মামলা ও গ্রেফতার করে কি সংকট সমাধান করা যাবে?
০৫ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
দেশের কারাগুলোতে বর্তমানে ‘ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই’ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। দেশের প্রায় সব কারাগারেই এখন ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ বন্দি রয়েছে। প্রতিদিনই কারাগারে বন্দির চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের পর থেকেই কারাগারে বন্দির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এসব বন্দির বেশিরভাগই বিএনপির নেতাকর্মী। মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা দিয়ে পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করছে। ইতোমধ্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ আরও বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ের এবং দলটির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশের এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই গ্রেফতার করা হচ্ছে দলটির নেতাকর্মীদের। মহাসমাবেশের পর বিভিন্ন ধারায় এ পর্যন্ত ৫৭টি মামলা করা হয়েছে। শত শত বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং হচ্ছে। তাদের আদালতে হাজির করে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। কাউকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠাচ্ছে। ফলে কারাগারগুলোতে বন্দিদের স্থান সংকুলান করতে কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দির চাপ বেশি পড়েছে। কারাকর্তৃপক্ষ চাপ সামলাতে এখান থেকে প্রতিদিন দুই থেকে তিনশ বন্দি কাশিমপুর কারাগারে স্থানান্তর করছে। এছাড়া কম গুরুত্বপূর্ণ মামলায় জামিন দিয়ে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াইশ সাধারণ বন্দি মুক্ত করা হচ্ছে। এ প্রক্রিয়াতেও কারাগারগুলোতে স্থান সংকুলান হচ্ছে না। কারাগারগুলোতে চরম অমানবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।
দেশে মোট ৬৮টি কারাগার রয়েছে। এসব কারাগারের বন্দি ধারণক্ষমতা ৪২ হাজার ৮৬৬। তবে বরাবরই কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বন্দি থাকে। গত বৃহ¯পতিবার (২ নভেম্বর) পর্যন্ত বন্দির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৫ হাজার ৪৪২ জনে। সামনের দিনগুলোতে রাজনৈতিক পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে বন্দির সংখ্যা যে বৃদ্ধি পাবে, তা হলফ করে বলা যায়। এ প্রেক্ষাপটে, কারাগারগুলোতে আরও অন্তত ৪০ হাজার বন্দি রাখার ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি নিচ্ছে কারা অধিদপ্তর। কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী, কারাগারগুলোতে যে পরিমাণ বন্দি থাকার কথা তার চেয়ে দ্বিগুণ বন্দি আছে। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কারাগারগুলোয় এক লাখের বেশি বন্দি ছিল। সাধারণত জেল কোড অনুযায়ী, একজন বন্দির জন্য ৩৬ বর্গফুট জায়গা প্রয়োজন। ওই জায়গায় দুজন বন্দি রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনে আরও একজন রাখা যাবে। ফ্লোরিং করলে একজনের জায়গায় দুই-তিনজনকে রাখা যায়। এ চিত্র থেকে বোঝা যাচ্ছে, কারাগারগুলোতে বন্দিরা নিয়ম অনুযায়ী, সুবিধা পাচ্ছে না। তাদেরকে গাঁদাগাঁদি করে থাকতে হচ্ছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও অশান্ত হয়ে উঠলে বন্দির সংখ্যা যে বৃদ্ধি পাবে তাতে সন্দেহ নেই। ইতোমধ্যে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেছেন, বিএনপির সব নেতাকেই ধরা হবে। পুলিশের এ মনোভাব থেকে বোঝা যায়, কারাগারগুলো বিএনপির নেতাকর্মী দিয়ে পরিপূর্ণ করা হবে। পর্যবেক্ষকরা এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, এখন এমনিতেই কারাগারগুলোতে স্থান সংকুলানের অভাবে অমানবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সামনে বন্দি বৃদ্ধি পেলে তা শোচনীয় পর্যায়ে উপনীত হবে। এ ধরনের পরিস্থিতি মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল হবে। দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে বরাবরই যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থা অনেক আগে থেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। বাংলাদেশে অব্যাহত খুন, গুম, অপহরণ, বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ডসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনজতি বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এবং করছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ইতোমধ্যে র্যাবের উপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব প্রতিবেদন প্রকাশ এবং নিষেধাজ্ঞা সরকার আমলে নিচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। সংশোধনেরও কোনো প্রক্রিয়া অবলম্বন করছে না। বরং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে বিরোধীদল বিশেষ করে বিএনপির ওপর অনেকটা স্টিম রোলার চালিয়ে দিয়েছে। বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ একেক নেতার বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা করা হয়েছে। কোনো কোনো নেতার বিরুদ্ধে প্রায় পাঁচশ মামলা হয়েছে। নতুন আরও মামলায় তাদের আসামী করা হচ্ছে। বিএনপির দাবি মোতাবেক, ইতোমধ্যে তার দলের প্রায় ৫০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। এসব মামলার সঙ্গে নতুন মামলা দেয়া হচ্ছে। মামলায় শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে আসামী করে অজ্ঞাত শত শত ব্যক্তিকে আসামী করা হচ্ছে। এমনকি মৃত ব্যক্তি ও বিদেশে রয়েছে, বিএনপির এমন নেতাকর্মীকেও আসামী করা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামীদের মধ্যে অনেক সময় সাধারণ মানুষকেও ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে, গার্মেন্ট শ্রমিকদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করেও মামলা এবং গ্রেফতার করা হচ্ছে।
কারাগার কর্তৃপক্ষ আরও ৪০ হাজার বন্দি রাখার ব্যবস্থা করছে। প্রশ্ন হচ্ছে, যেভাবে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে, এতে এই ৪০ হাজার যদি ৪০ লাখে পরিণত হয়, তখন কি করবে? এভাবে কি সমস্যার সমাধান হবে? হামলা, মামলা ও গ্রেফতার করে সমস্যার সমাধান হবে না। রাজনৈতিক সংকট জিইয়ে রেখে তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে না। বরং তা আরও জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে। রাজনৈতিক সংকট নিরসনে ইতোমধ্যে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার জোর তাকিদ দিয়েছে জাতিসংঘ এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রভাবশালী দেশ ও বিভিন্ন সংস্থা। সরকারের শীর্ষমহল সরাসরি বিরোধীদলের সাথে সংলাপের বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছে। এ মনোভাব থেকে স্পষ্ট, বিরোধীদলগুলোর আন্দোলনকে জোর করে দমন করার নীতি গ্রহণ করেছে সরকার। সরকারের এমন মনোভাবকে পর্যবেক্ষকরা অনাকাক্সিক্ষত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বিরোধী দলের সব নেতাকর্মীকে জেলে পুরে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন করা সম্ভব নয়। এতে দেশ দীর্ঘস্থায়ী অস্থিতিশীলতায় নিক্ষিপ্ত হবে, যা দেশের অর্থনীতির শোচনীয় পরিস্থিতিকে আরও অবনতির দিকে নিয়ে যাবে। সরকারের উচিৎ হবে. কঠোর মনোভাব পরিহার করে বিরোধীদলগুলোর সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে স্থিতিশীল ও সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিশ্চিত করা।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল
‘স্পেন্ড অ্যান্ড উইন’ ক্যাম্পেইনের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে মাস্টারকার্ড
সিটি ব্যাংক আনল অভূতপূর্ব ভিসা ইনফিনিট ক্রেডিট কার্ড
শেখ হাসিনার কোনো ক্ষমা নেই, জবাব তাকে দিতেই হবে : মির্জা ফখরুল
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে