মাদকের ভয়াবহ অভিশাপ থেকে দেশ-জাতিকে রক্ষা করতে হবে
২২ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৫৮ পিএম | আপডেট: ২৩ আগস্ট ২০২৩, ১২:০৪ এএম
মাদকদ্রব্যের উৎপাদন, অবৈধ পাচার ও অপব্যবহারে বিশ্ববাসী শংকিত। নাড়া দিয়েছে বিশ্ব বিবেককে। সর্বনাশা মাদকের মরণ-ছোবলে সমাজদেহ আজ দুরারোগ্য ক্যান্সার ব্যাধিগ্রস্তের ন্যায় ক্ষত-বিক্ষত। মানবসৃষ্ট এ অভিশাপ যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের চেয়েও অনেক বেশি ভয়াবহ, পারমাণবিক অস্ত্রের চেয়েও ঝুঁকিপূর্ণ। আন্তর্জাতিক মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্থার এক সমীক্ষা অনুযায়ী, বিশ্বের যুব সমাজের এক বিরাট অংশই আজ মাদকাসক্ত। বাংলাদেশেও মাদকাসক্তের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে সমাজ ও জাতি বিব্রত, সরকার উদ্বিগ্ন। সময়োপযোগী প্রতিকার না হলে এ সমাজ ক্রমেই নিমজ্জিত হবে সর্বনাশা নেশার অতল গহবরে।
মাদক উৎপাদনকারী দেশ না হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে পার্শ্ববর্তী দেশ হতে চোরাচালানের মাধ্যমে এদেশে মাদক প্রবেশ করে। ভৌগোলিকভাবে গোল্ডেন ট্রায়াংগেল, গোল্ডেন ক্রিসেন্ট ও গোল্ডেন ওয়েজÑ এ তিন মাদক বলয়ের মাঝে বাংলাদেশের অবস্থান হওয়ায় মাদক চোরাচালানের রুট হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মায়ানমারের সাথে দীর্ঘ সীমান্ত মাদক পাচারের অন্যতম কারণ।
বাংলাদেশকে উন্নত দেশে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তা বাস্তবায়নের জন্য দরকার একটি কর্মনিপুণ দক্ষ যুবসমাজ। সে যুবসমাজকে সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে মাদকমুক্ত পরিবেশে বেড়ে উঠার সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। দেশকে মাদকমুক্ত করার জন্য প্রয়োজন ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি। বিশেষ করে ছাত্র ও যুব সমাজকে টার্গেট করে মাদকবিরোধী প্রচারণার কাজ করতে হবে।
মাদক নিয়ন্ত্রণের নোডাল এজেন্সি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো মাদক প্রতিরোধে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি মাদকদ্রব্যের চাহিদা হ্রাসকল্পে মাদকবিরোধী সচেতনতা সৃষ্টিতে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কাজ করে যাচ্ছে। নতুন আঙ্গিকে প্রচারণামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিবছর মাদক বিরোধী দিবসে। উপজেলা, জেলা, বিভাগ, শহর, রাজধানী ঢাকাতে ও জনবহুল স্থানে মাদকবিরোধী বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন ইত্যাদি স্থাপনের মাধ্যমে মাদকবিরোধী প্রচার-প্রচারণায় নতুনত্ব আনয়ন করা হয়ে থাকে। এসব কাজ জনগণের দৃষ্টি কেড়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে মাদকবিরোধী সভা হচ্ছে।
মাদকবিরোধী সচেতনতা সৃষ্টিসহ যাবতীয় কাজের মূল্যায়ন, পরামর্শ প্রদান, সমন্বয়সাধন ইত্যাদি কাজের জন্য জেলা ও উপজেলা এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও মাদক নিয়ন্ত্রণ ও প্রচারণা কমিটি রয়েছে। আমি জেলা পর্যায়ের কমিটির একজন প্রবীণ সদস্য। জেলা পর্যায়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা কমিটিসহ অন্যান্য কমিটির সভায় মাদক বিরোধী কথাবার্তা হয়েই থাকে। ফলে মাদকবিরোধী কার্যক্রম নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সুযোগ থাকে না। বর্তমানে মাদক সমস্যার গুরুত্ব বিবেচনায় এ কমিটির সকল সদস্যের উপস্থিতি নিশ্চিত করাসহ আলাদাভাবে সময় নিয়ে এ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন মনে করি।
মানবধর্ম ও সমাজ ব্যবস্থার দৃষ্টিতে নেশা জাতীয় দ্রব্য উৎপাদন ক্রয়-বিক্রয় ও সেবন গর্হিত কাজ হিসাবে পরিগণিত হলেও এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী ন্যায়-নীতি বিসর্জন দিয়ে এসব উৎপাদন ও পাচারের মাধ্যমে আয় করছে প্রভূত অর্থ। অথচ, এর খেসারত দিতে হচ্ছে দেশবাসীকে।
মাদকদ্রব্যের ব্যবহার মানব জাতির ইতিহাসের মতই পুরাতন। মানব সভ্যতার ক্রম বিবর্তনের সাথে প্রতিটি মাদকদ্রব্যের আবিষ্কার হয়েছে মানুষের ব্যথাজনিত বিভিন্ন উপসর্গকে কেন্দ্র করে। বস্তুত মাদকদ্রব্যের যথার্থ প্রয়োগ ও নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার চিকিৎসার ক্ষেত্রে আশীর্বাদস^রূপ। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, কোনো কোনো মাদকদ্রব্য সেবনের সাথে সাথে উš§াদনামূলক অনুভূতি, ভালোলাগার আমেজ-উল্লাস, তীব্র উদ্দীপনা, সুখকর শিহরণ ইত্যাদি আবেশজাত পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার উদ্রেকের ফলে এর বারংবার ব্যবহার ও মাত্রাবৃদ্ধি ক্রমেই অভ্যাসে পরিণত হয়। এ সাময়িক প্রশান্তভাব ও প্রমোদমূলক কার্যকারিতার তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়ে সেবনকারীকে দৈহিক ও মানসিকভাবে পুরোমাত্রায় মাদকনির্ভর করে তোলে। মানুষ কখন, কেন এবং কীভাবে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে তা নিরূপণ করা কঠিন। তবে সমাজ বিজ্ঞানীরা মাদকদ্রব্যের ব্যাপক প্রসারের পাঁচটি প্রধান কারণ উদঘাটন করেছেন। যথা: প্রথমত, মাদকদ্রব্যের উৎপাদক, পাচারকারী ও বিক্রেতারা নিজেদের ভাগ্য গড়ার হীন উদ্দেশ্যে সমাজের যুব-কিশোর ও দুর্বল চেতা মানুষের হাতে তুলে দেয় জীবন-বিধ্বংসী ড্রাগস। দ্বিতীয়ত, সমাজে সমন্বয়ের অভাবে কিংবা জীবন-সংগ্রামে ব্যর্থতার ফলে অনেকেই মাদকদ্রব্যের মাঝে মুক্তি ও প্রশান্তি খুঁজে। তৃতীয়ত, মাদকাসক্তির অভিজ্ঞতালব্ধ আচরণ সমাজে একই মূল্যবোধ ও চিন্তা-চেতনা দ্বারা প্রভাবিত মানুষের মাঝে অতি সহজেই সংক্রমিত হয়ে থাকে। চতুর্থত, ড্রাগের ক্ষতিকর পরিণতি স¤পর্কে সম্যক ধারণার অভাবে নিছক তামসাচ্ছলে কিংবা কৌতূহলবশত অনেকেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। পঞ্চমত, বেকারত্ব, হতাশাও মাদকাসক্ত হওয়ার অন্যতম কারণ।
বর্তমান অবস্থার পরিপেক্ষিতে বিদ্যমান বাস্তবতার নিরিখে নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, কেন এবং কীভাবে মাদকে আসক্ত হয় যেমন: সামাজিক বনিবনার অভাব, মূল্যবোধের সংঘাত, পারিবারিক অশান্তি, বিচ্যুত আচরণ, চিকিৎসাজনিত অসাবধানতা, অভিভাবকের অবহেলা, বিরূপ সামাজিকীকরণ, বয়ঃসন্ধির মনস্তাপ, দারিদ্রের কশাঘাত, বেকারত্বের অভিশাপ, জীবন সংগ্রামে পরাজয়, প্রেমে ব্যর্থতা, অসৎ সংসর্গ, রাজনৈতিক সহিংসতা, অপসংস্কৃতির প্রভাব, দুশ্চিন্তা ও সংঘাত থেকে মুক্তির অপ-প্রয়াস, রোমাঞ্চকর ভাবানুভূতির প্রলোভন, বংশগত বদভ্যাস, শিক্ষাঙ্গণে মাদকাসক্ত সহপাঠীদের সঙ্গদোষ, কর্মস্থলে নেশাগ্রস্ত সহকর্মীদের কুপ্ররোচণা, সমাজে অপরাধীদের সাথে অবাধ মেলামেশা, নির্বিচারে ধূমপান, মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা ও পাচারকারীদের নিত্য-নতুন কৌশল ইত্যাদি এবং সর্বোপরি সমাজে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতি ও মাদকবিরোধী আইনের যথার্থ প্রয়োগে শৈথিল্য ইত্যাদি মাদকাসক্তির সাধারণ কারণ। উপরন্তু, পাশ্চাত্যের অনুকরণে সৃষ্ট উচ্চ পদমর্যাদা ও আভিজাত্যবোধের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে বিশেষ পরিবেশ ও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানে মাদকদ্রব্য সেবনের উৎসাহবোধ করে অনেককেই মাদকাসক্ত হতে দেখা যায়।
মাদকদ্রব্যের অপ-ব্যবহার যে কোনো দেশ ও জাতির জন্য মারাত্মক হুমকিস^রূপ। বর্তমানে সমস্যাটি বিশ্বের প্রায় সর্বত্র এক অবর্ণনীয় উদ্বেগজনক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। মাদকদ্রব্য সেবন শরীরের আপাদমস্তক প্রভাবিত হয়। তবে সর্বাধিক প্রভাব পড়ে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে তথা মস্তিষ্কে। এতে ন্যায়-অন্যায়বোধ, বিচার-বিবেচনা ক্ষমতা, সুস্থ মূল্যবোধ, হিতাহিত জ্ঞান, ভয়-ভীতি, দ্বিধা-দ্বন্দ সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে মাদকাসক্ত করে কাউকে দিয়ে হত্যা, ফাঁসি, অগ্নি-সংযোগ ইত্যাদি অমানবিক কাজ ও ঘৃণ্য অপরাধ করানো সম্ভব। অপরাধ বিজ্ঞানীদের মতে, মাদকাসক্তি ও অপরাধ-প্রবণতা সর্বত্র সহঅবস্থান করে। নেশা জš§ দেয় বিবিধ সমাজবিরোধী ও সন্ত্রাসী তৎপরতা। ব্যয় বহুল মাদকদ্রব্যের অর্থ জোগাড় করতে গিয়ে আসক্ত ব্যক্তিরা চুরি-ডাকাতি, খুন-খারাবি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ছিনতাই, মুক্তিপণ আদায় ইত্যাদি নীতিগর্হিত ও অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ে। বৃদ্ধি পায় মাদক সংক্রান্ত অপরাধ প্রবণতা, সড়ক দুর্ঘটনা, চাকরিগত সমস্যা, পারিবারিক অশান্তি, সামাজিক বিশৃঙ্খলা, রাজনৈতিক অস্থিরতা ইত্যাদি কারণে মাদকাসক্তের সংখ্যা অহরহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিঘিœত হয় কল-কারখানায় উৎপাদন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা, সমাজে স^াভাবিক জীবন যাত্রা ও দেশে আইনের শাসন। তবে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্যের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়াও ভিন্ন। আফিম জাতীয় মাদকদ্রব্য সেবনের ফলে সামাজিক বিচ্ছিন্নতাবোধ, পারিবারিক বন্ধনহীনতা, কর্মবিমুখতা, নৈতিকতার অবলুপ্তি নিদ্রালু অবস্থা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়। হিরোইন আসক্তির ফলে শরীরে তীব্র পেশী সংকোচন, উদরের খিঁচুনি, উদরাময়, গভীর দুঃখবোধ, অশ্রুনিরসন, হƒদয়ন্ত্রের কার্যকারিতা হ্রাস, ফুসফুসের ঘা-জনিত প্রদাহ, যকৃতের রোগ ইত্যাদি দেখা দেয়। মাদকদ্রব্যের মধ্যে হিরোইন আসক্তির প্রভাব ও পরিণাম সর্বাধিক উদ্বেগজনক। ফেনসিডিল শরীরের স্নায়ুতন্ত্রকে শিথিল করে হালকা ঘুমের আমেজ এনে দেয় এবং সারাদেহে আনন্দানুভূতি, জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একান্ত আত্মনিমগ্ন হওয়ার দৈহিক ও মানসিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। কফ-কাশি উপশমের জন্য ব্যবহারযোগী, সহজলভ্য মাদকদ্রব্যটি এ অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে হিরোইন, পেথেডিন, মদ, গাঁজা ইত্যাদির বিকল্প হিসেবে নেশার কাজে ব্যবহƒত হয়ে আসছে।
মরফিন আসক্তির ফলে ক্ষুধামন্দা, দেহের ওজন হ্রাস, কোষ্ঠবদ্ধতা, স্নায়ুবিক দৌর্বল্য, বন্ধ্যাত্ব প্রভৃতি শারীরিক উপসর্গ দেখা দেয়। কোকেইন সেবনের ফলে স্নায়ুবিক নিষ্ক্রিয়তা, স্মরণশক্তি ও কর্মক্ষমতা হ্রাস, মানসিক অস্থিরতা, রক্তচাপ বৃদ্ধি, হƒদপিন্ড প্রদাহ, ফুসফুসের ক্ষতি, মস্তিষ্কের শ্বেত-পদার্থের ব্যাধি প্রভৃতি শারীরিক ও মানসিক জটিলতা সৃষ্টি হয়ে থাকে। ধূমপান জনস^াস্থ্যের জন্য বিরাট হুমকিস^রূপ। তামাকের মধ্যকার নিকোটিন অন্যান্য ক্ষতিকর ড্রাগস-এর ন্যায় সমান মারাত্মক। শরীরের এমন কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নেই, যা ধূমপানে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ভক্ষণের ফলে বাংলাদেশে বছরে পাঁচ লক্ষেরও অধিক লোক ক্যান্সারসহ অন্যান্য দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে অকাল মৃত্যুর শিকার হয়। ধূমপানকে বলা হয় নিঃশব্দ আততায়ী। অন্যান্য মাদকদ্রব্য সেবনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কেবল সেবনকারী; পক্ষান্তরে, ধূমপানের ফলে সমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ধূমপায়ী নিজে এবং তার আশ-পাশের অধূমপায়ীরাও।
মাদকাসক্ত ব্যক্তির শারীরিক কর্ম-প্রক্রিয়াও মানসিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া অনেকাংশে মাদকনির্ভর হয়ে পড়ায় ঐ পর্যায় থেকে তাকে ফিরিয়ে আনা প্রায় কঠিন কাজ। তার মধ্যে অন্যদের কাছে হেয় প্রতিপন্ন ও অনুক¤পার পাত্র হবার মতো হীনমন্যতা সৃষ্টি হয়। ফলে সে অপরাধপ্রবণ ও বিকৃত মানসিক রোগীতে পরিণত হয়। মাত্রাতিরিক্ত মাদকদ্রব্য সেবনের ফলে মানসিক অস্থিরতা অবচেতনতা, বিষন্নতা, ভীতকর ভাবনুভূতি, তীব্র নিঃসঙ্গতা, অহেতুক উৎকন্ঠা ও দুঃখবোধ, শারীরিক দুর্বলতা, বমনেচ্ছা, নিদ্রাহীনতা, হƒদপিন্ডের ছন্দবৈষম্য, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা, দৃষ্টি অস্পষ্টতা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। ফলে তার স্নায়ুতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে, মনন-শক্তি ভোঁতা ও অসাড় হয়ে আসে, হাসি-কান্নাবোধ তিরোহিত হয়, জীবনীশক্তি ও কর্মক্ষমতা হ্রাস পায় এবং শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ক্রমে সে এক অস^াভাবিক জীবন্মৃত অবস্থায় উপনীত হয়। নেশা গ্রহণে বিরত থাকলে চোখ-মুখ আরক্ত হয়ে উঠে, হাত-পায়ে কাঁপুনি সৃষ্টি হয়; দেখা দেয় অরুচি, বমিবমি ভাব, খিচুনি, অনিদ্রা, কথা-বার্তা ও চাল-চলনে অসঙ্গতি, চোখের তারার প্রসারণ, অস^াভাবিক ক্রোধ, মিথ্যা অনুভূতি, অমনোযোগ, পরিবেশের প্রতি অনাগ্রহ, খুটিনাটি বিষয়ে দিকবিভ্রম, বিস্মৃতি, অহেতুক ভীতি, অবসাদ ও বিরক্তি, সব মনোবৈকল্য। এসব বিড়ম্বনা থেকে বাঁচার একটি সঠিক পন্থা বের করা অপরিহার্য। যথাসময়ে ও সঠিকভাবে চিকিৎসা করা না হলে মৃত্যুই হয় দুর্নিবার পরিণতি।
মাদকাসক্তদের সুস্থ ও স^াভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য শারীরিক চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা অনস^ীকার্য। তবে সমস্যার কার্যকর ও স্থায়ী সমাধানের জন্য পাশাপাশি প্রয়োজন সামাজিক চিকিৎসারও। কেবল শারীরিক চিকিৎসার সর্ববিধ উদ্যোগ প্রকৃতপক্ষে আসল সমস্যাকে ধামাচাপা দেয়ারই নামান্তর।
বাংলাদেশের ন্যায় আপাত পশ্চাৎপদ ও সমস্যাসংকুল। অথচ, প্রভূত প্রাকৃতিক ও জনসম্পদে সমৃদ্ধ বিপুল সম্ভাবনাময় দেশটিকে সর্বনাশা মাদকের গ্রাস থেকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। মাদকের কারণে শ্রমদিবস নষ্ট, উৎপাদন হ্রাস, দীর্ঘ চিকিৎসার বাড়তি খরচ, জনশক্তির ক্ষয় ইত্যাদি রোধকল্পে সরকারকে মাদকবিরোধী অভিযানের ফলে আবগারি আয় হ্রাস, চিকিৎসা ও পুনর্বাসন ব্যয় ইত্যাদি ব্যাপারে আর্থিক ক্ষতি স্বীকার করতে হবে। দেশের প্রতিটি সচেতন নাগরিকসহ সরকারের একাগ্রতা ও সদিচ্ছা, সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের নিরপেক্ষতা ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ, সমাজ-সচেতন ব্যক্তি ও অভিভাবকদের আন্তরিক সহযোগিতা সুষ্ঠু সমন্বয় তথা স¤িমলিত প্রয়াসের মাধ্যমে মাদকদ্রব্যের বিরাজমান ভয়াবহ অভিশাপ থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নবীনগর ও কসবায় বিভিন্ন রকমের মাদকসহ তিন যুবক গ্রেপ্তার
চাঁদপুর মেঘনায় জাহাজে মিলল ৫ জনের মরদেহ
বরিশালে মাহমুদিয়া মাদ্রাসার ৭৮তম মাহফিল ও ইসলামী মহাসম্মেলন শুরু
বিনা খরচে কৃষকের দেড়’শ ধানের চারা রোপন করে দিল কালীগঞ্জ কৃষি আফিস
সিরিয়ার নেতার সঙ্গে তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান
আরাফাত রহমান কোকো ৮ দলীয় ফুটবল টুর্নামেন্টে উদ্দীপন যুব সংঘ চ্যাম্পিয়ন
সাতক্ষীরার নলতায় চার দফা দাবিতে ছাত্র -ছাত্রীদের আন্দোলন, ক্যাম্পাসের নাম বদল
অর্থনৈতিক সংকটে আফগান রুটি, ঐতিহ্য ও জীবনের অংশ
আশুগঞ্জে গ্যারেজ মালিককে হত্যা করে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়েছে দুর্বৃত্তরা
উত্তরপ্রদেশে ৩ খলিস্তানি বিদ্রোহীকে গুলি করে হত্যা পুলিশের
শিবালয়ের যমুনায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হুমকিতে বৈদ্যুতিক টাওয়ার
হিলিতে কমেছে আলু পেঁয়াজের দাম
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার ১,১০০ হতাহতের শিকার : সিউল
ঢাকা - মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ঘণ কুয়াশায় আবারো দূর্ঘটনা , নিহত ১ আহত ৪
ড্রোন হামলার জবাবে ইউক্রেনে ‘ধ্বংসযজ্ঞ’ চালানোর হুমকি পুতিনের
রাহাত ফতেহ আলী খানের সম্মানে পাকিস্তান হাইকমিশনারের নৈশভোজ আয়োজন
‘চা পান স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী’, স্বীকৃতি যুক্তরাষ্ট্রের
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে কাপ্তাই ভূমিকা রেখেছিলো, আগামীতেও রাখবে : ঢাবি শিবির সেক্রেটারি
মার্কিন টাইফুন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা অর্জনের পথে ফিলিপাইন
সুন্দরবনকেন্দ্রিক দস্যুতা বন্ধে পুলিশের নজরদারি বৃদ্ধি করা হচ্ছে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত