আড়িয়াল বিল রক্ষায় দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে
১৭ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৪৪ পিএম | আপডেট: ১৮ আগস্ট ২০২৩, ১২:০৮ এএম
আড়িয়াল বিলে মাটি ভরাট ও দখলবাজি বন্ধে হাইকোর্ট একটি জরুরি নির্দেশনা জারি করেছে। হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পীস ফর বাংলাদেশ(এইচআরপিবি) নামের একটি মানবাধিকার সংগঠেনের করা রিট পিটিশনের শুনানি শেষে গত বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের ডিভিশন বেঞ্চ জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের সচিব, মুন্সিগঞ্জের ডিসি, এসপি, স্থানীয় ইউএনও, পরিবেশ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি দখল-ভরাট বন্ধ করাসহ বিগত একযুগের অবস্থা পর্যালোচনার জন্য স্যাটেলাইট ম্যাপ হাইকোর্টে জমা দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন। এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক ও পরিবেশগত নিরাপত্তায় ঢাকার নিকটবর্তী মুন্সিগঞ্জে অবস্থিত দেশের অন্যতম বৃহৎ জলাভ’মি আড়িয়াল বিলের অসামান্য ভ’মিকা রয়েছে। আরিয়াল বিলের উপর দখলবাজদের চোখ দীর্ঘদিনের। গত চার দশকে অপরিকল্পিত নগরায়ণ, আবাসন এবং বেআইনী দখলবাজির শিকার হয়ে ঢাকার ভেতর ও চারপাশের জলাভ’মি ভরাট হয়ে গেছে। সেই সাথে ঢাকার চারপাশ ঘিরে থাকা বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষা, তুরাগ ও বালু নদীও অস্বাভাবিক মাত্রাতিরিক্ত দূষণ ও দখলবাজির শিকার হয়েছে। এখন এক ঘন্টা ভারী বৃষ্টিপাত হলেই ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সব রাস্তা হাটুপানিতে তলিয়ে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ওয়াসার স্যুয়ারেজ সিস্টেম পয়:নিস্কাশন ও পানি নি:সরণে কার্যকর ভ’মিকা পালন করতে পারে না। ঢাকার ভেতরের খাল, পুকুর ও চারপাশের জলাভ’মি অবৈধ দখল ও ভরাটের শিকার না হলে ঢাকা এমন জলাবদ্ধতার শিকার হওয়ার আশঙ্কা ছিল না।
ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে অপরিকল্পিত নাগরায়ণ, শিল্পায়ন ও পরিবেশগত বিষয়ে বাছবিচারহীন ভ’মি দখল, ভরাট ও দূষণের ভয়াবহ পরিণতি ক্রমে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। গত এক দশক ধরে ঢাকা বিশ্বের অন্যতম দূষিত ও বসবাসের অযোগ্য নগরীতে পরিণত হয়েছে। এসব অভিজ্ঞতার আলোকে আড়িয়াল বিলের অস্তিত্ব রক্ষায় নাগরিক সমাজের ভ’মিকা খুবই দৃশ্যমান। একযুগ আগে ২০১১ সালে আড়িয়াল বিলে সরকারের প্রস্তাবিত বিমান বন্দর নির্মানের উদ্যোগ স্থানীয় জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ও প্রতিরোধের মুখে বাতিল হয়ে যায়। আড়িয়াল বিল আন্দোলনে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে অনেক মানুষ হতাহত হয়। জনগণের দাবি ও প্রতিরোধের মুখে সেখানে বিমান বন্দর নির্মাণের উদ্যোগ থেকে সরকার সরে আসলেও আড়িয়াল বিলের উপর সরকারের ছত্রছায়ায় থাকা প্রভাবশালী মহলের দখলবাজি, ভরাট ও ভ’মিদস্যুতা সেখানে নতুন বাস্তবতা তৈরী করে। গত একযুগে এই বিলের অনেক জায়গা ড্রেজার দিয়ে ভরে ফেলা হয়েছে। দখল ও ভরাটের এই প্রবণতার ক্রমেই বেড়ে চলেছে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য, পরিবেশ ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই বিলের অস্তিত্বের জন্য এটা বড় ধরণের হুমকি সৃষ্টি করেছে। হাইকোর্টের রুলে এসব দখলবাজি বন্ধসহ আড়িয়াল বিল রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিস্ক্রীয়তা কেন বেআইনী ঘোষণা করা হবে না, এই মর্মে রুল জারি করে আগামী ৩ মাসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
সামান্য বৃষ্টিতেই ঢাকায় পানিবদ্ধতাসহ ঢাকার আশপাশের জনপদগুলোতে ক্রমেই পরিবেশগত ঝুঁকি বেড়ে চলেছে। অপরিকল্পিত আবাসন, নদী, খাল ও জলাভ’মি ভরাট প্রধানত এর জন্য দায়ী। ঢাকার উত্তরাংশের বিস্তীর্ণ এলাকা ইতিমধ্যেই বড় বড় হাউজিং কোম্পানির দ্বারা ভরাট হয়ে অভিজাত আবাসিক এলাকায় পরিনত হয়েছে। এ ধরণের কর্মকান্ড ঢাকার সামগ্রিক প্রাকৃতিক পরিবেশ, টেকসই উন্নয়ন ও বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ঢাকার দক্ষিণে বুড়িগঙ্গার দুইপাড়ের দখলবাজিতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। কেরানিগঞ্জের কামরাঙ্গির চর, শুভাঢ্যা থেকে মুন্সিগঞ্জের শ্রী নগরের আড়িয়াল বিল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে অবৈধ ভ’মি দখল ও মাটি ভরাটের বাণিজ্য। জনস্বার্থে রিটকারীদের পক্ষে হাইকোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরশেদ প্রশংসনীয় ভ’মিকা পালন করেছেন। ইতিপূর্বেও বিভিন্ন সময়ে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আইনজীবী মনজিল নিজে স্বপ্রণোদিত হয়ে রিট করে হাইকোর্ট ও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন। জীব-বৈচিত্র্য, পরিবেশগত ও স্থানীয় জনসাধারণের জীবন-জীবিকার নিরাপত্তায় আড়িয়াল বিলের অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে। ভ’মিদস্যু ও হাউজিং সিন্ডিকেট কোনোকিছু বাছবিচার না করেই কমদামে কৃষকের কাছ থেকে জমি কিনে দখল ও ভরাট করে আবাসনের জন্য বিক্রি করছে। এটা অব্যাহত থাকলে ঢাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণসহ সামগ্রিক বাসযোগ্যতা চরম হুমকির মুখে পড়বে। হাইকোর্টের রুল নির্দেশনার আগেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ছিল আড়িয়াল বিলের উপর অবৈধ দখলবাজি ও ভরাট বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এখন হাইকোর্টের নির্দেশের আলোকে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ সমন্বিত উদ্যোগে আড়িয়াল বিলসহ ঢাকার চারপাশের জলাভ’মি, খাল ও নদনদীর দূষণ ও দখল বন্ধে সময় ক্ষেপণ না করে সম্ভাব্য সবকিছু করবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নিউজিল্যান্ড দলে নতুন মুখ জ্যাকবস
জালিয়াতির নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের বেতন-ভাতা ফেরত নেয়ার দাবি তুলেছে ‘সিলটি পাঞ্চায়িতের
দেড় মাস পর আবার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল
বার্মিংহামের সিরাজাম মুনিরা জামে মসজিদ অ্যান্ড এডুকেশন সেন্টারে কাতারের ব্যবসায়ী মহিন উদ্দিন
উন্নয়নের প্রতিটি ধাপে পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিতই সরকারের লক্ষ্য : রিজওয়ানা হাসান
খুঁটির জোর কোথায়? আওয়ামী ঠিকাদারের নিম্নমানের কাজ করে বিল নেয়ার অভিযোগ!
দুমকী উপজেলা জমিয়তে হিজবুল্লাহ সভাপতির ইন্তেকাল
সাদপন্থীদের কার্যক্রম স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধের দাবিতে শেরপুরে বিক্ষোভ
মৌলভীবাজারের বড়লেখা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে চা শ্রমিক গোপাল হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন
ছাগলনাইয়ায় ফসলি জমির মাটি কাটায় দুইটি এক্সেভেটর জব্দ
আব্দুল্লাহ শফিকের অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ড
সৈয়দপুরে সাদপন্থি তাবলীগ জামায়াতের কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবীতে বিক্ষোভ সমাবেশ
স্বেচ্ছাসেবক লীগনেতা ফুয়াদ হত্যা মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান কাজী জেসমিন আক্তার কারাগারে
বাংলাদেশে আইওটি ইকোসিস্টেম উন্মোচন করেছে ওয়ানপ্লাস
শীতার্তদের মাঝে উষ্ণতা ছড়ালো ইবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
সড়কে ছয় লেনের কাজ এগিয়ে চলছে গাড়ি চলবে ১০০ কি.মি গতিতে
আটঘরিয়ায় ঘন কুয়াশায় বিনা চাষে রসুনের জমি পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত কৃষক
সীমান্তে বিজিবির গুলি ১৬ বস্তা ভারতীয় ফেনসিডিল ফেলে পালালো চোরাকারবারীরা
সখিপুরে পৃথক পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন জনের মৃত্যু