মেট্রোরেলসহ সব মেগাপ্রকল্পের সুফল নিশ্চিত করতে হবে
০৭ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৯ এএম
বাংলাদেশ মেট্রোরেলের যুগে প্রবেশ করেছে গত বছর ২৮ ডিসেম্বর। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার প্রথম মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-৬-এর উত্তরা-আগারগাঁও অংশ উদ্বোধন করেন। এ বছর ৪ নভেম্বর এই লাইনের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশ উদ্বোধন করেছেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে ঢাকার প্রথম মেট্রোরেল পূর্ণতা লাভ করলো। এ লাইনই সম্প্রসারিত হয়ে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত যাবে। মতিঝিল-কমলাপুর অংশ নির্মাণের পাশাপাশি ২০৩০ সালের মধ্যে আরো ৫টি মেট্রোরেল লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা আছে সরকারের। ইতোমধ্যে এমআরটি লাইন-১ ও এমআরটি লাইন-৫-এর কাজ শুরু হয়েছে। বাকী ৩টি লাইনেরও প্রাথমিক কাজ চলছে। যাত্রীদের সহজ যাতায়াত, যানজট নিরসন ও ধীরগতির ঢাকাকে গতিশীল করার লক্ষ্যে মেট্রোরেল নির্মাণ একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। সব মেট্রোরেল লাইন নির্মাণ সম্পন্ন ও চালু হলে যানজট কমবে। পরিবেশ দূষণ, বিশেষ করে বায়ু, শব্দ ও ধূয়া দূষণ হ্রাস পাবে। একই সঙ্গে জ্বালানি সাশ্রয় হবে, শ্রমঘণ্টার অপচয় ও মানসিক-শারীরিক স্বাস্থ্যঝুঁকিও কমবে। বাড়বে জিডিপি। উত্তরা থেকে মতিঝিল আসতে এখন যেখানে অন্তত ৩ ঘণ্টা চলে যায়, সেখানে মেট্রোরেলে আসতে সময় লাগবে স্টেশনে স্টেশনে দাঁড়ানোর সময় বাদে মাত্র ৩১ মিনিট। ভাড়া দিতে হবে যাত্রীপিছু ১০০ টাকা। জানা গেছে, মেট্রোট্রেনে প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার এবং প্রতিদিন ৫ লাখ যাত্রী বহন করা সম্ভব হবে। নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও দ্রুত যাতায়াতের মাধ্যম হিসাবে পরিগণিত হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বের সব দেশে মেট্রোরেল নেই। এশিয়াতে আছে ২১টি দেশে। বাংলাদেশ হলো ২২তম দেশ। দেশকে এই অনন্যসাধারণ অর্জন উপহার দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধন্যবাদার্হ। উল্লেখ করা যেতে পারে, ঢাকাকে যানজটমুক্ত করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী বেশ কিছু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন, তার মধ্যে মেট্রোরেল একটি। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বাস র্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) কথাও উল্লেখ করা যায়। ফ্লাইওভার তো আছেই। এসব মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকাই খরচ হয়নি, জনসাধারণকেও বছরের পর বছর অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে। প্রায় কোনো প্রকল্পের কাজই নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি। সময় বেশি লাগায় ব্যয়ও বেশি হয়েছে। মেট্রোরেলের একটি লাইন কেবল শেষ হয়েছে। বিআরটি আংশিক খুলে দেয়া হয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েও একাংশ চালু হয়েছে।
এত মেগা প্রকল্প গ্রহণ ও তাদের খণ্ডাংশ চালু করার পরও যানজট কিংবা যানজটের বিবিধ ক্ষতি যে কমেছে, এমনটা বলা যাবে না। এখনো ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে নাকাল হতে হয় যাত্রীদের। পর্যবেক্ষকদের মতে, প্রকল্পগুলোর নানা ক্ষেত্রে ত্রুটি ও অসম্পূর্ণতা রয়েছে। তাছাড়া কোনো প্রকল্পই সম্পূর্ণ হয়নি, কাজ বাকি আছে। অথচ তাদের অংশবিশেষ তড়িঘড়ি করে উদ্বোধন ও চালু করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ কাজ না করেই অংশ বিশেষ চালু করা হয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাওলা-ফার্মগেট অংশ চালু হয়েছে। এটি সম্প্রসারিত হয়ে চট্টগ্রাম রোডের কুতুবখালি পর্যন্ত যাবে। এক্সপ্রেসওয়ের কাওলা থেকে র্ফামগেটে আসা যাত্রীরা অন্যান্য গন্তবে কীভাবে যাবে, তার কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে ফার্মগেটে নেমে যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়ছে। ওইটুকু পথ দ্রুত এসে যানজটের কবলে পড়ছে। এখন মেট্রোরেল মতিঝিল পর্যন্ত আসছে। মেট্রোরেলে মতিঝিলে আসা যাত্রীরা অন্যান্য গন্তব্যে সহজে যেতে পারছে না। আমরা ইতোপূর্বে বলেছিলাম, মতিঝিল গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকা হওয়ায় প্রতিদিন রাজধানীর বিভিন্ন অংশ থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষের এখানে যাতায়াত ঘটে। মতিঝিলের সঙ্গেই লাগোয়া গুলিস্তান। সেখানে রয়েছে বিভিন্ন মার্কেট ও হাজার হাজার দোকান-পাট। জাতীয় মসজিদও তারই পাশে। সেখানেও আছে মার্কেট ও দোকান। সব মিলে গোটা এলাকায় প্রতিদিন যে অগনিত মানুষের সমাগম হয়, তাদের মসৃণ যাতায়াতের জন্য মতিঝিলকে কেন্দ্র করে একটি ট্রান্সপোর্ট হাব গড়ে তোলা জরুরি। অবিলম্বে এ হাব গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিতে হবে। দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, ট্রান্সপোর্ট হাব করার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসাবে ফার্মগেট পরিচিত। সেখান দিয়ে বিভিন্ন রুটের বাস যাতায়াত করে। ব্যাপক আকারে লোকজনের যাতায়াত আছে সেখানে। যানজটও নিত্যদিনের বাস্তবতা। সেখানেও একটি বড় ধরনের টান্সপোর্ট হাব দরকার। মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর এর প্রয়োজনীয়তা আরো বেড়েছে। ফার্মগেটে ট্রান্সপোর্ট হাব করার কোনো চিন্তা-ভাবনা সরকারের আছে কিনা, জানা যায়নি। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, হওয়া উচিত।
শুধু রোড, রেললাইন ও দ্রুতগামী যানবাহনের আয়োজন করলেই লক্ষ্য অর্জিত হবে, যানজট নিরসিত হবে, ঢাকা দ্রুতগতির শহরে পরিণত হবে, এটা ভাবা ঠিক নয়। শহরের অভ্যন্তরে প্রবেশ ও বাইরে প্রস্থানের পর্যাপ্ত উপায় ও ব্যবস্থা থাকলেই কেবল যাতায়াত সহজ ও মসৃণ হতে পারে, লক্ষ্য হাসিল হতে পারে। কাজেই, মেগা প্রকল্পগুলো ফের পর্যালোচনা করে দেখা দরকার কোথায় কোথায় ত্রুটি ও অসম্পূর্ণতা আছে এবং নতুন কী কী করতে হবে। অতঃপর ত্রুটি সংশোধন করতে হবে, অসম্পূর্ণতা দূর করতে হবে। নতুন করে যা কিছু করা দরকার, করতে হবে। প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করতে হবে। এসব অবকাঠামোগত মেগা প্রকল্প জনসাধারণকে যথেষ্ট ভুগিয়েছে। তাদের এই দুর্ভোগ ও ভোগান্তির আশু অবসানই কাম্য।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল
‘স্পেন্ড অ্যান্ড উইন’ ক্যাম্পেইনের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে মাস্টারকার্ড
সিটি ব্যাংক আনল অভূতপূর্ব ভিসা ইনফিনিট ক্রেডিট কার্ড
শেখ হাসিনার কোনো ক্ষমা নেই, জবাব তাকে দিতেই হবে : মির্জা ফখরুল
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে