ইসরাইল হাসপাতালকেও যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করেছে
১৪ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১৪ এএম | আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১৪ এএম
গাজার হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করেছে ইসরাইল। রোগী ও চিকিৎসাপ্রত্যাশীদের জন্য হাসপাতাল নিরাপদ ও অভয়ক্ষেত্র বলে বিবেচিত হলেও গাজার কোনো হাসপাতালই ইসরাইলি বাহিনীর নিশানার বাইরে নেই। হাসপাতালে অবস্থারত রোগী, ডাক্তার, নার্স, চিকিৎসাকর্মী ও সরঞ্জাম কোনো কিছুই নিরাপদ নয়। গাজার দ্বিতীয় বৃহত্তম হাসপাতাল আল কুদস সদ্যই বন্ধ হয়ে গেছে। পানি, জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও চিকিৎসাসরঞ্জামের অভাবে এটি বন্ধ হয়ে গেছে। গাজার বৃহত্তম হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত আল শিফার অবস্থা ভয়ংকর বললেও কম বলা হয়। হাসপাতালটির চারপাশে ট্যাংক মোতায়েন করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে স্নাইপাররা অবস্থান নিয়েছে। আকাশে সক্রিয় ড্রোন। হাসপাতাল থেকে কেউ বাইরে যেতে পারছে না। যে কেউ চেষ্টা করলে ইসরাইলি সেনাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে। হাসপাতালের সর্বত্র লাশ ও রক্ত। ইতোমধ্যে কার্ডিয়াক ওয়ার্ড ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। এই হাসপাতালে আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ সাদা ফসফরাস ব্যবহার করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন সেখানকার স্বাস্থ্যমন্ত্রী। হাসপাতালটির সঙ্গে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। হাসপাতালের রোগী, চিকিৎসকসহ সব ধরনের কর্মীদের ভবিষ্যৎ পুরোপুরি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। যখন আগ্রাসী ইসরাইলি বাহিনীর নির্বিচার হামলার শিকার হয়ে শত শত আহত মানুষ চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ছুটে আসছে তখন সবচেয়ে বড় দুটি হাসপাতালের একটি বন্ধ ও অপরটি চরম অচলাবস্থার শিকার। এর চেয়ে পরিতাপের ও দুর্ভাগ্যের আর কী হতে পারে? গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তরফে জানানো হয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ১৩৫টি স্বাস্থ্যস্থাপনায় ইসরাইল হামলা করেছে। হামলার কারণে ২১টি হাসপাতাল ও ৪৭টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া হামলায় ১৯৮ জন স্বাস্থ্যকর্মী নিহত ও ৫৩টি অ্যাম্বুলেন্স ধ্বংস হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়ার পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকারের অংশ। এ অধিকার লংঘন ও অস্বীকার করছে ইসরাইল।
বিশ্ববাসীর প্রতিবাদ, নিন্দা ও ধিক্কার উপেক্ষা করে ইসরাইল গাজায় আগ্রাসন চালিয়ে গণহত্যা করছে। বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করে যুদ্ধাপরাধ করছে। হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, গীর্জা প্রভৃতি ধ্বংস করে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করছে। নির্বিচার বিমান ট্যাংক হামলা, স্থল অভিযান ইত্যাদির মাধ্যমে গাজার মতো ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবাহী এলাকাকে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত করছে। গাজাকে ধ্বংসই নয়, জনশূন্য করাও ইসরাইলের লক্ষ্য। বিশ্ববাসী ও বিভিন্ন রাষ্ট্র এই অন্যায় ও একতরফা যুদ্ধ বন্ধ করার দাবি জানালেও ইসরাইল সরকার যুদ্ধ বন্ধ করতে রাজি নয়। যুদ্ধ চালিয়ে যেতেই বরং বদ্ধ পরিকর। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইসরাইলঘনিষ্ঠ দেশগুলো যুদ্ধ অব্যাহত রাখার পক্ষে। শান্তি ও মানবাধিকারের পক্ষে সোচ্চার এসব দেশ এখানে যুদ্ধ ও মানবাধিকারের বিপক্ষেই অবস্থান সুনির্দিষ্ট করেছে। ইসরাইলের মতোই এই দেশগুলোও এক পংক্তিতে নিন্দা-ধিক্কারের শিকার হচ্ছে। খোদ যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ, এমনকি সেখানকার ইহুদিরাও যুদ্ধবিরোধিতায় সোচ্চার। টাকোমা সমুদ্র বন্দরে যুদ্ধবিরোধী জনতা মার্কিন যুদ্ধজাহাজ আটকে দিতে যে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে, তা বিশ্বব্যাপী অভিনন্দিত হয়েছে। এরপরও যুক্তরাষ্ট্রের টনক নড়ছে না। ইসরাইলপ্রীতি এতটুকু কমছে না। ইতোমধ্যে গাজায় ইসরাইলের মানুষ হত্যাকে নির্বিচারে হত্যা বলে অভিহিত করা হয়েছে। সর্বশেষ তথ্যমতে, এ যুদ্ধে এ পর্যন্ত ১১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। ৪ হাজার ৫০৬ জন শিশু নিহত হয়েছে। এরপরই রয়েছে মহিলা। মহিলা নিহত হয়েছে ৩ হাজার ২৭ জন। এছাড়া নিখোঁজ হয়েছে ২ হাজার ৭০০ জন এবং আহত হয়েছে ২৫ হাজারের ওপর। জাতিসংঘের মহাসচিব গুতরেস গাজা শিশুদের কবরস্থানে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। প্রতি ১০ মিনিটে সেখানে একটি শিশু প্রাণ হারাচ্ছে। অবরুদ্ধ আল শিফা হাসপাতালের ইনকিউবিটরে সদ্যজাত ৪৫টি শিশু অবস্থান করছে। তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে কে জানে।
গণহন্তারক, মানবাধিকারলংঘনকারী, যুদ্ধবাজ ও যুদ্ধাপরাধী ইসরাইলকে প্রতিহত করার কোনো উদ্যোগ এখনো দেখা যাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদেশগুলো ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারতো। কিন্তু বরাবরের মতোই তারা অবস্থান নিয়েছে ইসরাইলের পক্ষে। জাতিসংঘ নিষ্ক্রিয়। বরাবরই এই বিশ্বসংস্থা পশ্চিমাদের তলপীবাহী। চীন-রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কোনো দায়িত্ব নিতে তারা রাজি নয়। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানোর ধর্মীয় দায়িত্ব ছিল আরব ও ইসলামী দেশগুলোর। তাদের সংগঠন আরব লীগ ও ওআইসি কার্যকর কোনো পদক্ষেপই নিতে পারেনি। যুদ্ধ মাসাধিককাল অতিবাহিত হওয়ার পর ১১ নভেম্বর সউদী আরবের রাজধানী রিয়াদে আরব লীগ ওআইসি’র যে জরুরি সম্মেলন হয়েছে, তাতে তেমন কোনো ফল মেলেনি। আরব ও মুসলিম দেশগুলোর নেতারা ইসরাইলি হামলার নিন্দা ও যুদ্ধবন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন মাত্র। এই সঙ্গে গাজায় মানবিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। ইসরাইল অগ্রাসন ও যুদ্ধ বন্ধ করতে বাধ্য হয়, এমন কোনো কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। ইসরাইলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নেয়ার প্রশ্নে তারা ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে পারেননি। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও নেতৃত্বের চরম ব্যর্থতার পরিচায়ক। আরব ও ইসলামী দেশগুলো একাট্টা হয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে যে কোনো ব্যবস্থা নিলে তা সফল ও ফলপ্রসূ হতে বাধ্য। আমরা আশা করতে চাই, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষভাবে আরব ও ইসলামী দেশগুলো গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা, শিশু হত্যা, ধ্বংস ও দখল প্রতিরোধে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে। এর ব্যতিক্রম হলে এসবের দায় তাদের ওপর বর্তাবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল
‘স্পেন্ড অ্যান্ড উইন’ ক্যাম্পেইনের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে মাস্টারকার্ড
সিটি ব্যাংক আনল অভূতপূর্ব ভিসা ইনফিনিট ক্রেডিট কার্ড
শেখ হাসিনার কোনো ক্ষমা নেই, জবাব তাকে দিতেই হবে : মির্জা ফখরুল
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে