পানিবদ্ধতার জন্য দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে
১৯ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৩৫ পিএম | আপডেট: ২০ আগস্ট ২০২৩, ১২:০২ এএম
সামান্য বৃষ্টিতে ঢাকায় পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়া এবং ভারি বৃষ্টি হলে বিভিন্ন এলাকায় কোমর সমান পানি জমে যাওয়া নতুন কিছু নয়। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে রাজধানীর এই চিরাচরিত দৃশ্য দেখা গেছে। রাজধানীর ড্রেনেজ সিস্টেমের উন্নয়নে শত শত কোটি টাকা ব্যয় হলেও তা কোনো কাজে আসছে না। পানিবদ্ধতা নিরসন যেন এক অসাধ্য কাজে পরিণত হয়েছে। নগর ও পরিবেশবিদরা প্রতিনিয়ত এ নিয়ে কথা বললেও কোনো কাজ হচ্ছে না। ঢাকা ওয়াসা, সিটি করপোরেশন, পরিবেশ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্তৃপক্ষের যথাযথ উদ্যোগের অভাবে দিন দিন পানিবদ্ধতা জটিল আকার ধারণ করছে। রাজধানীর পানিবদ্ধতার অন্যতম কারণ, এর অভ্যন্তরে এবং চারপাশে যেসব খাল, জলাশয় ও নদী রয়েছে, সেগুলো ভরাট এবং অস্তিত্বহীন হয়ে পড়া। এগুলোর মাধ্যমে বৃষ্টির পানি নেমে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে অদূর ভবিষ্যতে বৃষ্টির পানিতে রাজধানীর ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন নগরবিদরা।
বিগত বছরগুলোর তুলনায় চলতি আগস্ট মাসে বৃষ্টিপাত অনেক বেড়েছে। আবহাওয়া পূর্বাভাস এবং সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলেছে, ৫২ বছরের মধ্যে এবারের আগস্ট সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আগস্ট এখনও শেষ হয়নি। ইতোমধ্যে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী এক সপ্তাহে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, রাজধানীর পানিবদ্ধতা কতটা অসহনীয় হয়ে উঠবে। বৃষ্টিপাত হলে পানি বিভিন্ন জলাধার, খাল, নদীর মাধ্যমে নেমে যাওয়ার কথা। ভূগর্ভে যে পানিশূন্যতা বা ভ্যাকুয়াম সৃষ্টি হয়, তা পূর্ণ হওয়ার কথা। অথচ রাজধানীর পরিস্থিতি এমন যে, পানি নিষ্কাশনের এই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একদিকে রাজধানীর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত খাল, ঝিল, পুকুর, লেকের সিংহভাগই ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এক সময় রাজধানীর ভেতর দিয়ে প্রায় ৪৭টি খাল প্রবাহিত হতো। এখন এগুলোর অধিকাংশের অস্তিত্ব নেই। অসংখ্য পুকুর ও জলাশয় ভরাট করে সেখানে ভবন গড়ে তোলা হয়েছে। বৃষ্টির পানি যে ভূগর্ভে যাবে সে পথও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পুরো শহর কংক্রিট দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। ওদিকে ভূগর্ভ থেকে বেপরোয়াভাবে পানি উত্তোলনের ফলে পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। এতে ভয়াবহ ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা। রাজধানীর পানি নিষ্কাশনে বড় ভূমিকা পালন করত নদী, বিল ও জলাশয়। ভূমিদস্যুদের অবৈধ দখল এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে এসব নদী ও জলাশয় অকার্যকর ও হারিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ প্ল্যানার্স-এর সমীক্ষা অনুযায়ী, গত ৯ বছরে ঢাকা মহানগর এবং এর আশপাশে কমপক্ষে ৩ হাজার ৪৮৩ একর জলাশয় ও নি¤œভূমি ভরাট হয়ে গেছে। ভূমিদস্যুদের দৌরাত্মে ঢাকা থেকে আশপাশের জেলা পর্যন্ত বিস্তৃত বিল, জলাশয় ভরাট হচ্ছে। এখন মুন্সিগঞ্জের আড়িয়াল বিল ভূমিদস্যুদের কবলে পড়েছে। রাজধানীর চারপাশের এসব জলাধার ক্রমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টিতে রাজধানী অনিবার্যভাবে ডুবে যাবে। অন্যদিকে, ড্রেনেজ সিস্টেম তৈরি করতে গিয়ে শত শত কোটি টাকা ব্যয় হলেও তা অপচয়ে পর্যবসিত হচ্ছে। এক হিসেবে, গত একযুগে সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থা তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয় করলেও তাতে যে কাজ হয়নি। সামান্য বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতা হওয়া থেকেই তা বোঝা যায়।
রাজধানীর চারপাশের নদী, খাল, বিল, জলাশয় ইত্যাদি ভরাট ও অবৈধ দখলের ক্ষেত্রে ভূমিদস্যুদের দায়ী করা হলেও, তারা কিভাবে তা করতে পারছে, সেটা এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রে, জেলা প্রশাসন, নদী রক্ষা কমিশন, পরিবেশ অধিদফতর, সিটি করপোরেশন প্রভৃতি কর্তৃপক্ষ কি কাজ করছে? তাদের নাকের ডগার সামনে কি করে ভূমিদস্যুরা অবৈধ দখল প্রতিষ্ঠা করছে? কিভাবে তারা অনুমতি পাচ্ছে? উচ্চ আদালত অবৈধ দখল বন্ধে বিভিন্ন সময়ে নির্দেশ দিলেও তা কেন প্রতিপালিত হচ্ছে না? সরকার এত উন্নয়নের কথা বলছে, অথচ রাজধানীর পানিবদ্ধতা নিরসন এবং নদী, খাল, জলাশয় অবৈধ দখল বন্ধ করতে পারছে না কেন? সরকারের এ উন্নয়ন কার জন্য? এখানে সাধারণ মানুষের সমস্যার সমাধান কোথায়? রাজধানী বছরের পর বছর ধরে পানিবদ্ধতা, যানজট, পরিবেশ দূষণে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে থাকা কি ধরনের উন্নয়ন? আমরা মনে করি, রাজধানীর পানিবদ্ধতার জন্য অবৈধ ভরাট যেমন দায়ী, তেমনি জেলা প্রশাসন, নদী রক্ষা কমিশন, পরিবেশ অধিদফতর, সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষও দায়ী। এসব প্রতিষ্ঠানের যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে রাজধানীর পানিবদ্ধতা স্থায়ী রূপ লাভ করেছে ও ডুবে যাচ্ছে। এদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো ও জবাবদিহির আওতায় আনার বিকল্প নেই।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নবীনগর ও কসবায় বিভিন্ন রকমের মাদকসহ তিন যুবক গ্রেপ্তার
চাঁদপুর মেঘনায় জাহাজে মিলল ৫ জনের মরদেহ
বরিশালে মাহমুদিয়া মাদ্রাসার ৭৮তম মাহফিল ও ইসলামী মহাসম্মেলন শুরু
বিনা খরচে কৃষকের দেড়’শ ধানের চারা রোপন করে দিল কালীগঞ্জ কৃষি আফিস
সিরিয়ার নেতার সঙ্গে তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান
আরাফাত রহমান কোকো ৮ দলীয় ফুটবল টুর্নামেন্টে উদ্দীপন যুব সংঘ চ্যাম্পিয়ন
সাতক্ষীরার নলতায় চার দফা দাবিতে ছাত্র -ছাত্রীদের আন্দোলন, ক্যাম্পাসের নাম বদল
অর্থনৈতিক সংকটে আফগান রুটি, ঐতিহ্য ও জীবনের অংশ
আশুগঞ্জে গ্যারেজ মালিককে হত্যা করে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়েছে দুর্বৃত্তরা
উত্তরপ্রদেশে ৩ খলিস্তানি বিদ্রোহীকে গুলি করে হত্যা পুলিশের
শিবালয়ের যমুনায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হুমকিতে বৈদ্যুতিক টাওয়ার
হিলিতে কমেছে আলু পেঁয়াজের দাম
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার ১,১০০ হতাহতের শিকার : সিউল
ঢাকা - মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ঘণ কুয়াশায় আবারো দূর্ঘটনা , নিহত ১ আহত ৪
ড্রোন হামলার জবাবে ইউক্রেনে ‘ধ্বংসযজ্ঞ’ চালানোর হুমকি পুতিনের
রাহাত ফতেহ আলী খানের সম্মানে পাকিস্তান হাইকমিশনারের নৈশভোজ আয়োজন
‘চা পান স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী’, স্বীকৃতি যুক্তরাষ্ট্রের
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে কাপ্তাই ভূমিকা রেখেছিলো, আগামীতেও রাখবে : ঢাবি শিবির সেক্রেটারি
মার্কিন টাইফুন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা অর্জনের পথে ফিলিপাইন
সুন্দরবনকেন্দ্রিক দস্যুতা বন্ধে পুলিশের নজরদারি বৃদ্ধি করা হচ্ছে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত