ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

মশক নিধনে দুই মেয়রের ব্যর্থতা

Daily Inqilab ইনকিলাব

২২ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম

সাধারণত বছরের মাঝামাঝি রাজধানীতে এডিস মশার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি এবং ডেঙ্গু রোগের বিস্তার ঘটে। এ বছর অনেক আগে থেকেই ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। অসংখ্য মানুষ আক্রান্ত হয়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও কীটত্বত্ত্ববিদরা এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ মোকাবেলায় আগেভাগেই ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দিয়েছিলেন। তাদের তাগিদ কিংবা শঙ্কা প্রকাশে কোনো লাভ হয়নি। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন তা আমলে নেয়নি। ফলে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে ডেঙ্গু মহামারী আকার ধারণ করে। গতকাল ইনকিলাবসহ বেশ কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি বছর এ পর্যন্ত তিল লক্ষাধিক ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা দেড় হাজারের বেশি। যদিও বেসরকারী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা সরকারি হিসেবের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মত দিয়েছেন। ২০১৯ সালে ঢাকায় ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করেছিল। ওই বছর লক্ষাধিক ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। মৃত্যুবরণ করেছিল এক হাজারের বেশি মানুষ। এবার অনেক আগেই সেই সংখ্যা অতিক্রম করেছে। আক্রান্তের হার তিন গুণের বেশি। বর্ষা-হেমন্ত পেরিয়ে শীতের আগমনেও ডেঙ্গুর প্রকোপ কমছে না। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে, নভেম্বরের প্রথম ২০ দিনে সারাদেশে ডেঙ্গুতে ২ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গুতে এত মানুষের মৃত্যু ইতিহাসে বিরল।

মশাবাহিত রোগের মধ্যে এডিস মশা থেকে ছড়ানো ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এডিস মশা দমনে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের এই ব্যর্থতার কারণে ঢাকা শহরে শত শত মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর শিকার হয়েছে। স্বাস্থ্যগত ও অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। ঢাকার দুই মেয়রকে প্রায়ই রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে মাঠ গরম করতে দেখা যায়। তাদের কথায় বাগাড়ম্বরতা থাকলেও কাজে কোনো গতি থাকে না। তারা কথায় আছে, কাজে নেই। যদি থাকত, তাহলে মশা নিধন করে মানুষকে ডেঙ্গু থেকে মুক্ত রাখতে পারত। সরকারের মন্ত্রী-এমপিরাও কথা কথায় দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলে দেয়ার কথা বলেন। অথচ রাজধানীর স্যুয়ারেজ সিস্টেম, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও এডিস মশার মত প্রাণঘাতী রোগের প্রাদুর্ভাব লাঘবে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন মশক নিধনে প্রায় পৌনে দুইশ’ কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছিল। মশক নিধনে ঢাকা উত্তরের বাজেট ১২২ কোটি টাকার বেশি, আর দক্ষিণের ৫০ কোটি টাকার কাছাকাছি। বরাদ্দ থাকার পরও কেন মশা নিধন করা যায়নি, তা এক প্রশ্ন। এই অর্থ গেল কোথায়? কি কাজে ব্যয় করা হয়েছে? অথচ বর্ষার আগে ডিএনসিসি’র মেয়র এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ড্রোন ব্যবহারের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তাতেও মশানিধন করা যায়নি। নভেম্বরের ২০ দিনে প্রতিদিন গড়ে ১০ জনের মৃত্যুর পরিসংখ্যানই বলে দেয়, দেশে এডিস মশা ও ডেঙ্গুর প্রকোপ কতটা প্রাণঘাতী আকার ধারণ করেছে। বলা বাহুল্য, প্রতিদিন ডেঙ্গুতে মানুষ আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণ করলেও, তা নিয়ে দুই মেয়রের মধ্যে কোনো বিচলন দেখা যায় না।

শীত শুরু না হতেই এখন কিউলেক্স মশার উপদ্রব এতটাই বেড়েছে যে, ঘরে-বাইরে কেথাও মানুষ স্বস্তিতে থাকতে পারছে না। এই মশার বেড়ে যাওয়াকে বিশেষজ্ঞরা নতুন আতঙ্ক হিসেবে দেখছেন। তারা মনে করছেন, এতে ডেঙ্গুসহ অন্যান্য রোগ ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। কিউলেক্স মশা থেকে ফাইলেরেয়া, গোদরোগ, জাপানিজ এনসেফালাইটিসের মত মারাত্মক ব্যধি দেখা দিতে পারে। সুয়্যারেজ ও বর্জ্যব্যবস্থাপনাসহ মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনসহ নগর কর্তৃপক্ষের প্রধানতম দায়িত্ব। গত এক দশকে ঢাকাসহ সারাদেশে অবকাঠামো উন্নয়নের পেছনে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। অবকাঠামো ও সড়কযোগের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। তবে রাজধানীর সুয়্যারেজ লাইন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও মশক নিধনে সিটি কর্পোরেশন ও স্থানীয় প্রশাসনের ব্যর্থতা অমার্জনীয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ও লাখ লাখ পরিবারকে যে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে, তার দায়ভার কে নেবে? নগরবাসির স্বস্তিতে বসবাস ও জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে না পারলে সিটি কর্পোরেশনের হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট দিয়ে কি লাভ হচ্ছে? এতে লুটপাট ছাড়া কিছু নেই বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রদ্বয়ের উচিৎ অবিলম্বে মশানিধনে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করা। রাজনৈতিক বিতর্ক ও বাগাড়ম্বরতা বাদ দিয়ে নগরীর পরিবেশ ও স্বাস্থ্যনিরাপত্তা বিষয়ক দায়িত্ব পালনে সক্রিয় হওয়া।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান

ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান

জাইসের লেন্সের জয়জয়কার, স্মার্টফোনেও দুর্দান্ত

জাইসের লেন্সের জয়জয়কার, স্মার্টফোনেও দুর্দান্ত

সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু

সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু

আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক

আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক

যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার

এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার

গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল

গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু

প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান

প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান

সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’

সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’

বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল

৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল

১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে

১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরীর ইন্তেকাল

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরীর ইন্তেকাল

ভারতের কাছ থেকে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে: আইন উপদেষ্টা

ভারতের কাছ থেকে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে: আইন উপদেষ্টা

মেজর জে. অব. তারেক সিদ্দিকসহ ১০ জনের নামে মামলা

মেজর জে. অব. তারেক সিদ্দিকসহ ১০ জনের নামে মামলা

বহিঃশক্তি শকুনের মত শিল্প কলকারখানায় থাবা দেয়ার চেষ্টা করছে : শিমুল বিশ্বাস

বহিঃশক্তি শকুনের মত শিল্প কলকারখানায় থাবা দেয়ার চেষ্টা করছে : শিমুল বিশ্বাস

বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বরদাশত করা হবে না: আইন উপদেষ্টা

বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বরদাশত করা হবে না: আইন উপদেষ্টা