বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে
১২ নভেম্বর ২০২৩, ১২:২০ এএম | আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৩, ১২:২০ এএম
ঢাকার বায়ুদূষণ নতুন কিছু নয়। মাসের পর মাস বায়ুদূষণের দিক থেকে এ শহর বিশ্বের শীর্ষ তালিকায় রয়েছে। গত সপ্তাহে ভারতের নয়াদিল্লীর বায়ুদূষণ এমন পর্যায়ে চলে যায় যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হয়। সেখানে শ্বাস নেয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না। এমনকি আকাশ থেকে কৃত্রিম বৃষ্টি সৃষ্টি করে বৃষ্টি নামানোর পদক্ষেপ নেয়া হয়। ঢাকার বায়ুদূষণ দুর্যোগপূর্ণ ছিল এ বছরের জানুয়ারিতে। মাঝের মাসগুলোতে কিছুটা কমলেও বায়ুমান দূষিতই থেকে গেছে। এখন আবার ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে বলে গতকাল দৈনিক ইনকিলাবের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বিশ্বের মধ্যে বায়ুদূষণের তালিকায় গত শুক্রবার ছুটির দিনে ২২৭ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকে ঢাকা। ২৭৪ স্কোর নিয়ে প্রথম স্থানে কলকাতা এবং ১৮১ স্কোর নিয়ে পাকিস্তানের করাচি তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। বায়ুমান নির্ণায়ক সংস্থা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) এই তালিকা প্রকাশ করে। সাধারণত শূন্য থেকে ৫০ পর্যন্ত বায়ুমানের স্কোর থাকলে তা স্বাস্থ্যকর বলে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে মাঝারি বা সহনীয় পর্যায় বলে ধরা হয়। ১০১ থেকে ১৫১ হলে অস্বাস্থ্যকর এবং ২০১ থেকে ৩০০ হলে খুবই অস্বাস্থ্যকর বলে ধরা হয়। এছাড়া ৩০১ ছাড়িয়ে গেলে দুর্যোগপূর্ণ বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশের যে স্কোর তা দুর্যোগপূর্ণর কাছাকাছি।
সাধারণত শীতে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় রাজধানীসহ সারাদেশে ধুলোবালি বৃদ্ধি পায়। পরিবেশবিদরা আশঙ্কা করছেন, রাজধানীর বায়ুমান যেভাবে নিম্নগামী, তাতে শীতে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। এমনিতে শীতে শিশু ও বৃদ্ধদের ঠান্ডাজনিত রোগ ও শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি পায়। ঠান্ডার সাথে দূষিত বায়ু যুক্ত হয়ে রোগবালাই আরো বাড়িয়ে দেয়। স্বাভাবিক সময়েই রাজধানীর বায়ুমান অস্বাস্থ্যকর থাকে। শুধু বৃষ্টি হলে বায়ুমান উন্নত হয়। এখন শুষ্ক মৌসুম পুরোপুরি শুরু না হতেই বায়ুদূষণের দিক থেকে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। এ অবস্থান বদলানোর সম্ভাবনা খুবই কম। বরং আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। এতে জনস্বাস্থ্যেরও অবনতি ঘটতে পারে। বলার অপেক্ষা রাখে না, রাজধানীতে সড়ক খোঁড়াখুঁড়িসহ নানা উন্নয়ন কাজ প্রতিনিয়ত চলছে। ধুলাবালির মূল উৎস এগুলো। নিয়ম অনুযায়ী, উন্নয়ন কাজের সময় পরিবেশের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সেদিকটি নিশ্চিত করতে হয়। উন্নয়ন কাজের এলাকায় আলাদাভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে হয়। দুঃখের বিষয়, এ ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। উন্নয়ন স্থান থেকে ধুলাবালি চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। পাশাপাশি যানবাহন এবং কলকারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া বাতাসে মিশে ভয়াবহ বায়ুদূষণ ঘটিয়ে থাকে। এতে বাতাস ঘন ও দূষিত হয়ে স্বাভাবিকভাবে নিঃশ্বাস নিতে মানুষের কষ্ট হয়। দমবন্ধ করা পরিবেশের সৃষ্টি হয়। অনেক সময় রাজধানীর আকাশে ধুলার কুয়াশা সৃষ্টি হয়। বাতাস কতটা দূষিত হলে এ ধরনের কুয়াশা সৃষ্টি হয়, তা সহজেই অনুমান করা যায়। মাঝে মাঝে সিটি করপোরেশনকে রাজধানীর কিছু সড়কে গাড়ি দিয়ে স্প্রে করতে দেখা যায়। একে লোক দেখানো পদক্ষেপ বলেই মনে হয়। পরিবেশ অধিদফতর থাকলেও তার কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয় না। রাজধানীর পরিবেশ উন্নয়নে প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা দেখা যায় না। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তাহলে পরিবেশ অধিদফতরের কাজ কি? মাসের পর মাস রাজধানীতে বায়ুদূষণ, শব্দদূষণসহ নানা ধরনের দূষণ চললেও তা নিরসনে কোনো পদক্ষেপ দেখা যায় না।
বহুবছর ধরে রাজধানী বিশ্বের মধ্যে বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় রয়েছে। অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ থেকে শুরু করে প্রায় সবধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে নগরবাসী বঞ্চিত। এ থেকে উত্তরণের কোনো প্রচেষ্টা আছে বলে মনে হয় না। আমরা উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি বটে, তবে রাজধানীর স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারিনি। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। সরকার বিভিন্ন মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। রাজধানীকে বাসযোগ্য করে পরিবেশবান্ধব করে তোলার ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রকল্প নেয়া হয়নি। মানুষ যে বুকভরে শ্বাস নেবে, তার ন্যূনতম পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেনি। শীত মৌসুমে রাজধানীর বায়ুমানের যে আরও অবনতি ঘটবে, তা এখনই টের পাওয়া যাচ্ছে। এ পরিস্থিতি উত্তরণে এখন থেকেই পরিবেশ অধিদফতর, দুই সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য সংস্থার উদ্যোগী হওয়া জরুরি। পরিবেশ দূষণকারী উপকরণ থেকে শুরু করে ধুলা-ধোঁয়ার উৎস বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। পরিবেশ আইন প্রয়োগ এবং তা মেনে চলার জন্য সকলকে বাধ্য ও সচেতন করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
দুই শেয়ারবাজারেই বড় পতন
দিল্লির লকডাউন ঢাকায় দাফন হয়েছে : জাগপা
ইমাম প্রশিক্ষণে সউদী সরকারের সহায়তার আশ্বাস
চোর সন্দেহে কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা, নারী গ্রেফতার
পঞ্চদশ সংশোধনীর রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি
কিছু রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডে পতিত ফ্যাসিস্টরা উৎসাহিত হচ্ছে : রিজভী
রাজনৈতিক দলগুলোকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বার্তা
বিআরটিসি বাসে পাইলটিং ভিত্তিতে ই-টিকেট সেবা কার্যক্রম শুরু
ডিএমপি কমিশনারের ভুয়া ভিডিও ছড়িয়ে বিভ্রান্তি
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে সংকট উত্তরণের প্রচেষ্টা থাকলেও সাংবিধানিক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে : সাইফুল হক
মতভিন্নতা সত্ত্বেও প্রধান উপদেষ্টার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালো এবি পার্টি
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে দেশবাসী উজ্জীবিত : লেবার পার্টি
দেশকে দ্রুতবেগে বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছি : ফরহাদ মজহার
দিল্লি-কাবুলের ষড়যন্ত্রেই বেড়েছে সন্ত্রাসী হামলা: শেহবাজ শরীফ
জীবন্ত ফার্ন গাছে বিরল খনিজের সন্ধান
চীনের গুপ্তচর হিসেবে অভিযুক্ত লিন্ডা সানের বিচার শুরু
তীব্র পানি সংটে ইরানের নাগরিক জীবন ঝুঁকিতে
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে চীনকে পাশে পেল ভেনেজুয়েলা
মালয়েশিয়াগামী শ্রমিকদের ৩১৪ কোটি টাকা আত্মসাতে ৫ এজেন্সির বিরুদ্ধে মামলা
গণতন্ত্র ফেরাতে নির্বাচনই একমাত্র বিকল্প : মির্জা ফখরুল