভারতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় মুসলমানরা আক্রান্ত হলে সেখানের প্রশাসনও আক্রমণকারীদের প্রশ্রয় দিতে দেখা যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের দ্বারাও নিপীড়নের শিকার হতে হচ্ছে। মুসলমানরা আইনের আশ্রয় নিতে গেলে নানা টালবাহানায় ফিরিয়ে দেয়ার নজির রয়েছে। বলা যায়, ভারত এখন বিশ্বে একটি উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে। মনিপুরের ঘটনায় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বিজেপিকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘মনিপুরের ঘটনায় ভারত মাতাকে হত্যা করা হয়েছে।’ তার এ মন্তব্য থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, বিজেপি সরকার ভারতকে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।
চার.
ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ‘ওয়ার অন টেরোরিজম’ চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বুঝতে পেরেছে, পরিবর্তিত বিশ্বে তার সক্ষমতা বজায় রাখতে হলে, এ নীতি থেকে সরে আসতে হবে। তা নাহলে, তার কংগ্রেসে ইসলামকে ‘মহান ধর্ম’ আখ্যায়িত করা বিল গ্রহণ করা হতো না। অন্যদিকে, ভারতে উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোড়া বিজেপি মুসলমানদের তার শত্রু হিসেবে গণ্য করে নির্মূলীকরণ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে চলেছে। যতভাবে পারা যায় মুসলমান নিধন এবং নিপীড়ন-নির্যাতনের প্রকাশ্য মিশন চালিয়ে যাচ্ছে। এটা যে তার জন্য এক আত্মঘাতী নীতি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশ্লেষকরা বলেছেন, মোদির এই হিন্দুত্ববাদী নীতির কারণে অদূর ভবিষ্যতে ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন দেশে পরিণত হয়, তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ইতোমধ্যে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে এর আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এক সময়ের সোভিয়েত ইউনিয়নও ভেঙ্গে খানখান হয়ে গেছে। পরিবর্তিত বিশ্ব রাজনীতির কারণে ভারতে যে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। যদি তাই হয়, তাহলে ইতিহাস মোদি এবং তার দলকেই দায়ী করবে। জোর করে হিন্দুত্ববাদ চাপিয়ে দেয়া এবং মুসলমান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের নির্মূলীকরণের মতো সংকীর্ণ মানসিকতা যে শুভ ফল বয়ে আনবে না, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
চাঁদপুর মেঘনায় জাহাজে মিলল ৫ জনের মরদেহ
বরিশালে মাহমুদিয়া মাদ্রাসার ৭৮তম মাহফিল ও ইসলামী মহাসম্মেলন শুরু
বিনা খরচে কৃষকের দেড়’শ ধানের চারা রোপন করে দিল কালীগঞ্জ কৃষি আফিস
সিরিয়ার নেতার সঙ্গে তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান
আরাফাত রহমান কোকো ৮ দলীয় ফুটবল টুর্নামেন্টে উদ্দীপন যুব সংঘ চ্যাম্পিয়ন
সাতক্ষীরার নলতায় চার দফা দাবিতে ছাত্র -ছাত্রীদের আন্দোলন, ক্যাম্পাসের নাম বদল
অর্থনৈতিক সংকটে আফগান রুটি, ঐতিহ্য ও জীবনের অংশ
আশুগঞ্জে গ্যারেজ মালিককে হত্যা করে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়েছে দুর্বৃত্তরা
উত্তরপ্রদেশে ৩ খলিস্তানি বিদ্রোহীকে গুলি করে হত্যা পুলিশের
শিবালয়ের যমুনায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হুমকিতে বৈদ্যুতিক টাওয়ার
হিলিতে কমেছে আলু পেঁয়াজের দাম
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার ১,১০০ হতাহতের শিকার : সিউল
ঢাকা - মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ঘণ কুয়াশায় আবারো দূর্ঘটনা , নিহত ১ আহত ৪
ড্রোন হামলার জবাবে ইউক্রেনে ‘ধ্বংসযজ্ঞ’ চালানোর হুমকি পুতিনের
রাহাত ফতেহ আলী খানের সম্মানে পাকিস্তান হাইকমিশনারের নৈশভোজ আয়োজন
‘চা পান স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী’, স্বীকৃতি যুক্তরাষ্ট্রের
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে কাপ্তাই ভূমিকা রেখেছিলো, আগামীতেও রাখবে : ঢাবি শিবির সেক্রেটারি
মার্কিন টাইফুন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা অর্জনের পথে ফিলিপাইন
সুন্দরবনকেন্দ্রিক দস্যুতা বন্ধে পুলিশের নজরদারি বৃদ্ধি করা হচ্ছে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত
মায়োতে সাইক্লোন চিডোর ধ্বংসযজ্ঞে ফ্রান্সে জাতীয় শোক