পোশাক শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি সহিংসতা ও দমন-পীড়ন কাম্য নয়
১০ নভেম্বর ২০২৩, ১২:৩৮ এএম | আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৩, ১২:৩৮ এএম
গার্মেন্ট শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি কাঠামো প্রত্যাখ্যান করার পর শ্রমিক আন্দোলন আরো তীব্র ও সহিংস হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে গাজীপুর আশুলিয়ায় আন্দোলনরত শ্রমিকদের উপর পুলিশের গুলিতে এক নারী শ্রমিকের মৃত্যু ও বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ন্যূনতম মজুরি নিয়ে গার্মেন্ট শ্রমিকদের আন্দোলন ও অসন্তোষ দীর্ঘদিনের। শ্রমিক আন্দোলন নিয়ে নানা রকম ব্লেইম গেম চালু থাকলেও শ্রমিক অসন্তোষ কমাতে ন্যূনতম মজুরি কাঠামোকে যৌক্তিক পর্যায়ে উন্নীত করতে সরকার ও মালিকপক্ষের আন্তরিকতা প্রশ্নবিদ্ধ। ইতিপূর্বে ২০১৮ সালে যে ন্যূনতম মজুরি (৮ হাজার টাকা) নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেটা ছিল তাদের দাবিকৃত (১৮ হাজার) অঙ্কের অর্ধেকেরও কম। ইতোমধ্যে গত ৫ বছরে দেশে অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষিতে শ্রমিকের জীবন যাপনের ন্যূনতম ব্যয় হিসাব করে একটি বাস্তবসম্মত মজুরি কাঠামো নির্ধারণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। শ্রমিক প্রতিনিধিরা ২৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের দাবি জানিয়ে এলেও মালিক-শ্রমিকের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় মজুরিবোর্ড বার বার বৈঠকে বসেও ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করতে পারছিল না। অবশেষে ৭ নভেম্বর মজুরি বোর্ডের ষষ্ঠ সভায় শ্রমিক প্রতিনিধিদের প্রস্তাবিত ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা এবং মালিক পক্ষের ১০ হাজার ৪০০ টাকার প্রস্তাবকে সমন্বয় করে ১২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। মজুরি বোর্ডের এই সিদ্ধান্তকে মালিকপক্ষের প্রতি পক্ষপাতিত্ব বলে দাবি করে প্রত্যাখ্যান করেছে শ্রমিকরা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের রাজনীতি অস্থিতিশীল ও সহিংস হয়ে উঠেছে। এহেন বাস্তবতায় উৎপাদন ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এ অবস্থার প্রথম ও সরাসরি শিকার হচ্ছে দেশের গার্মেন্ট রফতানি খাত। বিরোধীদলের উপর সরকারের দমন-পীড়ন, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলন দমনে অতিমাত্রায় বলপ্রয়োগ ও হতাহতের ঘটনা পোশাক ক্রেতাদের মধ্যেও বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। ইতোমধ্যে ১২ দেশের ক্রেতারা বাংলাদেশের পোশাক না কেনা বা ক্রয়াদেশ নিশ্চিত করার পরও পণ্য ফেরত দেয়ার মতো অভাবনীয় সিদ্ধান্তের কথা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় সকল পক্ষের সমঝোতা ও সহনশীল মনোভাব থাকা জরুরি। একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করতে বিরোধীদলের সাথে রাজনৈতিক সমঝোতা যেমন অপরিহার্য, একইভাবে দেশের প্রধান রফতানিমুখী শিল্প তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিক অসন্তোষ ও ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে ন্যূনতম সমঝোতা ও মধ্যপন্থা অবলম্বনে সরকার তথা মজুরি বোর্ডের ব্যর্থতার চিত্রই বেরিয়ে এসেছে। এসব অমীমাংসিত ইস্যু রাজনৈতিক-অর্থনৈতিকভাবে দেশকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। গতকাল একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যায়, আমাদের তৈরি পোশাকের প্রধান ক্রেতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রফতানি গত বছরের তুলনায় চলতি বছর (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) ২৩.৩৩ শতাংশ কমে গেছে। গত বছর এ সময়ে যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৮.২৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছিল, সেখানে চলতি বছরের একই সময়ে ৫.৭৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
বিশ্বে তৈরি পোশাক রফতানিতে চীনের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। আন্তর্জাতিক বাজারের প্রতিযোগিতায় প্রথম চীন যেখানে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি দেয় গড়ে ৩০৩ ডলার, বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে থাকা ভিয়েতনাম, ভারত, কম্বোডিয়া ইন্দোনেশিয়া যথাক্রমে ১৭০, ১৭১, ২০০ এবং ২৪০ ডলার মজুরি দেয়, সেখানে সদ্য প্রস্তাবিত মজুরিবোর্ড শ্রমিকদের যে সাড়ে ১২ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করেছে তা সরকারি হিসেবে ১১৩ ডলারের সমান। সারা বছর দেশের বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশের কাছাকাছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি হিসাব করে জানিয়েছে, একটি শ্রমিক পরিবারের মাসিক ন্যূনতম খরচ ২৯ হাজার ৪১০ টাকা, যা মূল্যস্ফীতিসহ ৩১ হাজার ৯৪২ টাকা। এর ভিত্তিতে স্বামী-স্ত্রী দুজনের গড় আয় হিসাব করে শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ১৭ হাজার ৫৬৮ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গার্মেন্ট রফতানিকারক দেশের মালিক-বিনিয়োগকারীরা কেন সর্বনি¤œ হারের বেতন দিয়েও শ্রমিকের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করতে পারছে না, এ প্রশ্ন অগ্রাহ্য করার সুযোগ নেই। শ্রমিকদের সহিংস আন্দোলনে কারখানায় অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুরের ঘটনা সমর্থনযোগ্য নয়। নিজেদের কারখানা ও কর্মসংস্থানের ধ্বংস সাধনের মধ্য দিয়ে কোনো স্বার্থ হাসিল করা যায় না। বুধবার পুলিশের গুলিতে নিহত গার্মেন্ট শ্রমিক আঞ্জুয়ারাসহ শ্রমিক হতাহতের প্রতিবাদ এবং ন্যায়সঙ্গত ও ন্যূনতম মজুরি কাঠামোর দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শ্রমিক প্রতিনিধিরা। এ অবস্থায় শ্রমিক প্রতিনিধি, গার্মেন্ট মালিক এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট পক্ষের মধ্যে একটি যৌক্তিক অবস্থান নিশ্চিত হওয়া জরুরি। পুলিশ, বিজিবি, র্যাবের অতিমাত্রায় শক্তি প্রয়োগ এবং গুলি করে শ্রমিক হত্যার মধ্য দিয়ে আন্দোলন দমন করার চিন্তা পরিহার করতে হবে। অন্যদিকে গার্মেন্ট সেক্টরের সামগ্রিক নিরাপত্তা এবং মালিক-শ্রমিকের স্বার্থ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত সেটাও শ্রমিকদের বিবেচনায় রাখতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
কাউখালীতে নাশকতা ঠেকাতে পুলিশের বিশেষ মহড়া অনুষ্ঠিত
মোদি সংকটে পড়লেই কেন কথিত ‘জঙ্গি’ হামলা হয় ভারতে?
নিষিদ্ধ আ‘ লীগের নাশকতা সৃষ্টির প্রতিবাদে সিলেটে শিবিরের বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ
এনসিপির ঢাকা অফিসে ব্রিটিশ হাইকমিশনার, নির্বাচন ইস্যুতে নাহিদের সঙ্গে বৈঠক
আওয়ামী লীগ নেতার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে গুলির খোসা উদ্ধার
প্রধান উপদেষ্টা কাল জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন
ছাগলনাইয়ায় অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পক্ষে আর্থিক সহায়তা
মেহেরপুরে পুলিশ সুপারের বাসভবনে আগুন
ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মদিনার ইসলামে বিশ্বাসী, মওদুদীর ইসলামে নয়: হাফিজ ইব্রাহিম
২৯৯ আসন বিএনপিকে উপহার দিতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে : দীপেন দেওয়ান
চট্টগ্রাম বন্দর ও এপিএম টার্মিনালসের মধ্যে ৩০ বছরের কনসেশন চুক্তি সাক্ষর
কমলগঞ্জে শখের বসে শেখা বাঁশিই এখন কৃষ্ণ দাসের জীবিকা
দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও গোয়েন্দাপ্রধান গ্রেফতার
কমলগঞ্জে রেললাইনে স্লিপার ফেলে ট্রেন দুর্ঘটনার চেষ্টা
এবার ধোলাইপাড়ে বাসে আগুন
জাতীয় নির্বাচনে জটিলতা সৃষ্টির অর্থ পলাতক স্বৈরাচারের পুনর্বাসনের পথ সুগম করা : তারেক রহমান
দিনাজপুরের হাকিমপুরে ফার্মেসীতে মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ
স্বাধীনতা হারাতে পারে বিচার বিভাগ, বর্ধিত ক্ষমতা ও আজীবন দায়মুক্তি পেলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান
কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
রেলওয়ের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ