ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতের পরাজয়ে বাংলাদেশের মানুষ উল্লসিত কেন

Daily Inqilab কামরুল হাসান দর্পণ

২৪ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৯ এএম

গত রবিবার (১২ নভেম্বর) আইসিসি বিশ্বকাপের ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার ফাইনাল খেলা ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির ডাইনিং রুমের টেলিভিশনে দেখছিলাম। আমার মতো আরও অনেক রিপোর্টার খেলা দেখছিল। অস্ট্রেলিয়া যখন ব্যাটিং করছিল, লক্ষ করলাম, ব্যাটসম্যান যখন চার-ছয় হাঁকাচ্ছিল, তখন প্রায় সবাই হাততালি দিয়ে গলা চড়িয়ে উল্লাস প্রকাশ করছে। এমনকি অস্ট্রেলিয়ার স্কোর শতরানে কিংবা দুই শতকে পৌঁছা নিয়েও উল্লাস প্রকাশ করতে থাকে। কেউ কেউ ম্যাচ চলাকালে ঘোষণা দেয়, অস্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়ন হলে মিষ্টি খাওয়ানো হবে। যারা খেলা দেখছিলেন, তাদের মধ্যে ভারতের একজন সমর্থকও দেখা যায়নি। কেউ সমর্থক হয়ে থাকলেও চুপ করে ছিল। অথচ প্রতিবেশী হিসেবে বিশ্বকাপে আগে ভারতের বেশ সমর্থন দেখা যেত। বিস্ময়করভাবে ফাইনালের দিন ভারতকে প্রকাশ্যে সমর্থন করতে দেখা যায়নি। অস্ট্রেলিয়া যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে এবং পর্দায় ভারতের ক্রিকেটারদের বিমর্ষ ও হতাশামাখা চেহারা দেখাচ্ছিল, তখন অনেকে তাদের প্রতি নেতিবাচক মন্তব্য করছিল। এখন যেমন ভারতের ক্রিকেটার থেকে শুরু করে তার দেশের মানুষও নানাভাবে কটু কথা ও সমালোচনা করছে। একটা বিষয় লক্ষ্য করলাম, কেউ কেউ ভারতের প্রতি ক্ষুদ্ধতা প্রকাশ করছে আমাদের দেশে গণতন্ত্রের প্রতি তার কোনো শ্রদ্ধাবোধ না থাকা কিংবা গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে ভূমিকা না রাখায়। অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়াকে সাপোর্ট করেছে, আমাদের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্যতার প্রতি তার সমর্থন থাকায়। বাস্তবতা হচ্ছে, রাজনীতির বাইরে কোনো কিছুই নেই। শুইতে, বসতে, খেতে, খেলতে, চলতে, ফিরতে, আনন্দ-বিনোদনসহ সবকিছুতেই রাজনীতি জড়িয়ে আছে। মানুষ রাজনীতি পছন্দ করে, বিশেষ করে সেই রাজনীতি, যা গণতান্ত্রিক এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে।

দুই.
খেলা চলাকালে ভারতের পরাজয়ে শুধু রিপোর্টারস ইউনিটির মধ্যেই উল্লাস প্রকাশ করা হয়নি। এ উল্লাস সারাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় আনন্দ মিছিল হয়েছে। অনেকে মিষ্টি বিতরণ করেছে। ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সব প্ল্যাটফর্মে অসংখ্য মানুষ আনন্দ প্রকাশ করেছে। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, দেশের সাধারণ মানুষ ভারতের প্রতি কতটা বিরূপ মনোভাব পোষণ করে। ভারতের প্রতি যেন ক্ষোভ উগরে দিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এর জন্য দায় কার? প্রশ্নের উত্তর খুব সহজ। দায় ভারত সরকারের। বিশেষ করে মোদী সরকারের। ভারতের হেরে যাওয়ার আনন্দ প্রকাশের মধ্য দিয়ে মূলত বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ক্ষোভের বহির্প্রকাশ ঘটেছে। সম্ভবত স্বাধীনতার পর ভারতের প্রতি সাধারণ মানুষের এত ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়নি। এর কারণ হচ্ছে, বিগত বছরগুলোতে মোদী সরকারের শাসনামলে এই ক্ষোভ অনেক বেশি পুঞ্জিভূত হয়েছে। তাদের ক্ষোভ প্রকাশের কোনো উপযুক্ত উপলক্ষ বা প্ল্যাটফর্ম পাওয়া যায়নি বলে ফাইনালে ভারত চ্যাম্পিয়ন হতে না পারার মধ্য দিয়ে সেই ক্ষোভ প্রকাশের প্রকাশ্য উপলক্ষ তারা পেয়ে যায়। অথচ ভারত বাংলাদেশের প্রতি বছরের পর বছর ধরে যে বিরূপ আচরণ করে আসছে এবং তা পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও সাধারণ মানুষের ক্ষোভ প্রকাশের জায়গা ছিল না। সীমান্তে পাখির মতো গুলি করে বাংলাদেশীদের হত্যা, কিশোরী ফেলানিকে হত্যা করে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রাখা যা বিশ্বব্যাপী তোলপাড় হয়, আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে একতরফাভাবে অভিন্ন নদ-নদীর পানি প্রত্যাহার করে পানিশূন্য করে দেয়া, তিস্তাচুক্তি না করা, বাংলাদেশের পণ্য রফতানি করার ক্ষেত্রে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা, উগ্র হিন্দু কর্তৃক ভারতের মুসলমানদের হত্যা, নির্যাতন ও নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার মতো পদক্ষেপ, সর্বোপরি বাংলাদেশের রাজনীতিতে অযাচিত হস্তক্ষেপের বিষয়গুলো নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে হিমালয়সম ক্ষোভ জমে আছে। বিশেষ করে বিগত দুটি নির্বাচনে ভারতের দৃষ্টিকটু হস্তক্ষেপ ও সমর্থন বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে তার প্রতি চরম ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। ভারত নিজে গণতান্ত্রিক দেশ হয়েও প্রতিবেশী দেশে গণতন্ত্রকে দুর্বল করে রাখে কর্তৃত্ববাদী শাসনকে সমর্থন করা দেশের মানুষ মেনে নিতে পারেনি। সাধারণ মানুষ ভুলে যায়নি, ২০১৪ সালের নির্বাচনে ভারত কিভাবে নির্লজ্জভাবে তার সচিব সুজাতা সিংকে পাঠিয়ে হস্তক্ষেপ করে একটি ভোটারবিহীন নির্বাচন এবং মানুষের ভোটাধিকার হরণ করতে সহায়তা করেছে। ২০১৮ সালের রাতের ভোটের নির্বাচনকে সবার আগে স্বীকৃতি দিয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, ভারত এই নীতি অবলম্বন করেছে শুধুমাত্র তার স্বার্থে। কারণ, বাংলাদেশে যদি একটি দুর্বল ও তার বশংবদ সরকার থাকে, তাহলে তাকে দিয়ে তার যেকোনো স্বার্থ হাসিল করতে সুবিধা হবে। হয়েছেও তাই। বর্তমান সরকারের মাধ্যমে সে যা চেয়েছে বিনাশর্তে তা পেয়েছে। ট্রানজিটের নামে করিডোর, বাংলাদেশের সড়ক, বন্দর, রেল, নৌপথ ব্যবহার করে তার দুর্গম পথের রাজ্যগুলোর সাথে সহজ যোগাযোগের সুযোগ থেকে শুরু করে তার চাওয়ার সবকিছু আদায় করতে সক্ষম হয়েছে শুধু সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে সহায়তা করার জন্য। এর বিনিময়ে বাংলাদেশ কিছু না পেলেও সরকার পেয়েছে ক্ষমতায় থাকার গ্যারান্টি, যা সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের চাওয়ার সাথে কোনো মিল নেই। বলা যায়, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মৌলিক অধিকার ভোট দেয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে গণতান্ত্রিক ধারাকে সংকুচিত করতে ভারত নিরবচ্ছিন্নভাবে সহায়তা করে যাচ্ছে। আসন্ন নির্বাচন নিয়েও ভারতের আচরণ একই রকম রয়েছে। সে চায় না, বাংলাদেশের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ভোটের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আসুক। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন আসে, ভারতকে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কেন সমর্থন করবে? স্বাধীনতার পর সমর্থন করার মতো কোনো নজির কি তারা স্থাপন করতে পেরেছে?

তিন.
এবারের বিশ্বকাপের শুরু থেকেই ভারত দোর্দ- প্রতাপের সাথে ১০টি ম্যাচ জিতে সবার আগে ফাইনালে উঠে। কোনো দলই তার সামনে পাত্তা পাচ্ছিল না। দলটির ব্যাটার ও বোলারদের তুঙ্গে থাকা ফর্মের কারণে ধরেই নেয়া হয়েছিল এবার ভারত চ্যাম্পিয়ন হবে। বিশেষ করে নিজের মাটিতে চেনা পরিবেশ, গ্যালারিভর্তি হাজার হাজার দর্শকের বিপুল সমর্থন দলটিকে অনেক এগিয়ে রাখে। তাদের আবেগ ও প্রত্যাশা ছিল অনেক উঁচুতে। এসব বিবেচনায় ভাবা হয়েছিল, একতরফা খেলে ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে। তার সামনে কোনো ক্রিকেটশক্তি দাঁড়াতে পারবে না। অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়ার সেমিফাইনালে উঠা নিয়েই শঙ্কা ছিল। শেষ পর্যন্ত ধুঁকতে ধুঁকতে সেমিফাইনালে উঠে এবং ফাইনালে উড়তে থাকা ভারতকে মাটিতে নামিয়ে শোচনীয় পরাজয়ের গ্লানিতে ডুবিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এ থেকে একটি বিষয় প্রমাণিত হলো, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলো যেখানে প্রফেশনালি ক্রিকেট খেলে, সেখানে ভারতসহ উপমহাদেশীয় দলগুলো ইমোশনালি খেলে থাকে। দর্শকের ইমোশনের সাথে ক্রিকেটারদের ইমোশন মিশে থাকে। অথচ ক্রিকেটারদের কাজ প্রফেশনালি খেলে দর্শকের ইমোশনকে বাস্তবায়িত করা। ভারতের একের পর এক বিজয় এবং প্রায় সব ম্যাচে গড়ে তিনশ’র মতো রান করার ক্ষেত্রে তার নিজস্ব পরিবেশ যেমন সহায়তা করেছে, তেমনি মাঠের পিচ নিয়েও বির্তকের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠে, ভারত তার খেলার দিন নিজের মতো করে পিচ তৈরি করত। অথচ যে দেশেই খেলা হোক না কেন, আইসিসি’র কোনো টুর্নামেন্টের পিচ আইসিসি’র মতো করেই তৈরি করা হয়। এতে উক্ত দেশের পছন্দমতো পিচ তৈরির সুযোগ নেই। যখন কোনো দ্বিপাক্ষিক সিরিজ হয়, তখন যে দেশে খেলা হবে, সে দেশ তার মতো করে পিচ তৈরি করে। ফলে বিশ্বকাপের পিচ তৈরি নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে। এটাকে অনেকে ভারতের চৌর্য্যবৃত্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য এ পথ বেছে নেয় বলে তারা মনে করেছে। পিচবিতর্ক উঠার পর আইসিসি সতর্ক হয় এবং খেলার আগের দিন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স পিচের ছবি তুলে রাখেন। নিশ্চিত হতে চেয়েছেন, রাতের আঁধারে আবার পিচ না পরিবর্তিত হয়ে যায়। যখন আইসিসি অনুমোদিত পিচে খেলা হলো, তখন দেখা গেল উড়তে থাকা ভারতের ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স মাটিতে নেমে এসেছে। যে ভারত ১০টি ম্যাচে রানের বন্যা বইয়ে দিয়েছে, সেই ভারত কিনা ২৪০ রানের বেশি করতে পারেনি! এ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক রিকি পন্টিং, ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন ও নাসের হুসেইন ভদ্র ভাষায় মন্তব্য করেছেন, ভারত যে মন্থর পিচ বানানোর কৌশল নিয়েছে, সেটা রোহিত শর্মাদের জন্য বুমেরাং হয়েছে। ভারতের পিচের কৌশলই তাদের ফাইনালে হারিয়েছে। অর্থাৎ ভারত ছলেবলে কৌশলে এবার চ্যাম্পিয়ন হতে চেয়েছিল। বাংলাদেশের দর্শকদের মাঝেও তাদের এই কৌশল অবিদিত থাকেনি। ফলে ভারত হেরে যাওয়ায় তারা উল্লসিত হয়েছে। অন্যদিকে, খোদ ভারতের রাজনীতিতেও ভারতের হারের দায় মোদীর উপর চাপানো হয়েছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী গত মঙ্গলবার রাজস্থানে এক নির্বাচনী সমাবেশে ভারতের হারের কারণ হিসেবে মোদীকে দায়ী করে তাকে ‘পানাউতি’ বা ব্যাড লাক বাংলা ভাষায় ‘কুফা’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি ব্যাঙ্গ করে বলেছেন, পিএম মানে ‘পানাউতি মোদী’ এবং ‘জেবকাটরা’ বা পকেটমার। তিনি এ কথাও বলেছেন, বিশ্বকাপ জাঁকজমকপূর্ণ করে ভারতের দারিদ্র্য, বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতির মতো বড় ইস্যুগুলো ঢেকে দেয়া এবং আদানিকে ৭ হাজার কোটি রুপির প্রকল্প দিয়ে লুটপাটের সুযোগ করে দেয়ার জন্য জনগণের দৃষ্টি সেদিকে ঘুরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে। দেখা যাচ্ছে, ভারতের অর্থনীতি, রাজনীতি ও ক্রিকেটে ব্যর্থতার জন্য মোদীকেই দায়ী করা হচ্ছে। মোদীর প্রতি বাংলাদেশের মানুষের যে ক্ষোভ রয়েছে, তা প্রকাশিত হয়েছে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারার পর আনন্দ প্রকাশের মধ্য দিয়ে।

চার.
মোদী সরকার ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতি গ্রহণ করলেও দেখা গেছে, সে প্রতিবেশীর উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি করেছে। ফলে একে একে ভারতের কাছ থেকে সরে গেছে শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান সর্বশেষ মালদ্বীপ। ভারতের আগ্রাসী মনোভাব কখনোই তাদের পছন্দ হয়নি। মালদ্বীপের নতুন প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জু তো তার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে ভারতের প্রতিনিধিকে সরাসরি বলেছেন, তার দেশ থেকে ভারতের সৈন্য দ্রুত প্রত্যাহার করে নিতে। দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশ ভারত থেকে দূরে সরে গেলেও বাংলাদেশকে সে আঁকড়ে ধরে আছে। অথচ ভরতের দ্বারাই বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রতি তার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক একতরফা নীতি এবং খবরদারি অব্যাহত রয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনদলের শুধুমাত্র ক্ষমতায় থাকতে ভারতের সমর্থনের কারণে। ক্ষমতাসীনদল এবং তার নেতাকর্মী ও সমর্থকরা ক্ষমতায় থাকতে ভারত তাকে সমর্থন দিচ্ছে কিনা, সেদিকে তাকিয়ে থাকে। এতে যে দেশের স্বার্থ মারাত্মকভাবে ক্ষুণœ হচ্ছে, তা তারা বিবেচনায় নিচ্ছে না। ক্ষুদ্র স্বার্থে বৃহত্তর স্বার্থ বিসর্জন দেয়ার এমন নজির বিশ্বে খুব কমই দেখা যায়। ভারতের হাতের পাঁচ এখন শুধু বাংলাদেশ। আর এখানে ক্ষমতায় থাকার জন্য সুষ্ঠু নির্বাচন তথা ভোটারদের প্রতি দায়বদ্ধতার চেয়ে ভারতের দিকে ঝুঁকে থাকা এমন একটি সরকারই সে দেখতে চায়। ভারত মনে করে, বর্তমান ক্ষমতাসীনদল যেভাবে তার প্রতি দুর্বল, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়ে গেলে সে সরকার তার প্রতি এত নতজানু হয়ে থাকবে না। তার স্বার্থ এবং দাবিদাওয়া চাওয়া মাত্র পূরণ করা সম্ভব নাও হতে পারে। সঙ্গত কারণেই ভারতের এমন আচরণের প্রতি এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বিরূপ ও ক্ষুব্ধ হয়ে আছে। ফলে যেখানেই মোদির পরাজয় হয়, সেটা রাজনীতি কিংবা খেলায়, যেখানেই হোক, তাতে এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ আনন্দে মেতে উঠে। ভারতের কাছ থেকে শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপ সরে যাওয়ায় তারা যেমন খুশি হয়েছে, তেমনি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনালে হেরে যাওয়ায় আনন্দে মেতে উঠেছে। ভারতকে বাংলাদেশের মানুষের এই মনোভাব বুঝতে হবে। সে যদি মনে করে থাকে, তার আনুকূল্যের সরকার বাংলাদেশে চিরকাল থাকবে, তাহলে ভুল করবে। বাংলাদেশের জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে শুধু সরকারকে সমর্থন দিয়ে খুব বেশি দিন সুসম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব নয়। ভারতকে বাংলাদেশের মানুষের সেন্টিমেন্ট ও মনোভাব বুঝতে হবে। তা নাহলে, সেদিন খুব বেশি দূরে নয়, যখন ভারত বাংলাদেশকে হারিয়ে একেবারে একলা হয়ে পড়বে। এখানে এটাও উল্লেখ আবশ্যক যে, বাংলাদেশের মানুষ ভারতের জনগণের প্রতি কোনো বিরূপ ধারণা পোষণ করে না। তারা বিরূপ হয়ে আছে মোদী সরকারের উগ্রবাদী নীতির কারণে।

[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান