সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা জরুরি
০৪ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৭ এএম
আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য করা নিয়ে বিরোধীদলগুলোর সাথে সরকারের সংলাপ, সমঝোতা ও ঐক্যমত্যের ওপর বারবার তাকিদ দিচ্ছে দেশের সচেতন নাগরিক সমাজ এবং বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো। গতকাল একটি দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংলাপ চায়। দেশগুলো মনে করছে, সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে রাজপথে সহিংসতা বাড়ছে। সমঝোতা ছাড়া তফশিল ঘোষণা করা হলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছে দেশগুলো। তাই এখনই অর্থবহ সংলাপ হলে তা অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পথ সুগম করবে। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল বাংলাদেশ সফর শেষে পাঁচটি সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে শুরুতেই তারা রাজনৈতিক সংলাপের কথা বলেছে। এছাড়া গত ৩১ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস প্রধান নির্বাচন কাজী কমিশনার হাবিবুল আউয়ালের সাথে বৈঠক করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শর্তহীন সংলাপের তাকিদ দেন। তার আগে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, সংলাপের মাধ্যমেই দেশে চলমান রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে হবে। আমরা সংলাপের বিরুদ্ধে না, তবে দরজা বন্ধ করে সংলাপ করা যায় না। সারা পৃথিবীতেই অনেক সমস্যার সমাধান আলোচনার মাধ্যমেই হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও গত সপ্তাহে সংলাপের কথা বলেছেন। তবে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বিএনপির সাথে সংলাপের বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে সংলাপের সম্ভাবনার বিষয়টি এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সাথে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সাথে বৈঠকের পর নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপের আয়োজন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বিএনপিসহ অন্যান্য দলকে সংলাপে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের বরাবর দেয়া নির্বাচন কমিশনের চিঠি দলটির নয়াপল্টনস্থ বন্ধ থাকা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একটি চেয়ারে রেখে আসা হয়েছে। অথচ মির্জা ফখরুলসহ দলটির প্রায় সব নীতিনির্ধারক নেতা এখন কারাবন্দী। চিঠি গ্রহণ করার মতো নেতা নেই। ফলে পর্যবেক্ষকরা সংলাপ আহ্বান করে চিঠি দেয়াকে বৃহৎ একটি দলের সাথে নির্বাচন কমিশনের ‘মস্করা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। অতীতেও নির্বাচন কমিশন সরকারিদল এবং বিরোধীদলগুলোর সাথে সংলাপের আয়োজন করেছিল। সেই সংলাপের কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি। ফলে নির্বাচন কমিশনের এসব সংলাপের উদ্যোগ লোকদেখানো এবং অর্থহীন ছাড়া কিছুই নয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, রাজনৈতিক সংকট নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেই আলাপ-আলোচনা ও সংলাপ হতে হয়। অতীতেও সংলাপ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেই হয়েছে। সংলাপের সাফল্য ও ব্যর্থতা সেখান থেকেই হয়েছে। ফলে রাজনৈতিক সমঝোতা ও ঐকমত্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলাপ-আলোচনার মধ্যে হতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখন যে রাজনৈতিক সংঘাত, সংঘর্ষ ও অনৈক্য চলছে, তা নিরসনে সরকার ও সরকারি দলকেই উদ্যোগী হওয়া বাঞ্চনীয়। দুঃখের বিষয়, বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ এবং জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা জরুরিভিত্তিতে সংলাপের প্রয়োজনীয়তার কথা বললেও সরকারের উচ্চ মহল থেকে তা সরাসরি নাকচ করে দেয়া হচ্ছে। ক্ষমতাসীনরা বিরোধীদলের আন্দোলনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলের নেতাকর্মীদের দিয়ে বলপূর্বক দমন-পীড়নের পন্থা অবলম্বন করছে। এ থেকে প্রতীয়মান হয়, ক্ষমতাসীনদল জোর করে হলেও আগামী নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এর ফলাফল দেশের জন্য কোনোভাবেই কল্যাণকর হবে না। এতে অপূরণীয় ক্ষতি হবে। বিশেষ করে দেশের শোচনীয় অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রাজনৈতিক সংঘাত-সংঘর্ষ সার্বিক পরিস্থিতিকে গভীর খাদে নিয়ে ফেলবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার মধ্যেই অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়েছে। রিজার্ভ ক্রমেই নিম্নগামী, আমদানি-রফতানি বাণিজ্য ও রেমিট্যান্সের ক্রমাবনতি, মূল্যস্ফীতি ও নিত্যপণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি থেকে শুরু করে অর্থনীতির সবসূচক নেতিবাচকতার দিকে ধাবিত। গত অক্টোবরে রফতানি কমেছে প্রায় ১৪ শতাংশ। ব্যবসায়ীরা এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, রাজনৈতিক সংঘাত, সংঘর্ষ এবং হরতাল-অবরোধ, শ্রমিক আন্দোলনের ফলে প্রতিদিন ছয় হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে না। অর্থনীতির এ অপূরণীয় ক্ষতি উপেক্ষা করে সরকারের পুরো মনোযোগ এখন রাজনীতি নিয়ে। রাজনৈতিক সংকট নিরসনে উদ্যোগ না নিয়ে জোরজবরদস্তিমূলকভাবে বিরোধীদলের আন্দোলন দমাতে বেশি ব্যস্ত বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। সরকারের মধ্যে একধরনের গোয়ারতুমি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এভাবে যে সংকটের সমাধান হবে না, তা বলা বাহুল্য।
রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংলাপ ও সমঝোতার প্রয়োজনীয়তা কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই। এর বিকল্পও কিছু নেই। এ ব্যাপারে সরকারের নেতিবাচক অবস্থান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটকে বিপর্যয়কর পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে, যা কোনোভাবে কাম্য নয়। এ নিয়ে সকলের মধ্যেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। একধরনের অনিশ্চিত ও নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, যা দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়। আমরা বারবার বলেছি, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে সংলাপ, সমঝোতা এবং ঐক্যমত্যের বিকল্প নেই। দমন-পীড়ন করে বিরোধীদলের আন্দোলন দমানোর প্রক্রিয়া স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারে না। সময় দ্রুত পার হয়ে যাচ্ছে। সরকারি দল ও মহলকে এখনই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, শুভস্য শীঘ্রম।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল
‘স্পেন্ড অ্যান্ড উইন’ ক্যাম্পেইনের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে মাস্টারকার্ড
সিটি ব্যাংক আনল অভূতপূর্ব ভিসা ইনফিনিট ক্রেডিট কার্ড
শেখ হাসিনার কোনো ক্ষমা নেই, জবাব তাকে দিতেই হবে : মির্জা ফখরুল
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে