অর্থনৈতিক সংকট ঠেকাতে রাজনৈতিক সমঝোতা জরুরি
০৮ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৯ এএম
দেশে বিদ্যমান দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এখন সংঘাত ও অস্থিতিশীলতায় হাবুডুবু খেতে শুরু করেছে। আয়ের সাথে সঙ্গতিহীন মূল্যস্ফীতির যাঁতাকলে নিষ্পেশিত সাধারণ মানুষের আয়ের ন্যূনতম পথও সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক করতে দেশের প্রায় সব বিরোধীদল এবং উন্নয়ন সহযোগী ও পশ্চিমাবিশ্বের চাপ থাকলেও সরকারের অনমনীয় মনোভাবের কারণে অবস্থা ক্রমশ জটিল আকার ধারণ করছে। পর পর দুইটি বিতর্কিত ও একতরফা জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দেশের প্রধান বাণিজ্য ও উন্নয়ন সহযোগী মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের আপত্তি এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুতে রাজনৈতিক সংলাপ-সমঝোতার তাগিদ সরকারের দ্বারা অগ্রাহ্য হওয়ায় রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকট ক্রমেই ঘনীভূত হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থেকেও দেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ও গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ইস্যুগুলোর গ্রহণযোগ্য মীমাংসার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেনি সরকার। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে যখন রাজনীতির রাজপথ সরগরম ও সংঘাতময় হয়ে উঠেছে, ঠিক তখনি দেশের প্রধান রফতানিখাত গার্মেন্ট সেক্টরের শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে রাজপথে সহিংস আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। রাজনীতি এবং উৎপাদন ব্যবস্থার এসব অস্থিতিশীলতার প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে। অর্থনীতির সব সূচকেই বড় ধরনের মন্দার আভাস ক্রমে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ দ্রুত কমে যাচ্ছে। দেশে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতা অর্থনীতিকে আরো ভঙ্গুর করে তুলছে এবং ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে।
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার নয়াপল্টনে অনুষ্ঠিত বিএনপির মহাসমাবেশকে ঘিরে সরকারি দলের পাল্টা সমাবেশের ডাক এবং সহিংসতার অভিযোগে পুলিশের মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগে লাখ লাখ মানুষের মহাসমাবেশ পন্ড করে দেয়ার মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতিকে এক ভয়ঙ্কর সহিংসতা ও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে পুলিশ, সরকারি দল এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ব্লেইমগেমের রাজনীতির পাশাপাশি বিরোধী দলের উপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্র্যাকডাউন অব্যাহত থাকলেও সরকারি ন্যারেটিভ দেশের মানুষের কাছে যেমন বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে না, একইভাবে জাতিসংঘসহ পশ্চিমাবিশ্বের কাছেও গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে না। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যাপক ধরপাকড়ের নিন্দা জানিয়ে সব সহিংস ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। রাজনৈতিক সহিংসতা, মানবাধিকার লংঘন এবং গণতান্ত্রিক-অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে দেশে-বিদেশে গড়ে ওঠা জনমত উপেক্ষা করে আরেকটি একতরফা নির্বাচনের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ঝুঁকির বিষয়ে অনেক আগে থেকেই সরকারকে সতর্ক করা হয়েছিল। সে সবের তোয়াক্কা না করায় দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতি এখন চরম অনিশ্চিত এবং সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে শুরু করেছে। বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আটক এবং লাখ লাখ কর্মীকে গ্রেফতার আতঙ্ক ও আত্মগোপনে ঠেলে দিয়েও হরতাল-অবরোধ তথা আন্দোলনের তীব্রতা ঠেকানো যাচ্ছে না। বিরোধী দলের আন্দোলন কার্যত একটি গণআন্দোলনে রূপ লাভ করছে।
দেশের অর্থনীতিতে অশনি সংকেত হঠাৎ করেই দেখা দেয়নি। বিরোধী দল ও জনগণের ন্যায্য দাবিকে অগ্রাহ্য করে ক্রমাগত দমন-পীড়ন করা, লাখ লাখ মানুষের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পথ রুদ্ধ করায় তার প্রতিক্রিয়া জাতীয় অর্থনীতিতে পড়তে বাধ্য। সেই সাথে বল্গাহীন দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি ডলার বিদেশে পাচার করে দেশের অর্থনীতি ভেতর থেকে ফোকলা ও দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার দায় সরকারের সংশ্লিষ্টরা এড়াতে পারেন না। গত সোমবার রাজধানীতে ইআরএফ সংলাপে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, দেশের অর্থনীতি এখন অনেক বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। তিনি তার ৩৬ বছরের কর্মজীবনে আর কখনো এত বড় অর্থনৈতিক সংকট প্রত্যক্ষ করেননি বলে গণমাধ্যম কর্মীদের জানান। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহানও সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ধসের ধারার সাথে শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতির মিল রয়েছে। একটি রাজনৈতিক সংঘাত ও পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে শ্রীলঙ্কা এরই মধ্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলেও বাংলাদেশের অনিশ্চয়তা এবং রাজনৈতিক সংঘাত আরো ঘনীভূত হচ্ছে। দেশের গার্মেন্ট রফতানি খাত এরই মধ্যে বড় ধরনের আশঙ্কা ও হুমকির মধ্যে পড়েছে। বিরোধী দলের অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে ধরপাকড় করেও আন্দোলন স্তিমিত করা যাচ্ছে না। পশ্চিমা বিশ্বের চাপ, জনগণের আকাক্সক্ষা, ভোটাধিকার, মানবাধিকার, অর্থনৈতিক সংকট এবং সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে একটি রাজনৈতিক সংলাপ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের রূপরেখা চূড়ান্ত হওয়া প্রয়োজন। গ্রণগ্রেফতার, দমন-পীড়ন বন্ধ করে সরকারকে রাজনৈতিক সমঝোতার পথ সুগম করতে হবে। কেননা, শত শত কোটি ডলারের বিনিয়োগ, লাখ লাখ শ্রমিকের স্বার্থ এবং জনগণের গণতান্ত্রিক দাবি উপেক্ষা করে সরকারের পক্ষে কোনো রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জন করা অসম্ভব।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল
‘স্পেন্ড অ্যান্ড উইন’ ক্যাম্পেইনের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে মাস্টারকার্ড
সিটি ব্যাংক আনল অভূতপূর্ব ভিসা ইনফিনিট ক্রেডিট কার্ড
শেখ হাসিনার কোনো ক্ষমা নেই, জবাব তাকে দিতেই হবে : মির্জা ফখরুল
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে