ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

বিচারপতি মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ স:

Daily Inqilab জাফর আহমাদ

২৩ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
আল্ল­াহ তা’আলা মীযান (দাড়িপাল্ল­া) কায়েম করেছেন অর্থ সুবিচার ও ইনসাফ কায়েম করেছেন। এ মীযানে কমবেশ করো না মানে অবিচার ও বে-ইনসাফী করো না। গোটা বিশ্ব দাড়িপাল্ল­ার মতো ভারসাম্যপূর্ণ। আল্লাহর কঠিণ আবদ্বে বাঁধা ভারসাম্যপূর্ণ পৃথিবী সামান্য এদিক সেদিক হলে পৃথিবীতে প্রাণের কোন অবশিষ্ট থাকবে না। তেমনি আল্লাহর দেয়া বিচার ব্যবস্থাও ভারসাম্যপূর্ণ, তাতে এদিক সেদিক করা হলে সমাজে ন্যায়-ইসনাফ ও মানবিক মূল্যবোধ উঠে গিয়ে সামাজিক বিপর্যয় প্রবলাকার ধারণ করে। যারা সামান্য ক্ষমতা পেয়ে যে ভারসাম্যহীন অবস্থার সৃষ্টি করে, যদি আল্ল­াহর সামান্য আলো-বাতাস, অ´িজেন, শ্বাস-প্রশ্বাস সামান্য সময়ের জন্য ক্ষমতাধারীর ক্ষেত্রে স্তব্ধ করে দেয়া হয়, তবে চিন্তা করুন কি অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। সুতরাং আল্ল­াহকে ভয় করুন। দাঁড়িপাল্ল­ায় ভারসাম্যহীন অবস্থার সৃষ্টি করবেন না। মনে রাখবেন, ক্ষমতায় যারা আছে তাদের প্রাণ আর আপনার প্রাণের মধ্যে কোন পার্তক্য নেই। আপনি যদি ন্যায়ের পথে থেকে বিচার-ফয়সালা করেন তবে পৃথিবীর কেউ আপনাকে কিছুই করতে পারবে না। কারণ হায়াত-মওতের ফয়সালা আল্ল­াহর তরফ থেকেই হয়। আপনার মান-সম্মান, ইজ্জত অপমান, রিযিকের মালিক মহান রব। নিম্নে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে কয়েকটি বিচার-ফয়সালা উল্লেখ করা হলো।

প্রভাবশালী ও দূর্বলের বিচার ফয়সালা: বুখারী-মুসলিমে আছে-একবার মাখজুমী গোত্রের এক কুরাইশী মহিলা চুরি করে ধরা পড়ে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার হাত কেটে ফেলার নির্দেশ দেন। নির্দেশ শুনে লোকজন খুব পেরেশান হয়ে পড়লো। কারণ সেই মহিলা ছিলো সম্ভ্রান্ত গোত্রের। তারা বলাবলি করতে লাগলো, উসামা ইবনু যায়িদ ছাড়া আর কে আছে, যাকে আল্ল­াহর রাসুল স: অত্যাধিক ভালবাসেন। তারা উসামাকে রা: সুপারিশের জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে পাঠালেন। যখন তিনি এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে কথা বললেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘হে উসামা! তুমি কি আল্ল­াহর বিধান প্রতিষ্ঠা না করার সুপারিশ করতে এসেছো?’ তখন উসামা ইবনু যায়িদ ভয় পেয়ে বললেন, ইয়া রাসুলুল্ল­াহ! আমাকে মাফ করে দিন। আমার ভূল হয়েছে। অতপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুতবা দিলেন। প্রথমে আল্লাহর হামদ ও সানা পেশের পর বললেন,‘হে লোক সকল! তোমাদের পূর্ববর্তি লোকজন এ কারণেই ধ্বংস হয়ে গেছে যে, যখন তাদের মধ্যে কোন সম্ভ্রান্ত ও প্রভাবশালী লোক চুরি করতো তখন তারা তাকে ছেড়ে দিতো এবং দূর্বল লোক চুরি করলে তাকে শাস্তি দিতো। ঐ সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রান, আজ যদি মুহাম্মদের মেয়ে ফাতিমাও চুরি করতো তবে আমি তার বেলায়ও হাত কাটার নির্দেশ দিতাম।’

মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক বর্ণিত হয়েছে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এক ক্রীতদাসকে হাজির করা হলো, যে চুরি করেছিলো তাকে চার বার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আনা হলে চার বারই তিনি তাকে ছেড়ে দিলেন। পঞ্চম বার তাকে হাজির করা হলে তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাত কাটার নির্দেশ দিলেন। পরে ৬ষ্ট বার হাজির করা হলে তার একটি পা কেটে দেয়ার নির্দেশ দিলেন। ৭ম বার তার অপর হাত কাটার আদেশ দিলেন। ৮ম বার তার দ্বিতীয় পাটি কেটে দেন।’

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদালতের উল্লেখিত দূ’টি বিচার এখানে উল্লেখ করার অর্থ হলো তাঁর বিচার ব্যবস্থায় সমাজের প্রভাবশালী বা দূর্বল কোনটিই প্রভাব ফেলতে পারতো না। যা ন্যায়-সঙ্গত, যা সঠিক তাই সেখানে বাস্তবায়িত হতো। কিন্তু আজ আমাদের বিচার ব্যবস্থায় কি পরিলক্ষিত হয়। সবলের জয়ধ্বনি আর দূর্বলের মূর্ধাধ্বনি। নিজ দলের দন্ডপ্রাপ্তদের ক্ষমা করার নজিরও দেখা যায়। কিন্তু আল্লাহর দরবার থেকে কাকে কে ছাড়িয়ে আনবে?

বাকপটুতার দ্বারা রায় নিজের পক্ষে নেয়া মানে আগুনের টুকরা নেয়া: মুয়াত্তা, বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি তো একজন মানুষ। দু’জন ঝগড়াকারী এসে আমার কাছে অভিযোগ করলে, যে অপেক্ষাকৃত বেশী বেশী বাকপটু আমি তার দিকে রায় দিতে পারি। এই মনে করে যে, সে সত্য বলেছে। সাবধান! তোমাদের কেউ যেন এরূপ না করে। এরূপ করলে এবং তার পক্ষে রায় দিলে, সে যেন আগুনের টুকরো নিয়ে গেলো।’ বুখারীর অন্য বর্ণনায় আছে, ‘যাকে আমি (ভূল বুঝে) মুসলমানের সম্পদের মালিক বানিয়ে দেবো, তা আগুনের টুকরা মাত্র। ইচ্ছে করলে সে নিতে পারে অথবা ত্যাগ করতে পারে।

উভয়ের বক্তব্য শুনে বিচার করা ও রায় দেয়া: আবু দাউদে হযতে আলী রা: হতে বর্ণিত। তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে ইয়েমেনে (দায়িত্ব দিয়ে) পাঠাচ্ছেন অথচ আমার বয়স কম, বিচার ফয়সালা করার মতো কোন জ্ঞান বা যোগ্যতা আমার নেই। তিনি বললেন, ‘আল্ল­াহ তোমার অন্তরকে হিদায়াত দেবেন এবং তোমার জবান দৃঢ় রাখবেন। যখন বাদী-বিবাদী তোমার সামনে এসে উপস্থিত হবে তখন একজনের বক্তব্য শুনেই রায় দিবে না বরং দু’জনের বক্তব্য শুনবে। এতে ফায়সালার দিগন্ত তোমার সামনে উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে।’ হযরত আলী রা: বলেন,এরপর আমি সেখানে বিচার ফয়সালা করতে গেলাম কিন্তু কোনো বিচারের রায় দিতে গিয়ে আমি কখনো সন্দেহে পড়িনি।

আসুন মানবতার মহান বন্ধু, ন্যায়পরায়ন শাসক ও বিচারক মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ন্যায় তাক্ওয়ার ভিত্তিতে বিচার ফয়সালা করি। আহকামুল হাকিমিনির সামনে হাজির হওয়ার আগে এমন কোন বিচার ফয়সালা না করি যাতে মহান প্রভুর সামনে অপমানিত হতে হয় এবং কঠিণ আযাবের স্বাধ গ্রহণ করতে হয়। আল্ল­াহ আমাদের শাসক ও বিচারপতিদের সুমতি দিন। (সমাপ্ত)

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

আখাউড়ায় রেলওয়ের জায়গা থাকা ৪০ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

আখাউড়ায় রেলওয়ের জায়গা থাকা ৪০ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে হত্যা মামলায় আরও একজনসহ গ্রেপ্তার ৬

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে হত্যা মামলায় আরও একজনসহ গ্রেপ্তার ৬

সাধ্যের বাইরে গিয়ে মা-বাবার চাহিদা পূরণ করা প্রসঙ্গে?

সাধ্যের বাইরে গিয়ে মা-বাবার চাহিদা পূরণ করা প্রসঙ্গে?

আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা প্রথম বিদেশ সফরে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন

আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা প্রথম বিদেশ সফরে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন

ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান

ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান

জাইসের লেন্সের জয়জয়কার, স্মার্টফোনেও দুর্দান্ত

জাইসের লেন্সের জয়জয়কার, স্মার্টফোনেও দুর্দান্ত

সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু

সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু

আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক

আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক

যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার

এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার

গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল

গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু

প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান

প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান

সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’

সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’

বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল

৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল

১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে

১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী