ঢাকা   শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১

সংলাপের তাকিদ উড়িয়ে দেয়া উচিত হবে না

Daily Inqilab কামরুল হাসান দর্পণ

১০ নভেম্বর ২০২৩, ১২:৩৮ এএম | আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৩, ১২:৩৮ এএম

চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির গতিপ্রকৃতি কি হবে, কোন দিকে যাবে, তা বলা মুশকিল। সংঘাতের আশঙ্কাই বেশি। বিএনপি ও বিরোধীদলগুলো সরকারের পদত্যাগের একদফা ও নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে। রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংলাপের বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে সরকার আন্দোলন দমনে শক্তি প্রয়োগ করছে। ইতোমধ্যে ২৮ অক্টোবরের বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের জেরে মামলা দিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ, মির্জা আব্বাসসহ সিনিয়র নেতাসহ এবং বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। নতুন করে অর্ধশতাধিক মামলা দিয়ে বিএনপির প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি নেতাকর্মী গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়েছে। দলটিকে নেতৃত্বশূন্য ও মাঠছাড়া করতে সরকার কঠোরতর অবস্থান নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতেও বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধীদল আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এটা সবাই বুঝতে পারছেন, পরিস্থিতির সহসা উন্নতি ও শান্তিময় হয়ে উঠবে না। ইতোমধ্যে জাতিসংঘ যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা প্রভাবশালী দেশ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করে বক্তব্য-বিবৃতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও সচেতন মহল সংলাপের মাধ্যমে সংকট উত্তরণের আহ্বান জানিয়েছে। সরকার তাতে কর্ণপাত করছে না। সে বিরোধীদলকে দমন করার নীতি গ্রহণ করেছে। অন্যদিকে, বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধীদল তাদের দাবিতে অটল রয়েছে। সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, বিরোধীদলের দাবি মানা হবে না। বিরোধীদলগুলোও বলছে, দমন-পীড়ন করে আন্দোলন ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। ফলে নানা ধরণের গুঞ্জণ ও গুজব ছড়িয়ে পড়ছে। এমন সব কথাও শোনা যায়, যা রাজনীতির জন্য মোটেই সুখকর নয়। কেউ বলছেন, ক্ষমতাসীন দল বাড়াবাড়ি করছে। এ কথাও বলা হচ্ছে, সরকার ও বিরোধীদল এমন এক অবস্থায় চলে গেছে যে, তাদের কারোই সে অবস্থান থেকে ফিরে আসার উপায় নেই। যে ফিরে আসতে চাইবে, তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে। অনেকের মতে, বিরোধীদল বিশেষ করে বিএনপির হারাবার কিছু নেই। আন্দোলন করতে গিয়ে তারা অনেক হারিয়েছে এবং হারাচ্ছে। তাদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাসহ হাজার হাজার নেতাকর্মী জেলে। অনেকে প্রাণ হারাচ্ছে। অন্যদিকে, সরকারের হারাবার অনেক কিছুই আছে। আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এমনই যে, সরকার থেকে যারা বিদায় নেয়, বিরোধীদলের চেয়ে তাকে অনেক বেশি খেসারত দিতে হয়, তার অপশাসনের কারণে। দায়িত্বে থাকাকালীণ তার কর্মকা-ের বিচার-বিশ্লেষণ অনেক বড় হয়ে দেখা দেয়। অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করে এমন প্রশ্নও তুলছেন, সরকার ও বিরোধীদলের মধ্যে যদি সংলাপের মাধ্যমে কোনো ঐক্যমত্য না হয়, তাহলে তৃতীয় কোনো শক্তির পথ সুগম হয়। তাদের যুক্তি, ওয়ান-ইলেভেন যখন হয়েছিল, তখন কেউ ভাবতে পারেনি এমন একটি সরকার হতে পারে। অথচ হয়েছিল। কাজেই, সামনে হয়তো এমন ঘটনা ঘটতে পারে, যা কারো ধারণায় নেই। বলা বাহুল্য, গুজবে সত্য-অসত্যর মিশেল থাকে। নিশ্চিত করে কোন কিছুই বলা যায় না। প্রতি মুহূর্তেই পরিস্থিতি বদলায়। আজ যা ভাবা হচ্ছে, কাল তা ঠিক থাকছে না। ফলে কখন কি ঘটবে, তা এখন অনিশ্চিত এবং তমসাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে।

দুই.
চলমান সংঘাতময় পরিস্থিতিতে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর ভূমিকা কি হবে, তা নিয়েও সাধারণ মানুষের কৌতুহল রয়েছে। ইতোমধ্যে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশ ও মানবাধিকার সংস্থার পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে বক্তব্য-বিবৃতি দেয়া হয়েছে। এসব বক্তব্য-বিবৃতি অনাকাক্সিক্ষত হলেও, আমরা নিজেদের সমস্যা সমাধান করতে পারছি না, এর মাধ্যমে সেটাই প্রকাশিত হচ্ছে। আমাদের সমস্যা নিয়ে অন্যদের কথা বলতে হচ্ছে এবং সমস্যা নিরসনে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে তাদের চাপ সইতে হচ্ছে। এটা মোটেই দেশের জন্য মর্যাদার নয়। অবশ্য গ্লোবাল ভিলেজের যুগে বৈদেশিক বিনিয়োগ ও সাহায্যনির্ভর উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এবং যাদের স্বার্থ আমাদের দেশে রয়েছে, তাদের নাক গলানোর বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া যায় না। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার পারস্পরিক হিংসা-প্রতিহিংসা, অনৈক্যই বিদেশিদের নাক গলানোর সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ নিয়ে তেমন মাথা ব্যাথাও দেখা যায় না। বরং কোন প্রভাবশালী দেশ তাদের পক্ষে রয়েছে, এটা নিয়ে বড়াই করতে দেখা যায়। তাদের পক্ষ থেকে ঘটা করে বলা হয়, ওমুক দেশ তাদের পাশে আছে। কাজেই আমাদের আর চিন্তার কিছু নাই। এ কথা তাদের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও আনন্দের জোয়ার বইয়ে দেয়। অন্যদিকে, সংশ্লিষ্ট দেশের বক্তব্য বা বিবৃতি বিপক্ষে গেলেই চুপসে যায়। কিছুদিন ধরে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে এমন কথা শোনা যায় যে, বিদেশি রাষ্ট্রের কাছে ধর্না দেয়ার প্রয়োজন নেই। এ নিয়ে বিএনপিকে তিরস্কারও করে। অথচ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং এসে যেভাবে হস্তক্ষেপ করে এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভারত যেভাবে সমর্থন দিয়ে আওয়ামী লীগকে পুনরায় ক্ষমতায় বসতে সহায়তা করে, তা দলটিকে বলতে শোনা যায় না। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, ক্ষমতাসীন দল বিদেশী সহযোগিতা পেলে তা সিদ্ধ, বিরোধীদল পেলে অসিদ্ধ। রাজনৈতিক দলগুলোর বিদেশি রাষ্ট্রের তোষণনীতি সাধারণ মানুষকেও প্রভাবিত করে। রাজনীতির উত্তাপ তাদেরও ছুঁয়ে যায়। রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্ত ও কর্মকা- তাদের ভাবায়। রাজনৈতিক সঙ্কটকালে কোন দেশের পক্ষ থেকে কি বক্তব্য আসে এবং তা কার পক্ষে গেল, এদিকেও তাদের তীক্ষè নজর থাকে। যার যার অবস্থান থেকে বিশ্লেষণ করে এবং তর্কে লিপ্ত হয়। অনলাইনে এ সংক্রান্ত বিভিন্ন সংবাদের নিচে তারা মন্তব্য করে। এসব মন্তব্যের বেশিরভাগই সরকারের সমালোচনামূলক। গত সপ্তাহে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ বজায় রাখাসহ বিরোধীদলকে দমানোর প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে। দুই ক্ষেত্রেই ক্ষমতাসীন দল নাখোশ হয়েছে। জাতিসংঘের বিবৃতি প্রতিবাদও করেছে। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কঠোর ভাষায় জাতিসংঘের সমালোচনা করেছেন। অন্যদিকে, অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রকে বিভিন্নভাবে তিরস্কার করে আসছে। ভারত এবার অনেকটা নিশ্চুপ। এসব বক্তব্য-বিবৃতি নিয়েও সাধারণ মানুষের মধ্যে জোর আলোচনা চলছে। অনেকে বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র গত দুই নির্বাচন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলেও ভারতের অবস্থানের বিষয়ে কিছু বলেনি। এবার সে সরাসরি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে জোরালো ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। ইতোমধ্যে ভিসানীতি কার্যকর করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থানের পক্ষে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ তার মিত্ররাষ্ট্রগুলোকেও দেখা যাচ্ছে। ফলে এখন পর্যন্ত বিদেশি রাষ্ট্র বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান, তা সরকারের জন্য অনুকূল নয়। সংলাপের মাধ্যমে সঙ্কট নিরসনে দেশগুলো যে আহ্বান জানিয়েছে সরকার তা উড়িয়ে দেয়ায় তারা যে ভালোভাবে নেবে না, এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।

তিন.
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ করে সমস্যার সমাধানে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর আহ্বানের অনেক আগে থেকেই দেশের নাগরিক সমাজ আহ্বান জানিয়েছে। সবাই বলেছে, চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসন হতে পারে একমাত্র সংলাপের মাধ্যমে। ক্ষমতাসীনদল বরাবরই বিষয়টি এড়িয়ে গেছে কিংবা সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে। উল্টো বিরোধীদল বিএনপিকে সন্ত্রাসীদলের অপবাদ দিয়ে তার সাথে কিসের সংলাপ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। অথচ নাগরিক সমাজ থেকে শুরু করে বিদেশি রাষ্ট্রগুলো মূলত বৃহৎ বিরোধীদল বিএনপির সাথেই সংলাপ করার আহ্বান জানিয়েছে। তাদের এ আহ্বানে বিএনপি সন্ত্রাসীদল, তা প্রতীয়মান হচ্ছে না। ক্ষমতাসীনদল বিএনপিকে যতই অবজ্ঞা ও অপবাদ দিক না কেন, বাস্তবতা হচ্ছে, বিএনপিকেই দেশে-বিদেশে সবচেয়ে বড় বিরোধীদল এবং বিপুল জনসমর্থনপুষ্ট হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এ বাস্তবতা মানতে নারাজ। সংকট এখানেই। ক্ষমতাসীনদল গত দেড় দশক ধরে বিএনপিকে প্রান্তিক দলে পরিণত করতে হেন কোনো চেষ্টা নেই যা করেনি এবং এখনও করছে। বিএনপির বিকল্প হিসেবে তার কিছু নেতা নিয়ে নতুন রাজনৈতিক দলও করেছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে, নির্বাচনের সময় বিএনপি না এলে তার কিছু নেতাকে ভাগিয়ে এনে ঐসব দল থেকে নির্বাচন করানো এবং দেখানো বিএনপির নেতারা দল ছেড়ে নির্বাচন করেছে। অথচ বিএনপির বড় শক্তি হচ্ছে, তার প্রতীক ধানের শীষ। যদি বিএনপি থেকে বেশিরভাগ নেতা বের হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাতে বিএনপি অংশগ্রহণ করেছে, তা প্রতিষ্ঠা করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কারণ, দলটির সমর্থক এবং ভোটাররা দেখবে ধানের শীষ নির্বাচনে আছে কিনা। অবশ্য নির্বাচন কমিশন ধানের শীষের আদলে গমের শীষ প্রতীক দিয়ে একটি দলকে নিবন্ধন দিয়েছে, যাতে সাধারণ ভোটাররা ধানের শীষ মনে করে ভোট দেয়। এটা এক ধরনের চালাকি। এ ধরনের চালাকি দিয়ে সচেতন ভোটারদের বিভ্রান্ত করা সম্ভব নয়। ফলে সরকার সংলাপের বিষয়টি উপেক্ষা করে এখন বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্য প্রায় সব শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করছে, যাতে দিকনির্দেশনার ঘাটতির কারণে আন্দোলন করতে না পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে আন্দোলন দমানোর কৌশল নিয়েছে। তবে এত দমননীতির পরও দলটি মাটি কামড়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দমননীতির মাধ্যমে আন্দোলন দমানো খুবই কঠিন। বিরোধীদল অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচি দিলে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া গোটা অর্থনীতির উপর পড়ে। দেশের সার্বিক অর্থনীতি এখন অত্যন্ত শোচনীয় পর্যায়ে রয়েছে। রিজার্ভ ও রেমিট্যান্স দিন দিন কমছে, ডলার সংকটে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য সংকুচিত হয়ে পড়েছে, মূল্যস্ফীতি, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। অর্থনীতির সবসূচক নি¤œগামী। এসব সমস্যা সমাধানের চেয়ে ক্ষমতাসীনদলের পুরো মনোযোগ এখন আন্দোলন দমানো এবং যেনতেনভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকা। এ লক্ষ্যে, বিরোধীদলের আন্দোলন যেকোনো উপায়ে দমনের প্রক্রিয়া অবলম্বন করে চলেছে। এর মাধ্যমে সমস্যার সমাধান যে হবে না, তা বিশ্লেষকরা বারবার বলেছেন। তারা সংকট নিরসনে সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক ঐক্যমত্য সৃষ্টির উপর জোর দিচ্ছেন। সচেতন মানুষ মনে করছে, সরকার সংলাপের বিষয়টি সরাসরি নাকচ করে চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে প্রলম্বিত করছে। তারা মনে করছেন, পরিস্থিতি পয়েন্ট অব নো রিটার্নে চলে যাচ্ছে।

চার.
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা একটি কথা বেশ জোরেসোরে বলছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিএনপিকে চূড়ান্তভাবে নির্মূল কিংবা দুর্বল করে দেয়ার প্রক্রিয়া অবলম্বন করেছে। বিএনপিকে সন্ত্রাসীদলের অপবাদ দিয়ে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করেছে। তারা মনে করছেন, বিএনপি’র মতো একটি বৃহৎ এবং ব্যাপক সমর্থকভিত্তিক দলের বিরুদ্ধে এই অপবাদ এবং নির্মূল করার প্রক্রিয়া দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বিশ্বাস করে না। বিপুল সংখ্যক এই মানুষের বিশ্বাসই আওয়ামী লীগের দাবি ভিত্তিহীন করে দিচ্ছে। তাদের বিশ্বাস, যে দলটি এরশাদের শাসনামলে আপোষহীনভাবে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে, নির্বাচিত হয়ে একাধিকবার দেশ পরিচালনা করেছে এবং দুই-তৃতীয়াংশ আসন নিয়ে ক্ষমতাসীন হওয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছে, সে দল সন্ত্রাসী, তা বিশ্বাস করার কোন কারণ নেই। তাদের মধ্যে এ প্রশ্নও গুঞ্জরিত হচ্ছে, প্রতিপক্ষের প্রতি এই অপবাদ একটা সময় বুমেরাং হয়ে যে আওয়ামী লীগের দিকে ছুটে আসবে না, তার নিশ্চয়তা কি? ক্ষমতায় তো কেউ চিরদিন থাকে না। যারা প্রতিপক্ষ দমন করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে চেয়েছে, তাদের বিদায় ঘন্টা দ্রুত বাজার নজির বিশ্বের অনেক দেশেই রয়েছে। ক্ষমতায় থাকার এ ধরনের প্রবণতা শুধু ক্ষমতাসীন দলকেই বিপর্যস্ত করে না, দেশকেও বিপর্যস্ত করে তোলে। চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে গুজব, গুঞ্জণ ছড়িয়ে পড়েছে, সাধারণ মানুষ তার দ্রুত অবসান চায়। দেশে-বিদেশে এই সঙ্কট উত্তরণে সংলাপের উপর যে জোর তাকিদ দেয়া হচ্ছে, এর প্রতি ক্ষমতাসীন দলের সাড়া দেয়া হবে সুবিবেচনার পরিচয়ক। দেশের ক্রান্তিকালে কোনো অজুহাতেই তা উড়িয়ে দেয়া কাম্য হতে পারে না। সরকার সংলাপ করবে না বলে যে যুক্তিই দেখাক না কেন, সংলাপ না হলে যে দেশ বিপর্যস্ত অবস্থা থেকে পরিত্রাণ লাভ করবে না, তার লক্ষণ ইতোমধ্যে দেখা দিয়েছে। কাজেই, কোন অঘটন ঘটার আগেই সরকারের উচিৎ সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক সংকট নিরসন করা।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি

বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু

সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু

রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে

রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে

বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত

বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে

বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা

বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা

লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই

লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই

রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে

রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে

দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা

দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা

জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ

জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ

উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী  প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন

উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন

সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।

পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।

ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার

ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার

রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল

রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল

‘স্পেন্ড অ্যান্ড উইন’ ক্যাম্পেইনের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে মাস্টারকার্ড

‘স্পেন্ড অ্যান্ড উইন’ ক্যাম্পেইনের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে মাস্টারকার্ড

সিটি ব্যাংক আনল অভূতপূর্ব ভিসা ইনফিনিট ক্রেডিট কার্ড

সিটি ব্যাংক আনল অভূতপূর্ব ভিসা ইনফিনিট ক্রেডিট কার্ড

শেখ হাসিনার কোনো ক্ষমা নেই, জবাব তাকে দিতেই হবে : মির্জা ফখরুল

শেখ হাসিনার কোনো ক্ষমা নেই, জবাব তাকে দিতেই হবে : মির্জা ফখরুল

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে